Friday, April 23, 2010

লক্ষ্ণৌ

0 comments
আমাদের এই উপমহাদেশের, বর্তমান ভারতীয় উত্তর প্রদেশ  ইউনিয়নের জৌলুসময় এক নগরী লক্ষ্ণৌ(হিন্দিতে: लखनऊ, উর্দুতে: لکھنؤ লাখ্‌নাউ) নবাবী শহর, রাজনীতির নগরী, শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির নগরী, সঙ্গীতের নগরী এবং অপরূপ স্থাপত্যশিল্পের নগরী লখনৌঅযোধ্যার নবাবের লক্ষ্মৌ, ইতিহাসে এই তার জনপ্রিয় পরিচিতি হলেও আজকের ভারতে উত্তর প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী লখনউ
লক্ষ্মৌ-এর সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে নবাব আসফ-উদ-দৌলার নাম। যে লক্ষ্ণৌ নগরী উপমহাদেশে আমাদের সকলের চৈতন্যের সাথী, আবেগের সঙ্গিনী তার  প্রকৃত  রূপকার অযোধ্যার স্বাধীন নবাব আসফ-উদ-দৌলা, নগরীর উত্পত্তি ও নামকরণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই প্রশ্নে ভিন্নমত প্রকাশের অবকাশ কোথায়? এখন থেকে অন্তত সোয়া দুই শ’ বছর আগে ১৭৭৫ সালে লক্ষ্ণৌতে প্রথম পদার্পণ করেছিলেন নবাব আসফ-উদ-দৌলা। তারপর থেকেই লক্ষৌ-এর বহুরূপী বিপুল বিকাশ। বিশেষ করে শিল্প সংস্কৃতিতে দিল্লির সমতুল্য হয়ে উঠতে থাকে লক্ষ্ণৌ
পৌরাণিক কাহিনী কী বলে? রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে, রামচন্দ্রের বনবাসের পর তিনি লক্ষ্মণের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই অঞ্চল। রামানুজ লক্ষ্মণের নাম অনুসারে এর নাম হলো লক্ষ্মনাবতী। এবং ক্রমে অপভ্রংশ হয়ে লক্ষৌতে রূপান্তরিত হলো। আর ভিন্ন একটি মত বলছে: জৌনপুরের মুসলিম শাসক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নগরী। তার নির্দেশে হিন্দু স্থপতি লখনা নির্মাণ করেন একে। সেই স্থপতি লখনার নামই পরিবর্তিত রূপ নিয়ে লক্ষৌ হয়ে বেঁচে আছে নগরীর জৌলুসময় আবেদনের মধ্যে। তবে নামের ইতিহাসের বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। আর কোনটিই চূড়ান্ত হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনও পায়নি।
কলকাতা থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরত্বে লক্ষ্ণৌ রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে কিন্তু নতুন যে কারো অবাক না হয়ে উপায় নেই। আর দশটা প্রচলিত ছোট কিংবা বড় রেলওয়ে স্টেশনের সাথে একদম মিল নেই এই স্টেশন ভবনের। প্রথম কেউ এলে একেবারে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হবে। স্টেশন ভবনে সেকালের স্থাপত্যরীতির উঁচু মিনার সম্বলিত নকশা। রাজপ্রাসাদ কিংবা উচ্চ রাজ কার্যালয় বলেই ভ্রম হতে পারে যে কারো। নগরীর বহু এলাকাতেই এখনকার কিংবা আধুনিক মোটর গাড়ির পাশাপাশি চলছে ঘোড়ায় টানা গাড়ি, স্থানীয়ভাবে যাকে বলে টাঙ্গা। এর ঘোড়া ও চালক দেখে মনে হয় না সময়টা আড়াই শ’ বছরের বেশি গড়িয়ে গেছে। কিংবা মনে হয়, এই ঘোড়া আর টাঙ্গার চালক উঠে এসেছে আড়াই তিনশ’ বছর আগের লক্ষ্ণৌ থেকে।
