Saturday, October 31, 2009

লুসিও বেনিনাতি

0 comments

সুদূর ইতালির নেপলসের মানুষ তিনি। অথচ বাংলাদেশের পথশিশুদের সঁপেছেন তাঁর মনপ্রাণ। গড়েছেন ‘পথশিশু সেবা সংগঠন’ নামের ছোট্ট একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গরিব মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতেই বেছে নিয়েছেন বস্তির হতদরিদ্র জীবন। পরিচিত হোন লুসিও বেনিনাতির সঙ্গে।

লুসিও ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার বায়না ধরে ভালো ফ্যাসাদে পড়েছি। রাস্তার দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টে বাতি নেই। বড় রাস্তা থেকে ভেতরে চলে গেছে যে সরু গলি, সেখানে রীতিমতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটার উপায় নেই। এবড়োথেবড়ো অন্ধকার পথ। দুই পাশে নানা বয়সী মানুষ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে। লুসিও ভাইয়ের সেসব দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ধোঁয়াটে এঁদো গলির ভেতর হনহনিয়ে চলেছেন তিনি। রাস্তার ওপর রান্না শুরু করেছে এক পরিবার। ‘তুমি কি রান্না করছ?’ রাঁধুনি মেয়েটির কাছে জানতে চান লুসিও। ‘ভাত খায়া যান লুসিও ভাই।’ চট করে বলে মেয়েটিও। ‘তুমি সত্যি বলছ? কি সৌভাগ্য আমার।’ হাসতে হাসতে লুসিও বললেন বটে, কিন্তু তাঁর হাঁটার গতি শ্লথ হয়নি এক ফোঁটাও। বুঝে নিতে হয়, এই ত্বরিত রসিকতা তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিত্যদিনকার ভাববিনিময়ের অংশ। রাস্তা তখনো শেষ হয়নি। দু-দুটো নেড়ি কুকুর, শখানেক বাচ্চাকাচ্চা আর গোটাবিশেক ঘরবাড়ি পেরিয়ে খাবি খেতে খেতে যে জায়গাটায় এসে থামি, সেখানেও কোনো আলো নেই। অন্ধকারের ভেতর লুসিও ভাই অনেকক্ষণ খুটখাট করার পর শেষমেশ একটা বাতি জ্বলে। বেড়ার দরজা খুলে তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলেন। খুপড়িঘরের ভেতরটা দেখলে সত্যিই চোখে পানি আসে। ছোট একটা চৌকির ওপর তোশক পাতা। তেলচিটচিটে একটা বালিশ এক কোনায়। ঘরে বাকি আসবাব বলতে একটা পুরোনো বেতের শেলফ আর একটা টেবিল ফ্যান। মাথার ওপর রশিতে একটা পাকা কলার কাঁধি ঝুলছে। সেই সুদূর ইতালি থেকে এসে এমন হতদরিদ্র জীবন কেন বেছে নেবে একজন মানুষ? চোখ কচলে আরও একটু ঠাহর করে দেখতে ইচ্ছে করে।

লুসিও ভাই নিজে অবশ্য কোনো রকম আমলই দেন না ব্যাপারটাকে। ‘সারা দিন আমি গরিব বাচ্চাদের মধ্যে থাকি। ওদের সেবা দিই। একটু চিকিত্সা করি। লেখাপড়া করাই। আর রাতে যদি আমি দালানকোঠায় গিয়ে থাকি তাহলে ওদের দুঃখ আমি কেমন করে বুঝব?’ তাঁর উল্টো প্রশ্ন।
বাতিল কাগজ কুড়িয়ে, আঁস্তাকুড়ের ময়লা ঘেঁটে, সদরঘাটে কিংবা কমলাপুরে মিনতির কাজ করে জীবন কাটে যাদের, যাদের দেখার কেউ নেই, তাদের জন্য তিনি সঁপেছেন নিজের সব। ঢাকার পথশিশুরা জানে, লুসিও ভাইয়ের আগমন মানেই মহা আনন্দময় এক উপলক্ষ। এমনকি লুসিও ভাই নামটাও তাদের দেওয়া। মানুষটার গায়ের রং তাদের মতো নয়। বাংলা শিখেছেন তিনি বহু সাধ্য সাধনা করে। কিন্তু এই লুসিও ভাইই বুঝতে পারেন তাদের অন্তরের ব্যথা। শরীরের ঘা, খোসপাঁচড়া আর আঘাত নিয়ে ওরা যখন কাতরায় তখন এই সাদা মনের সাদা মানুষটিই এসে দাঁড়ান ওদের পাশে।

নেপলসের জীবন
ব্রাদার লুসিও বেনিনাতির জন্ম ইতালির নেপলসে। আট ছেলে আর দুই মেয়ের সংসার টানতে একটু কষ্টই হতো বাবা এলিও আন্তোনিয়েত্তার। দোকানের সাইনবোর্ড বানাতেন তিনি। মা ছিলেন গৃহবধূ। নয় বছর বয়স থেকেই নিজের খরচ নিজেই চালাতে দোকানে কাজ করতে শুরু করেন লুসিও। তারপর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য চলে যান মিলান। কাজ আর পড়া দুটো একসঙ্গে চালিয়েই সফলভাবে শেষ করলেন ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিপ্লোমা নেওয়ার কাজ। সেসবের পাট চুকিয়ে ২২ বছর বয়সে বাধ্য হয়েই যোগ দিতে হলো সেনাবাহিনীতে। কিন্তু গুলিবারুদের গন্ধ ভালো লাগল না বেশি দিন। ইংরেজি ১৯৭৮ সাল সেটা। তখনই তাঁকে পেয়ে বসে মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা।
এরই মধ্যে প্রেম হয়েছে মার্গারিথার সঙ্গে। হ্যাঁ, শুধুই প্রেম। তার বেশি কিছু নয়। নিজের মনোবাসনা লুসিও একদিন বললেন মনের মানুষ মার্গারিথাকে। মার্গারিথা মানতে পারলেন না কিছুতেই। কিন্তু লুসিও তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। শিগগিরই মার্গারিথার বিয়ে হয়ে গেল অন্যত্র। আর লুসিও যোগ দিলেন নার্স মানে সেবকদের প্রশিক্ষণ শিবিরে। কুষ্ঠ রোগের চিকিত্সা বিষয়েও নিলেন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ। এবার শুধু মানুষের সেবায় মনপ্রাণ সঁপে দেওয়ার পালা।

ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নামটা মিলানে কি নেপলসে বসেই শুনেছিলেন লুসিও। জানতেন, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয় এই দেশ। আরও বেশ কয়েক বছর পরে জানলেন, বাংলাদেশ শুধু ঘূর্ণিঝড়ের দেশ নয়, ধর্মীয় সম্প্রীতিরও দেশ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে আছে সদ্য জন্ম নেওয়া এই স্বাধীন দেশটিতে।
১৯৮৮ সালে লুসিও প্রথম পা রাখলেন আমাদের বাংলাদেশে। দেখলেন চারদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ। খুব একটা ‘বিশৃঙ্খলা’ মনে হলো চারদিকে। দেখলেন একদিকে পথের পাশে শুয়ে ঘুমায় মানুষের সন্তান। অন্যদিকে সুরম্য অট্টালিকার সারি।
সেবার তিনি দিনাজপুর-ময়মনসিংহের রেলস্টেশনগুলোতে ছিন্নমূল গরিব বাচ্চাদের জন্য কাজ করলেন বেশ কিছু দিন। তারপর ডাক এল ব্রাজিল থেকে। ১৯৯৪ সালে পাড়ি জমালেন ব্রাজিলের সাওপাওলো। ওখানকার অবস্থা হয়তো আরও করুণ মনে হয়েছিল তাই। বহু বস্তি আছে সেখানে। রাস্তাঘাটে রাত-দিন কাটে অগণন শিশু-কিশোরদের। তার চেয়ে ভয়ানক কথা, ওদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত। লুসিও ওদের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হলেন যেন। সাত বছরের মতো সময় কাজ করার পর লুসিও ব্রাজিলের পথশিশুদের দেখার ভার তুলে দিলেন তাঁর সহকর্মীদের হাতে। মনে পড়ল বাংলাদেশকে, যেখানে অনেক অসমাপ্ত কাজ ফেলে এসেছেন তিনি। ব্রাজিল থেকে এলেন ভারতে। আশা বাংলাদেশে আসার। কিন্তু ভিসা মিলল না। দুই বছর চেষ্টার পর ২০০৬ সালের মে মাসে মিলল অনুমতি। এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই নামলেন কাজে। প্রথম চার মাস অন্য কিছু নয়, শুধু বাংলা শিখলেন মণিপুরিপাড়ার একটি স্কুলে। পরের বছর তিনি শুরু করলেন তাঁর পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ।

লঞ্চঘাটে একদিন
মহা শোরগোল পড়ে গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এদিক-সেদিক জটলা করছিল যেসব ছেলেপিলের দল তারা ভোঁ দৌড় দিয়ে আসছে। নাকের সিকনি মুছতে মুছতে বোনকে কোলে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে একজন। কুলির কাজ করে যেসব বালক, তারাও ছুটছে গাট্টি-বোঁচকা টানাটানির কাজে ইস্তফা দিয়ে। লুসিও ভাই তখন সবে তাঁর ওষুধপথ্যের ব্যাগটা নিয়ে নেমেছেন টার্মিনালের সামনে। টার্মিনালের একটা কোনায় নিজের মালপত্র রাখতে না রাখতেই তাঁকে ঘিরে বাচ্চাদের ভিড়। হইচই, চিল্লাচিল্লি। লুসিও এরই মধ্যে ত্রস্ত হস্তে কাজ করে চলেছেন। তাড়া দিচ্ছেন সঙ্গী স্বেচ্ছাসেবকদের, ‘ছিঃ ছিঃ তোমরা এত দেরি করে আসলে কেন? বাচ্চারা অপেক্ষা করছে।’
মিনিট দশেকের মাথায় লাল সুতো দিয়ে টার্মিনালের একটা কোনা ঘিরে ফেলা হয়। রশির সঙ্গে ছোট ব্যানার। ‘পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ চলছে।’ চার কোনায় চারটা তেরপল বিছিয়ে গোল হয়ে বসে যায় ওরা সবাই। থলে থেকে বেরোয় রংবেরঙের খেলনা। রং পেনসিলের বাক্স। অ আ ক খ শেখার রংদার ছবিওয়ালা বই। ওরা কেউ পড়ে, কেউ রং পেনসিল দিয়ে আঁকিবুঁকি করে। লুসিও তাঁর ওষুধপথ্যের বাক্স খুলে বসে যান আরেক পাশে। পয়লা নম্বর রোগীর নাম আল-আমিন। কোথায় যেন কেটে গেছে ১০ কি ১২ বছর বয়সী আল-আমিনের পা। লুসিও শুরুতে তুলো দিয়ে পরিষ্কার করেন ক্ষতস্থান। তারপর কি যেন একটা মলম লাগান। এসবের ফাঁকেই বাচ্চা বয়সী একজন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। গলায় মধু ঢেলে ডাকলেন, ‘এই যে ছোট ভাইয়া, আসো। কাছে আসো।’
প্রাপ্তবয়স্ক বেশ কয়েকজন কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিচ্ছিল। তাদের দিকে আবার হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি, ‘ভাইয়া, দইয়া করেন। এখন যান। আমাদের জন্য অসুবিধা হয়। একটু দইয়া করেন। এটা শুধু বাচ্চাদের জন্য।’
আল-আমিন চিকিত্সা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। লুসিও আবার তাকে হাত ধরে বসান। ‘তুমি কৃমির ঔষধ খেয়েছ? কত দিন আগে?’ আল-আমিন মাথা ঝাঁকায়। সে এক মাস আগে খেয়েছে। পরের রোগীর নাম রাজু। চার কি পাঁচ বছর বয়স। পরনে একটা ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। পিঠে বড়সড় একটা ক্ষত।
লুসিও কি একটা ওষুধ লাগাতেই প্রথমে ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলে রাজু। তারপর লুসিও কানে কানে কি একটা বলতেই পোকায় খাওয়া সব দাঁত বের করে হেসে ফেলে সে। ‘কৃমির ঔষধ খেয়েছ?’ রাজু কি বুঝে কে জানে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে। লুসিও তার পেট টিপেটুপে দেখেন। ‘না। তুমি খাও নাই তো।’ লুসিও মৃদু তিরস্কার করেন রাজুকে কোলে বসিয়ে। রাজুর নাকেমুখে কালিঝুলি লেপটে আছে। সিকনির দাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে ঠোঁটের ওপর। লুসিও ভেজা একটা ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে ধীরেসুস্থে ঘষেঘষে পরিষ্কার করেন সব। তারপর পিঠ চাপড়ে রাজুকে বিদায় করে পরের রোগীকে ডাকেন।

পথশিশু সেবা
সপ্তাহে ছয় দিন বিজয় সরণি, কমলাপুর রেলস্টেশন, মোহাম্মদপুর, সদরঘাট, সংসদ ভবন এলাকায় এভাবইে কাজ করেন লুসিও। তাঁর দেখাদেখি অনেক বালাদেশি তরুণ-তরুণীও নাম লিখিয়েছে পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের খাতায়।
‘বছর কয়েক আগের ঘটনা সেটা। কারওয়ান বাজার এলাকায় একটা ছেলে আমাদের কাছে এল। ছেলেটার সারা গায়ে ঘা। সেখান থেকে পুঁজ ঝরছে। বিকট গন্ধের কারণে তার কাছে ঘেঁষা যায় না। আমরা সবাই তাকে দেখে হকচকিয়ে গেছি। লুসিও বেনিনাতি কোনো রকম দস্তানা ছাড়া তার ঘা স্পর্শ করলেন। লম্বা সময় নিয়ে সব জায়গায় ওষুধ লাগালেন। তারপর চুমো খেলেন ছেলেটার কপালে। এই ঘটনা এখনো আমার চোখে ভাসে। একটা মানুষ কেমন করে আরেকটা মানুষকে এত ভালোবাসতে পারে?’ বলছিলেন আখতার হোসেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক তিনি। রাস্তার গরিব বাচ্চাদের জন্য লুসিওর হূদয়ের উষ্ণতা ছুঁয়ে গেছে তাঁকে। লুসিওকে দেখে উত্সাহি হয়েই প্রায় দুই বছর তিনি কাজ করছেন পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এ রকম ৬০-৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শ্রমেই চলে পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ। এই বাংলাদেশেরই দরদি একজন মানুষ রেজাউল করিমের কাছ থেকে ছোট একটা ঘর পেয়েছেন লুসিও। ঠিকানা মণিপুরিপাড়া। সেটাই পথশিশু সংগঠনের অফিস। pothoshishu.sheba@gmail.com এই ঠিকানায় যোগাযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক হতে ইচ্ছুকেরা। শিশুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে তাদের মন ভালো রাখা, ওষুধপথ্য দেওয়া, খেলার ছলে শিক্ষা, প্রয়োজনে হাসপাতালে বা আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া—এসব কাজই করে পথশিশু সেবা সংগঠন।
সেবার সুখ
রাত নয়টার মতো বাজে। আগারগাঁও বিএনপি বস্তির ভেতরে লুসিও বেনিনাতির ঘর দেখে ফিরছি। কেন জানি মনটা একটু উথাল-পাথাল করছে। আমার মোটরসাইকেলের পেছনে বসেছেন লুসিও বেনিনাতি। একটু দোনোমোনা করে প্রশ্নটা করেই ফেলি লুসিওকে, ‘এই যে আপনি মানুষের ঘা আর খোসপাঁচড়া ঘাঁটেন, আসাদ এভিনিউতে নিজের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ ফেলে বস্তির ভেতর দীনহীন জীবন কাটান, আপনার খারাপ লাগে না?’
ঘা, খোসপাঁচড়া ঘেঁটে খারাপ লাগার বিষয়টা শুরুতে সম্ভবত তিনি বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক। বেশ খানিক বোঝানোর চেষ্টার পর সব শুনে যেন কথায় পেয়ে বসে তাঁকে, ‘রাস্তাঘাটের এই অসহায় শিশুদের দেখে আমি বুঝতে পারি, আমাদের সমাজ অসুস্থ। সমাজ যখন অসুস্থ হয় তখনই ওদের মতো হাজারও শিশুর জন্ম হয়। সমাজের চিকিত্সা দরকার। কেউ মনে করে, বেশি সেবা পেলে সে বেশি ভালো থাকবে। ছয়টা কাজের লোক, তিনটা বাবুর্চি থাকলে সে বেশি বেশি সুখ পাবে। পকেটে অনেক বেশি টাকা থাকলে সে বেশি আনন্দ পাবে। আমি অন্য মানুষকে সেবা দিতে পারলে সুখ পাই। যত বেশি সেবা দিতে পারি তত বেশি সুখ পাই।’

