Friday, April 9, 2010

লালনে দোল

0 comments
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে লালনের সমাধি প্রাঙ্গণে দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক সাধু-ফকিরের সমাবেশ ঘটে। আগে দোলপূর্ণিমার এই সাধু সমাবেশ সাধুসঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। এই সাধুসঙ্গে লালনপন্থী সাধু-ফকির একত্র হয়ে গুরুকার্য পালন করতেন। লালন দোলপূর্ণিমার এই সাধুসঙ্গ প্রবর্তন করেছিলেন সাধু-ফকিরদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের পথ রচনা করার জন্য। তখনকার সাধুসঙ্গে সাধুগুরুরা একত্র হয়ে ভোরে গুরুকার্য সেরে দৈন্য গান গেয়ে নিয়ে দুপুর অবধি গোষ্ঠ গান পরিবেশন করতেন। এই গোষ্ঠ গানের অনুষ্ঠানের ফাঁকে মাঝখানে বাল্যসেবা ও দুপুরের স্নান সেরে নিতেন। দুপুরে গুরুকার্য, পারশ ইত্যাদির পর পূর্ণসেবা, সন্ধ্যায় গুরুকার্য ও প্রার্থনাগীতির পর মধ্যরাত্রি অবধি গান, জ্ঞানকথার আলাপন এবং শেষে অধিবাস অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমান লালন-প্রবর্তিত দোলপূর্ণিমার সাধুসঙ্গ সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়েছে। এখন দোলপূর্ণিমার আয়োজন পুরোপুরিভাবে ‘লালনমেলা’ বা ‘লালন স্মরণোৎসব’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এর চরিত্রগুণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বারোয়ারি মেলার সব লক্ষণ। যেমন এই মেলার একটি প্রান্তজুড়ে থাকে বাউলদের বাদ্যযন্ত্র বিক্রির দোকান। এসব দোকানে সাজানো বিচিত্র ধরনের একতারা, দোতরা, ডুগি, প্রেমজুড়ি বা কাঠজুড়ি, মন্দিরার ভেতর থেকে দেশ-বিদেশের সাধুরা তাদের প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্রটি কিনে থাকেন। অন্য প্রান্তে থাকে লালনপন্থী তাঁতি সাধুদের তাঁতে তৈরি গামছা-লুঙ্গি বিক্রির দোকান। এ ছাড়া থাকে প্লাস্টিকের সামগ্রী, কারুপণ্য থেকে শুরু করে আসবাবসামগ্রী, পাটি, মাটির পুতুল, মাটির হাঁড়ি, গয়না ইত্যাদির দোকান। পাশাপাশি সাঁইজির গানের ক্যাসেটসহ গানের বইও বিক্রি হয়। তবে ছেঁউড়িয়ার দোলপূর্ণিমার অনুষ্ঠান এমন মেলার চেহারা পেয়েছে খুব বেশি দিন আগে নয়। আসলে বিগত শতকের পঞ্চাশ দশক পর্যন্ত উত্সবটি ছিল শুধু সাধু-ভক্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সে সময় এখানকার অনুষ্ঠানের একটি স্বতঃস্ফূর্ততাও বর্তমান ছিল। কিন্তু ষাটের দশকে লালন আখড়ার অনুষ্ঠান দুটি প্রশাসনিক সহায়তায় ক্রমশ আনুষ্ঠানিকতার ভেতরে আবদ্ধ হয়ে এর স্বতঃস্ফূর্ত রূপটি হারিয়ে ফেলে।
FileServe
তার পরও এ বছর দোলপূর্ণিমার অনুষ্ঠানের মধ্যে লালনের সমাধিকে ঘিরে একটি ভেক খিলাফত অনুষ্ঠান হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment