Wednesday, June 23, 2010

ঢাল নৃত্য

0 comments
ঢালী নাচ বা ঢালনৃত্য একপ্রকার যুদ্ধনৃত্য। আক্রমণ ও প্রতিরোধের ভঙ্গিতে এবং উন্মাদময়তায় পরিপূর্ণ। এগিয়ে ও পিছিয়ে যাওয়া, পাশে যাওয়ার রীতি সবই কল্পিত জ্যামিতিক রেখা সংবলিত প্রতিঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য হাতে থাকে ঢাল। ঢাল কাঠ বেত কিংবা চামড়ার হয়ে থাকে ঢালী বলতে বাংলার হাড়ী বাগদী ডোমদের নিয়ে মধ্যযুগের জমিদারদের সৃষ্টি ঢালী যোদ্ধাদেরই বোঝায়। তাদের ডান হাতে বর্শা, বাম হাতে ঢাল থাকত। ঢালী নাচে শুদ্ধ আঙ্গিক ও উৎপ্লাবন অধিক। কখনো মূল যোদ্ধার দু’পাশে থাকে দুজন দেহরক্ষী ঢালী। তাদেরও হাতে থাকে লাঠি বা বর্শা। নাচের সময় তিনজনের নাচ একসঙ্গে হয়ে থাকে। কখনো দুই দলে কৃত্রিম যুদ্ধেও অভিনয় হয়ে থাকে।
নাচের ভঙ্গির দুটি ভাগ- আক্রমণাত্মক ও আতœরক্ষাতœক। আক্রমনের সময় সজাগ ও সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে হয়। সড়কি নিক্ষেপের ভঙ্গিতে শক্তি প্রয়োগ করে। কখনো চপল হরিনীর মতো। কখনোবা উদ্ধত ভুজঙ্গের মতো এগোতে থাকে। পরনে থাকে মালকোঁচা। মাথায় লাল ফেট্টি, হাতের মণিবন্ধে কাপড় জড়ানো হাতে বর্শা ও ঢাল থাকে।
বাংলাদেশে নদীনালা বেশি থাকায় অশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধা বিবেচনা করে প্রতাপাদিত্য ঢালী সেনা গঠন করেন। তার বায়ান্ন হাজার ঢালী সৈন্যের কথা বাংলা সাহিত্যে সুপরিচিত। ঢাল তরবারি কিংবা সড়কি ঢালী সৈন্যের প্রধান অস্ত্র ছিল। বর্তমানে ব্রতচারীতে লুপ্ত এই ঢালী নৃত্যের চর্চা হয়ে থাকে। গুরুসদয় দত্ত খুলনা যশোরের কয়েকজন ঢালী সৈন্যের কাছ থেকে নাচের ভঙ্গি, ঢোলের বোল সংগ্রহ করেন তিরিশের দশকে। ঢোল বাদকই নৃত্যটির পরিচালনা করে থাকেন। বাংলার এই যুদ্ধনৃত্যটির মোট পাঁচটি পর্যায় আছে-

১. আসর বন্দনা, ২. কসরত, ৩. বীরনৃত্য বা বীরচন্দন, ৪. যুদ্ধ প্রস্তুতি ও যুদ্ধ, ৫. যুদ্ধ শেষ বা তাণ্ডব নৃত্য

পূর্বে পুরুষরাই এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমানে মেয়েরাও এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। ঢালী সৈন্যদের শরীরকে সুদ্ধ উপযোগী রাখার এবং যুদ্ধের ভাবভঙ্গীর ছন্দোবদ্ধ অনুশীলনই ঢালী নাচে রূপাতরিত হয়। বাংলার বীর সৈন্যদের বা যোদ্ধাদের প্রাচীন পরিচয় বহন করে এই নৃত্য।

0 comments:

Post a Comment