Wednesday, October 7, 2009

সোনালু

0 comments

সোনালু ‘লেগুমিনোসি’ পরিবারভুক্ত, ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান ল্যাবারনাম। বাংলা নাম সোনালু, সোঁদাল, হিন্দি নাম আমলতাস। আদিনিবাস পূর্ব এশিয়া।
গাছ ২৫-৩০ ফুট উঁচু, পত্রবৃন্তে ৩-৬ জোড়া পাতা গজায়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাতা ঝরে যায় এবং বৈশাখে নতুন কচি কলাপাতা রঙের পাতা গজায়। তারপরই গাছে ফুল আসে। গাছের শাখা থেকে লম্বা ছড় নামে, তাতেই মালার আকারে সোনালি-হলুদ রঙের ফুল হয়। ফলগুলো কমবেশি এক হাতের মতো বড় হয় বলে এ গাছের আরেক নাম বাঁদরলাঠি। ফল আকারে গোল, ব্যাস প্রায় ১ ইঞ্চি, কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে গায়ের রঙ হয় মেহগনি কাঠের রঙের মতো। ফলের মধ্যে অসংখ্য বীজ থাকে। বীজ মটরের মতো হলেও চেপ্টা, মসৃণ, উজ্জ্বল পীতের আভাযুক্ত ধূসর। বীজগুলো একসঙ্গে না থেকে ফলের মধ্যে সমদূরত্বে গোল পয়সা বা আধুলি আকারে দেয়াল সৃষ্টি করে। এ দেয়ালের গায়ে তেঁতুলের মজ্জার চিটচিটে আঠার মতো একটি জিনিস পাওয়া যায়। তবে গাছপাকা ফলের মধ্যেই এটা পাওয়া যায়। এই আঠার মতো পদার্থটিই ‘সোনালুর আঠা’ বা ফলমজ্জা যা ইউনানি ওষুধে কাজে লাগে। ফাল্গুন-চৈত্রে গাছ পত্রশূন্য হলেও পাকা ফল ঝুলতে থাকে। নটর ডেম কলেজ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ও সংসদ ভবনসংলগ্ন এলাকার সোনালু বীথি দৃষ্টিনন্দন।
সোনালু ভেষজ গুণেও সমৃদ্ধ। দেহের কোন স্থানে কেটে বা ছড়ে গেলে জ্বালা-যন্ত্রণা হতে থাকে। এক্ষেত্রে সোনালুর পাতা বেটে, তার সঙ্গে অল্প ঘি মিশিয়ে কাটা স্থানে লাগালে যন্ত্রণার উপশম হয়। কুষ্ঠরোগীর ক্ষতে পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে ক্ষত থেকে দূষিত রস নির্গত হয়ে রসস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। বৃদ্ধকালের কোষ্ঠবদ্ধতায় ফলের আঠা (ফলমজ্জা) ৫/৭ গ্রাম গরম দুধে চটকে নিয়ে গামছার মতো জেলজেলে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে প্রতিদিন সকালে খেলে দাস্ত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যক্ষ্মারোগীর কোষ্ঠবদ্ধতায় কোনো তীব্র মলভেদক ভেষজ দ্বারা বিরেচন করানো বিপজ্জনক, অথচ দাস্ত পরিষ্কার না থাকলেও চলে না। এক্ষেত্রে এটিই একমাত্র ভেষজ যা রোগীর মলাশয়কে উত্ত্যক্ত করে না। এক্ষেত্রে সোনালু ফলের আঠা (মজ্জা) ৫/৬ গ্রাম আধা কাপ পানিতে গুলে, পাতলা কোনো গামছা বা কাপড়ে ছেঁকে, একটু চিনি বা আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে সকালের দিকে খেতে দিতে হবে। ফলে দাস্ত পরিষ্কার হয়ে যাবে অথচ দাস্তজনিত দুর্বলতা আসবে না।

0 comments:

Post a Comment