Sunday, June 20, 2010

সাম্বা নাচ এর ইতিকথা

0 comments
সাম্বা নাচ; বিশ্বকাপের জমকালো আসরে প্রতিবছর বিশ্বকাঁপানো গানের তালে তালে জমে উঠে এই নৃত্য। কেননা, সাম্বা নৃত্য মানেই একেবারে উন্মুক্ত আঁটসাঁট পোশাক। অনেক ক্ষেত্রে নারীর শরীরে থাকে গহনার পোশাক। যেখানে কাপড়ের কোনো ছোঁয়া থাকে না। আদিকাল থেকেই নাচের প্রতি মানুষের দুর্বলতা রয়েছে। তাই সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন দেশ আর ভিন্ন রুচির মতো নৃত্যেরও নতুন অবতারণা হয়েছে। সাম্বা নাচের জন্ম ব্রাজিলে হলেও এখন এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে এর বিকাশ।
গান আর নৃত্যের সঙ্গে সেই আদিকাল থেকেই মানুষের মিতালী। নাচের প্রতি দুর্বলতা মানুষের স্বভাবজাত। দৃষ্টিনন্দন মনহরিণী নারীদের শরীরবৃত্তিয় শৈল্পিক ভাঁজে ভাঁজে দোল খেয়ে যাওয়া নাচই হলো সাম্বা নাচ। গানের তালে তালে শরীরকে নানাভাবে দোলা দেয়া। এর মূল উৎস হলো ম্যাঙ্িিজ নাচ। উনবিংশ শতকে ব্রাজিলে এই নৃত্যের জন্ম। শুরুতে যে সাম্বা নাচ ছিল তা এখন বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। মূল সাম্বা নাচের নাম বলরুম সাম্বা। বর্তমানে প্রচলিত যেসব সাম্বা নাচ রয়েছে সেগুলো হলো-
-সাম্বা নো পায়ে
খুব হালকা পোশাকে আবৃত হবে নারী-পুরুষ। এটি একটি সলো নাচ। শরীর সোজা রেখে সাম্বা গানের সঙ্গে মিল রেখে তালে তালে পা ফেলতে হয়। সামনে এক পা আবার হিসাব কষে পেছনে এক পা। তালে তালে নাচ। কোমরের ঝাঁকুনি হতে হবে সমান সমান। এই নাচে পুরুষের মুখোমুখি নারীরা অংশ নেয়। নাচের ফাঁকেই নারী কখনো কখনো পুরুষের কোলে হেলে পড়বে। ব্রাজিলে এই নাচ অত্যন্ত জনপ্রিয়।
-সাম্বা ডি গ্যাফিএইরা
রিওডি জেনেরিও নাইট ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকে এই নাচের শুরু। মূলধারার সাম্বা নাচ আন্তর্জাতিক বলরুম সাম্বা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী বটে। গ্যাফিএইরা হলো রিওডি জেনেরিওর একটি জনপ্রিয় নাইট ক্লাব। এখানে ১৯৪০ সালে এ নাচের জন্ম। আর্জেন্টিনা ট্যাঙ্গোর মতো সামনের পা উঠিয়ে ম্যাক্সিজি অথবা সরো (অন্য একটি সাম্বা গানের রাগ) গানের তালে নাচতে হয়। পা সমান তালে চালিয়ে নিতে হবে। ড্রেসআপ হবে হালকা। কোমর যাতে বেঁকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। এর দুটি পদ্ধতি রয়েছে_ আগে বাড়া ও পিছু হটা।
-শাম্বা প্যাগোডি
সাউ পাউলা শহর থেকে এই নাচের জন্ম। শাম্বা ডি গ্যাফিএইরার মতো নয় এটি। এখানে নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলাটাই মুখ্য। অন্য নাচের তুলনায় এখানে নারীকে মনে হবে অনেকটাই আবেদনময়ী। কোমরের ভাঁজে ভাজে এই নাচে ফুটে উঠবে আদিম শিল্পকলা।
-শাম্বা অক্সি
নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণে এটি একটি সলো নাচ। প্রতিবছর ব্রাজিলে বাহিও ঋতু এলে এই নাচের উৎসব জমে ওঠে। কিছুটা লাম্বাডা নাচের মতো এই নাচের শুরুটা ১৯৯২ সালে। শুরুর কয়েক বছরের মাথায় ছুটির দিনগুলোতে এই নাচ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উত্তর-পশ্চিম ব্রাজিলে। এ মূলত কোরিওগ্রাফি ভিত্তিক নাচ। যার পুরো সময়জুড়ে থাকে গানের তালে তালে শরীরকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরতে নানা প্রয়াস। এই নাচের জন্য নারী-পুরুষকে পোশাকটা টাইট ফিট করে পরতে হয়। সেই সঙ্গে চাই আবেদনময়ী মেকাপ।
-শাম্বা রিগাই
বহুগোত্রীয় নারীদের নিয়ে ব্রাজিলে প্রতিবছর বাহিওর সময় শাম্বা ড্রামের তালে তালে জমে ওঠে এই নৃত্য। ডানিয়েলা মার্কারি নামের এক জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীর গানের সঙ্গে এই নাচ চলে। ব্রাজিলে শুধু এই নাচের জন্যই নারীদের মুখে মুখে প্রায়ই শোনা যায় বেশ কয়েকটি গান। সেগুলো হলো-'সল দ্যা লিবারদাদি'...'ও রিগাগি ইও মার'...অথবা 'পেরলা নেগরার'.. মতো জনপ্রিয় গানগুলো।
-শাম্বা রক
লাতিন নাইটক্লাবগুলোতে তুমুল জনপ্রিয় এই নৃত্য। সাউ পাউলায় এর জন্ম। কিউবান সালসা নাচের মতো এই নাচে আরো কয়েকটি নাচের প্রভাব রয়েছে। যেমন-শাম্বা ডি গ্যাফিএইরা, ফাররু, জাউক লামবাডার মতো এই নাচে থাকে তুমুল রক গানের ব্যবহার। দর্শকমাত্রই যে কারো দেহ উন্মাতাল করে দেয় এই নাচ। কারণ এখানে নৃত্যের তালে তালে থাকে নারীর শরীরকে আবেদনময়ী করে তোলার একটি প্রয়াস। কে কত আবেদনময়ী করতে পারে।
-শাম্বা ডি রোডা
অনেক জুটির সংমিশ্রণে এই নাচ। এটি ঐতিহ্যগতভাবে আফ্র-ব্রাজিলিয়ান । দীর্ঘ দিন ধরে বহু বর্ণিল সংস্কৃতিময় এসব অঞ্চলে চর্চা হয়ে আসছিল। এই নাচের মডেলরা নাচের তালে তালে একই সঙ্গে নিজেরাই গান গাইতে থাকে। দর্শকরা নাচ দেখে তাদের সঙ্গে সঙ্গে সুর মেলাবে।

0 comments:

Post a Comment