বনৌষধি জাফরান

18 comments
প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলোয়লিখেছেন নওয়াজেশ আহমদ
জাফরান নিয়ে কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। বিক্সা গাছকে জাফরান বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন বেশ কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করে একটা লেখা লিখেছিলাম একটি দৈনিক পত্রিকায়। এখন জাফরানের কথা বলা যাক।


আসলে জাফরান বা কুমকুম তৈরি হয় এক ধরনের পেঁয়াজের মতো ছোট গুল্মের ফুলের গর্ভকেশর থেকে। এই কন্দগুল্মের বৈজ্ঞানিক নাম Crocus sativa, পরিবার Iridaceae। এশিয়া মাইনরের পাহাড়ি এলাকায় এর আদি বসতভূমি। প্রাচীন মিসর ও গ্রিসবাসী এর ব্যাপক ব্যবহার জানত। বিখ্যাত গ্রিক প্রজ্ঞা ও বক্ত ইসোক্রোটিস জাফরানের গুঁড়া দিয়ে বালিশ সুগন্ধি করতেন সুখনিদ্রার জন্য। ফিনিসিয়ান ও রোমানরা একে নানাভাবে ব্যবহার করত। ৯০০ শতকের দিকে আরবরা এই কন্দ সম্প্রসারণ করে স্পেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে। বর্তমানে দক্ষিণ স্পেনের আব্রুজি গ্রামে, ইতালি, পারস্য ও কাশ্মীরের পামপুরের উচ্চভূমিতে জাফরানের চাষ হয়ে থাকে। জাফরান অত্যন্ত স্পর্শকাতর আবহাওয়া, জলবায়ু ও মাটির ব্যাপারে। আগস্ট মাসে সাধারণত এর পেঁয়াজের মতো কন্দ লাইন করে চক জাতীয় মাটিতে রোপণ করা হয়। কয়েকটা পাতা গজানোর পর প্রতি কন্দ থেকে দু-তিনটি হালকা বেগুনি রঙের ফুল দেখা দেয়। পাপড়ি ছয়টি। অক্টোবর মাসে এই ফুল সংগ্রহ করা হয় অতি যত্নের সঙ্গে। এরপর ফুলের ভেতর থেকে উজ্জ্বল কমলা রঙের গর্ভকেশর তোলা হয় বিশেষ যত্নসহকারে। এই কেশর শুকিয়েই তৈরি হয় জাফরান। এক পাউন্ড জাফরান তৈরি করতে প্রায় ৮০ হাজার ফুলের প্রয়োজন হয়। সে জন্য আসল জাফরান এত মূল্যবান। কাশ্মীরের জাফরান ঈষত্ লাল ও পদ্মফুল গন্ধি। এটি শ্রেষ্ঠ জাফরান বলে বিবেচিত। দক্ষিণ ইউরোপের জাফরান ফিকে লাল আর গন্ধ অনেকটা কেয়া ফুলের মতো। এর মান মধ্যম। আর ইরানের জাফরান একটু সাদাটে ও মধুর গন্ধযুক্ত। এটা নিম্নমানের।
জাফরানের উল্লেখযোগ্য রাসায়নিক দ্রব্য হচ্ছে: ক্যারোটিন, লাইকোপেন, রাইবোফ্লোবিন, ক্রোচিন ও ক্রসিটিন নামের গ্লাইকোসাইডস। ভারতের প্রাচীন ভেষজ সাহিত্যে জাফরানের সন্ধান পাওয়া যায়। গুণ পর্যায়ে সুগন্ধি, উষ্ণবীর্য, কাশ, বায়ু ও কণ্ঠরোগনাশক। দেহের কান্তিবর্ধক। পেটের নানাবিধ রোগে উপকারী। বিশেষ করে হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
নানা ধরনের খাবার-দাবারে সুগন্ধি ও রঙের জন্য জাফরানের ব্যবহার অতি প্রাচীন। মূল্যবান পোশাক রাঙাতে জাফরানের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল।
নজরুলের একটা গানের কলি দিয়ে শেষ করছি জাফরান প্রসঙ্গ।
‘পরি জাফরানী ঘাঘরি চলে সিরাজের পরী...’।







জাফরান একটি সুন্দর ফুল বেশির ভাগ ভারতে কাশ্মীরে জন্মায়। যেটি ওজনের মধ্যে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান মসলার একটি । এইটি গ্রিসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল। বিরিয়ানীতে রংএর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

এক অজানা কারণে জাফরান ফল তৈরী করতে পারে না। যার ফলে এটা বংশ বিস্তারের জন্য মানুষের সাহয্য প‌্রয়োজন হয়। ক্রোমগুলি মাত্র এক বছর পর্যন্ত বেচে থাকে এবং এর মধ্যেই এই ক্রোমগুলিকে মাটিতে রোপন করতে হয়। এইটার বাংলা নামঃ জাফরান
অন্যান্য স্থানীয় নামঃ saffron Za'afaran, Zaafaran Kesar, Zafran
বৈজ্ঞানিক নামঃ Crocus sativus পরিবারঃ Iridaceae (Iris family)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Liliopsida
বর্গ: Asparagales
পরিবার: Iridaceae
উপরিবার: Crocoideae
গণ: Crocus
প্রজাতি: C. sativus
দ্বিপদ নাম
Crocus sativus

Friday, October 30, 2009

জুলভার্ন

0 comments

উড়োজাহাজ আবিষ্কারের অর্ধ শতাব্দী আগেই যিনি হেলিকপ্টারের কথা বলেছিলেন। রেডিও আবিষ্কারের বহু আগেই যে ব্যক্তি টেলিভিশনের কথা কল্পনা করেছিলেন, যে সময় চাঁদে যাবার কথা কেউ চিনত্মা করতে পারেনি, সেই সময়ই তিনি চাঁদের বুকে মানুষের বসতি স্থাপনের কথা বলেছিলেন। অথচ নিজে তিনি ছিলেন এক ঘর কুনো মানুষ। কল্পবিজ্ঞানের উপর বিশ্বে সর্বাধিক সাড়া জাগানো বইয়ের লেখক জুলভার্ন।

তিনি আদৌ কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন না। আর যেসব কল্পকাহিনীর তিনি বর্ণনা করেছেন, সে সম্পর্কেও তার কোন বাসত্মব ধারনা ছিলো না। অথচ তাঁর কল্পকাহিনী সবগুলোই পরবতর্ী সময়ে বাসত্মব রূপ লাভ করেছে এবং আরো আশ্চর্যের বিষয় তিনি যেভাবে কল্পনা করেছেন। জিনিসগুলো তেমনভাবেই রূপ পেয়েছে। পরবতর্ীতে যেসব বিজ্ঞানী এগুলো আবিষ্কার করেছেন তারা জুলভার্নের কল্পনা দিয়েই অনুপ্রানিত হবার কথা বলেছেন।
বিখ্যাত বেতার আবিষ্কারক মার্কনি, সাবমেরিনের জনক সাইমন লেক, বেলুনিস্ট এবং ডীপ সী আবিষ্কারক অগাস্ট পিকর্াড এবং আরো অনেক বিজ্ঞানী শ্রদ্ধার সাথে জূলভার্নের কল্পনা শক্তি থেকেই অনুপ্রানিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
জুলভার্নের গল্পের নায়করা সাবমেরিন নিয়ে প্রবেশ করেছেন পাতালে, আকাশ যানে করে উড়ে গেছেন চাঁদের বুকে, যাত্রা করেছেন কত দুর্গম পথে। কিন্তু যিনি এসব দুঃসাহসিক অভিযানের কল্পনা করেছেন। সারা জীবনেও তিনি ঘর থেকেই বের হননি।
এই আশ্চর্য মানুষ জুলভানের জন্ম হয়েছিলো ফ্রান্সের নানতেস এলাকায়, ১৮২৮ সালে। বাবা ছিলেন আইনজীবী। তাঁর ইচ্ছে ছিলো ছেলেও আইন-ব্যবসা করে দু'পয়সা আয় করতে শিখুক। সাহিত্য সাধনায় একানত্ম নিমগ্ন থাকলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি তার। প্রথম গ্রন্থ 'ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন' এর পান্ডুলিপি নিয়ে শুরম্ন হলো প্রকাশকের দুয়ারে ঘোরাঘুরি। কিন্তু কেউ তাঁর এই উদ্ভট কাহিনী ছাপতে চাইলেন না। একে একে পনেরোজন প্রকাশক ফিরিয়ে দিলেন তাঁর পান্ডুলিপি। এই ঘটনায় প্রচন্ড অভিমানে পান্ডুলিপিটি পুড়িয়ে ফেলতে ছুঁড়ে দিলেন আগুনে। কিন্তু রৰা করলেন তার স্ত্রী। স্বামীকে সানত্ম্বনা দিয়ে বললেন-অনত্মত আরেকজন প্রকাশকের কাছে যাও।
অবশেষে স্ত্রীর পরামর্শই কাজে লাগলো। বইটি ষোড়শতম প্রকাশক ছাপতে রাজি হলেন। আর প্রকাশের সাথে সাথেই শুরম্ন হলো অবিশ্বাস্য রকমের কাটতি। বছরের বেস্ট সেলার হলো। শুরম্ন হলো অন্য ভাষায় অনুবাদ।
পুরনো দালালির ব্যবসা ছেড়ে শুরম্ন করলেন একানত্মমনে সাহিত্য সাধনা। টাকাও আসতে লাগলো প্রচুর। কেটে গেলো আর্থিক অনটন।
জুলভার্নের হাতে তখন অনেক টাকা। তাই তিনি এবার চলে এলেন প্যারিস থেকে আমেরিকায়।
সেখানে এসে তৈরি করলেন সুন্দর এবং মজার ডিজাইনের একটি বাড়ি। প্রকান্ড এই বাড়িটিতে ছিলো একটি টাওয়ার। টাওয়ারটি দেখতে অনেকটা নাবিকদের কেবিনের মতো। আসলে এটি ছিলো একটি চিলেকোঠা। যে চিলেকোঠায় তিনি আবদ্ধ থেকেছেন সারাজীবন। ছিলো তাঁর লেখা আর পড়ার ঘর। এখানেই তিনি কাটিয়েছিলেন জীবনের শেষ ৪০টি বছর।
জুলভার্নের জীবনের সবচাইতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডে'স। এই লেখাটি যখন প্যারিসের লা টেম্পস পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। তখন প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। বইটির প্রধান চরিত্র বাজি ধরে সত্যি সত্যি ৮০ দিনে পৃথিবী ঘুরে আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে বহু পাঠকও বাজি ধরেছিলো। জুলভর্ান পাঠকদের এই প্রচন্ড আগ্রহ ও উত্তেজনা শেষ পর্যনত্ম ধরে রাখতে সৰম হয়েছিলেন। নায়ক হাজার বিপদ অতিক্রম করে ৮০ দিনের মাত্র ৫ মিনিট বাকি থাকতে গনত্মব্যস্থলে পৌঁছে বাজিতে জিতে যায়।
জুলভার্নের এই কল্পনাকে বাসত্মবে রূপ দিতে ১৮৭২ সালে নিউ ইয়র্কের নেলি বস্নাই নামের এক সাংবাদিকও বিশ্বভ্রমনে বের হন। তিনি জুলভার্নের গল্পের রেকর্ড ভেঙ্গে ৭২ দিনে পৃথিবী ঘুরে আসেন। এরপর একজন ফরাসী সংবাদদাতা ৪৩ দিনে ভূ-প্রদৰিন করেন।
জুলভার্ন তাঁর টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগেস আন্ডার দ্য সী গ্রন্থে নাটিলাস নামের যে সাবমেরিনের কথা বলেছেন, তা ছিলো বিদু্যৎচালিত। সে বিদু্যৎ সাগর তলদেশ থেকেই সয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করা হত।
তারপর বাসত্মবে ইউ এস নেভির যে পারমানবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরি হয় তার নামও রাখা হয় নাটিলাস। আসলে জুলভানের কল্পনায় অনুপ্রানিত হয়েই এই বাসত্মবের নাটিলাস তৈরি হয়েছিলো।
জুলভার্নের শেষ জীবনটা খুব সুখের ছিলো না। কারণ বুদ্ধিজীবীরা তাঁকে অবজ্ঞা করতেন। এছাড়া জুলভার্ন ছিলেন তাঁর সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখক। এটা পন্ডিতেরা সহ্য করতে পারতেন না, যার জন্য তিনি এত বড় লেখক হয়েও ফ্রেঞ্চ একাডেমীর সদস্য মনোনীত হতে পারেননি।
১৯০৫ সালে বিশ্বের বিস্ময়কর পুরম্নষ জুলভার্নের মৃতু্য হয়। আজও তাঁর জনপ্রিয়তা একটিুও কমেনি। আজও তিনি বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখকদের অন্যতম।

