Friday, April 9, 2010

ডিজিটাল

0 comments
ডিজিটাল বলতে কী বোঝায়
ডিজিটাল বলতে একটি ইলেকট্রনিক টেকনোলজি বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে তথ্য জেনারেট, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাকে বোঝায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাঝে উপযুক্ত সমন্বয় সাধন এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকৃত ডিজিটাল রূপ।

ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে
সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে বা যা থাকা বাঞ্ছনীয় তার একটি ধারণা দেয়া যেতে পারে, যা নিম্নরূপ :

ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার অপসারণ
যে কোনো অফিসে ফাইলের ওপর ফাইল স্তূপ হয়ে থাকবে এবং সেখান থেকে প্রয়োজনমাফিক যে কোনো তথ্য খুঁজে বের করা সত্যিই সময় সাপেক্ষ। অর্থাত্ এতে করে যথেষ্ট সময়ের অপচয় ঘটে। বরং এর চেয়ে প্রতিটি ডেস্কে একটি কম্পিউটার থেকে যে কোনো সময় তথ্য খুঁজে নেয়া এই ভোগান্তিকে অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। তবে এ ব্যাপারে দেশীয় সফটওয়্যারের উপর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।

ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা
সার্বিকভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা দরকার। ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার চেয়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে সব ইনফরমেশন বা তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। আর এভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে ওঠবে। ইতিমধ্যে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ ছাড়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। মালেয়শিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএফটির প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর বাস্তবায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা দেখার বিষয়।

কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানো
শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা চাই প্রতিশ্রুতির সঠিক বাস্তবায়ন। আমরা সামনের দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশ, একটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবার অপেক্ষায় রয়েছি। আর এজন্য শহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কম্পিউটারের ব্যবহার অধিক হারে বাড়ানো প্রয়োজন।

ই-গভর্নমেন্ট
ই-গভর্নমেন্ট অর্থাত্ ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট। বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্সের সূচনা হয় ১৯৯০ সালের দিকে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কম্পিউটার সামগ্রীর উপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০১ সালের শুরুতে ‘জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আইসিটির প্রয়োগ এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়া। কেবল কম্পিউটারায়নই যথেষ্ট নয়, চাই প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি পর্যায়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সঠিক বাস্তবায়ন। ধরা যাক, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এ ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সাইটগুলো টেক্সট কিংবা গ্রাফিক্সগুলো তথ্য বিবরণ থাকলে হবে না, বিশাল তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ ডেটাবেজ থাকা বাঞ্ছনীয় এবং একেকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেকটি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের সম্পর্ক স্থাপন থাকবে অবশ্যই। অর্থাত্ প্রয়োজনমাফিক প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে অনায়াসে। যে কোন সময় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করা যাবে খুব সহজে। দেশের জনসাধারণ যেন এ ওয়েবসাইটগুলো থেকে প্রয়োজনানুসারে তথ্য নিতে পারে এর নিশ্চয়তা থাকা অপরিহার্য। কিছু কিছু তথ্য হতে পারে ব্যবহারকারীর নিজস্ব তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং ব্যবহারকারীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তার ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণ করবেন। এতে করে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।

টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো
বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে দুই হাজারের অধিক টেলিসেন্টার বিদ্যমান রয়েছে। আর এ টেলিসেন্টারগুলো গড়ে ওঠছে প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগেই। সরকারকে এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, একটি নির্দিষ্ট কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

নাগরিক সেবাগুলো ডিজিটালাইজেশন
ডিজিটাল বাংলাদেশে জনসাধারণ ঘরে বসেই অধিকাংশ নাগরিক সুবিধা পাবেন। যেমন মানুষ অনলাইনে কিংবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে সব বিল যেমন টেলিফোন, গ্যাস ইত্যাদি পরিশোধ করবেন। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যাবে অনলাইনে। টেলিমেডিসিন সেবা এখন হাতের মুঠোয়। যানবাহনের সময়সূচি পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট ওয়েব পোর্টাল থেকে। ডিজিটাল পাসপোর্ট প্রক্রিয়া অনেকটা স্তিমিত থাকলেও ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে মাত্র। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে শুভ সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস কার্যক্রম চালু হয়েছে ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে। তবে আর একটি আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ব্যাংককে পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করার অনুমতি দিয়েছে।
নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা গড়ে তোলা
কেবল নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠবে। ফলে বিকল্পভাবে ইন্টারনেট সার্ভিসসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। চড়া দামের ভি-স্যাট অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আসবে না।

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা প্রসার রোধ করা উচিত
কিছুদিন হলো অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। সরকারের উচিত অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটতে না দেয়া। বরং বৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির বিস্তারে সরকারকে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স
সম্প্রতি সরকার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে একটি সার্কুলার জারি করে আইসিটি টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বলা হচ্ছে, এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা সম্ভব। এর আওতায় সংক্ষিপ্ত মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ কমিটি জাতীয় কার্যক্রমের একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি স্তরে ডিজিটাল রূপ দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে দ্রুতগতিতে।

চাই সঠিক বাস্তবায়ন
সরকারের সব কার্যক্রম এবং তথ্যাবলী ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থাকবে। এতে বরং সুবিধা হবে সরকারের। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে আগে ডিজিটাইলেশন অর্থাত্ কম্পিউটারায়ন পদ্ধতির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এসব না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
ইমেইল : walisearch@yahoo.com /সাদ আবদুল ওয়ালী

0 comments:

Post a Comment