Friday, October 30, 2009

জুলভার্ন

0 comments

উড়োজাহাজ আবিষ্কারের অর্ধ শতাব্দী আগেই যিনি হেলিকপ্টারের কথা বলেছিলেন। রেডিও আবিষ্কারের বহু আগেই যে ব্যক্তি টেলিভিশনের কথা কল্পনা করেছিলেন, যে সময় চাঁদে যাবার কথা কেউ চিনত্মা করতে পারেনি, সেই সময়ই তিনি চাঁদের বুকে মানুষের বসতি স্থাপনের কথা বলেছিলেন। অথচ নিজে তিনি ছিলেন এক ঘর কুনো মানুষ। কল্পবিজ্ঞানের উপর বিশ্বে সর্বাধিক সাড়া জাগানো বইয়ের লেখক জুলভার্ন।

তিনি আদৌ কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন না। আর যেসব কল্পকাহিনীর তিনি বর্ণনা করেছেন, সে সম্পর্কেও তার কোন বাসত্মব ধারনা ছিলো না। অথচ তাঁর কল্পকাহিনী সবগুলোই পরবতর্ী সময়ে বাসত্মব রূপ লাভ করেছে এবং আরো আশ্চর্যের বিষয় তিনি যেভাবে কল্পনা করেছেন। জিনিসগুলো তেমনভাবেই রূপ পেয়েছে। পরবতর্ীতে যেসব বিজ্ঞানী এগুলো আবিষ্কার করেছেন তারা জুলভার্নের কল্পনা দিয়েই অনুপ্রানিত হবার কথা বলেছেন।
বিখ্যাত বেতার আবিষ্কারক মার্কনি, সাবমেরিনের জনক সাইমন লেক, বেলুনিস্ট এবং ডীপ সী আবিষ্কারক অগাস্ট পিকর্াড এবং আরো অনেক বিজ্ঞানী শ্রদ্ধার সাথে জূলভার্নের কল্পনা শক্তি থেকেই অনুপ্রানিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
জুলভার্নের গল্পের নায়করা সাবমেরিন নিয়ে প্রবেশ করেছেন পাতালে, আকাশ যানে করে উড়ে গেছেন চাঁদের বুকে, যাত্রা করেছেন কত দুর্গম পথে। কিন্তু যিনি এসব দুঃসাহসিক অভিযানের কল্পনা করেছেন। সারা জীবনেও তিনি ঘর থেকেই বের হননি।
এই আশ্চর্য মানুষ জুলভানের জন্ম হয়েছিলো ফ্রান্সের নানতেস এলাকায়, ১৮২৮ সালে। বাবা ছিলেন আইনজীবী। তাঁর ইচ্ছে ছিলো ছেলেও আইন-ব্যবসা করে দু'পয়সা আয় করতে শিখুক। সাহিত্য সাধনায় একানত্ম নিমগ্ন থাকলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি তার। প্রথম গ্রন্থ 'ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন' এর পান্ডুলিপি নিয়ে শুরম্ন হলো প্রকাশকের দুয়ারে ঘোরাঘুরি। কিন্তু কেউ তাঁর এই উদ্ভট কাহিনী ছাপতে চাইলেন না। একে একে পনেরোজন প্রকাশক ফিরিয়ে দিলেন তাঁর পান্ডুলিপি। এই ঘটনায় প্রচন্ড অভিমানে পান্ডুলিপিটি পুড়িয়ে ফেলতে ছুঁড়ে দিলেন আগুনে। কিন্তু রৰা করলেন তার স্ত্রী। স্বামীকে সানত্ম্বনা দিয়ে বললেন-অনত্মত আরেকজন প্রকাশকের কাছে যাও।
অবশেষে স্ত্রীর পরামর্শই কাজে লাগলো। বইটি ষোড়শতম প্রকাশক ছাপতে রাজি হলেন। আর প্রকাশের সাথে সাথেই শুরম্ন হলো অবিশ্বাস্য রকমের কাটতি। বছরের বেস্ট সেলার হলো। শুরম্ন হলো অন্য ভাষায় অনুবাদ।
