Thursday, December 3, 2009

বাংলাদেশে হেমন্তের উত্সব

0 comments
লিখেছেন সাইমন জাকারিয়া ৎ প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো'য়


নবান্ন
সারা অঙ্গে তার শীতল ভাব, অথচ কিছুতেই সে শীত নয়। ঘাসে, গাছের পাতায়, ঘরের চালে শিশির ঝরিয়ে শীতের সূচনা করে হেমন্ত। বাংলার ফসলের এই ঋতুকে কেন্দ্র করে কয়েকটি উত্সবের বর্ণনা দিয়েছেন সাইমন জাকারিয়া


নবান্ন
একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উত্পাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে তাতে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে তাই গ্রামের মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। অগ্রহায়ণে সেই কাটা ধান মাড়াই করা হয়।
এরপর শুরু হয় নবান্নের আয়োজন। এই আয়োজনে চাঁদ-সূর্য কিংবা গ্রহ-নক্ষত্রের তিথিকে অনুসরণ করা হয় না। নবান্নের আয়োজনের পুরোটাই নির্ভর করে ফসল ঘরে ওঠার ওপর। তাই একেক গ্রামে একেক সময় নবান্ন উত্সব হয়। সাধারণত কার্তিকে কাটা ধান অগ্রহায়ণে মাড়াই করে ধান থেকে আতপ চাল তৈরি করা হয়। ওই চাল থেকে তৈরি গুঁড়া দিয়ে শুরু হয় নবান্নের উত্সব।
রান্না করা হয় ক্ষীর-পায়েস। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় চিতই, পাটিসাপটা, পুলি, কুলসি হরেক রকমের পিঠা। আগের চেয়ে নবান্নের উত্সব বাংলাদেশে এখন কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। তবে এখনো অনেক জেলাতেই সাড়ম্বরে নবান্ন উত্সব করা হয়। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় নবান্ন উপলক্ষে বিবাহিতা মেয়েরা সন্তান-স্বামীসহ বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
নবান্ন উত্সব এখন একটি সাংস্কৃতিক উত্সব হিসেবে ঢাকা মহানগরেও আশ্রয় নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে ঢাকায় নবান্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় দিনব্যাপী নবান্ন উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। এসব শহুরে সংযোজনের পাশাপাশি গ্রামের পিঠা-পুলি উত্সবের একটি শহুরে রূপও এখানে দেখা যায়।
লালন স্মরণোত্সব
১৮৯০ সালে কার্তিকের, তথা হেমন্তের প্রথম দিনটিতেই কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া গ্রামে নিজের আখড়াবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন লালন সাঁই। বাংলার এই অসামান্য বাউলসাধকের তিরোধান উপলক্ষে পয়লা কার্তিককে কেন্দ্র করে ছেঁউড়িয়ায় লালন সমাধি চত্বরে তিন দিনব্যাপী লালন উত্সব পালিত হয়।

