Sunday, October 4, 2009

পৃথিবীতে মানুষের পথচলা ৪৪ লাখ বছর!

0 comments
ঠিক কতো বছর ধরে মানুষ 'পথ হাঁটিতেছে পৃথিবীর পথে'? এতোদিন জানা ছিল ৩৪ লাখ বছর। কিন্তু সম্প্রতি মানুষ প্রজাতির পদচারণার ইতিহাস দীর্ঘায়িত হয়েছে আরো ১০ লাখ বছর। অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে মানুষ নামধারী জীবের প্রথম পদচারণা আজ থেকে ৩৪ নয়, ৪৪ লাখ বছর আগে। চলতি সপ্তাহে 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত একগুচ্ছ প্রবন্ধে তেমনই দাবি করা হয়েছে।

মানুষের ইতিহাস ১০ লাখ বছর পিছিয়ে দেয়ার মূলে রয়েছে কিছু হাড়গোড়ের ফসিল। হাত-পা ও মু-ু_ মোট ১২৫টি টুকরো, যেগুলো এক করে পাওয়া যাচ্ছে এক মানবী দেহের রূপ। তার নাম দেয়া হয়েছে 'আরডিপিথেকাস রামিদাস'। সংৰেপে যাকে বলা হচ্ছে 'আরডি'।
১৯৯২ সালে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার ১২৫ কিলোমিটার দূরে আফার উপত্যকার জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের কয়েকশ হাড়গোড়। সেসব সাজিয়ে তৈরি হয় ৩২টি নানা বয়সের মানব আকৃতি জীবের দেহরূপ। ১৭ বছর ধরে নানারকম পরীৰা করে আমেরিকার বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধানত্দে পেঁৗছেছেন_ মানুষের পূর্বপুরম্নষ শিম্পাঞ্জি জাতীয় কোনো প্রাণী নয়, তা বরং আরডির কাছাকাছি কোনো জীব। গবেষকরা বলছেন, আরডি জাতীয় প্রাণী থেকেইে শিম্পাঞ্জি ও মানুষের মতো প্রাণী এসেছে। আরডিই কি তাহলে সেই বিখ্যাত 'মসি লিঙ্ক'? যার খোঁজ চলছে বহুকাল, কিন্তু সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনো? না_ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আরডি 'মিসিং লিঙ্ক' নয়। মিসিং লিঙ্ক আরো পুরনো কোনো প্রাণী, যা বেঁচে ছিল ৬০-৭০ লাখ বছর আগে।

তবে আরডির আবিষ্কারের পর অভিভূত অনেক বিজ্ঞানীই। হার্ভার্ডের পিবডি মিউজিয়াম অফ আর্কিওলজি অ্যান্ড অ্যাথনোলজির বিজ্ঞানী ডেভিড পিলবিম বলেন, এটি মানুষের বিবর্তন বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ফসিল থেকে আরডির দেহ নতুন করে গড়ার কাজ মোটামুটিভাবে সম্পূর্ণ। কারণ এর মাথা, হাত-পা, কোমর ইত্যাদি অংশ পুরোপুরি এক করা গেছে। আর দেখে মনে হচ্ছে, এটি অস্ট্রালোপিথেকাস গোষ্ঠীর জীব।
আরডির আগে পর্যনত্দ মানুষের সবচেয়ে কাছের প্রজাতির প্রাচীনতম নমুনা হিসেবে গণ্য হতো 'লুসি', যার ফসিল মিলেছে আফ্রিকায় ১৯৭৪ সালে। তখন মনে করা হয়েছিল, লুসিই হলো প্রথম প্রাণী, যা দুই পায়ে হাঁটতো। অস্ট্রালোপিথেকাস গোষ্ঠীর ওই জীব ওখানে ঘর-সংসার পেতেছিল ৩৪ লাখ বছর আগে।
ফসিল থেকে আরডির পূর্ণাঙ্গ দেহ তৈরি করেছেন যেসব বিজ্ঞানী, তাদের নেতা টিম হোয়াইট বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে চার্লস ডারউইন যখন মানুষের বিবর্তনের কথা বলেছিলেন, তখনো মানুষ ও বানরের যৌথ পূর্বপুরম্নষের ব্যাপারে মনত্দব্য করতে গিয়ে তিনি যথেষ্ট সাবধানতার আশ্রয় নিয়েছিলেন। 'সায়েন্স' জার্নালে হোয়াইট লিখেছেন, হাড়গোড়ের ফসিল থেকে একটু একটু করে পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ তৈরি করতে আমাদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিবিড় গবেষণার পর গবেষকরা বললেন, আরডির ফসিল_ এটি পুরোপুরি শিম্পাঞ্জি কিংবা পুরোপুরি মানুষ নয়। তাই গবেষকরা বহু বছর ধরে এর তুলনা করেছেন আফ্রিকায় পাওয়া অন্য ফসিলের সঙ্গে। হোয়াইট বলছেন, পূর্ণ বয়স্ক আরডির ওজন ছিল ৫০ কিলোগ্রামের কাছাকাছি। উচ্চতা চার ফুট বা ১.২০ মিটার। হাত-পায়ের তালুর গড়ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, দুই হাত বা দুই পায়ে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরতে পারতো সে। এ থেকে ধারণা করা হয়, আরডি আর তার আত্মীয়স্বজন বৃৰচারী ছিল। মানুষের ওই আদিম পূর্বপুরম্নষ ছিল মূলত তৃণভোজী। ফল, বাদাম বিশেষ ধরনের কিছু পাতা দিয়েই তারা পেট ভরাতো। কিন্তু তার মানে এই নয়, ওদের জীবন আবদ্ধ ছিল শুধু গাছের ডালেই। কোমর, নিতম্ব ও হাঁটুর গড়ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, স্থলভূমিতে বিচরণও ছিল ওদের কাছে স্বাভাবিক। আর তাই, হাঁটার ইতিহাস পিছিয়ে গেল এবার অনত্দত ১০ লাখ বছর! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন, এপি

0 comments:

Post a Comment