হজ্বের মাহাত্ম্যপূর্ণ দোয়া সমূহ

0 comments
আবদুলস্নাহ আল বাকী
ঘর হতে বের হওয়ার সময় বলবেনঃ

বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলালস্নাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইলস্না বিলস্নাহ্।
অর্থঃ আলস্নাহ্র নামে তাঁরই উপর নির্ভর করে বের হচ্ছি। তাঁর সাহায্য ছাড়া কোন সৎ কাজই সমাধা হয় না এবং অসৎ কাজ হতেও বেঁচে থাকা যায় না। মক্কায় হারাম শরীফে প্রবেশকালে পড়বেনঃ
আলস্নাহুম্মা হাযা আম্নুকা ওয়া হারামুকা ওয়ামান দাখালাহু কানা আমিনা। ফাহার্রিম লাহ্মী ওয়া দামী ওয়া আযামী ওয়া বাশারী আলান্নার।
অর্থঃ হে আলস্নাহ্! ইহা তোমার সুরৰিত পবিত্র স্থান। এখানে যে-ই প্রবেশ করে, সে-ই তোমার আইনে নিরাপত্তা পায়। সুতরাং আমার রক্ত, গোশ্ত, অস্থি ও চর্মকে দোযখের আগুনের জন্য হারাম করে দাও।
কা'বা শরীফ দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র এ দো'আ পাঠ করবেনঃ
লাব্বাইকা আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাক্। আলস্নাহুম্মার যুক্নী বিহা কারারান্; ওয়ার যুকনী ফীহা রিয্ক্বান হালাল।
অর্থঃ আমি হাজির, হে আলস্নাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, কোন শরীক নাই তোমার, আমি হাজির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সকল সাম্রাজ্যও তোমার, কোন শরীক নাই তোমার। হে আলস্নাহ! এখানে আমাকে স্থিতি এবং হালাল রম্নযী দাও।
মাকামে ইব্রাহীমের নিকটে গিয়ে পড়বেন
আলস্নাহুম্মা ইন্নাকা তা'লামু সিররী ওয়া আলানিয়্যাতী ফাআক্বীল মা'যিরাতি, ওয়া তা'লামু হাজাতী, ফাতিনী সু'আলী ওয়া তা'লামু মা ফী নাফসী ফাগফির্লী যুনুবী। আলস্নাহুম্মা ইনি্ন আসআলুকা ঈমানাই ইউবাশিরম্ন ক্বাবলী ওয়া ইকীনান্ সাদিকান্ হাত্তা আ'লামা আন্নাহু লাইউসিবুনী ইলস্না মা কাতাবতা লী ওয়া রিযাআমমিনকা বিমা কাস্সামতালী, আনতা ওয়ালিয়্যী ফিদ্ দুনইয়া ওয়াল আখেরাহ, তাওয়াফ্ফানী মুসলিমান ওয়াআলহিকনী বিস্সালিহীন।
অর্থঃ হে আলস্নাহ! তুমি আমার গোপন ও প্রকাশ্য সবই জান। সুতরাং আমার অনুসূচনা গ্রহণ কর। তুমি আমার চাহিদা সম্পর্কে সম্যক অবগত, সুতরাং আমার আবেদন কবুল কর, তুমি আমার অনত্দরের কথা জান, সুতরাং আমার গুনাহসমূহ মোচন কর। হে আলস্নাহ্! আমি তোমার কাছে চাচ্ছি এমন ঈমান- যা আমার অনত্দরে স্থান লাভ করবে এবং সাচ্চা ইয়াকীন- যাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে আমার জন্য যা তুমি নির্ধারিত করে রেখেছো।
তা-ই আমার জীবনে ঘটবে তুমি যা আমার ভাগ্যে রেখেছ, তাতে যেন আমি রাযী থাকতে পারি। ইহ-পরকালে তুমিই আমার সহায়। আমাকে মুসলমান হিসাবে মৃতু্য দিও এবং সৎকর্মশীলগণের সাথী করো।
মুলতাযামের দো'আঃ
আলস্নাহুম্মা ইয়া রাব্বাল্ বায়তিল আতিক, রিকাবানা ওয়া রিকাবা আবা-ইনা ওয়া উম্মাহাতিনা ওয়া ইখওয়ানিনা ওয়া আওলাদিনা মিনান্নার, ইয়া জাল জুদি ওয়াল কারামী ওয়াল ফাদলী ওয়াল মান্নী ওয়াল আতায়ী ওয়াল ইহ্সান। আলস্নাহুম্মা আহসিন আকিবাতান না ফিল উমুরী কুলিস্নহা ওয়া আজির্না মিন খিয্য়ীদ দুন্ইয়া ওয়া আযাবীল আখিরাহ্।
অর্থঃ হে আলস্নাহ্! হে প্রাচীনতম ঘরের মালিক! আমদিগকে, আমাদের পিতা-মাতাকে, আমাদের ভাই-বোনদিগকে, সনত্দান-সনত্দতিকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দাও। হে দয়ালু দাতা, করম্নণাময়! মঙ্গলময়! হে আলস্নাহ্! আমাদের সকল কর্মের শেষ ফলকে সুন্দর করে দাও। ইহকালের অপমান ও পরকালের শাসত্দি হতে আমাদিগকে বাঁচাও। যমযমের পানি পান করার দো'আঃ
আলস্নাহুম্মা ইনি্ন আস্আলুকা ইলমান্ নাফিয়ান্ ওয়া রিযকান্ ওয়াসিয়ান্ ওয়া শিফায়ান্ মিন কুলিস্ন দাইন্।
অর্থঃ হে আলস্নাহ্! আমি তোমার নিকট ফলপ্রসূ ইল্ম সচ্ছল জীবিকা এবং সকল রোগের নিরাময় কামনা করছি।
সায়ীর দো'আসমূহ
সাফা পাহাড়ে উঠতে উঠতে পড়বেনঃ
ইন্নাস্সাফা ওয়াল মারওতা মিন শা'আ-ইরিলস্নাহ ফামান হাজ্বাল বায়তা আবি' তামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আইয়াঁত্তাওয়াফা বিহিমা, ওয়ামান তাতাওওয়াআ খায়রান ফাইন্নালস্নাহা শাকিরম্নন আলীম।
অর্থঃ নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আলস্নাহর নিদর্শনসমূহের অনত্দভর্ুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি বায়তুলস্নায় হজ্ব্ব কিংবা ওমরা করবে এ দু'টির তাওয়াফ-এ (সায়ীতে) তার জন্য দোষ নাই, কেউ স্বেচ্ছায় ভাল কাজ করলে নিশ্চয় আলস্নাহ পুরস্কারদাতা সর্বজ্ঞ।
সাফা মারওয়ায় সায়ী করার সময় সবুজ পিলারদ্বয়ের মাঝে দ্রম্নত চলার সময়ের দো'আঃ
রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আ'আয্যুল আকরাম।
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ৰমা কর, দয়া কর, তুমি মহা পরাক্রমশীল, মহাসম্মানী।
আলস্নাহু আকবারম্ন কাবীরান ওয়াল হামদু লিলস্নাহি কাসীরান। ওয়া সুবহানালস্নাহিল অযীমি ওয়া বিহামদিহিল কারীমি বুকরাতা ওঁয়াআসীলা ওয়া মিনাল লাইলি ফাসজুদ লাহু ওয়া সাবি্বহ্হু লাইলান তাবিলা। লা ইলাহা ইলস্নালস্নাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহ্দাহু লা শাইআ কাবলাহু ওয়া বায়দাহ্ ইউহ্য়ী ওয়া ইউমিতু ওয়া হাইয়ুন দাইমুন লা-ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খায়রম্ন ওয়া ইলাইহিল মাসীর, ওয়া আলা কুলিস্ন শায়্যিন কাদির। রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়া'ফু ওয়া তাকাররাম ওয়া তাজাওয়াজা আম্মা তা'লাম ইন্নাকালস্নাহু তা'লামু মালা না'লাম ইন্নাকা আনতাল আআয্যুল আকরাম।
অর্থঃ আলস্নাহ্ অতি মহান আর অগণিত প্রশংসা তারই প্রাপ্য। মহান আলস্নাহ্র পবিত্রতা বয়ান করছি, দয়ালু আলস্নাহর প্রশংসা বর্ণনার সাহায্যে সন্ধ্যা ও সকালে, (হে মানব) রাতের কোন সময়ে উঠে তার দরবারে সিজদা কর। আর দীর্ঘ রাত ধরে পবিত্রতা বয়ান কর। আলস্নাহ ছাড়া আর কেউ মাবুদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়। (অতীতে) তিনি ওয়াদা পালন করেছেন, তাঁর বান্দা [মুহাম্মদ (সা:)]-কে একাই তিনি সাহায্য করেছেন আর পরাজিত করেছেন কাফিরদের দলগুলোকে। তিনি অনাদি, অননত্দ, তিনিই জীবন দেন এবং নেন, তিনি চিরঞ্জীব, অৰয়, অমর, তিনি কল্যাণময় ফিরে যেতে হবে তাঁরই নিকট সকলকে আর সব কিছুর উপর তাঁর ৰমতা অপ্রতিহত। প্রভু ৰমা কর, দয়া কর, গুনাহ্ মাফ কর, অনুগ্রহ কর, আর তুমি যা জান, তা মার্জনা কর। হে আলস্নাহ! তুমি সবই জান, যা আমরা জানি না তাও জান, তোমার শক্তি আর অনুগ্রহের তুলনা নেই।

মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ

34 comments

১। রাহমাতুলস্নীল আলামীনের পবিত্র জন্মস্থান (ছওকুল্লাইল)। ২। হযরত খাদিজা (রা:)-এর ঘর। ৩। দারম্নল আরকাম বিন আবিল আরকাম। ৪। হযরত আলীর জন্মস্থান। ৫। জান্নাতুল মুয়ালস্নাহ্ (কবরস্থান)। ৬। ওয়াদিয়ে ছারফ্ হযরত উম্মুল মুমেনীন মায়মুনা (রা:)-এর বিয়ে ও কবর। ৭। জাবালে নূর-এর গারে হেরা গুহা (কুরআন শরীফ নাযিলের পাহাড়)। ৮। জাবালে ছওর (হজরত রাসূলে করীম (সা:) হিযরতের সময় যে পাহাড়ে ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন।) ৯। মিনা (হযরত ইসমাইল আলাইহিচ্ছালামের কুরবানীর জায়গা)। ১০। মুযদালিফাহ্- (হযরত আদম ও হাওয়া (আ:)-দ্বয়ের পৃথিবীর প্রথম বাসর রাত বা ঘুমের জায়গা)। ১১। আরাফাহ- হজের ময়দান, যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আ:)-এর পৃথিবীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল। ১২। ওয়াদিয়ে মুহাসসার- বাদশাহ্ আবরাহার ধ্বংসস্থল। ১৩। ওয়াদীয়ে মুহাস্সাব- মিনা থেকে হরম শরীফে ফেরার পথে হুজুর (সা:) এই জায়গায় অবতরণ করেন এবং মাগরিবের নামায আদায় করেন। এখানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে। ১৪। হুদায়বিয়া- বর্তমান নাম (ছুমাইসীয়া, মক্কা থেকে ২১ কি.মি. দূর)। ১৫। ওয়াদিয়ে ফাতেমা- মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর অবতরণস্থল। ১৬। হুনাইন- মক্কা বিজয়ের পর এখানে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হয়, আলস্নাহ ফেরেশতা দিয়ে এই যুদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন। ১৭। জেরানা, বড় ওমরার জায়গা রাসূলুলস্নাহ (সা:) হুনাইন যুদ্ধের পর এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন, এটাই শ্রেষ্ঠ মিকাত। এখানে একটি মসজিদ আছে, যাকে মসজিদে রাসূল (সা:) বলা হয়। ১৮। নাখলা- মক্কা থেকে ৪৫ কি.মি. দূরে মক্কা ও তায়েফের মাঝামাঝি এই উপত্যকা। এখানে খেজুর বাগান ছিল, এই অঞ্চলের নাম 'নাখলা'। এই জায়গাটি মিষ্টি পানির জন্য প্রসিদ্ধ। আলস্নাহর নবীর জবানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শুনে জ্বীন জাতির ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এখানেই ঘটে বলে জায়গাটি ঐতিহাসিক।
মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ মসজিদ
১। মসজিদে আবুবকর (রা:) এখানে হযরত আবুবকর (রা:)-এর বাড়ি ছিল। ২। মসজিদে খালেদ বিনওয়ালিদ। ৩। মসজিদে জ্বীন। ৪। মসজিদে বাইআহ্। ৫। মসজিদে খায়েফ। ৬। মসজিদে নামেরা। ৭। মসজিদ তাইঈম।
মক্কার ঐতিহাসিক পাহাড়সমূহ
১। জবলে নূর। ২। জবলে সওর। ৩। জবলে আবু কোবাইস। ৪। জবলে রহমত।
কাবা শরীফ ও মক্কা শরীফের রহস্যপূর্ণ জায়গাসমূহ
১। আলস্নাহর ঘরের ভিতরে, তবে সেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করা সম্ভব নয় তাই হাতীমে (বাইতুলস্নাহর পাশে গোলাকার দেয়াল ঘেরা কিছু উন্মুক্ত খালি জায়গা) নামায পড়ার সুযোগ আছে।
২। মুলতাজাম বা কা'বা ঘরের দরজা, ১৩৬৩ হিজরীতে বাদশা আব্দুল আজীজ আস্সৌদ একটি সুন্দর কাঠের দরজা লাগান, সেটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছিল। বর্তমান দরজাটি বাদশা খালেদ লাগিয়েছেন। এতে ২৮৬ কি. গ্রা. খাঁটি স্বর্ণ লাগানো আছে, এতে আলস্নাহর ও কুরআন শরীফের আয়াত- 'কুল ইয়া ইবাদিয়ালস্নাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহীম, লাতা কনাতুমির রাহমাতিলস্নাহ্, ইন্নালস্নাহা ইয়াগফিরম্নজ্জুনুবা জামিয়া।
লেখা আছে। তাই এই আয়াত পড়ে এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে অবশ্যই দোয়া কবুল হয়।
৩। কাবা ঘরের পেছনের দেয়াল অর্থাৎ রোকনে ইয়ামানীর কাছে এখানো দোয়া কবুল ও নিষ্পাপ হওয়ার দলিল আছে। যেহেতু হুজুর (সা:) হিযরতের পর এখানে দাঁড়িয়েই ১৬ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায আদায় করেছেন এবং কেবলা পরিবর্তনের দোয়া করেছিলেন।
৪। হাতীম বা হিজরে ইসমাইল হিজরে ইসমাইলের অপর নাম হচ্ছে হাতীমে কা'বা। এই হাতীমে হযরত ইসমাইল (আ:) ও তাঁর মা হযরত হাজেরা (আ:)-এর কবর আছে বলে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইসমাইল (আ:)-এর দোয়ার বরকতে এই বেহেশতি ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। আলস্নাহর ঘরের ভিতর নামায পড়ার ইচ্ছা করলে হাতীমে পড়ে নিলেই তা আদায় হয়ে যাবে।
৫। হাজরে আসওয়াদ, বাইতুলস্নাহ শরীফের পূর্বকোণে ৩/৪ ফুট উঁচুতে দেয়ালের ভেতরে সংরৰণ করা সেই পাথর বেহেশতের সবচেয়ে মূল্যবান পাথর। রূহের জগতে এই পাথরের উপরে হাত রেখে হুজুর (সা:)-এর রূহ মুবারক আমরা আলস্নাহর বান্দা ও আলস্নাহ আমাদের প্রভু এই প্রতিশ্রম্নতি পাঠ করিয়েছিলেন। হযরত আদম (আ:) পৃথিবীতে আসার সময় আলস্নাহ পাক সেই পাথর তার সাথে দিয়ে দেন, পরবতর্ীতে তিনি সেটা জাবালে আবু কোবাইছে রাখেন তখন সে পাথর বরফের মত সাদা ও সূর্যের মত আলোকিত ছিল। নূহু (আ:)-এর বন্যার সময় আলস্নাহ পাক পুনরায় আসমানে উঠিয়ে নেন। হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর দ্বারা কা'বা ঘর তৈরির সময় আবার তা ফেরেশতার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ইব্রাহীম (আ:) সেই পাথরকে আলস্নাহর ঘরের দৰিণ-পূর্ব কোণে স্থাপিত করেন। তাই এখান থেকেই তাওয়াফ শুরম্ন হয়। হাদীস শরীফে আছেঃ
হজরে আসওয়াদ প্রথম আবু কুবাইছ পাহাড়ে নাজিল হয়, সেখানে তা ৪০ বছর পর্যনত্দ থাকে। তারপর তা হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর আগেই --ভিত্তির উপর লাগানো হয়।
অর্থাৎ-মাকামে ইব্যাহীম ও হিজরাল আসয়াদ এই পাথর দু'টিই বেহেশতের পাথর। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আগেই হাজরে আসওয়াদ নাজির হয়েছে। বন্যার সময় এটিকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তারপরই ইব্রাহীম (আ:) এর কাবা শরীফ নির্মাণের সময় জিব্রাইল (আ:) তা নিয়ে আসেন।
১১। কা'বার গেলাফ আলস্নাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উজ্জল নিদর্শন। ইয়েমেনের বাদশা তবুউল হুমায়রী আলস্নাহর ঘর ধ্বংস করতে এসে কাবার অলৌকিকতা অভিভুত হয়ে নিজেই তৎকালীন সময়ের সব চাইতে মূল্যবান সবুজ ডোরা কাটা কাপড় দিয়ে গেলাফ তৈরি করে পরিয়ে দেন। সেই থেকে এ যাবৎ প্রতি বছর আলস্নাহর ঘরে গেলাফ পরানোর প্রচলন অব্যাহত রয়েছে।

শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহ্মদ

0 comments
পল্লীগীতির কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহ্মদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তাঁর মেয়ে বিখ্যাত শিল্পী ফেরদৌসী রহমান

আব্বাকে তো সবাই একজন শিল্পী হিসেবেই জানে। আমি জানি বাবা হিসেবে। আদর্শ বাবা। কিন্তু তিনি কেমন স্বামী ছিলেন—কথাটা মা বেঁচে থাকলে ভালো বলতে পারতেন। হয়তো কোনো সময় বলেছেনও। আমি সন্তান হিসেবে যতটুকু দেখেছি, আব্বা সত্যিই ভালো স্বামী ছিলেন। মাকে তিনি আলাদা সম্মান করতেন।
মার আসল নাম লুত্ফুন্নেছা। আব্বা আদর করে আলেয়া ডাকতেন।
প্রায় সব সময়ই দেখা যেত, যেকোনো ব্যাপারে আব্বার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু একটিবারের জন্য হলেও তিনি মাকে জিজ্ঞেস করতেন, আলেয়া তুমি কী বলো?
এটা আমার খুব ভালো লাগত। এখানে আব্বার একটা রোমান্টিকতা প্রকাশ পেত। আব্বার মতো প্রেমিক স্বামী পাওয়া যেকোনো নারী জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ব্যাপারে আব্বা সব সময় মার সহযোগিতা নিতেন। মা যে খুব শিক্ষিত নারী ছিলেন, তা কিন্তু নয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর আমার বড় ভাই মোস্তফা কামালের জন্ম।
মার সঙ্গে বাবার একেবারে ঝগড়া হয়নি, এটা ঠিক না। কিন্তু আমরা টের পেতাম না। উঁচু কণ্ঠে চিত্কার কখনো শুনিনি। মাঝেমধ্যে দেখতাম, মা হয়তো কোনো কারণে অভিমান করেছেন। আব্বা সেটা বুঝতেন। তারপর মাকে নিয়ে রিকশায় করে কোথাও ঘুরতে চলে যেতেন। কিংবা সিনেমা দেখে আসতেন। যাওয়ার আগে বলতেন, ‘মাগো তোমরা পড়ো। আমরা একটু ঘুরে আসছি।’
আব্বা ধর্মভীরু ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। নামাজের ব্যাপারে বেশ তাগিদ দিতেন। প্রতিদিন মাগরিবের নামাজটা আমরা এক সঙ্গে আদায় করেছি। তাই যেখানেই থাকতাম, মাগরিবের সময় বাসায় ফিরতাম।
পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসার পর আমার চাচা-চাচিরাও চলে এলেন। আব্বা নিজের বাড়িতে তাঁদের রেখেছেন। আমাদের পুরানা পল্টনের বাড়িটা একটা মেলার মতো ছিল। খুব আত্মীয়স্বজন আসত। বছরের বেশির ভাগ সময় আমরা নিজেদের বিছানায় ঘুমানোর সুযোগ পেতাম না। যেখানে পড়েছি, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়তাম। কেউ ছুটি কাটাতে, কেউ চিকিত্সার জন্য, কেউ ভর্তি হতে কিংবা চাকরির জন্য আসত। এসব কাজে আব্বার কোনো কার্পণ্য ছিল না।
আব্বা কাউকে হেয় করে কথা বলতেন না। বেদারউদ্দিন চাচা, সোহরাব চাচা, শামসুদ্দিন চাচা, লতিফ চাচা, শেখ লুত্ফর রহমান—এঁদের যে কী স্নেহ করতেন, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। সামনে বসে মিষ্টি মিষ্টি কথা আর পেছনে হিংসা, সমালোচনা—এটা কিন্তু তখন দেখিনি। আব্বা বলতেন, কেউ কারও জায়গা নিতে পারবে না। প্রত্যেকের জায়গা আলাদা।
আব্বা খুব আমুদে ছিলেন। লায়লা আপা—লায়লা আরজুমান্দ বানু—খুব তাড়াতাড়ি কণ্ঠে গান তুলতে পারতেন। আব্বার সেটা খুব ভালো লাগত। তিনি বলতেন, ‘ওর মতো হওয়ার চেষ্টা করো। একটা গান একবার শুনলেই মেয়েটার হয়ে যায়। ও একটা ব্লটিং পেপার।’ লায়লা আপাকে তিনি ডাকতেন ‘ব্লটিং পেপার’। তাঁরা এক সঙ্গে দেশের বাইরে অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন।
আভা আলম বলে একটি মেয়ে খুব ভালো গান করতেন। আব্বা তাঁর গানের খুব প্রশংসা করতেন। কোনো শিল্পীকে তুলে আনার ব্যাপারে আব্বার কোনো জুড়ি ছিল না। একবার যদি তিনি বুঝতে পারতেন, একে দিয়ে কিছু হবে, তাহলেই হলো। আব্বা নিজে তো ভাওয়াইয়া গান করতেন। তিনি কিন্তু একা রেকর্ড করে ক্ষান্ত হননি। সেই বলরামপুর, তুফানগঞ্জ, কোচবিহারের গ্রামগঞ্জ থেকে শিল্পীদের কলকাতায় এনে গান রেকর্ড করিয়েছেন। তিনি বলতেন, একা আব্বাসউদ্দীন থাকলে হবে না। আরও শিল্পী তৈরি করতে হবে।
আব্বা আমাকে পল্টন ময়দানে ঈদের নামাজে নিয়ে যেতেন। যতটুকু মনে পড়ে, সেই ছোট বয়সে চার-পাঁচবার অন্য দুই ভাইয়ের সঙ্গে আমাকেও ঈদের নামাজে নিয়ে গেছেন। ঈদটা তো এক দিনের। কিন্তু ঈদ পুনর্মিলনী ছিল একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। এর রেশ থেকে যেত আরও অনেক দিন। এটা আমাদের কাছে খুব আনন্দের ছিল।
তুখোড় ছাত্র ছিলেন আব্বা। সব সময় প্রথম, কখনো দ্বিতীয় হননি। তাঁর স্বপ্ন ছিল, তাঁর ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনায় খুব ভালো হবে। আমার বড় ভাই আব্বার মতো তুখোড় ছাত্র ছিলেন। পরের ভাই মুস্তাফা জামান আব্বাসীও সমান তালে ভালো করেছেন। আমিও করেছি মোটামুটি।
আমি পড়তাম কনভেন্ট স্কুলে। সেখানে ক্লাসে সব সময় প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকতাম। আব্বা সব সময় বলতেন, মাগো পড়ো। তাঁর খুব শখ ছিল, আমি গড়গড় করে বিলেতি মেম সাহেবদের মতো ইংরেজি বলব।
তখন অন্য স্কুলের তুলনায় কনভেন্ট স্কুলের পড়াশোনাটা একটু ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। এর পরও তিনি আমাকে সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে আর আব্বাসী ভাইকে পাশের সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি যখন ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হই, তখন আমার বয়স ছয়-সাত বছর। প্রথম দিন পড়তে হয়েছিল, ‘আই ক্যান সিং, মাদার ক্যান সিং, ক্যান ইউ সিং।’ আমার এখনো মনে আছে, আব্বা একটা বড় খাতা তৈরি করে পুরো ইংরেজি বইয়ের প্রতিটা শব্দের অর্থ আলাদা করে নিজের হাতে লিখে দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, ‘মাগো মানেগুলো মুখস্থ করো।’
সত্যি বলতে, প্রথম তিন মাসের মধ্যে আমি ক্লাস থ্রি থেকে ফোরে উঠলাম। এমনভাবে আব্বা আমাকে পড়ালেন, আমার ইংরেজি খুব ভালো হয়ে গেল। আমি গড়গড় করে ইংরেজি বলতে পারলাম। আব্বার স্বপ্ন পূরণ হলো।
আমি পরীক্ষায় প্রথম কী দ্বিতীয় হলাম, তাতে আমার চেয়ে বেশি আনন্দ হতো আব্বার। সবার কাছে তা বলতেন। তবে একটা ব্যাপার দেখেছি, তিনি আমাদের সামনে কখনো প্রশংসা করতেন না। বলতেন, ছেলেমেয়েদের সামনে যদি প্রশংসা করো, তাহলে তারা মাথায় উঠে যাবে। আরও ভালো করার চেষ্টাটা তখন থাকবে না।
আমাকে কনভেন্ট থেকে বলা হলো, তোমার তো বয়স হয়নি। আরও দুই বছর পর সিনিয়র ক্যামব্রিজ দিতে হবে। তখনো আমার ১৫ বছর হয়নি। আব্বা বললেন, তুমি বাংলা স্কুলে ভর্তি হও। ছয় মাসের মধ্যে মেট্রিক পরীক্ষা দাও। পড়াশোনার সঙ্গে যেন বয়সের মিল থাকে।
তিনি আমাকে কনভেন্ট স্কুল থেকে ছাড়িয়ে বাংলা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। স্কুলের নাম ছিল বাংলাবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। ওখানে ভর্তি হয়ে জানতে পারলাম, মেট্রিক পরীক্ষার মাত্র ছয় মাস বাকি।
এখানে বিষয়গুলো সব আলাদা। সিনিয়র ক্যামব্রিজে যা পড়েছিলাম, তার সঙ্গে কোনো মিল নেই। যেমন: ইতিহাস। এটা কখনো পড়িনি। এ রকম অনেক বিষয় ছিল। তবে আমার পড়াশোনার মানটা ছিল সেই কনভেন্ট স্কুলের মতো। তাই পরীক্ষায় সব কটি বিষয়েই স্টার মার্কস পেলাম। সংগীতে পেলাম ৯৫। ওটা ছিল সে বছর সর্বোচ্চ নম্বর। আব্বার ভয় ছিল, মেয়ে তো ইতিহাসে গোল্লা খাবে। কিন্তু এই বিষয়ে আমি লেটার নম্বর পেয়েছিলাম। আমি সারা দেশে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় সপ্তম হয়েছিলাম। আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছিল ২৬ জুন। ১৯৫৬ সাল। দুই দিন পর ২৮ জুন, আমার জন্মদিন। আব্বা বেশ ঘটা করে জন্মদিন উদ্যাপন করার আয়োজন করলেন। অনেক শিল্পী এলেন। সেই অনুষ্ঠানের কথা আমি আজও ভুলিনি। এর আগে আমার কোনো জন্মদিন পালন করা হয়নি।
খুব মজা করতেন আব্বা। একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। কবি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে আব্বার খুব বন্ধুত্ব ছিল। আমরা চাচা ডাকতাম। তাঁর পুরো পরিবারের সঙ্গেই ছিল আমাদের দারুণ সম্পর্ক। তখন আমরা খুব ছোট। এক দিনের ঘটনা—সবাই ঘুমিয়েছে। আব্বা লুঙ্গিটা ওপরে টেনে মালকোচা দিলেন। গায়ে সরিষার তেল মাখলেন। মুখটা অন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেন। তিনি চোরের মতো করে সাজলেন। ওই সাজে তিনি মোস্তফা চাচার ঘরে ঢুকে গেলেন। সেখানে ট্রাংক নিয়ে টানাহেঁচড়া করার সময় আওয়াজ হলো। মোস্তফা চাচা টের পেয়ে দিলেন বেদম মার। সেই গল্প যতবারই আব্বা কিংবা গোলাম মোস্তফা চাচা বলতেন, ততবারই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাওয়ার জোগাড় হতো।
আব্বার সঙ্গে কবি জসীমউদ্দীন চাচার একটা টক্কর থাকত। গল্প করতে করতেই লেগে যেত ঝগড়া। আব্বা তাঁকে খ্যাপাতে পছন্দ করতেন। কিছুক্ষণ রাগারাগির পর আবার গলাগলি, বন্ধুত্ব। এরপর মাকে ডেকে বলতেন, ‘আলেয়া মুড়ি মাখা দাও।’ এটা তাঁরা খুব পছন্দ করতেন। পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ আর বেশ সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে দিতেন মা। যত ভালো খাবারই থাক না কেন, ওই মুড়ি মাখা থাকলে তাঁদের আর কোনো খাবার লাগত না।
আব্বা খুব স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করতেন। লাউটা ছিল খুব পছন্দ। আব্বা বলতেন, এটা যতই খাও, ক্ষতি নেই। ফল কেনার বেলায় আব্বা ছিলেন ওস্তাদ। আম, কমলা, কলা যাই কিনুক, কিনেছেন শ ধরে।