নগরীর চৌক নামক স্থানে রয়েছে বড় ইমামবাড়া অর্থাৎ নবাব আসফ-উদ-দৌলার মূল প্রাসাদ। লক্ষৌতে পদার্পণের নয় বছর পর ১৭৮৪ সালে বড় ইমামবাড়া নির্মাণ করেছিলেন তিনি। চারতলা এই প্রাসাদ যেন এক রহস্যময় জগৎ। বহু সুরঙ্গপথে ভরা এর অভ্যন্তর ভাগ। হিসেবে সামান্য ভুল হলেই রীতিমত বেওকুফ বনে যেতে হবে, অনেক কষ্টে আবার ফিরে পেতে হবে সঠিক পথ। এই প্রাসাদেরই নিচতলায় দরবার ঘরে সমাধিস্থ রয়েছেন নবাব আসফ-উদ-দৌলা ও তাঁর প্রিয়তমা পত্নী। এ কারণে বড় ইমামবাড়ার মূল চত্বরে ঢোকার আগে জুতা খুলে রেখে যেতে হয়। লক্ষ্মৌরের অন্যতম প্রধান উত্সব মহররম। এ সময় বড় ইমামবাড়াসহ পুরো নগরী আলোর বন্যায় ভেসে যায়। দরবার কক্ষে সজ্জিত রয়েছে মহররমের তাজিয়ার অনুকৃতি। প্রাসাদ কমপ্লেক্সের একাংশ রয়েছে শাহী বাওলি জলাধার। এখানে স্বচ্ছ পানির পাতালছোঁয়া বিশাল এক কুয়োকে ঘিরে রয়েছে তিনতলা মনোহর ইমারত। এরই বাঁদিকে আসাফি মসজিদ। মসজিদের মিনার যেন আকাশের নীলকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। এখানকার সিঁড়ির বৈচিত্র্য মনোমুগ্ধকর। বড় ইমামবাড়ার প্রধান প্রবেশপথ হাওয়া মহল, গঠনশৈলি ও বিশালত্ব দেখে মন আপনা থেকেই বলে ওঠে: অসামান্য! হাওয়া মহলের উল্টোদিকেই নহবতখানা। নিদারুণ অযত্নের শিকার, তাই ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু তারপরও নবাবী জৌলুস এখনো যেন ঝরে পড়ছে। হাওয়া মহল থেকে রাস্তার বাঁদিকে একটু এগিয়ে গেলেই বিশাল প্রবেশ তোরণ, রুমি দরওয়াজা। অনবদ্য এর গঠনশৈলী, কারুকাজও চমকে দেয়ার মত। ১৭৮৬ সালে তুরস্কের তত্কালীন রাজধানী ইস্তাম্বুলের দরওয়াজার অনুসরণে এই রুমি দরওয়াজা তৈরি করিয়েছিলেন নবাব আসফ-উদ-দৌলা। তাই এর আরেক নাম টার্কিশ গেট।
রুমি দরওয়াজা পেরিয়ে ৫/৬শ’ গজ দূরেই ছোট ইমামবাড়া, যার পোশাকি নাম হুসেনাবাদ। ১৮৩৭ সালে নবাব মোহাম্মদ আলি শাহ নির্মাণ করেছিলেন ছোট ইমামবাড়া নামের এই প্রাসাদ। তাঁর এবং তাঁর মায়ের সমাধিও রয়েছে এখানে। প্রাসাদের ভেতরটা এখন খুবই শান্ত, একেবারে যাকে বলে পিনপতন নিস্তব্ধতা। অনিন্দ্য সুন্দর সব ঝাড়বাতি ও আরো নানা আলোর বাতি, গিল্টি করা আয়না আর দেওয়ালে চারুময় কারুকাজ দেখে যে কারো চক্ষুস্থির হয়ে যাবে। এই প্রাসাদের কয়েকটি গম্বুজের মধ্যে বড় গম্বুজটি সোনার, অন্তত ওতে সোনার কারুকাজ রয়েছে এমন জনপ্রিয় বহুলশ্রুত জনশ্রুতি রয়েছে। মহররম উত্সবের সময় প্রাসাদের