Thursday, May 13, 2010

বাংলাদেশ

0 comments
০০ এস এম রাজু ০০
‘বিশ্বকবির সোনার বাংলা
নজরুলের বাংলাদেশ
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা
রূপের যে তার নেইকো শেষ।’
কালের পরিক্রমণ আর যুগের বিবর্তনের ধারায় পৃথিবী নামের স্বপ্নীল আর অতীতমনোহর গ্রহের এশিয়া নামের বৃহত্তম মহাদেশের হিমালয় পর্বতের দক্ষিণে আর বঙ্গোপসাগরের উত্তরের নিম্ন গাঙ্গেয় অববাহিকায় লক্ষ-কোটি বছরের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার নিরন্তর রূপান্তেেরর ধারায় বঙ্গীয় পর্বাঙ্গের গর্ভে ক্রমে জেগে ওঠা পলিজ ভূভাগ, আমাদের অতি গর্বের নিবাস আর প্রিয় মাতৃভূমি, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

নামকরণের ইতিহাস

বাংলা বা বাঙ্গলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তিব্বতিদের মতে, বানস্ (bans জলময় স্যাঁতস্যাঁতে) থেকে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি। কারো, কারো মতে রাজপুত্র ভাঙ্গার (vanga) নাম থেকে বঙ্গনামের উৎপত্তি। রিয়াজুস সালাতিন-এ উল্লেখ আছে, নুহ্ (আ) তার পুত্র ‘হাম’কে মানব বসতি স্থাপনের জন্য পৃথিবীর দক্ষিণ অংশ পাঠিয়েছিল। হামের পুত্র ছিল ‘হিন্দ’। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল ‘বঙ্গ’ কেউ কেউ বলে ‘বং’। এই বঙ্গ নাম থেকে এদেশের নাম হয় বঙ্গ। মুঘল আমল থেকেই বাঙ্গালা নামটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ইংরেজরা এদেশকে Bengal Bengla নামে অভিহিত করে। পুরো ইংরেজ শাসনামলে এই দেশ বেঙ্গল বা বাঙলা নামেই পরিচিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশ ‘পূর্ব বাংলা’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৫ সালে ১৪ অক্টোবর পূর্ব বাংলা নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’। ১৯৭০-এর জানুয়ারিতে এক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা দাবি করছি, এ দেশের নাম হবে বাংলাদেশ।’ পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই সোনার দেশের নাম হয় বাংলাদেশ।

ঐতিহাসিক পটভূমি

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল মৌর্য শাসনাধীন ছিল। চতুর্থ খ্রিস্টাব্দের দিকে গুপ্ত শাসনের আওতায় আসে বাংলা। এরপর আট শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা পাল রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এগারো মতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ সেন রাজাদের অধিকারে চলে আসে দেশটি। সেনদের পতনের পর বাংলার রাজাদন্ড চলে যায় বহিরাগত মুসলমানদের হাতে। ষোলো শতকের মধ্য ভাগ পর্যন্ত বাংলায় সুলতান রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল। এরপর বারো ভূঁইয়াদের পতন ঘটিয়ে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ পর্যন্ত বাংলা মুঘল অধিকারে থাকে। এরপর দু’শ বছর বাংলা ইংরেজ শাসনাধীনে থাকে। ভারত বিভাগের পর (১৯৪৭ সালে) দেশটি পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়। এরপর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বধীন-স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

অবস্থান ও আয়তন

২০০৩র্৪ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬০৩র্৮ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮০০র্১ পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ৯২০৪র্১ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থিত। দেশটির উত্তর ও পশ্চিমে ভারত, পূর্বে ভারত ও মায়ানমার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর রয়েছে। বাংলাদেশের মোট আয়তন ১৪৭৫৭০ বর্গ কিমি আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ৯৩তম বৃহত্তম দেশ।
প্রশাসনিক বিভাগ: বাংলাদেশে মোট ৭টি বিভাগ ও ৬৪টি জেলা আছে।
উচ্চতম স্থান: তাজিংডং (বিজয়) পর্বত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে উচ্চতম স্থান, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০৩৯ ফুট উঁচু।
জলবায়ু: ক্রান্তীয়, শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সহনযোগ্য ঠাণ্ডা, গ্রীষ্মকালে (মার্চ থেকে জুন) মাঝারি ধরনের উষ্ণতা, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে মোটামুটি আর্দ্র, বর্ষা ঋতু (জুন থেকে অক্টোবর)-এ মোটামুটি বৃষ্টিপাত হয়।
প্রধান নদী: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা।
প্রাকৃতিক সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, কাঠ চাষযোগ্য জমি।

এক নজরে

রাষ্ট্রীয় নাম: পিপল্স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ

রাজধানী: ঢাকা জাতীয়তা: বাংলাদেশি।

আয়তন: ১৪৭৫৭০ বর্গ কিমি

আন্তর্জাতিক সীমান্ত: মোট ৫১৩৮ কিমি। ভারত ৪১৫৬ কিমি, মায়ানমার ২৭১ কিমি এবং ৭১১ কি.মি. সমুদ্র উপকূল

জনসংখ্যা: ১৬ কোটি ২২ লক্ষ

ধর্ম: মুসলমান ৮৩%, হিন্দু ১৬%, অন্যান্য ১%

মুদ্রা: টাকা (BDT)

স্বাধীনতা লাভ: ২৬ মার্চ, ১৯৭১ (পাকিস্তানের কাছ থেকে)

জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ: ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪

জাতীয় দিবস: ২৬ মার্চ (স্বাধীনতা দিবস) ভাষা: বাংলা

সরকার পদ্ধতি: সংসদীয় গণতন্ত্র সরকার প্রধান: প্রধানমন্ত্রী।

0 comments:

Post a Comment