Thursday, November 12, 2009

ড্রাগন ফল

0 comments

ড্রাগন মানে তো রূপকথার সেই ভয়াবহ প্রাণী, যার মুখ দিয়ে আগুন বের হয়। কিন্তু এমন ভয়াবহ প্রাণীটির নামে যে ‘ড্রাগন ফ্রুট’ তা কিন্তু আসলে সুস্বাদু ও লোভনীয় একটি ফল। এতকাল ফলটি আমাদের কাছে ভিনদেশি হয়েই ছিল। এবার সেই ফলে নিজস্ব প্রযুক্তিতেই চাষ শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশে।
জুলাই মাসের শেষ দিকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এই ড্রাগন ফ্রুটের চমত্কার বাগান দেখে অবাকই হতে হলো। জার্মপ্লাজম সেন্টারে রীতিমতো রঙের মেলা বসেছে এই বাগানে। রংবেরঙের ফল ঝুলে আছে গাছে গাছে। কোনো কোনো গাছে উঁকি দিচ্ছে ফুলের কলি।
ফল চাষের ক্ষেত্রে সেখানে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। ফালি করে কাটা বাঁশের মাথায় বসানো হয়েছে পরিত্যক্ত টায়ার; তার ওপর তুলে দেওয়া হয়েছে লতা। লতাগুলো দিব্যি ঝুলে পড়েছে চারপাশে। কোনো কোনো গাছে ফুল এসেছে, কোনো কোনোটিতে ফল। সেখানকার জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সামছুল আলম মিঠু জানিয়েছেন, প্রায় ২০-২৫টি গাছ নিয়ে বাগানের যাত্রা শুরু হলো। ক্রমান্বয়ে বাগানের পরিসর আরও বাড়বে।
ড্রাগন ফ্রুট (Hylocereus undatus) রেড পিটায়া, স্ট্রবেরি পিয়ার, কনডেরেলা প্লান্ট ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ১৮৩৬ সালে সর্বপ্রথম জনৈক বিংহাম হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এর চাষ শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্য আমেরিকা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে চাষ হতে দেখা যায়। প্রতি হেক্টরে গড়পড়তা উত্পাদন ২০-২৫ টন। এ ছাড়া ইসরায়েল, কলাম্বিয়া ও নিকারাগুয়ায়ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় ড্রাগন ফ্রুট।
উষ্ণ ও আধা শুকনো অঞ্চলে ফলটি ভালো জন্মে।
ড্রাগন ফ্রুটের গাছ লতানো, মাংসল, খাঁজালো। লোহা, কাঠ বা সিমেন্টের খুঁটি বেয়ে দিব্যি বেড়ে উঠতে পারে। পাকা ফল না ধুয়ে পাঁচ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে ভালো রাখা যায়। সচরাচর অন্তত চার রকমের ফল দেখা যায়—লাল বাকল, লাল শাঁস; হলুদ বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল এবং নীলচে লাল শাঁস। রঙের ভিন্নতা অনুযায়ী স্বাদের ক্ষেত্রেও তারতম্য লক্ষ করা যায়। শাঁসের ভেতর ছোট ছোট অজস্র কালো বীজ থাকে।
বিশ্ববাজারে ড্রাগন ফ্রুটের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে ফলটি একেবারে নতুন হলেও ক্রমেই মানুষ এর স্বাদের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। শুধু ময়মনসিংহেই নয়, বড় আরেকটি বাগান আছে নাটোর শহরের ঝাউতলা এলাকায়। কৃষিবিদ কামরুজ্জামান সেখানে এক বিঘা জায়গার ওপর বাগান করেছেন।
তাতে চার ধরনের ড্রাগন ফ্রুটের ২০০ গাছ লাগিয়েছেন তিনি। এ বছর প্রায় ৫০টি গাছে ফুল হয়েছে, ফল ধরেছে ২৫টি গাছে।
আশা করতে পারি, একসময় ড্রাগন নামের এই ফল আমাদেরই হয়ে উঠবে!

0 comments:

Post a Comment