আমাদের জন্য তখন একটা কষ্টকর খাবার ছিল খাসির পায়ার স্যুপ। চার আনায় খাসির ৮-১০টা পায়া পাওয়া যেত। বাসায় রোজ পায়া আসত। সকালে সবার নাস্তা হয়ে যাওয়ার পর মা এক হাড়ি পানিতে সেই পায়াগুলো গোলমরিচ আর লবণ দিয়ে কয়লার চুলায় বসিয়ে রাখতেন। বিকেলে ওটা বেশ ঘন হয়ে যেত। সেটা আমাদের অবশ্যই খেতে হতো। প্রতিদিন সেই খাবারটা খাওয়া আমাদের জন্য যে কী কষ্টকর ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। আব্বার মতে, জিনিসটা শরীরের জন্য খুব উপকারী। তাই যত কষ্টই হোক, খেতে হবে।
মাছ ছিল তাঁর খুব প্রিয়। বাজারে গেলে কয়েক পদের মাছ কিনে আনতেন। শিলং, পাঙাস, চিতল, ইলিশ—এগুলো ছিল তাঁর পছন্দ। একদিন তো সবগুলো পদের মাছই তিনি কিনে আনলেন। তখন তো আর ফ্রিজ ছিল না। মাকে তিনি বললেন, ‘আলেয়া যতটুকু পারো রান্না করো।’ তাঁর বন্ধুদের খবর দিলেন। তাঁরা সবাই পরিবার নিয়ে চলে এলেন। রান্না হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে, শেষে খুব হইহুল্লোড় করে খাওয়া হলো। এগুলো আব্বা খুব উপভোগ করতেন।
খাবারের মধ্যে বড় মুরগি ছোট ছোট টুকরা করে টকটকে লাল রান্না খুব পছন্দ করতেন। এ ছাড়া খুব পছন্দের মধ্যে ছিল ইলিশ মাছ আর লাউ-চিংড়ির তরকারি। আব্বা নিজে খুব ভালো রান্না করতেন। কোথাও হয়তো কিছু খেয়ে ভালো লাগলো। বাসায় এসে সেটা আবার আমাদের রান্না করে খাওয়াতেন।
ছোটবেলায় আমরা খুব ক্যারম খেলতাম। আব্বাও খেলতেন। খেলতে বসে তিনি অন্য কোনো ঘুঁটির দিকে তাকাতেন না। কখন লালটা ফেলবেন, সেটাই ছিল একমাত্র চেষ্টা। ওদিকে আমরা সব ঘুঁটি ফেলে দিলাম। আব্বার খেয়ালই নেই, তিনি সেই লাল নিয়েই আছেন। বড় হওয়ার পর বাড়ির সামনের উঠানে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। হঠাত্ তিনি আমাদের খেলতে বলে রান্নাঘরে চলে যেতেন। সেখানে আলু, ফুলকপিসহ আরও অনেক কিছু সিদ্ধ করে তার সঙ্গে কিছু মশলা দিয়ে চটপটির মতো তৈরি করতেন। খেলা শেষ হওয়ার পর তা খেতে দিতেন।
আব্বা কিন্তু খুব সিনেমা দেখতেন। আমরা যখন বড় হলাম, তখন ছিল উত্তম-সুচিত্রার যুগ। তাঁদের সব ছবিই দেখতেন। যে ছবির গান কিংবা গল্প খুব ভালো লাগত, সেটি কয়েকবার দেখতেন। প্রথম তিনি মাকে নিয়ে দেখে আসতেন। এরপর আমাকে আর আব্বাসী ভাইকে পাঠিয়ে দিতেন দেখে আসার জন্য। কোনো গান যদি খুব ভালো লাগত, তাহলে সেটা আমাকে কয়েকবার দেখাতেন। তখন তো গানপ্রধান ছবি বেশি হতো। যেসব ছবির গান পছন্দ হতো, সেই গানের রেকর্ড কিনে আনতেন। গানটা কণ্ঠে তুলে নেওয়ার জন্য বলতেন। ইংরেজি ছবিও দেখতেন, উর্দু ছবি তত না।
ঢাকায় আসার পর রূপমহল, আজাদ প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যেতাম। পল্টনে আসার পর গুলিস্তান সিনেমা হল তো আমাদের চোখের সামনে হলো। রূপমহলেই বেশি ছবি দেখা হয়েছে। ওখানে বাংলা ছবিই বেশি দেখানো হতো। আর মেয়েদের জন্য ছিল আলাদা বসার ব্যবস্থা। এখানে মায়ের সঙ্গে ছবি দেখতে যেতাম। টিকিটের দাম ছিল চার আনা কী আট আনা। আসলে তখন তো বিনোদন বলতে শুধু সিনেমা। তাই সিনেমাটাই বেশি দেখা হতো।
আব্বা আমাদের বেড়াতে নিয়ে যেতেন। সেই ছোটবেলায় তিনি আমাদের দার্জিলিং বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর অনেকবার বিভিন্ন দেশে গিয়েছি। দার্জিলিংয়েও গিয়েছি। কিন্তু আব্বার সঙ্গে সেই প্রথম যাওয়ার অনুভূতিটা এখনো ভুলতে পারি না।
আমাদের বেড়ানোটা হতো সাধারণত শীতকালে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর, ডিসেম্বরে। নিজে যখন নিয়ে যেতে পারেননি, আমাদের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দিতেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে। অসম্ভব সুন্দর জায়গা। ওখানে আমার চাচা থাকতেন। সেখানে ১৫-২০ দিন বেড়িয়ে আসতাম। আবার নানা বাড়িতেও যেতাম। এই বেড়ানোটা আব্বার নিয়মের মধ্যে ছিল। তাঁর মতে, ছেলেমেয়েরা একটু বেড়িয়ে এলে জানুয়ারি থেকে আবার নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করতে পারবে।
আব্বার ডায়েরির একটা লেখা আমার ভালো লাগে। তিনি বেঁচে থাকতে কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাননি। এ ব্যাপারে তিনি লিখেছেন, ‘এতে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি যা পেয়েছি, তা হলো মানুষের ভালোবাসা। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। আমি জানি, কোনো না কোনো সময় সরকার আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’ হয়েছেও তাই, মৃত্যুর পর তিনি অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
আসলে আব্বা যা বলে গেছেন, তার প্রায় সবই আমার নিজের জীবনে ফলতে দেখেছি। তাঁর মতো দূরদর্শী মানুষ আর দেখি না।
প্রায় পিঠাপিঠি চারটি সিনেমা হল। চারটিতেই একযোগে নাইট শো ভাঙলে সাতমাথার মোড়টা অনেকক্ষণ গমগম করতে থাকে মানুষের ভিড়ে। যে যেদিকেই যাক, সাতমাথায় আসতেই হয়। তারা আসে খেলাশেষে স্টেডিয়াম থেকে বেরুনো মানুষের মতো। একটু আগে দেখা সিনেমাটি গরম চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে না খেলে তাদের আশ মেটে না। সেটা মেটাতে আর দিনের শেষ আড্ডাবাজি সারতে বড়জোর আরও পনেরো মিনিট। রাত তখন বারোটা পেরোয়।