পুরনো দালালির ব্যবসা ছেড়ে শুরম্ন করলেন একানত্মমনে সাহিত্য সাধনা। টাকাও আসতে লাগলো প্রচুর। কেটে গেলো আর্থিক অনটন।
জুলভার্নের হাতে তখন অনেক টাকা। তাই তিনি এবার চলে এলেন প্যারিস থেকে আমেরিকায়।
সেখানে এসে তৈরি করলেন সুন্দর এবং মজার ডিজাইনের একটি বাড়ি। প্রকান্ড এই বাড়িটিতে ছিলো একটি টাওয়ার। টাওয়ারটি দেখতে অনেকটা নাবিকদের কেবিনের মতো। আসলে এটি ছিলো একটি চিলেকোঠা। যে চিলেকোঠায় তিনি আবদ্ধ থেকেছেন সারাজীবন। ছিলো তাঁর লেখা আর পড়ার ঘর। এখানেই তিনি কাটিয়েছিলেন জীবনের শেষ ৪০টি বছর।
জুলভার্নের জীবনের সবচাইতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডে'স। এই লেখাটি যখন প্যারিসের লা টেম্পস পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। তখন প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। বইটির প্রধান চরিত্র বাজি ধরে সত্যি সত্যি ৮০ দিনে পৃথিবী ঘুরে আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে বহু পাঠকও বাজি ধরেছিলো। জুলভর্ান পাঠকদের এই প্রচন্ড আগ্রহ ও উত্তেজনা শেষ পর্যনত্ম ধরে রাখতে সৰম হয়েছিলেন। নায়ক হাজার বিপদ অতিক্রম করে ৮০ দিনের মাত্র ৫ মিনিট বাকি থাকতে গনত্মব্যস্থলে পৌঁছে বাজিতে জিতে যায়।
জুলভার্নের এই কল্পনাকে বাসত্মবে রূপ দিতে ১৮৭২ সালে নিউ ইয়র্কের নেলি বস্নাই নামের এক সাংবাদিকও বিশ্বভ্রমনে বের হন। তিনি জুলভার্নের গল্পের রেকর্ড ভেঙ্গে ৭২ দিনে পৃথিবী ঘুরে আসেন। এরপর একজন ফরাসী সংবাদদাতা ৪৩ দিনে ভূ-প্রদৰিন করেন।
জুলভার্ন তাঁর টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগেস আন্ডার দ্য সী গ্রন্থে নাটিলাস নামের যে সাবমেরিনের কথা বলেছেন, তা ছিলো বিদু্যৎচালিত। সে বিদু্যৎ সাগর তলদেশ থেকেই সয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করা হত।
তারপর বাসত্মবে ইউ এস নেভির যে পারমানবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরি হয় তার নামও রাখা হয় নাটিলাস। আসলে জুলভানের কল্পনায় অনুপ্রানিত হয়েই এই বাসত্মবের নাটিলাস তৈরি হয়েছিলো।
জুলভার্নের শেষ জীবনটা খুব সুখের ছিলো না। কারণ বুদ্ধিজীবীরা তাঁকে অবজ্ঞা করতেন। এছাড়া জুলভার্ন ছিলেন তাঁর সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখক। এটা পন্ডিতেরা সহ্য করতে পারতেন না, যার জন্য তিনি এত বড় লেখক হয়েও ফ্রেঞ্চ একাডেমীর সদস্য মনোনীত হতে পারেননি।
১৯০৫ সালে বিশ্বের বিস্ময়কর পুরম্নষ জুলভার্নের মৃতু্য হয়। আজও তাঁর জনপ্রিয়তা একটিুও কমেনি। আজও তিনি বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখকদের অন্যতম।

0 comments:

Post a Comment