Friday, December 4, 2009

সাগরতলের মৎসকন্যা - রুবিনা মোস্তফা

0 comments

কয়েক শতাব্দী আগে জাহাজীরা সাগর পাড়ি দেয়ার সময় মৎস কন্যাদের দেখতে পেত, পাহাড়ের চূড়ায় আছে। লম্বা চুল আঁচড়াচ্ছে আর করুন সুরে গাইছে গান। যেন বলছে, আমরা বড় একা, আমাদের একটু সঙ্গ দাও।’ শ্রুতি আছে জাহাজডুবির ফলে কোনো কোনো নাবিককে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছে এই মৎসকন্যারা। ১৪৯২ সালে, সমুদ্রে ভ্রমনের সময় কলম্বাস তিনটি মৎসকন্যা দেখে ছিলেন। ১৬০৭ সালে জেনরী হাডসন উত্তর সাগর পাড়ি দেবার সময় তিনটে প্রাণীকে দেখেন যাদের নাভির উপর থেকে দেখতে হুবহু মেয়েদের মতো, কিন্তু, নিচের অংশটা মাছের মতো।

১৯১৭ সালে লিওনদাসের ক্যাপ্টেন নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরু করে ছিলেন লি হার্ডের দিকে। পথে তিনি মানুষ আকৃতির একটি প্রাণীকে দেখতে পান। যার শরীরের উপরের অংশে কালো চুল, ত্বক সাদা, কিন্তু হাতের নিচ থেকে মাছের আকৃতি। ছয় ঘন্টা ধরে সে জাহাজের পাশ ঘেঁষে সাঁতরাচ্ছিল। একবার দীর্ঘ পনের মিনিট ধরে শরীরটাকে পানির উপরে তুলে নাবিকদের দিকে চেয়ে থাকে, তারপর ডুব দেয়। কিছুক্ষণপর আবার ভেসে উঠে জাহাজের অন্য পাশে। ক্যাপ্টেন এই দৃশ্য দেখার পর তার ডায়েরীতে লেখেন, এরকম মাছ জাহাজীদের কেউ জীবনেও দেখেনি। সবাই ধরে নিয়েছে ওটা মৎস কন্যা না হয়ে যায় না।’ ১৮০৩ সালে স্কটিশ সমুদ্র উপকূলে একটি মৎস কন্যা ধরা পড়ে। ইয়েল দ্বীপের জেলেদের জালে এই অদ্ভুত প্রাণীটি ধরা পড়ে। জেলেরা তাকে নৌকায় তুলে। এক মিটারের মতো লম্বা সে শরীরের উপরের অংশ অবিকল মেয়েদের মতো। তবে চেহারায় কিছুটা বানর সুলভ ভাব ছিল। তার মাথায় লম্বা লোম কাঁধ পর্যন্ত ঢাকা। লোমগুলো সে খাড়া করতে এবং নামাতে পারত। তার শরীরের নীচের অংশটুকু মাছের মতো। যদিও কোন আশ নেই। জেলেরা ঘন্টা তিনেক ওটাকে আটকে রেখে ছিল। কিন্তু সে এমন করুন সুরে বিলাপ শুরু করে যে বাধ্য হয়ে তাকে জেলেরা ছেড়ে দেয়। ১৮৩০ সালে বেনবেবুলা দ্বীপ আরেক মৎসকন্যার সন্ধান পাওয়া যায়। দ্বীপবাসীরা তাকে সমুদ্রে সাতার কাটতে দেখেছে কয়েকদিন। তারপর তার মৃতদেহ আবিস্কৃত হয় সাগর তীরে বালুর উপর চিৎ হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায়। এই মৎস কন্যার শরীরের উপরের অংশ ছিল তিন চার বছরের বাচ্চা মেয়ের মতো। চুল লম্বা চামড়া নরম এবং সাদা আর কোমরের নীচের অংশটা আশহীন স্যামন মাছের মতো। ওই দ্বীপের শেরিফ তাকে কফিনে পুরে সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৪০ সালে হাব্রিডিয়ান দ্বীপে এক মৎসকন্যার দেখা পাওয়া যায়। এর তিনবছর আগে ভারতের কোচিনেও খুব সুন্দরী এক মৎসকন্যার দেখা পাওয়া যায়। লোকজনের ভীড় দেখে সে সাগরতীর থেকে সাগরে নেমে পড়ে এবং সাঁতার কেটে দূরে চলে যায়। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা বলছেন, মৎসকন্যা বলতে কিছু নেই। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নাবিকরা দূর থেকে শুশুক জাতীয় কোন প্রাণীকে দেখে প্রায়ই মৎসকন্যা বলে ভুল ধারনা করে।

0 comments:

Post a Comment