সব ঝাড় লক্তন আর আলোর বাতি এক সাথে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তখন সে এক আশ্চর্য আলোকময় রাত। নবাব মোহাম্মদ আলি শাহ আরেকটি বিশাল বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন, নাম বারোদুয়ারী। বড় আকারের বারোটি দরজা থাকার কারণেই এর নাম বারোদুয়ারী। তবে সে নাম প্রচলিত নয়, এখন নাম হয়েছে পিকচার গ্যালারি। বড় ধরনের চিত্রশালা হিসেবে গড়ে উঠেছে। নবাবদের লাইফ সাইজ সব প্রতিকৃতি সযত্নে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত এখানে। বারোদুয়ারী থেকে কিছু দূরেই ক্লক টাওয়ার, সুউচ্চ মিনারের মাথায় চারদিকে বিশাল চারটি ঘড়ি বসানো। ১৮৮৭ সালে নবাব নাসির-উদ-দীন হায়দরের নির্দেশ তৈরি এই ক্লক টাওয়ার চরিত্রের দিকে থেকে ব্রিটিশ স্থাপত্য। টাওয়ারের আয়তন কুড়ি বর্গফুট আর ২২১ ফুট উচ্চতায় উঠে একইসাথে চারদিকের মানুষকে সময় জানান দিচ্ছে বিগত সোয়া শ’ বছর ধরে। গান মেটালে তৈরি ঘড়িগুলোর যাবতীয় কিছু এসেছিল লন্ডন থেকে।
লক্ষ্মৌয়ের আরেক বিখ্যাত স্থাপত্য রেসিডেন্সি। এরও নির্মাতা বা মূল প্রতিষ্ঠাতা নবাব আসফ-উদ-দৌলা। ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ রাজ প্রতিনিধি ও পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে এই রেসিডেন্সি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে শেষ হয়েছিল ১৮০০ সালে নবাব সাদাৎ আলি খানের আমলে। কিন্তু ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রেসিডেন্সি নামের এই অপরূপ স্থাপত্য। ভাঙ্গাচোরা দেয়াল, ঝুলে থাকা ছাদ, কামানের গোলা আর রাইফেলের গুলির স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে সিপাহী বিপ্লবের সেই ভয়ঙ্কর গৌরব গাথার দুর্দমনীয় দিনগুলোর স্মারক হয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো প্রতি সন্ধ্যায় আলোক সাজে রেসিডেন্সি হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর সুন্দর। এখানে রয়েছে স্মৃতি জাদুঘর আর এর বিপরীতেই শহীদ পার্ক। নতুন লক্ষ্মৌয়ের শুরুর আগেই শাহ নজফ ইমামবাড়া। লক্ষ্মৌতে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল সিপাহি বিপ্লবের আগুন। ১৮১৪ সালে গাজী-উদ-দিন হায়দার ইরাকের নজফে হযরত আলীর সমাধির অনুসরণে এই ইমামবাড়া নির্মাণ করান। দেখতে অনেকটা ছোট ইমামবাড়ার মত। লখনউ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদী। সন্ধ্যায় অস্তমান রবির আলো ঠিকরে পড়ে গোমতীর বুকে, ভাদ্রের ভরাযৌবনা কিংবা শীতের তন্বী তরুণী গোমতী তখন লালে লাল হয়ে ওঠে। সে যেন সিপাহী বিপ্লবে গৌরবদীপ্ত ভূমিকা পালনকারী নগরী লক্ষ্মৌয়ের রক্তিম আর অগ্নিময় ভূমিকার প্রতিরূপ। লখনউতে জীবন বাজি রেখে সে সময় বিদেশি ইংরেজ বিতাড়নে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নবাব পরিবারেরই বেগম হজরত মহল। কোন অবস্থাতেই আত্মসমর্পণ করেননি।