লালন স্মরণোৎসব
লালন স্মরণোত্সবের নিজস্ব কিছু চরিত্র আছে, যা অন্যদের থেকে একে আলাদা করে ফেলে। এটা মূলত লালনপন্থী সাধুদের সম্মিলন উত্সব। মেলার এক প্রান্ত জুড়ে থাকে বাউলদের বাদ্যযন্ত্র বিক্রির দোকান। এসব দোকানে একতারা, দোতারা, ডুগি, প্রেমজুড়ি বা কাঠজুড়ি, মন্দিরার মতো বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয়। লালন স্মরণোত্সবে লালনপন্থী সাধুদেরই তাঁতে তৈরি গামছা-লুঙ্গিও দিব্যি বিক্রি হয়। বিক্রি হয় সাঁইজির গানের ক্যাসেট ও গানের বই।
অন্যদিকে প্লাস্টিকের সামগ্রী, কারু দারু পণ্য থেকে আসবাবসামগ্রী, পাটি, মাটির পুতুল, মাটির হাঁড়ি, গয়না এসবও বেশ বেচাকেনা চলে মেলায়। মেলায় জমিয়ে বিক্রি হয় কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। খাজার প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে লালনের গান, ‘হায় রে মজার তিলের খাজা/খেয়ে দেখলি নে মন কেমন মজা’!
ছেঁউড়িয়ার লালন স্মরণোত্সব ও দোলপূর্ণিমায় লালন সাধুসঙ্গের অনুষ্ঠান বর্তমানে যে চেহারা পেয়েছে তা খুব বেশি দিন আগের নয়। বিগত শতকের পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত লালন উত্সব ছিল অনেকটাই অনানুষ্ঠানিক। সে উত্সব ছিল সাধু-ভক্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তখন দোলপূর্ণিমা কিংবা লালন স্মরণোত্সব ছিল মূলত সাধুসেবার অনুষ্ঠান—বাউল-ফকির সম্মিলন, সেবা ও সংগীত এবং দীক্ষানুষ্ঠান। সে সময় এখানকার অনুষ্ঠানের একধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল।
কিন্তু ষাটের দশকে লালন আখড়ার অনুষ্ঠান দুটি প্রশাসনিক সহায়তায় আস্তে আস্তে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আটকে পড়ে। তবুও কোনো কোনো বছর এই মেলার মধ্যেই চলে সাধুদের ‘দীক্ষা’ বা ‘ভেক খিলাফতের’ অনুষ্ঠান।
এই অনুষ্ঠানে লালন সাঁইয়ের মাজারকে সামনে রেখে খেলাফতের সাদা কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয় লালন অনুসারীকে। এরপর সমাধিকে সাতবার প্রদক্ষিণের ভেতর দিয়ে দীক্ষা বা খেলাফতের অনুষ্ঠান পালিত হয়। খেলাফতের অনুষ্ঠানের মধ্যে ভিক্ষাপর্বে গান গেয়ে সাধুভক্তদের কাছ থেকে নতুন খেলাফতধারীরা ভিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
দুবলার মেলা
বাগেরহাট জেলার এই রাস উত্সবটি আলোচ্য তার অবস্থানের কারণে। সুন্দরবনের দক্ষিণে পশুর নদীর মোহনায় দুবলার চর নামে এক চরে প্রতিবছর রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে এক বিরাট মেলা বসে। ১৯২৩ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত হরিভজন (১৮২৯—১৯২৩) এই মেলার প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন।
দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে সমুদ্রের জলে ফল, মূল ভাসিয়ে দেন ভক্তরা। সমুদ্র ও সূর্যের দিকে তাকিয়ে জীবনের শান্তি ও স্বস্তি ভিক্ষা করেন তাঁরা। কেউ কেউ আবার হারমোনিয়াম-মৃদঙ্গ-করতাল বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে নীরব দুবলার চরকে মুখর করে তোলেন। দুবলার চরের রাসমেলায় শুধু গ্রামীণ ও বনবাসী ভক্তকুল সমবেত হন না, দূর-দূরান্তের শহরবাসী এমনকি বিদেশি পর্যটকেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুবলার চরের মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন।