সাতটি রাস্তা যেখানে মিলেছে সেখানটায় চা-লাড্ডু-বনরুটি-পান-সিগারেটের দোকানগুলো ঘিরে কিছু লোক তার পরও খামোখা থেকে যায়। ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের ধরবে বলে পনেরো-বিশটা রিকশাও মোটামুটি জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের চালকেরা সাধারণত বগুড়ার পুবের যমুনার নদীভাঙা এলাকার কৃষক। লোকে বলে ‘পুবা’। বাদবাকিদের বেশির ভাগই রংপুর-কুড়িগ্রামের আধিয়ার। তখনো ঢাকার লোকেরা ‘মফিজ’ বলে এদের নাম ফাটায়নি। তবে তারা পরস্পরের ‘বাহে’, মানে ‘বাবা হে’। তাদের দেশ-গ্রামের পরিচয়ও নাকি ‘বাহের দেশ’।
যাত্রী না আসা পর্যন্ত এই বাহেরা রিকশার হ্যান্ডেলে পা, পিঁড়ির মতো সিট আর যাত্রীর আসনে শরীরটা এলিয়ে সটান শুয়ে জিরোয়। থানার দিকে যে রাস্তাটা গেছে তার গোড়ার ফ্রেন্ডস অডিওতে তখনই ফুল ভলিউমে বাজতে শুরু করবে বাবুল কিশোরের বিচ্ছেদী গান, ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি গো’, কিংবা ফেরদৌসী রহমান কি আর কারও কণ্ঠে ভাওয়াইয়া, ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভোমরা রে’। এই মধ্যরাতে বিক্রিবাট্টার আশা না থাকলেও কী আশায় দোকান খুলে রেখে গানে গানে পত্র লেখা বা কাজল ভোমরার কথা বলে বোঝা ভার। হয়তো আমারই মনের খেয়াল, কিন্তু মনে হয় বিদেশ-বিভুঁইয়ে আছে বলেই ওরা এমন উতলা। ওদিকে ফেরদৌসী তাঁর পরমা গলায় গাইতে শুরু করেন—
‘ও কি গাড়িয়াল ভাই
কত রব আমি পন্থের দিকে চায়া রে\
যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়
নারীর মন মোর বুরিয়া রয় রে\
ও কি গাড়িয়াল ভাই
কত কাঁদিম মুই নিধুয়া-পাথারে।
ও কি গাড়িয়াল ভাই
হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে।’
তারা কি তবে নিধুয়া-পাথারে হাহাকার করে বেড়ানো কোনো নারীর জন্য পথে পথে বাওকুংটা বাতাসের মতো ‘ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরে’? যখন আর সে মৈষাল নয়, নয় গাড়িয়াল বন্ধু; সে যখন ওই গরু বা মহিষের ঢংয়েই দুই উরু আর পাছা নাচিয়ে রিকশা চালায়, তখন তার চ্যাংড়া মনে কিসের ফাপর গুমরে মরে কে জানে?
‘মইষ চড়ান মোর মইষাল বন্ধু রে
বন্ধু কোন বা চরের মাঝে
এলা কেনে ঘণ্টির বাজন
না শোনেঙ মুই কানে মইষাল রে।’
কৃষ্ণের বাঁশি শুনে নয়, গাড়িয়ালের গরুর গলার ঘণ্টি শুনে আকুল হয়ে বাড়ির বাহির হয় ভাওয়াইয়া রাধা। কিন্তু গাড়িয়ালের গাড়ি কি আর এ পথে আসে? মৈষাল গেছে সেই চেংড়িদের দেশে, যারা ‘জানে ধুলা পড়া’, যারা ‘ছল করিয়া কাড়িয়া নিবে/হাতের দোতরা মইষাল রে।’ এবং ‘সেই না দেশে পুরুষ বান্ধা/থাকে নারীর কেশে রে।’ কিন্তু আমাদের রাধাও কম যায় না। ওঝা যেমন সাপের বিষ ঝেড়ে নামায়, তেমনি ‘মুই অভাগী ঝারেঙ বন্ধুক/ক্যাশের আগাল দিয়া রে।’
বাহেদের পূর্বপুরুষ ছিল কৃষিসমাজের সবচেয়ে তলাকার মৈষাল-গাড়িয়াল—মূলত রাখাল। ভাওয়াইয়া গানের মর্মে যে বিরহ-বেদনার গল্প, তার নায়ক এই মৈষাল আর নায়িকা তার ‘যুবা নারী’। এরাই বাহের দেশের রাধা-কৃষ্ণ। তিস্তা বা ধরলা এদের যমুনা। নিধুয়া-পাথার এদের বৃন্দাবন, শিমিলা বৃক্ষ (শিমুল) এদের কদম, বগাবগি কিংবা ডাহুকডাহুকি এদের শুকসারি। আর চিলমারীর বন্দর এদের মথুরা। কৃষ্ণ যেমন মথুরায় গিয়ে আর ফেরে না, ভাওয়াইয়া নারী তার গাড়িয়াল বন্ধুকেও তেমনি হারায় চিলমারীর বন্দরে বা আরও ওপরে কোচবিহারের গোয়ালপাড়ায় কিংবা আসামের কামাখ্যা পাহাড়ে। কিংবা সে বান্ধা পড়ে ব্রহ্মপুত্র কি তিস্তার কোনো চরে জোতদারের বাথানে—
‘বাথান বাথান করেন মৈষালরে
মৈষাল, বাথান কইরচেন বাড়ি—
যুবা নারী ঘরে থুইয়া,
কায় করেন চাকিরি মৈষাল রে।...
বাথান ছারেক, বাথান ছারেক রে
ও মৈষাল ঘুরিয়া আইসেক বাড়ি,
গলার হার বেচেয়া দিম মুঞি
ঐ চাকিরির কড়ি মৈষাল রে।’
মৈষাল আর তার যুবা নারীর প্রেম-দাম্পত্য মিলনহীন। তারা যেন চিরবিরহী ডাহুক-ডাহুকি। সামন্ত সমাজে মৈষালের স্বাধীন কোনো ভূমিকা নেই। বাপ-ভাই আর স্বামীর শাসনে নারীটি অবরুদ্ধ। তার প্রেমিক পেটের টানে দূরের দেশে ঘোরে কিংবা আটকে যায় চাকরির ফাঁদে। এই করুণ জীবনের মর্মব্যথা ফুটে ওঠে আব্বাসউদ্দীনের গলায়—
‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে।
উড়িয়া যায়রে চকোয়া পঙ্খি
বগীক বলে ঠারে
তোমার বগা বন্দী হইছে ধর্লা নদীর পারে।
এই কথা শুনিয়া বগী দুই পাখা মেলিল—
ওরে ধর্লা নদীর পাড়ে যায়া দরশন দিলরে;
বগাক দেখিয়া বগী কান্দেরে
বগীক দেখিয়া বগা কান্দেরে।’
ভাওয়াইয়া নারী-পুরুষ এভাবে তাদের সমাজের বন্ধন আর জমিদারি শোষণের ফাঁদে বন্দী হয়ে পরস্পরের জন্য কাঁদে। কিংবদন্তির গণসংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস লিখেছেন, ‘এইসব ছবি কালিদাসের বা রবীন্দ্রনাথের হাত থেকে কোনো দিনই আসতে পারে না।’ কারণ, ‘প্রকৃতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও মিলনের সম্পর্ক যে জনসমাজের, তাদের কণ্ঠেই এই ধরনের গান জাগতে পারে।’ (গানের বাহিরানা) তাই ভাওয়াইয়া উত্তরের জনসমাজের জাতীয় গীত।
জনসমাজ বললে আসলে তেমন কিছু বোঝায় কি? আঠারো/উনিশ শতক পর্যন্ত বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর-কোচবিহার অঞ্চলে ব্যাপক আকারে নতুন জনবসতি ও আবাদের পত্তন হতে থাকে। বন কেটে পতিত জমি হাসিল করতে গিয়ে কোচ ও রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে বাঙালি কৃষিজীবীরা একাকার হয়ে যায়। এদের বিরাট অংশ মুসলমানও হয় (রিচার্ড ই ইটন, রাইজ অব ইসলাম ইন বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার)। রাজবংশী ও কোচ সমাজের কৌম জীবনের ছাপ তাই ভাওয়াইয়া গানের পরতে পরতে। সংস্কৃতির ভেতর সমন্বয়ের মধ্যে সংঘাতের লক্ষণগুলো চামড়ায় বসন্ত দাগের মতো এখনো ধরা পড়ে। মৈষাল, গাড়িয়াল বা মাহুতের স্বাধীন বিচরণের আকাঙ্ক্ষা আর দরিদ্র কৃষক-কন্যার প্রণয়-প্রতিবাদ সেই ইশারাই করে।
এক নদীতে কয়েকটি স্রোতের মধ্যে একটি যেমন প্রধান, ভাওয়াইয়ার আবহে নারী-মনের বাসনা-বেদনা-বিদ্রোহ তেমনই এক প্রধান স্বর। নারীর এই নিরন্তর আকুলতাই ভাওয়াইয়া গানের প্রাণভোমরা। তাদের মনে তখনো কৌম সমাজের সাম্য ও প্রকৃতিবাসের টান ফুরায়নি। গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রাণপুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাস মনে করেন, নারীর স্বাধীন প্রেমকে রক্ষণশলীতার নিগড়ে বাঁধার চেষ্টা হলে ভাওয়াইয়া নারী তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বাপ-ভাই যখন তাকে বাল্য বয়সে স্বামী নামক এক অচেনা লোকের কাছে টাকা নিয়ে বিয়ে দেয়, সেই অভাগিনী তখন বাবা-ভাই ও সেই স্বামীকে ক্ষমা করে না। মন পোড়ে তার বগার জন্য, মৈষাল বা গাড়িয়াল বন্ধু বা প্রেমিক কাজল ভোমরার জন্য। মদাসক্ত স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত এই নারীর আশ্রয় তখন চ্যাংড়া দেবর।
‘ও মোর ভাবের দেওরা
থুইয়া আয় মোক বাপ ভাইয়ার দেশে রে
বাপ ভাই মোর দুরাচার
বেচেয়া খাইছে মোক দুরান্তর রে
বেচেয়া খাইছে মোক মদকিয়ার ঘরেরে।’
তার কাছে, ‘স্বামী আমার যেমন তেমন/দ্যাওরা আমার মনের মতোন/দ্যাওরা মরলে হবো পাগল, হবো দেশান্তরী রে’। তার এমন প্রণয়ই তার প্রতিবাদ। সমাজপতিদের চাপে তার আপনকীয়া প্রেম যেখানে অবরুদ্ধ, সেখান থেকেই তা পাহাড়ের তলার ঝরনার মতো পরকীয়া প্রেমের খাতে বইতে শুরু করে। তার আপনকার প্রেমের কথাই সে বলে রাধা-কৃষ্ণের বরাতে। কিন্তু তার এই প্রেম রাধা-কৃষ্ণের লীলা নয়, এ তার ব্যক্তিগত ‘সোনার চান্দ’কে পাওয়ার বাসনা। আমরা দেখব, কৌম সমাজের আপনকীয়া প্রেম যখন নিয়ম ও শাস্ত্রের চাপে আর প্রকাশিত হতে পারছে না তখন তার প্রেমিক কালা হয়ে যায় কৃষ্ণ, আরও পরে প্রেমিক কৃষ্ণ প্রভু কৃষ্ণে রূপান্তরিত হন। কিন্তু ভাওয়াইয়া নারীর প্রেম নিজেকে বদলাতে অস্বীকার করে। তার মৈষাল তার আপনকীয়াই, পরকীয়া নয়। কীর্তন-পদাবলি ইত্যাদির সঙ্গে এখানেই তার তফাত। এ পার্থক্য কেবল সুরে বা ভাষায় নয়, এখানেই ভাওয়াইয়া নারীর নিজস্ব স্বর ও আবেগের বিশিষ্ট গড়নটিকে প্রেমের অন্যান্য আখ্যান থেকে আলাদা করা যায়।
দুই.
ভাওয়াইয়ার সুর-কাঠামো আধুনিক গান তো বটেই ‘লোকগীতি’র অন্য অন্য ধারা থেকেও আলাদা। অনেকে একে আর্য ঘরানার বাইরে অনার্য বাহিরানা হিসেবে চিনতে চান। লালনের গান বাউলে গাইলে এক রকম, ভাটিয়ালির ঢংয়ে গাইলে এক রকম আর রাবীন্দ্রিক ভঙ্গিতে গাইলে আরেক রকম। মনের ভাব প্রকাশেও পার্থক্যটা স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ যদি বলেন, ‘আমার মন কেমন করে’, ভাওয়াইয়া নারী বলবে, ‘সোনা বন্ধু বাদে রে কেমন করে গাও রে’। প্রেয়সীর বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ হলে ভাওয়াইয়া বলবে, ‘তুই কালা যেমন দান্তাল হাতি/মুঞিও নারী তেমন ভর যুবতীরে।’ এমন জীবন্ত আর মন-দেহের সপ্রাণ প্রকাশে কীর্তন বা বৈষ্ণব গানের কৃষ্ণের দেহজ কামের বর্ণনাকেও পানসে মনে হতে পারে। ভাব প্রকাশের সকল উপাদান ও রূপক কর্মের আর চারপাশের দেখা জগত্ থেকে নেওয়া। বিমূর্ততার কোনো সুযোগ সেখানে নেই।
বাহের দেশের প্রকৃতি চড়া সুরে বাজে। এই গান মানব-মানবীর ভাবাবেগকে প্রকৃতির উচ্ছ্বাস দিয়েই বোঝে। নিধুয়া-পাথারের রুক্ষতা আর তিস্তা বা ধরলার খরস্রোতের মতোই তাদের জীবন। প্রকৃতির লীলার মধ্যেই তারা তাদের জীবনের অর্থ ও মনের ভাষা খুঁজে পায়। মানবশরীর আর প্রকৃতিশরীরের আলোড়ন-বিলোড়ন ছাড়া কিছুই প্রকাশ হতে পারে না সেখানে। হয়তো তাদের মধ্যে তখনো শরীর আর মনের ভেদ জাগেনি। এ দুয়ের টানাপোড়েনে ভোগা বা এদের শাসন করার ধাত তাদের নয়।
তিন.
একটি প্রশ্ন তার পরও উঠতে পারে: গানের কল্পনা আর জীবনের বাস্তবতার মধ্যে কি কোনো যোগাযোগ ধরতে পারা সম্ভব? জীবনের কোন অভিজ্ঞতা থেকে আসে এই আবেগ, কীসে গড়া হয় ভাবনার ভুবন? দিগন্তে যেভাবে আকাশ আর মাটিকে মিলতে দেখেও সেই মিলন অধরা রয়ে যায়, শিল্প আর জীবনের সম্পর্কের সুতাটিও কি তেমনই অধরা? গীতিকার সুরকার আব্দুল লতিফের আত্মজীবনীতে বলা একটি ঘটনায় সেই সুতার একটা প্রান্ত যেন সহসা মিলে যায়। সেই গল্প দিয়েই শেষ করি: ভাষা আন্দোলনের পরে আব্দুল লতিফ হুলিয়া মাথায় পালিয়ে গিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের এক গ্রামে, বন্ধুর বাড়িতে। গ্রামের সম্পন্ন কৃষক পরিবার। আদর-যত্নের কমতি নেই। কিন্তু বিড়ম্বনা শুরু হলো সেই বাড়ির পরিচারিকা মেয়েটিকে নিয়ে। চৌদ্দ-পনেরো হবে বয়স। দিনের বেলা সেবা-যত্ন যা করার করে, কিন্তু রাতে সে তাঁর ঘরে শুতে আসে। হাত-পা টিপে দিতে চায় ইত্যাদি। এহেন দশায় পড়ে তিনি ধরলেন শিল্পী বন্ধুকে। বন্ধু ততোধিক বিব্রত হয়ে যে ব্যাখ্যা দেন তা অনেকটা এ রকম। ওই অঞ্চলের রীতি হলো, অতিথি এলে বাড়ির ‘দাসী-বাঁদীদের’ দিয়ে তাঁকে খুশি রাখতে হয়। লতিফ সাহেব তারপর মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন এবং জানতে পারেন তার বাড়ি রংপুরে। খুবই গরিব তারা। বাপ-ভাই তাকে এক রকম বেচেই দিয়েছে এদের কাছে। বলতে বলতে মেয়েটি কাঁদে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাওয়াইয়া গানের সংকলন ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি বইয়ে একটি গান দেখে চমকে উঠি। মনে হয় এটি যেন সেই মেয়েটিরই দুর্বিষহ জীবনের কথা—যা কাউকে বলা যায় না, এমনকি মাকেও না। গানটিতে এক অভাগিনী নারী বলছে—ও কাক তোমার হাতে আমি এই চিঠি তুলে দিলাম। তুমি এই চিঠি মাকে দিও। কিন্তু মা যখন জলের ধারে যাবে, তখন এ চিঠি দিয়ো না, মা জলে ঝাঁপ দিয়ে মরবে। মা যখন ভাত রাঁধে তখনো দিয়ো না, তাহলে মা অনলে ঝাঁপ দেবে। যখন মা শাড়ি পরবে, তখনো না, মা তাহলে সেই শাড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস নেবে। গানটির শেষে মেয়েটি বলছে—
‘যখন মাও মোর নিদ্রারে যাইবে
পত্র থুইবেন কাগা সিথানের পরে
ওকি কাগা দেইখবে মাও মোর সকালে উঠিয়ারে।’
গানের সুরে ও ভাষায় এক বিষাদসিন্ধুর কলকল ধ্বনি কি আমরা শুনতে পাচ্ছি? আব্দুল লতিফের বর্ণিত কাহিনীর মেয়েটিই যেন লিখেছে ওই চিঠি?
শিল্প ও জীবন হয়তো কোথাও মিলে আছে আমাদের অগোচরে; এমনকি ইতিহাসও। বাংলার লোকগীতি আসলে বাংলার পল্লী পরিবেশে বয়ে যাওয়া কৃষক জীবনের আখ্যান, আঞ্চলিকতার খোপে খোপে বেড়ে ওঠা এই ভূখণ্ডের মানবিক ইতিহাস। সেই মানুষের আদমসুরত ওখান থেকেই এঁকে নেওয়া সম্ভব। আমাদের নিম্নবর্গীয় সমাজের লিখিত সাহিত্য নেই বললেই চলে। যা আছে তা তাদের নিজস্ব লিখন নয়। একমাত্র লোকগান-লোকসাহিত্যই সেই আধার, সেখানে তাদের আনন্দ-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-ভালোবাসার খাঁটি বয়ান আমরা শুনতে পারব। পাব সেই দেশজ মনের খোঁজ যা হয়তো বিদেশি শাসনে, নানান বিপরীত সাংস্কৃতিক চাপে নিজেকে হারিয়ে ফেলেনি, বিকৃত হয়নি। আমাদের যৌথ মনের শৈশব জানতে তার কাছে তাই ফিরতেই হয়।
বাহের দেশ দূরের কোনো অঞ্চল নয়, কুড়িগ্রামের সীমান্তে তিস্তা, ধরলা আর ব্রহ্মপুত্রের মাঝখানে আড়াই হাজার বছর পুরোনো চিলমারীর বন্দর আজও আছে। সেই বন্দরে এখনো অজস্র দেশি নৌকা ভেড়ে। তার পরও চিলমারীর পথে-বন্দরে পা রেখে মনে হয় সেটা যেন অন্য কোনো জগত্, অন্য কোনো সময়। তার বাস যতটা বাস্তবে মনের গভীরেও ততটাই। গাড়িয়াল-মৈষাল-মাহুত বন্ধুরা সেখান থেকে আর ফিরতে পারে না। ভাওয়াইয়া নারী তার কাছে কিরা কাটে, ‘কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যান কয়া যান রে’। কিন্তু সে ফেরে না। কারণ, ‘মইষের চাকরির ভীষণ দায়, মনের বাঘ মইষালক ধরিয়া খায় রে’।
পিছুডাক মৈষালকে ছাড়ে না। সময়ের খাদ থেকেও কে যেন ফের জিজ্ঞেস করে, ‘ও তোমরা গেলে কি আসিবেন, আমার মাহুত বন্ধুরে।’

স্ট্যাচু অব লিবার্টি

0 comments
১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তত্কালীন বেডলোস দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছিল ফরাসি উপহার স্ট্যাচু অব লিবার্টি। কালক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠা এই বিশাল মূর্তি আজও দুনিয়ার এক বিস্ময়কর দ্রষ্টব্য। শতবর্ষেরও বেশি বয়স হয়ে যাওয়া এই মূর্তির গল্প শুনিয়েছেন শামীম আমিনুর রহমান

মানুষ মানুষকে উপহার দেয়। এক পরিবার আরেক পরিবারকে উপহার দেয়, এমনকি এক দেশও আরেক দেশকে উপহার দেয়। কিন্তু সে উপহারটা আকারে কত বড় হতে পারে?
একটা টেলিভিশন, ফ্রিজ থেকে শুরু করে আস্ত বাড়ি উপহারের কথা চিন্তা করা যায়। কিন্তু উপহারের ওজন যদি হয় ২০৪.১ মেট্রিক টন? উপহারটির উচ্চতা যদি হয় ৩০৫ ফুট ৬ ইঞ্চি! ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে এমনই ‘বিকটাকার’ একটি উপহার দেওয়া হয়েছিল ফ্রান্সের তরফ থেকে। সেই উপহারটিই স্ট্যাচু অব লিবার্টি—দ্য লেডি!
এই যুগান্তকারী উপহারের পরিকল্পনার শুরু একটা নৈশভোজের টেবিলে। ১৮৬৫ সালের এক রাতের কথা। ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডেরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি ও তাঁর বন্ধু এডওয়ার্ড ডি ল্যাবোলেঁ সেদিন ল্যাবোলেঁর বাড়িতে বসে নৈশভোজ-পরবর্তী আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই আড্ডাতেই কথায় কথায় ল্যাবোলেঁ তাঁর একটা গোপন স্বপ্নের কথা বলে ফেললেন বার্থোল্ডিকে।
ব্যক্তিগত জীবনে ল্যাবোলেঁ ছিলেন শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ, সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রপ্রেমিক। ল্যাবোলেঁর স্বপ্ন, ফরাসি-মার্কিন বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বড়সড় একটা উপহার দেওয়া; মার্কিনিদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে ফরাসিদের যে বিপুল অবদান, সেটাকে কোনোভাবে স্মরণীয় করে রাখা।
পরিকল্পনাটা শুনে বার্থোল্ডি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। তিনিও তো এমন একটা সুযোগ খুঁজছিলেন! বার্থোল্ডির স্বপ্ন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক ছিল না। তিনি বিরাটাকার কোনো একটা স্থাপনা তৈরির সুযোগ খুঁজছিলেন। সম্ভব হলে সেটা কোনো সমুদ্র-উপকূলে স্থাপন করারও স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
১৮৩৪ সালের ২ আগস্ট ফ্রান্সের কোলমার শহরে জন্মগ্রহণ করা বার্থোল্ডি চিরটা কালই বড় স্থাপনার নেশায় কাটিয়েছেন। বয়স বিশ পার হতে না হতেই বিরাট আকারের ভাস্কর্য ও স্থাপনা নির্মাণের স্বপ্ন বার্থোল্ডির পাগলামিতে পরিণত হয়।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উপযুক্ত স্থান ও পৃষ্ঠপোষক খুঁজতে দুনিয়া চষে বেড়িয়েছেন তিনি। ১৮৫৬ সালে মিসরে গিয়েছিলেন প্রাচীন স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দেখার জন্য। ওই যাত্রাপথে সুয়েজ খাল মনে ধরে গেল তাঁর। পরে মিসর সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন সুয়েজের মুখে একটা বিরাট নারীমূর্তি স্থাপনের অনুমতি দিতে। কিন্তু সে প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।
বার্থোল্ডির মনে এরপর দাগ কাটে নিউইয়র্ক শহরের পোতাশ্রয়। ১৮৭১ সালে প্রথম আমেরিকা সফরের সময় শহরটিতে ঢুকতে গিয়েই তাঁর মনে হয়েছিল, এখানে হতে পারে স্বপ্নের সেই স্থাপনা। স্থাপনাটি মশাল হাতে একটি নারীমূর্তি হবে, এমন কল্পনাও করেছিলেন তিনি।
কল্পনাটা কল্পনাই থেকে যেত। কিন্তু ল্যাবোলেঁর প্রস্তাব শুনে নড়েচড়ে বসলেন বার্থোল্ডি—এবার স্বপ্ন সত্যি হবে। স্বপ্ন অবশ্য এত সহজে সত্যি হলো না। এই পরিকল্পনার প্রায় ১০ বছর পর ফ্রান্সের সরকার পরিবর্তনের পরই তা সম্ভব হয়েছিল।


পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ল্যাবোলেঁ ও তাঁর বন্ধুরা মিলে গঠন করলেন ফ্রেঞ্চ-আমেরিকান ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নই সম্ভাব্য মূর্তিটির জন্য চাঁদা তুলতে শুরু করল।
চাঁদার টাকায়ই প্যারিসে শুরু হলো পরবর্তীকালের সবচেয়ে উঁচু ও বিখ্যাত ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ। প্রথমে তার নাম দেওয়া হলো ‘লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড’, যা পরে ‘দ্য স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
প্রথমেই এল ভাস্কর্যের মুখের জন্য মডেল নির্বাচনের পালা। এই কাজটি নিয়ে অনেক গল্পে আছে। বার্থোল্ডি আসলে ঠিক কার মুখ অনুসরণ করে ‘দ্য লেডি’র মুখটা তৈরি করেছিলেন, তা কখনো বলেননি। তবে অনেকে অনুমান করেন, বার্থোল্ডির বন্ধু এক সমকালীন ব্যবসায়ীর বিধবা স্ত্রীর মুখ ব্যবহূত হয়েছে মডেল হিসেবে। আবার কারও অনুমান, এটি আসলেবার্থোল্ডির মায়ের মুখ।
সে যা-ই হোক, এরপর বার্থোল্ডি কাঠামোর নকশা করার জন্য অনুরোধ করলেন সে সময়ের বিখ্যাত স্থপতি ভাইয়োলে-লি-ডাককে। ডাক হয়তো কাজটা করতেনও, কিন্তু কাঠামোর নকশা শেষ করার আগেই তিনি মারা যান করেন। এবার ডাক পড়ে আরেক কিংবদন্তি আলেকজান্ডার গুস্তাভ আইফেলের। সে সময়ে আয়রন ব্রিজের নকশা করে আইফেল বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। পরে তো প্যারিসে নিজের নামে এক টাওয়ারের নকশা করে অমর হয়ে গেছেন।

এবার প্যারিসে শুরু হলো টুকরো টুকরো অংশের কাজ। সবার আগে শেষ করা হলো মশাল ধরা ডান হাতটি। এবার সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হলো আমেরিকায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রেও তখন তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ১৮৭৬ সালে ফিলাডেলফিয়ায় পাঠানো এই ডান হাত আবার ফেরতও পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওদিকে ১৮৮২ সালে মূর্তিটির পাদমূল তৈরির জন্য দায়িত্ব পান মার্কিন স্থপতি রিচার্ড মরিস হান্ট। তিনি কাজ শুরু দেন।
বিশাল এই মহাযজ্ঞ অবশেষে ১৮৮৪ শেষ হয়। প্যারিসে পরীক্ষামূলকভাবে মূর্তির সব অংশ জুড়ে দাঁড় করিয়েও ফেলা হয়। এবার উপহার দেওয়ার পালা।
দুই সরকার এবার এগিয়ে এল এই কর্মকাণ্ডে। ফ্রান্সে আমেরিকার প্রতিনিধি লেভি পি মরটুন ১৮৮৪ সালেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিয়নের কাছ থেকে গ্রহণ করলেন ভুবন নাড়ানো এ উপহার। পরের বছর জাহাজে টুকরো টুকরো অবস্থায় ফ্রান্স থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা করল ‘দ্য লেডি’।
শুরু হলো সংযোজনপর্ব। নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ের কাছে নির্ধারিত দ্বীপে এরই মধ্যে তৈরি করে ফেলা পাদমূলের ওপর ধীরে ধীরে জোড়া দিয়ে দাঁড় করিয়ে ফেলা হলো স্ট্যাচু অব লিবার্টি। অবশেষে এল ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর।
অভূতপূর্ব এক লোকসমাগম হলো। ধারণা করা হয়, সব মিলে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছিল সেদিন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ধনী ব্যক্তি এই ‘পাগলামি’তে একটি পয়সাও দেননি, তাঁরাও এলেন উত্সব দেখতে।
এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড উন্মোচন করলেন দ্য লেডির মুখ!


কিন্তু হায়! এমন দিন আর দেখে যেতে পারলেন না সেই ল্যাবোলেঁ। স্ট্যাচু অব লিবার্টির উদ্বোধনের তিন বছর আগে ১৮৮৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মারা যাওয়ার বেশ কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, ‘এক শ বছর পর আমরা বিস্মৃত ধূলিকণা হয়ে যাব। কিন্তু ভাস্কর্যটি টিকে থাকবে।’
না, ল্যাবোলেঁ ধূলিকণা হননি। নিজের স্বপ্নের ভেতর দিয়েই টিকে আছেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা।

মূর্তির আদ্যোপান্ত
প্রকৌশলী: ফ্রেডেরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি
কাঠামো প্রকৌশলী: গুস্তাভ আইফেল
পাদমূলের প্রকৌশলী: রিচার্ড মরিস হান্ট
অবস্থান: লিবার্টি দ্বীপ, নিউইয়র্ক সিটি
বিস্তৃতি: ১২ একর
তদারককারী প্রতিষ্ঠান: যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্ক সার্ভিস
ফ্রান্সে নির্মাণ শুরু: ১৮৭৫
নির্মাণ শেষ: জুন, ১৮৮৪
পরিবহন সম্পন্ন: ১৮৮৫
পরিবহনকারী জাহাজ: ফরাসি ফ্রিগেট ইসেরে
পরিবহনের সময়ে টুকরোর সংখ্যা: ৩৫০
স্থাপন: ২৮ অক্টোবর, ১৮৮৬
জাতীয় সৌধ হিসেবে স্বীকৃতি: ১৫ অক্টোবর, ১৯২৪
পাদমূলের উচ্চতা: ৮৯ ফুট
পাদমূল থেকে টর্চের উচ্চতা: ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি
ভিত্তি: ৬৫ ফুট
মাটি থেকে টর্চের উচ্চতা: ৩০৫ ফুট ৬ ইঞ্চি
গোড়ালি থেকে মাথার উচ্চতা: ১১১ ফুট ৬ ইঞ্চি  হাতের দৈর্ঘ্য: ১৬ ফুট ৫ ইঞ্চি
তর্জনী: ৮ ফুট ১ ইঞ্চি  এক কান থেকে আরেক কান: ১০ ফুট
দুই চোখের দূরত্ব: ২ ফুট ৬ ইঞ্চি  নাক: ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি
কোমর: ৩৫ ফুট  মুখ: ৩ ফুট
মূর্তিতে ব্যবহূত তামা: ২৭.২২ মেট্রিক টন  ব্যবহূত স্টিল: ১১৩.৪ মেট্রিক টন
মোট ওজন: ২০৪.১ মেট্রিক টন
হাতে ধরা বই: দৈর্ঘ্য ২৩ ফুট ৭ ইঞ্চি, চওড়া ১৩ ফুট ৭ ইঞ্চি, পুরুত্ব ২ ফুট
বইয়ে লেখা: JULY IV MDCCLXXVI (৪ জুলাই ১৭৭৬)
মুকুটে জানালার সংখ্যা: ২৫  মুকুটে কাঁটার সংখ্যা: ৭
সাত কাঁটার অর্থ: সাত মহাদেশ (মতান্তরে সাত সাগর)

বেনেবউ বা কৃষ্ণ কোথা পাখি বা হলদে পাখি বা ইষ্টিকুটুম

0 comments
লিখেছেন : সোমা

নামটি আমার বলি- বেনেবউ

ইংরেজীতে বলি-Black-hooded Oriole
বৈজ্ঞানিক নাম - Oriolus Xanthornus
আমরি যত নাম - বেনেবউ,হলদে পাখি,ইষ্টিকুটুম,কৃষ্ণ কোথা পাখি । 
দেখতে আমি যেমন- আকার ২৫সে.মি।গাঢ় হলদে শরীর।চোখ লাল, মাথা,গলা,লেজ ও ডানার কিছু পালক কালো বর্ণের ঠোট হালকা লাল।আমাদের মেয়ে পাখি আর ছেলে পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।
যেথায় আমার বাস-নিবাস- বনের খুব চঞ্চল প্রকৃতির পাখি । বন,বাগিচা আমায় দেখতে পাবে।
আমার খাবার মেন্যু-কীট-পতঙ্গ,ফল-ফলাদি।
যেভাবে আমি ডাকি-টু...হিইইইই বা টু...ইয়ো ইয়ো।
প্রজনন সময়-এপ্রিল- জুলাই। ডিম সংখ্যা- ৩/৪ টি।


Thursday, October 29, 2009

টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি লিডারস পুরস্কার পেলেন মনিকা ইউনূস

0 comments
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে এবং অপেরা শিল্পী মনিকা ইউনূস পেলেন ‘দোহা টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি লিডারস পুরস্কার’। নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে ভালো করার পাশাপাশি যাঁরা নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে নিজের তারকাখ্যাতি কাজে লাগান, তহবিল গঠন করেন, পরিবেশ বা মানবতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করেন—এ রকম তারকাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

‘আউটস্ট্যান্ডিং হিউম্যানিট্যারিয়ান’ বিভাগে মনিকাকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। মনিকা তাঁর কর্মজীবনের শুরু থেকেই ‘সবারই কিছু দেওয়ার আছে’ ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করছেন। যেকোনো মানুষের মধ্যেই কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে—এটাই এ ধারণার মূল কথা।
৩০ অক্টোবর কাতারের দোহায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। ৩১ অক্টোবর কাতারের রাজপরিবারের আমন্ত্রণে এক নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
মনিকাসহ এ বছর স্যার বব জেলডফ কেবিই, স্যার কিংসলে সিবিই, জোশ হার্টনেট, ড্যানি বয়েল, ক্রিশ্চিয়ান কোলসন, সেরেনা উইলিয়ামস, ভেনাস উইলিয়ামস ও স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন এ পুরস্কার পেয়েছেন। ওয়েবসাইট।

Tuesday, October 27, 2009

রামগঙ্গা

0 comments

নামটি আমার বলি -রামগঙ্গা

ইংরেজীতে বলি - Grey Tit
বৈজ্ঞানিক নাম-Parus major
আমার যত নাম - বড় তিত, রামগঙ্গা
দেখতে আমি যেমন – আকারে ১৪সে.মি।ছাই রংয়ের পিঠ ও লেজ,মাথা,গলা,ঘাড় এবং গলার নিচ থেকে বুকের কিছু অংশ কালো।সাদা গাল,ডানার পালকে ও সাদা-কালোর মিশেল আছে,পেট ধুসর।আমি আসলে দেখতে অনেকটা চড়–ই ভায়ার মত,পার্থক্য শুধু রংয়ে।
যেথায় আমার বাস-নিবাস - আমি ভারতীয় উপমহাদেশের পাখি।হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ৩৫০০ মাইলের মধ্যে এবং গাঙ্গেয় সমতলভূমিতে আমার বিচরণ বেশী।
আমার খাবার মেন্যু - কচিপাতা,কীট-পতঙ্গ,শস্যদানা।
যেভাবে আমি ডাকি - তীক্ষ স্বরে অনেকটা উইই..চি..চিইইই.. বা টিইইই...চু... টিইই...চু...
প্রজনন সময় - এপ্রিল-মে। ডিম সংখ্যা - ৪/১১ টি।


ক্লান্তির ছাপ পড়বে না মুখে

0 comments
কাল রাতভর জেগে অনেক কাজ করতে হয়েছে? ভালো ঘুম হয়নি? আগামীকাল অফিসে বা অন্য কোথাও কোনো জরুরি মিটিং আছে বা অনুষ্ঠান আছে, যেখানে চেহারাটা একটু সতেজ থাকা প্রয়োজন। অথচ আগের রাতে ঘুমের অভাবে চোখের কোণে পড়েছে গাঢ় কালি। চেহারাটাও দেখাচ্ছে ক্লান্ত। এ সমস্যা দূর করতে পারসোনার সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাসের সঙ্গে কথা বলে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

