Saturday, December 12, 2009

৩০০ টাকার জন্য প্রাণ দিতে হলো মুক্তিযোদ্ধাকে

0 comments
গ্রামে গ্রামে ঘুরে আতর ও টুপি বিক্রি করতেন তিনি। অবসরে বুনতেন মাছ ধরার জাল। এই জাল তৈরি করে দিতে এক ব্যবসায়ী ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন তাঁকে। এটিই হলো তাঁর কাল। সময়মতো জাল দিতে পারেননি তিনি, ফেরত দিতে পারেননি ওই টাকাও। শেষে জীবনের বিনিময়ে তাঁকে মূল্য শোধ করতে হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ওই ব্যবসায়ীর লাঠিপেটায় আহত হয়ে তিনি রাতে মারা যান। জীবন দেওয়া এই মানুষটি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক (৬৫)। ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
আবদুল খালেকের মেজ ছেলে হাবিবুর রহমান জানান, এক মাস আগে শহরের হামদহ এলাকার (৩ নম্বর পানির ট্যাংকপাড়া) ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জাল তৈরির জন্য তাঁর বাবাকে ৩০০ টাকা দেন। কিন্তু তাঁর বাবা সময়মতো জাল তৈরি করতে পারেননি। অভাবের সংসারে ওই টাকাও খরচ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুক্তিযোদ্ধা খালেক একটি দোকান থেকে পান খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় নাসির উদ্দিন তাঁর পথ রোধ করে টাকা চান। টাকা দিতে খালেক সময় চাইলে নাসির ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। শুরু হয় দুজনের মধ্যে বাগিবতণ্ডা। একপর্যায়ে নাসির খালেককে লাঠিপেটা করতে থাকেন। এতে গুরুতর আহত হন খালেক। তাঁকে প্রথমে শহরের আল-ফালাহ হাসপাতাল ও পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিত্সকেরা তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। যশোর নেওয়ার পথে বিষয়খালীতে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে তাঁর মরদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। এ ঘটনায় হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল ঝিনাইদহ সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
খবর পেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন আহম্মদসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা খালেকের বাড়িতে যান। তাঁরা আবদুল খালেকের মরদেহ নিয়ে শহরে মৌন মিছিল করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মকবুল হোসেন বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য হামদহ এলাকায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের বাড়িতে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। আশপাশের লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে নাসির উদ্দিন পলাতক।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান জানান, তাঁরা দ্রুত আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

0 comments:

Post a Comment