গঙ্গার শাখা নদী গোমতী লক্ষ্মৌয়ের ভেতর দিয়ে বয়ে গিয়ে আবার অযোধ্যার বিখ্যাত নদী সরযূর সাথেও মিলেছে। নগর এলাকায় গোমতীর দুই পাড়কে জুড়ে দিয়েছে একাধিক সেতু। নবাবী আমলের সেতু। নবাবদের জনহিতকর চরিত্র ও মানসিকতা এবং সেই আমলেই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ ও সুগম করে তোলার প্রবণতা ফুটে উঠেছে এসব বড় সেতুর স্তরে স্তরে। তুর্কী ও ইরানী স্থাপত্য কৌশল প্রভাবিত তত্কালীন ব্রিটিশ স্থাপত্য রীতিতে নির্মাণ করা হয়েছিল এগুলো।


কিন্তু উত্তর প্রদেশ পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ লক্ষ্মৌয়ের এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি সংরক্ষণে যথেষ্ট যত্নবান নয়। বড় ইমামবাড়া প্রাসাদের বেশিরভাগ সুরঙ্গপথ আজ বন্ধ। সেগুলো খুলে দেয়ার কোন উদ্যোগও নেই। গণপ্রস্রাবাগার বানিয়ে ফেলায় শাহী বাওলিতেও দুর্গন্ধ। তারপরও চুপচাপ পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরের লোকজন। তাহলে কি আস্তে আস্তে এসব কিছু ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হবে? এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে চেতনাঋদ্ধ ভারতীয়দের মনে।
এখানে বাঙ্গালিদের একটি আখড়া রয়েছে। ইন্দিরা রোডের রবীন্দ্রপল্লীকে বাঙ্গালিদের আখড়া মনে করা হয়। আড়াইশ’র মত বাঙ্গালি পরিবারের বসবাস এখানে। বাঙ্গালি হিন্দুর লোকচর্চার হেন উত্সব নেই যা সেখানে পালিত হয় না। এখানকার বাঙ্গালিরাও খুব সংস্কৃতিমনা। আর সে তো লক্ষ্ণৌরই ঐতিহ্য, যাকে এক কথায় বলা চলে তাহজিব বা তমদ্দুন, যার মানে কৃষ্টি।
নতুন পুরাতনের এক আশ্চর্য সহাবস্থান চলছে লক্ষ্মৌতে। নগরীর পুরনো এলাকা নতুন যে কাউকে টেনে নিয়ে যাবে তার অতীতের স্মৃতিময় দিনগুলোতে। পাশাপাশি নগরীর বর্ধিত নতুন এলাকা ঘুরলে মন মানতে চাইবে না যে, পুরনো দিনের সেই মায়াময় ঐতিহ্য লালনকারী লক্ষ্ণৌ বলে কিছু টিকে আছে এখনো। নতুন শহরে চকচকে ঝকঝকে কার্পেটিং রাজপথ আর দু’পাশে আধুনিক অট্টালিকা সজ্জিত এভিনিউ অতীতের সেই আবেগস্পর্শী নগরীর কথা ভুলিয়ে দেবার মত। সাহারা শহর নগরীর এমনই একটি অংশ। পুরনো এমনকি নতুন শহরেও আধুনিক মোটরযান আর সর্বাধুনিক মডেলের মহামূল্য বিলাসবহুল মোটরগাড়ির পাশেই চলছে সেই ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গা। অত্যন্ত মসৃণ কার্পেটিং রাজপথে মানুষের গায়ে চাকচিক্যময় পোশাক। তারা