Saturday, December 26, 2009

ঢাক

0 comments
ঢাককে বলা হয় মানবদেহে উদ্দীপনা জাগানোর বিশেষ যন্ত্র। বাংলাদেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে এই বাদ্যযন্ত্র। ঢুলিদের তাল মেলানো ঢাকের শব্দে নেচে ওঠে মন। তবে বিশ্বের সব জাতির মানুষের মধ্যেই ঢাকের ব্যবহার আছে। নানা প্রয়োজনেই ঢাকের বাজনা বাজিয়ে চলছে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মানুষ। সামাজিক অনুষ্ঠান, যুদ্ধ, খবরের আদান-প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঢাককে আপন করে নিয়েছে সবাই। কোথাও আবার ঢাককে মৃত মানুষের আত্মার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আধুনিক পৃথিবীতে ঢাক বেশি ব্যবহার করা হয় বিনোদনের কাজে। তবে ঢোল বা ঢাক হলো বাদন উপকরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্ভবত ঢাকই হচ্ছে মানুষের জ্ঞাত সবচেয়ে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। বেশিরভাগ সংস্কৃতির মানুষ নিজের সুবিধা অনুযায়ী ঢাক তৈরি করে নিয়েছে। কিন্তু সব স্থানের ঢাকের ডিজাইন প্রায় এক। বেশিরভাগ ঢাকের তিনটি মূল অংশ থাকে। ফাঁপা, নলাকা অংশের এক বা দু'দিকেই টান করা পাতলা চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে। ঢেকে রাখা এ অংশকে বলে 'ঢাকের মাথা'। ঢাকের মাথা আবার খোলের সঙ্গে যুক্ত থাকে লম্বা চামড়ার ফালি ও গোলাকার কাঠের টুকরার সঙ্গে। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পল্গাস্টিকের 'ড্রামহেড' আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এ কাজে শুধু পশুর চামড়াই ব্যবহার করা হতো। জাপানিরা শত শত বছর আগে থেকে 'তাইকো' নামের এক ধরনের ঢাক ব্যবহার করে আসছে। আফ্রিকায় এক ধরনের ঢাক, যার নাম 'টকিং ড্রাম' বা কথা বলা ঢাক। আফ্রিকার আদিবাসীরা আগে ঢাকের মাধ্যমে আওয়াজ করে আশপাশের গ্রামগুলোর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করত। কোনো জরুরি তথ্য ঢাকের মাধ্যমে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেত। উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দারাও 'হুপ ড্রামস' নামের এক ধরনের ঢাক তৈরি করে। এটা তৈরি করা হয় পাতলা ফ্রেমের ওপর তিমির জিভকে টেনে বসিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় 'স্টিল ড্রাম' নামের এক ধরনের ঢাক ব্যবহার হতো। এটা তৈরি করা হতো যুদ্ধের সময় বাতিল করা তেলের ব্যারেল দিয়ে। উলম্ব আকৃতির এক ধরনের ঢাক আছে, যা তৈরি করা হয় কাঠ বা বাঁশ দিয়ে। এগুলোকে মাটির সঙ্গে আছড়ে বাজাতে হয়। আধুনিক বিশ্বে ঢাকের চেহারা বদলেছে, ব্যবহার বেড়েছে অনেক। কিন্তু আবেদন কমেনি একটুও। প্রবাদেও আছে, 'নিজের ঢাক নিজেই বাজাই', নয়তো অন্যকে দিলে ফাটিয়ে ফেলতে পারে!
আমির খসরু সেলিম

0 comments:

Post a Comment