Sunday, October 4, 2009

মাওবাদী আন্দোলন

0 comments
ভারতের বিশিষ্ট কবি ও কলেজের অধ্যাপক ভারাভারা রাও ভাবাদর্শগতভাবে একজন নকশালপন্থী। অন্ধ্র প্রদেশে নকশাল বা মাওবাদী আন্দোলন তিনি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, সশস্ত্র বিদ্রোহ একদিন ভারতে স্বাধীনতা আনবে, যেমনটি এনেছেন মাও সে-তুং কমিউনিস্ট চীনে। ২০০৪ সালে সরকারের সঙ্গে মাওবাদীদের আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভারাভারা রাও। সম্প্রতি সাংবাদিক দ্বৈপায়ন হালদারের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন সিপিআই (মাওবাদী) নেতা কোবাদ ঘেন্দির গ্রেপ্তার ও মাওবাদী আন্দোলনের ভবিষ্যত্ প্রসঙ্গে।


কোবাদ ঘেন্দির গ্রেপ্তার ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বিরাট পুরস্কার। এটা কি মাওবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত?
কোবাদ সিপিআইয়ের (মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁর গ্রেপ্তার নিশ্চয়ই আন্দোলনের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তবে একজন নেতা গ্রেপ্তার হলে মাওবাদী আন্দোলনে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না। তাঁর গ্রেপ্তার হওয়াটা দলের জন্য একটি আদর্শিক ক্ষতি।
আপনি কি বলতে চাইছেন তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় কৌশলগত ক্ষতির চেয়ে আদর্শিক ক্ষতি বেশি হয়েছে?
পুলিশকে দেখে মনে হচ্ছে তারা কোবাদ ঘেন্দির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে যাচ্ছে। যদি সত্যিই তারা তাঁর কাছ থেকে তথ্য পায়, তাহলে তা দলের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর হবে, সেটা বলা মুশকিল। যেকোনো দলেই কৌশলগত ও আদর্শগত ব্যাপারটা ভিন্ন। আমি এটা বলতে চাই, একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ মাওবাদী আন্দোলন থামিয়ে দিতে পারবে না।
অতীতে বহু নকশাল নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু কোবাদ ঘেন্দি গ্রেপ্তার হলে হইচইটা যেন একটু বেশি হয়েছে। সেটা কি তিনি দুন ও অক্সফোর্ডে শিক্ষিত বলে?
অবশ্যই এটা একটা কারণ। কোবাদের গ্রেপ্তারের ঘটনাটা সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রধান শিরোনাম হয়েছে। তিনি কোনো বড় করপোরেট অফিসের প্রধান হতে পারতেন। তা না হয়ে তিনি নকশাল নেতা হলেন। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের ব্যাপক আগ্রহ তাঁকে নিয়ে।
শহরাঞ্চলে নকশালবাদ কি তার আকর্ষণ হারাচ্ছে? কোবাদ ঘেন্দির মতো আর কেউ কি আসছে মাওবাদীদের সংগঠনে?
একজন কোবাদ গেছে, আরও বহু কোবাদ তৈরি হবে। দুঃখের কথা হলো, অর্থনীতির বাজারটি দখল করে রেখেছে বুর্জোয়া শ্রেণীর যুবকেরা। অন্যদিকে প্রান্তিক শ্রেণীর যুবকেরা যেমন, মুসলিম ও দলিতরা বাজার শক্তিতে পরিণত হয়নি, কারণ তারা দেখেছে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। এ জন্য তারা এই আন্দোলনের ওপর বেশি আকৃষ্ট হয়েছে। এখন ভারতে কোনো ক্যাম্পাস সংস্কৃতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়া ছাড়াই এখন যে কেউ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। একটি ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনৈতিক বিতর্কের সুযোগ রয়েছে। সেই সংস্কৃতি এখন মারা যাচ্ছে।
কিন্তু এখন শহরে যুবকেরা কীভাবে মাওবাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যখন মাওবাদকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
ভারতে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অন্ধ্র প্রদেশে মাওবাদী কার্যক্রম বেশি হয়। যদি আপনি নকশালপন্থী বা নকশালবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল বা সাধারণ একজন নাগরিক অধিকার কর্মী হন, তাহলে আপনাকে জেলে যেতে হবে অথবা সাজানো বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ১৯৯২ সালে সাংবাদিক গোলাম রসুল একটি উর্দু দৈনিকে ভূমি সমস্যা নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করেন। এর পরই পুলিশের সাজানো বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। পুলিশ তাঁকে অভিহিত করে নকশাল হিসেবে। ওই বন্দুকযুদ্ধে গোলাম রসুলের একজন বন্ধুও নিহত হন। একইভাবে যেসব চিকিত্সক সুবিধাবঞ্চিতদের চিকিত্সা করছেন বা যেসব আইনজীবী প্রান্তিক লোকজনের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁরা জেলে যাচ্ছেন বা নিহত হচ্ছেন।
কিন্তু খোদ কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করেছে যে নকশালবাদ একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে
এগুলো হচ্ছে কেতাবি কথা। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, নকশালবাদ উদ্বেগের একটা কারণ। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ধারণাকেও সমর্থন করছেন। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ফলে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। অনেক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। দেখুন না, সিঙ্গুরে কী ঘটল বা ঘটছে। এ ধরনের সমস্যার সমাধান যত দিন না হবে, তত দিন নকশালবাদ টিকে থাকবে।

ভাষান্তর: রোকেয়া রহমান। প্রকাশিত হয়েছে "দৈনিক প্রথম আলো" পত্রিকায়।

0 comments:

Post a Comment