দুবলার মেলা
দুবলার চর ছাড়াও বাংলাদেশে রাসমেলার আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো—বাগেরহাটের খানপুর রাসপূর্ণিমার মেলা, ফরিদপুর ওড়াকান্দির রাসমেলা, দিনাজপুর কান্তনগর রাসমেলা, বরিশালের গোশিঙ্গা রাস উত্সবের মেলা, সিলেটের লামাবাজার রাস উত্সব মেলা।
রাসলীলা
অনেকে হেমন্ত ঋতুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন মনে করেন মণিপুরি জনগোষ্ঠীর রাস উত্সবকে। হেমন্ত ঋতুতে অনুষ্ঠিত মহারাস বাংলাদেশের মণিপুরি জনগোষ্ঠীর প্রধান উত্সব।
রাসপূর্ণিমার দিন রাত ১২টার দিকে মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠী আদমপুর ও মাধবপুর গ্রামের কিছু মণ্ডপে মহারাস পালন করে। মূলত মণিপুরি কিশোরীরাই মহারাসে অংশ নেয়। উত্সবের শুরুতেই বাদ্যকর ও গায়েন-দোহারদের সম্মিলিত ঐকতান। তারপর থাকে সম্মিলিত কণ্ঠে একটি রাগাশ্রিত ভক্তিমূলক গান। এরপর আসে আগমনী।
আগমনীতে একটি কিশোরী নাচের পোশাকে শ্রীরাধার সখী বৃন্দা সেজে এসে মণ্ডপে নৃত্য শুরু করে। বৃন্দার আগমনী নৃত্যগীতি শেষ হলে প্রদীপ আরতি শুরু হয়। তারপর বাঁ হাতে একটি কাচের স্বচ্ছ গ্লাস তুলে নেয়। গ্লাসের মধ্যে গোলাপি রঙের পানিতে সুগন্ধি মেশানো থাকে। হাতে একটি পাতাবাহারের পাতাসমেত ডাল নিয়ে মাঝেমধ্যে সুগন্ধি ছিটাতে থাকে।
এরপর সে ফুলের থালা হাতে নাচতে নাচতে ফুল সংগ্রহে বের হয় এবং মণ্ডপে রাখা ফুলগাছ থেকে কয়েকটি কাগজের ফুল সংগ্রহ করে মালা গাঁথে। এর পর মঞ্চে একটি আসন পেতে দিয়ে বিদায় নেয় বৃন্দা।
এরপর মণ্ডপে আবির্ভাব হয় কৃষ্ণরূপী এক বালকের। প্রথমেই দেখা যায়, কৃষ্ণ ঘুমিয়ে আছে। তার এক হাতের মুঠোর মধ্যে জরি দিয়ে সাজানো একটি বাঁশি। একসময় ঘুম থেকে উঠে নাচ শুরু করে কৃষ্ণ। সঙ্গে সঙ্গে গায়েনদের কণ্ঠের গানও বদলে যায়। কৃষ্ণ নাচ শেষ করে বৃন্দার রেখে যাওয়া আসনে বসে পড়ে। এভাবে কৃষ্ণর আসনে বসার ভেতর দিয়ে শেষ হয় রাসের দ্বিতীয় অঙ্ক। রাসের তৃতীয় অঙ্ক থাকে রাধা ও তার সখীদের দখলে।

রাসলীলা
কৃষ্ণ আসনে বসার পর সখীরা দলবেঁধে রাধাকে নিয়ে গাইতে গাইতে, নাচতে নাচতে মণ্ডপে প্রবেশ করে, ‘যাত্রা কইরো বামস্বরে বামপদ তুলি/যাত্রা কইরো বিনোদিনী।/মুখে কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি/বামস্বরে বামপদ তুলি\’ বলা হয়ে থাকে এটি হচ্ছে ‘রাধা ও তার সখীদের আগমন গীত।’
একপর্যায়ে রাধা যখন কৃষ্ণের সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কৃষ্ণ প্রশ্ন করে, ‘কোন কারণে আইছো বৃন্দাবনে, গভীর-নিঘোর রাতে?’ উত্তরে রাধারানী লজ্জা পেয়ে যায়। আর সখীরা রাধার হয়ে কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে। কৃষ্ণ তাদের ক্ষমা করে দিয়ে প্রসন্ন বদনে এবার রাধার দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা যুগল মূর্তিতে প্রকাশ পায়।
গোষ্ঠলীলা
সাধারণত কার্তিক মাসেই রাসপূর্ণিমার চাঁদ ওঠে। এই পূর্ণিমার দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মৌলভীবাজার জেলার আদমপুর ও মাধবপুরে চলে গোষ্ঠলীলার উত্সব। মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা সারা দিন এলাকা মাতিয়ে রাখে উত্সবে।
গোষ্ঠলীলা করা হয় পৌরাণিক চরিত্র শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠভূমিতে গোচারণকে স্মরণ করে। এদিন খুব সকাল থেকেই আদমপুর-মাধবপুরের বাড়ি বাড়ি তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। অনেক বাড়ির ‘মাংকোলে’ বা ঘরের বারান্দায় কৃষ্ণ অথবা রাখাল সাজানো হয়। তার মাথায় তুলে দেওয়া হয় ময়ূরের বহুবর্ণ চূড়া, নিচে লাল রঙের লেট্রেং, কপনাম। আর মাথার চূড়া থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় জোড়াফুল, জুড়া বা চুল। গলায় ফুলদান বা মালা পরিয়ে পাঙপঙ বেঁধে দেওয়া হয় দুই বাহুতে। এরপর থাবেরেত, থবল, ঘুঙুর, খাড়ু, আঙটি আর পিছনদারীতে রাজকীয় ভঙ্গিমায় সাজানো হয় কৃষ্ণ বা রাখালকে।

