Thursday, July 1, 2010

কানাডা

0 comments
পহেলা জুলাই কানাডার জন্মদিন। এক সময় বলা হতো, বৃটিশ রাজত্বের সূর্যাস্ত নেই, বৃটিশের পূর্ব-পশ্চিম একাকার। সেই সূত্রে বৃটিশদের ঔপনিবেশিকতা ছিল কানাডাতেও। নিরীহ কানাডিয়ানদের প্রথমে ফ্রান্স পরে বৃটেন শাসন করেছে দীর্ঘ সময়। কানাডার ইতিহাসে অনেক রক্তাক্ত যুদ্ধ আছে, যুদ্ধের স্মৃতি আছে। আমাদের মহান বিজয় দিবসের মতো ১৮৬৭ সালের ১ জুলাই বৃটিশ কলোনী থেকে মুক্তি অর্জন করে। কানাডা মুক্ত হলেও বৃটেনের সাথে ভিন্ন বন্ধন রয়েছে। অর্থাৎ এখনো প্রথাগত বিধি মোতাবেক এ রাষ্ট্রের প্রধান হচ্ছেন- বৃটেনের রাণী এলিজাবেথ। তাঁর অনুকূলে প্রতিনিধিত্ব করেন নির্বাচিত গর্ভনর জেনারেল। যদিও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাণীর কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। দক্ষিণ মহাসাগর, আটলান্টিকা এবং প্যাসিফিক এই তিন মহাসমুদ্রে পরিবেষ্টিত কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। অর্থাৎ ৯৯,৭৬, ১৮৬ বর্গকিলোমিটার। যার রাষ্ট্রীয় নাম- ডমিনিয়ন অব কানাডা। কানাডায় ১০টি প্রোভিন্স বা প্রদেশ এবং ৩টি টেরিটোরিস রয়েছে। আর জনসংখ্যা মাত্র ৩.৩ কোটি। এক সময় কাশ্মিরকে ভূস্বর্গ বলা হতো, এখন বলা হয় ভ্যাঙ্কুভারকে। শুধু তাই নয়, কানাডা শরণার্থী এবং ইমিগ্রেন্টদের জন্যও স্বর্গরাজ্য। বর্তমানে অভিবাসীর সংখ্যা প্রতি ৫ জন ক্যানাডিয়ানদের মধ্যে ১ জন। কানাডার সরকারি ভাষা ইংরেজি এবং ফ্যান্স হলেও এখানে শতাধিক ভাষায় কথা বলে ক্যানাডিয়ানরা। কারণ কানাডা মাল্টি কালচারাল অর্থাৎ বহুজাতির সংস্কৃতির দেশ। প্রত্যেকেই ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ফলে ক্যানাডিয়ানরা জাতিগত বৈচিত্র্যতায় বর্ণিল। বর্তমান কানাডার সবচেয়ে ছোট প্রদেশ প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডকে বলা হয় গার্ডেন অফ কানাডা। এই মনোরম দ্বীপে বৃটিশরা বিদায় নেয়ার সময় বৈঠক করে কানাডাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে। এসময় অন্টারিও, কুইবেক, নভা স্কোশিয়া এবং নিউ ব্রাক্সউকি এই চারটি প্রদেশ যোগদান করে কিন্তু সেই সময় প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড যোগ দেয়নি। দিয়েছে অনেক পরে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য প্রদেশ কানাডার সাথে যুক্ত হয়। ১৮৬৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির নাম কী হবে, কী হতে পারে, কী হলে সুন্দর হবে- এ নিয়ে আলোচনা, চিন্তা-ভাবনা চলে। কিংডম অব কানাডা, কানাডিয়া, কলাম্বিয়া, ক্যাবোটিয়া, উরমালিয়া, ব্রিটানিয়া, নিউ বৃটেন, লাউরেন্টিয়া, ইউনিয়ন অব দ্য ম্যারিটাইমস প্রভৃতি প্রস্তাবের পর চূড়ান্ত হয়- ডমিনিয়ন অব কানাডা। ১৩৪ বছর আগে কানাডা স্বাধীন হলেও এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন হয় এবং হচ্ছে। যেমন : ক ।। ১৯৬৪ সালে জাতীয় পতাকার নকশা করে তা অনুমোদন করা হয় ১৯৬৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর। খ ।। ১৯৮০ সালের ১ জুলাই ‘ও কানাডা’ঃ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়। অথচ গানটির রচনাকাল ১৮৮০ সালে। গ ।। ১৯৮২ সালে ‘ডমিনিয়ন ডে’ নাম পরিবর্তন করে ১ জুলাই ‘কানাডা ডে’ ঘোষণা করা হয়। কানাডার দুই ‘স্ট্যানলি’র কাছে কৃতজ্ঞ। একজন ক্যালগরির সৈনিক, যিনি মাপেল খচিত জাতীয় পতাকার নকশা তৈরি করেন। আরেকজন মন্ট্রিয়লের রবার্ট ‘স্ট্যানলি’, যিনি জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, যার সুর করেন ক্যালিক্স লাভালী। মূল গানটি ফরাসি ভাষায় হলে পরে তা ১৯২৭ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় : O Canada!/ Our home and native land./ True patriot love in all thy sons command./ With glowing hearts we see thee rise,/ The True North strong and free!/ And stand on guard, O Canada,/ We stand on guard for thee./ O Canada, Glorious and free./ O Canada, we stand on guard for thee./ O Canada, we stand on guard for thee. 
কানাডা ডে উপলক্ষে জমজমাট হয়ে উঠে পুরো কানাডা। নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে সারা দেশ। নানান কর্মসূচিতে মুখরিত হয় ক্যান ডিয়ানেরা। তীব্র শীতের শেষে জেগে উঠা অপূর্ব প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। রাজধানী অটোয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রভিন্সের প্রতিটি শহরেই রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন হচ্ছে- কানাডার উৎসব। আদিবাসী থেকে শুরু করে অভিবাসীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সংস্কৃতির মাধ্যমে বরণ করছে কানাডা ডে’ কে। একদিকে সামার। অন্যদিকে স্কুল-কলেজ ছুটি। সেই সাথে সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে কানাডিয়ানরা বহুমাত্রিকভাবে গৌরবের সাথে কানাডা ডে পালন করে এবং লক্ষাধিক প্রবাসী বাঙালিরাও দিনকে আনন্দময়ভাবে উদ্যাপন করে আসছে। 

0 comments:

Post a Comment