যখন টাঙ্গায় সওয়ার হয়, মনে হয়, নবাবী লক্ষ্ণৌতে ফিরে গেছি। পুরনো শহরে রাস্তার পাশে পায়রা ও অন্যান্য পাখির দোকানে উপচেপড়া ভিড়, মুয়াজ্জিনের সুললিত আজানের সুর, শিশু-কিশোরদের লাঠিখেলা আর পায়রা ওড়ানো। সব মিলেমিশে মনে হবে এ যেন সত্যি সত্যিই নবাব আসফ-উদ-দৌলার সময়ে এসে পড়েছি। এখানে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা চলে টক! টক!! ধ্বনি তুলে। তার পেছনের ছইয়ের তলায় বসলে যে কারো নিজেকে সেই নবাবী আমলের মানুষ বলে ভাবতে কষ্ট হবে না।
পুরনো শহরের খুব নামকরা ব্যবসা কেন্দ্র আমিনাবাদ্। নবাব এমদাদ খান আমিন-উদ্-দৌলার স্মৃতি বহন করছে এই আমিনাবাদ্। পুরনো লক্ষ্মৌতে নবাবী আমলের বাজার। কী নেই এখানে? লক্ষ্মৌয়ের বিখ্যাত সূক্ষ্ম কারুকাজের পোশাক, শাড়ি সালোয়ার, কুর্তা, পাঞ্জাবি, পায়জামা আরো কত কি। খাবারের দোকানে আর হোটেলের সামনের ভাগে ঐতিহ্যময় আর লোভনীয় সব পসরা: প্রাণী আর পাখির মাংসের কাবাব, বিরিয়ানি, মুরগি মুসল্লম।
আধুনিক লক্ষ্মৌয়ের এক সেরা বাণিজ্যিকেন্দ্র হযরতগঞ্জ। মনে হয় সিপাহি বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী বেগম হযরত মহলের স্মৃতিতেই এই নামকরণ। এখানেই উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভবন, বিশাল এলাকা জুড়ে এক ইমারত। পাশেই রাজ ভবন, রাজ্যপালের দপ্তর ও বাসস্থান। হযরতগঞ্জ এবং লক্ষ্মৌ নগরীর বিশাল অংশ জুড়ে যে দৃশ্য তাতে মনে হবে যেন বিদেশ থেকে তুলে এনে এখানে বসানো হয়েছে লক্ষ্মৌকে। দেশী বিদেশি অত্যাধুনিক সব মোটরগাড়ি, চকচকে-ঝকমকে আধুনিক রেস্তোরাঁ, শপিং মল আর তার সাথে চকমকে মানুষের প্রাচুর্য। এ এক অন্য লখনউ
দু’টো সমান্তরাল চারিত্র্য নিয়ে পাশাপাশি বাস করছে লখনউ। পুরনো আর আধুনিকতার মাঝে কোন বিরোধ নেই এখানে। কেউ কাউকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে না। কারো উপরে কারো চাপাচাপি নেই। কাবাবের সাথে পিত্জার, টাঙ্গার সাথে মার্সির্ডিজের, মুয়াজ্জিনের সুললিত আজানের ধ্বনির সাথে পুরোহিতের মধুর মন্ত্রোচ্চারণের, সূক্ষ্ম কারুকাজের কামিজের সাথে ইউরোপীয় কোটের কোন বিরোধ নেই এখানে। অবাক করা সহাবস্থানের এমন নজির কেবল আমাদের এই উপমহাদেশের কেন, গোটা দুনিয়াতেই বিরল। কিন্তু তারপরও ইতিহাসপ্রেমী চেতনায় সমর্পিতপ্রাণ মানুষ ছুটে যায় সেই পুরনো লক্ষ্মৌতে, অযোধ্যার সঙ্গীতপ্রেমী স্বাধীন নবাব আসফ-উদ-দৌলার লক্ষ্মৌতে। রাজনৈতিক ইতিহাস আর সঙ্গীত ও সংস্কৃতির ইতিহাসের খোলা জানালায় বাতাস যেন ডেকে বলে যায়- হ্যাঁ! ঐ তো আসল লখনউ!!
মুহ: আরিফ-উদ-দৌলা-লেখাটিতে আনন্দবাজার পত্রিকার সাহায্য নেয়া হয়েছে

0 comments:

Post a Comment