গোষ্ঠলীলা
সাজসজ্জা শেষ হতেই কৃষ্ণ বা রাখাল গোষ্ঠলীলার অনুষ্ঠানে রওনা দেয়। জোড়মণ্ডপে পৌঁছে তার জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসে। এ সময়ই প্রথম বোঝা যায়, কে কৃষ্ণ আর কে রাখাল। কারণ, কৃষ্ণ থাকে একদিকে একা। আর রাখালেরা থাকে দলবেঁধে। কৃষ্ণের পাশে মৃদঙ্গ-করতাল বাদক এবং মা যশোদারূপী দুজন নারী বসে থাকেন।
বাদ্যকর-গাহকেরা এবার বন্দনায় কৃষ্ণকে ডেকে চলে—‘এসো হে কানাই এসো/বলি বারে বারে\’ এমন বন্দনাগীত শুনে কেউ কেউ আবেগে আসরে ছুটে এসে শিশু কৃষ্ণের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েন। তখন অন্য কেউ এসে তাঁকে উঠিয়ে ভক্তদের মধ্যে নিয়ে যায়।
বন্দনাগীত শেষে বাঁশি হাতে দুই-দুইজন করে মোট চারজন সখা এসে কৃষ্ণ ও যশোদার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে শিশুদের মতো ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বাদ্যের সঙ্গে বলতে থাকে—চলো গোষ্ঠে/চলো গো কানাই...।’ কৃষ্ণ বাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়—‘আর যাব না গোষ্ঠে/মাতার কথার বোল বলে/পিতার কথার বোল বলে/বলি আমি গোষ্ঠে আর যাব না।’ কৃষ্ণের কথা শেষ হতেই সখাদের উদ্দেশে এবারে মা যশোদা গেয়ে ওঠেন—‘তোমরা যাও হে/আর গোপাল দিব না গোষ্ঠে।’
সখারা পাল্টা গেয়ে ওঠে—‘শোনো বলি এবার/কানাই সঙ্গে নিতে চাই/গোষ্ঠে কানাই বাঁশি বাজায়/আমরা সবাই ধেনু চরাই/কানাই বিনে গোষ্ঠ কেমনে হয়...!’ এরপর কৃষ্ণ বলে ওঠে—‘মাগো মা তোর চরণ ধরি/গোষ্ঠে যাইতে বিদায় দে মা জননী/এই মিনতি করি।’
শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণের কথায় এবং তার সখাদের দাবিতে কৃষ্ণকে গোষ্ঠে যাওয়ার অনুমতি দেন যশোদা। জোড়মণ্ডপ থেকে কৃষ্ণ ও তার রাখালসখারা এবার কদমতলার গোষ্ঠে চলে যায়। এবার গোষ্ঠের মূল আয়োজন শুরু হয়। এ আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ অসংখ্য রাখালের সম্মিলিত নাচ। নিরবচ্ছিন্নভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই নাচ চলে। গোষ্ঠলীলার রাখালনৃত্যে কৃষ্ণের অসুর নিধন, সন্ন্যাসী ও দই বিক্রেতার সঙ্গে নাট্যাংশ অভিনীত হয়। সন্ধ্যায় মা যশোদার আরতিতে গোষ্ঠলীলায় রাখালনৃত্য শেষ হয়।

0 comments:

Post a Comment