চোখের ফোলা ভাব ও কালো দাগ
চোখের ফোলা ভাব ও ক্লান্তি দূর করতে কানিজ আলমাসের পরামর্শ হলো—আগের রাতে ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা ব্যবহূত টি-ব্যাগ দিয়ে ১৫ মিনিট শুয়ে থাকবেন। তারপর চোখ থেকে কান পর্যন্ত হালকা ম্যাসাজ করলে ক্লান্তি কেটে যাবে। পার্টিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি চোখের হালকা মেকআপের প্রতি জোর দিয়েছেন। অন্যান্য দিন যাঁরা মাশকারা বা আইশ্যাডো ব্যবহার করেন না, তাঁরা কাজল, মাশকারা, ম্যাট পাউডার, আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা হালকা রঙের হতে হবে। চোখের নিচের কালো দাগ ঢাকার জন্য কনসিলার লাগাতে পারেন। কনসিলার ব্যবহার করা হয় ত্বকের কালো দাগ, ত্রুটি ও দাগজনিত বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে চোখের কালো দাগ ঢাকতে পেনসিল, লিকুইড বা ক্রিম কনসিলার খুবই উপযোগী। এটি আবার বিভিন্ন রঙেরও হয়ে থাকে। যেমন: কালো, গোলাপি, হলদে, জলপাই, কমলা, সাদা, বাদামি ইত্যাদি। চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর করার জন্য হলদে, জলপাই ও কমলা কনসিলার খুবই ভালো। যাঁদের গায়ের রং ফরসা তাঁদের হালকা রঙের কনসিলার ব্যবহার করাই ভালো। চোখের কালো দাগের জায়গায় দাগের চেয়ে এক বা দুই রঙের হালকা শেডের কনসিলার ব্যবহার করুন। সব সময় ওপর থেকে নিচে করে ত্বকের সঙ্গে এটি মিশিয়ে নিতে হয়। অবশ্যই কনসিলার লাগানোর পর ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার লাগাতে ভুলবেন না। এটি লাগানোর পর যদি বেশি গাঢ় মনে হয়, তাহলে অল্প আইক্রিম হালকাভাবে তার ওপর লাগিয়ে নিতে পারেন।
চুল
অফিসে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে চুলে পাঞ্চক্লিপ ও ব্যান্ড দিয়ে অথবা বেণি করে বাইরে গেলেও তাঁদের বেশ স্মার্ট দেখায়। আর স্কুল-কলেজ বা ইউনিভার্সিটি-পড়ুয়া মেয়েরা চুলে ব্লোড্রাই করা থাকলে খুলে রাখতে পারেন কিংবা পনিটেল করে চুল বাঁধতে পারেন।
ঠোঁট
ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক অথবা গ্লস যেকোনোটিই ব্যবহার করতে পারেন।
পানি পান করুন
গরমে প্রচুর পানি পান করতে হবে। একই সঙ্গে সালাদ, টাটকা, খাবার ও লাল চা খেতে পারেন। এতে ত্বকে আর্দ্রতা বজায় থাকবে ও সতেজ লাগবে।
অবশেষে আপনার পছন্দমতো উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরতে পারেন। তবে সব সময়ই খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই হয়। না হলে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সহায়ক না হয়ে ক্ষুণ্নও করতে পারে। তারপর নিজেকে আয়নার সামনে দেখুন সকালের আলোর জন্য আপনি কতটুকু সুন্দর হলেন।

Thursday, October 22, 2009

অস্কারে বাংলাদেশের ছবি

0 comments


২০০২ মাটির ময়না
পরিচালক : তারেক মাসুদ

২০০৫ শ্যামল ছায়া
পরিচালক : হুমায়ূন আহমেদ
২০০৬ নিরন্তর
পরিচালক : আবু সাইয়ীদ
২০০৭ স্বপ্ন ডানায়
পরিচালক : গোলাম রাব্বানী বিপ্লব

২০০৮ আহা!
পরিচালক : এনামুল করিম নির্ঝর

২০০৯ বৃত্তের বাইরে
পরিচালক : গোলাম রব্বানী বিপ্লব

গাজায় টনি ব্লেয়ারকে ফিলিস্তিনি যুবকের ধাওয়া!

0 comments
'গেট আউট ইউ টেররিস্ট'



গাজার পশ্চিম তীরে একটি মসজিদ পরিদর্শনে গিয়ে এক ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি  যুবকের ধাওয়া খেলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার (৫৬)। টনি ব্লেয়ারকে  দেখেই 'গেট আউট ইউ টেররিস্ট (তুমি সন্ত্রাসী, দূর হও)' বলে ওই যুবক তার দিকে ধেয়ে যান। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় হকচকিয়ে যান। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ত্বরিত গতিতে ওই যুবককে ধরাশায়ী করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যান। জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত টনি ব্লেয়ার মঙ্গলবার পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের ঐতিহাসিক ইব্রাহিমি মসজিদ পরিদর্শনে গেলে এই ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সঙ্গে মিলে টনি ব্লেয়ার আফগানিস্থান ও ইরাকে হামলায় অংশ নেয়ার এবং ইসরাইলকে সমর্থন করার কারণে ওই যুবক সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেন। খবর আইটিএন ও স্কাই নিউজের।
সূত্র জানায়, ওই যুবক ইব্রাহিমী মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন। নামাজ শেষে একটি ব্যাগ হাতে বের হয়ে টনি ব্লেয়ারকে  দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে যায়। তিনি ধেয়ে যান ব্লেয়ারের দিকে। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে জাপটে ধরে মেঝেতে ফেলে আটক করেন। ওই যুবক 'ইসলামিক লিবারেল পার্টি হিজবুত তাহরির'-এর একজন সমর্থক। আটক হবার পর তিনি চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, 'ফিলিস্তিনে ব্লেয়ারের প্রবেশের অধিকার নেই'। বারবার তাকে বের হয়ে যেতে বলেন তিনি।
পরে টনি ব্লেয়ারকে সাংবাদিকরা মন্তব্যের জন্য ঘিরে ধরেন। ব্লেয়ার  বলেন, 'আপনারা জানেন সে তার মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, দুই- একজনের ৰোভকে গোটা জাতির ক্ষোভ হিসেবে মনে করা হবে ভুল হিসাব।
।। ইত্তেফাক ডেস্ক ।।

Tuesday, October 20, 2009

কমলাফুলি

0 comments

নামটি আমার বলি- কমলাফুলি

ইংরেজীতে বলি-Orange-Headed Thrush,Whitethroated Ground Thrush
বৈজ্ঞানিক নাম- Zoothera citrina
দেখতে আমি যেমন- আকারে আমি প্রায় ২১সে.মি লম্বা।সুরমা রংয়ের ডানা ও পিঠ,মাথা,গলা,বুক ও পেট কমলা বর্ণের।ঠোঁট কালো।
যথায় আমার বাস-নিবাস- আমি বন,বাঁশঝাড়,বাগিচায় ঘুড়ে বেড়াই। কদাচিৎ আমায় লোকালয়ে দেখতে পাবে ।
আমার খাবার মেন্যু- কীট-পতঙ্গ,বুনোফল ।
যেভাবে আমি ডাকি- আমি উচ্চস্বরে ক্রিইইইইই..... করে ডাকি।
আমায় নিয়ে একটা দারুন ছড়া আছে । ছোট্টবেলায় তোমরা সবাই পড়েছ,
‘‘কমলাফুলি কমলাফুলি,কমলালেবুর ফুল
কমলাফুলির বিয়ে হবে কানে মতির দুল
কমলাফুলির বিয়ে দেখতে যাবে
ফলার খাবে চন্দনা আর টিয়ে,
কোথায় থাকো কমলাফুলি ?
‘সিলেট আমার ঘর’
টিয়ে বলে দেখতে যাব পাখায় দিয়ে ভর।


Writer: Soma

Monday, October 19, 2009

প্রবাল চৌধুরী

0 comments

প্রবাল চৌধুরী বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী। তিনি ১৯৪৭ সনে চট্টগ্রামের রাউজানের বিনাজুরিত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। ক্লাসিক্যাল সংগীত আর ভরাট কণ্ঠের অধিকারী এই শিল্পীকে আশির দশকে সঙ্গীতবোদ্ধারা অভিহিত করেছিলেন বাংলাদেশের হেমন্ত মুখোপাধ্যায় হিসেবে। হেমন্তের প্রতিটি গানই তার গলায় বেশ শোভা পেত।

তার গাওয়া ‘সোনা বউ' চলচ্চিত্রের‘আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য,তোমারি প্রেমেরই জন্য’বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে 'লোকে যদি মন্দ কয়, সেতো নহে পরাজয়', 'আরে ও প্রাণের রাজা, তুমি যে আমার' ইত্যাদি।
১৭ অক্টোবর,২০০৯ রোজ শনিবার তিনি পরলোক গমন করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।

চখাচখী

0 comments

নামটি আমার বলি- চখাচখী

ইংরেজীতে বলি- Ruddy Shelduck
বৈজ্ঞানিক নাম-Tadorna ferruginea
দেখতে আমি যেমন- মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত আমি প্রায় ৬৫সে.মি লম্বা।গায়ের পালক লালচে খয়েরি রংয়ের হয়,আমাদের মেয়ে পাখিগুলোর মাথা সাদা বর্ণের,গলায় কালো মালা আছে,ঠোঁট,পা এবং লেজের শেষটা কালো।

যেথায় আমার বাস- আমি তোমাদের দেশে শীতকালে অতিথি হয়ে আসি।তিব্বতের মালভূমি আমার আদি নিবাস।বিল-ঝিল বা নদীর চরায় আমাদের দল বেঁধে দেখতে পাবে।
আমার খাবার মেন্যু- নানা ধরনের পোকা-মাকড়,শামুক,ছোট মাছ,শস্যদানা,কচিঘাস খুব প্রিয় ।
আমার যতো ভাই-বেরাদার- ছবি দেখে বুঝতেই পারছো আমি হাঁস গোত্রের পাখি ।
প্রজনন সময়- এপ্রিল-জুন। ডিম সংখ্যা- ৬/৮ টি।


লিখেছেন : সোমা

Seal Hunting

0 comments

YOU MAY Like_
চড়ক পূজা

Sunday, October 18, 2009

হাট্টিমা

0 comments
লিখেছেন : সোমা

নামটি আমার বলি- হাট্টিমা

ইংরেজীতে বলি- Red-wattled Lapwing
বৈজ্ঞানিক নাম- Vanellus indicus
আমার যত নাম- টিটি,ট্টিটিভ,লাল লতিকা,হাটিটি।
দেখতে আমি যেমন -আকারে আমি প্রায় ৩৫সে.মি লম্বা।
মাথা,গলার সম্মুখভাগথেকে বুক পর্যন্ত কালো।লম্বা হলদে পা,চোখের পাশ থেকে নিচের দিকে,পেট পর্যন্ত সাদা,পিঠ ও ডানা তামাটে বাদামি বর্ণের,লেজ কালো।ঠোটের সামনের অংশ কালো।আমরা মেয়ে পাখি আর ছেলে পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।
যেথায় আমার বাস-নিবাস - জলাভূমির পাখি আমি।বিল-ঝিলের ধারে মাটিতে গর্ত খুড়ে বাসা বাঁধি।
আমার খাবার মেন্যু- জলজ কীট-পতঙ্গ,শামুক,মাছ ।
প্রজনন সময়-মার্চ-আগষ্ট,ডিম সংখ্যা-৪/৬ টি।


Saturday, October 17, 2009

নোবেল পুরস্কার

0 comments
 এ পর্যন্ত ৮০৬ জন ও ২৩টি সংস্থা নোবেল পুরস্কার লাভ করেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বা কোনো কোনো সংস্থা একাধিকবার পুরস্কারটি পেয়েছে।


 ফ্রান্সের জ্যাঁ পল সার্ত্রে ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে আর ভিয়েতনামের লি দাক থো ১৯৭৩ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। সার্ত্রে বরাবরই প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন, আর লি ‘পুরস্কার গ্রহণের অবস্থায় নেই’ এই যুক্তিতে পুরস্কার নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

 এ পর্যন্ত ১২ জন নারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রথম নারী অস্ট্রেলীয় লেখিকা ও শান্তিবাদী বার্থা স্টাটনার।

 সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন উইলিয়াম লরেনস ব্রাগ। ১৯১৫ সালে বাবা উইলিয়াম হেনরি ব্রাগের সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে এ পুরস্কার পান তিনি।

 সবচেয়ে বেশি বয়সে নোবেল জিতেছেন অধ্যাপক লিওনিদ হারউইজ। ২০০৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৯০।

 এ পর্যন্ত বেঁচে থাকা সবচেয়ে বয়সী নোবেল বিজয়ী রিটা লেভি মনটালচিনি। ১৯৮৬ সালে চিকিত্সাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া রিটা এ বছরের ২২ এপ্রিল তাঁর ১০০তম জন্মদিন পালন করেছেন।

 স্বামী-স্ত্রী নোবেল জিতেছেন মেরি-পিয়েরে কুরি, আইরিন-ফ্রেডরিক জুলিয়ট, গার্টি-কার্ল কোরি, আলভা-গানার মিরডাল। আইরিন মেরি-পিয়েরে কুরির মেয়ে।

ওয়েবসাইট অবলম্বনে

বনৌষধি দুধিয়া/বড় কেরুই

0 comments

 দুধিয়া—এই জনপ্রিয় নামকরণের পেছনে হয়তো এর নরম কাণ্ড ভাঙলে দুধের মতো সাদা কষ বের হওয়ার বিষয়টি থাকতে পারে। তবে এর পোশাকি নাম বড় কেরুই। এক অতি সাধারণ বীরুধ। আমাদের দেশে রাস্তাঘাটের পাশেই এদের জন্মাতে দেখা যায়। ধানি জমির পাশে ও বসতবাড়ির জঙ্গলা জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। আমি এদের দেখেছি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ক্ষেতখামারের ধারে। অতি নগণ্য আগাছা হয়েও ভেষজগুণে সে এক সমৃদ্ধ উদ্ভিদ।
এই নরম বীরুধ বর্ষজীবী, সোজা ও অবনতভাবে জন্মে থাকে। এক-দুই ফুট উঁচু। কাণ্ড রোমযুক্ত। পাতা সরল ও বিপরীত। কিনারা করাতের মতো কাটা কাটা। বৃন্ত ছোট ছোট। পাতার শিরা বেশ স্পষ্ট। পুষ্প-বৃন্ত ছোট। ফুল একলিঙ্গী। মানে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা, তবে একই পুষ্পগুচ্ছে জন্মে থাকে। প্রতিটি পুষ্পগুচ্ছে একটি স্ত্রী ফুল মাঝখানে জন্মে থাকে আর পুরুষ ফুল অনেকগুলো তার চারদিকে ঘিরে থাকে। বীজ ছোট ধূসর রঙের। সাধারণত শীতকালে ফুল হয়ে থাকে। সব থেকে মজার কথা হলো, রাস্তার ধারের এই আগাছা ভারতীয় বনৌষধির বিখ্যাত গ্রন্থ রাজনিঘণ্টুতে এক স্থান করে নিয়েছে। এর সমালংকৃত নাম হলো: খরস্কন্ধ, প্রিয়াল, নবদ্রু, তাপসপ্রিয়। ভারতীয় বনৌষধির তালিকায় এর প্রধান গুণ রক্ত আমাশয় ও পেট বেদনায় ব্যবহূত হয়। প্রসূতিদের স্তন্যদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। গাছের সাদা কষ জীবাণুনাশক। এর সাদা কষে ও কাণ্ডে আছে গ্লাইকোসাইডস, স্টেরোল নামের রাসায়নিক পদার্থ। চীনা-থাই ভেষজ তালিকায় গাছের নির্যাস অ্যাজমা ও মৃগী রোগের এক উপকারী ভেষজ। পুরান কাশিতে এর উপকার পাওয়া যায়। এই প্রজাতির নাম Euphorbia hirta আর পরিবার Euphorbiaceae। আমাদের দেশে এর আরও কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ভেষজ প্রজাতি আছে। যেমন: বাজবারন, মনসাসিজ, ছোট কেরুই ও শ্বেত কেরুই।