Tuesday, July 6, 2010

ফয়’স লেক রিজর্ট

0 comments
চট্টগ্রাম শহরের কোলাহলের ভেতরেই ফয়’স লেকের এক প্রান্ত থেকে আপনি যখন বোটে চড়ে রিজর্টের দিকে রওনা হবেন, ১০ মিনিটের সেই নৌভ্রমণের এক মিনিটও না যেতেই বিস্ময় আর আনন্দের শিহরণ শুরু হবে।

সংরক্ষিত সবুজ পাহাড়ের অলিগলি দিয়ে ইঞ্জিনবোটের ধক-ধক শব্দে এগিয়ে যাওয়ার সময় আপনার মনে হবে যেন রহস্য উন্মোচনে রওনা করেছেন। ৭-৮ মিনিটের মধ্যে দূর থেকে যখন রিজর্টের খানিকটা দেখা যাবে তখন আপনি নিশ্চয়ই অনুভব করবেন আবিষ্কারের অনাবিল আনন্দ। তারপর ২-৩ মিনিটে পুরো রিজর্ট যখন রূপকথার ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো আপনার দৃষ্টির গোচরে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে, আপনার তখন বাধ না মানা বিস্ময় যেন এক স্বপ্নপুরী, দৃষ্টিনন্দন ছবির মতো এবং ছবি তোলার মতো।

বিশাল ব্যস্ত শহরের মধ্যেই অথচ নগরের কোলাহলের লেশমাত্র নেই। বাংলাদেশে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ উপঢৌকন, বিশ্বসেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অবশ্যই। আবার রাতের ঘন অন্ধকারে বোট যখন লেকের পানি চিড়ে সাপের মতো চলে দু’ধারে পাহাড়-জঙ্গল রূপকথার দৈত্য-দানবের কথা মনে করিয়ে ভয়ও সৃষ্টি করে না এটাও বুকে হাত দিয়ে বলা সম্ভব নয়।

সৃষ্টির সেরা দানে গড়ে তোলা ফয়’স লেক অনেক বছর এমনি এমনি অবহেলায় থাকার পর কনকর্ড গ্র“পের রুচি ও সৃজনশীলতার উদ্যোগী সমন্বয়ে এখন আমাদের হাতছানি দেয় আনন্দ আবাহনে, ঘুরে আসুন, মন জুড়িয়ে আসুন। আরাম করুন, আয়েশ করুন। আবিষ্কার করুন এক অজানা বাংলাদেশ।

আমাদের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলন অনেক উপন্যাস লিখতে শুনেছি দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় কয়েকদিনের একাকীত্ববাসে যান, ফয়’স লেক রিজর্টও হতে পারে তাদের পরবর্তী গন্তব্য।

এই রিজর্টের অভিনবত্ব হচ্ছে সেখানে আপনি একাকী গেলেও যেমন ভালো থাকবেন, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরা গেলেও উপভোগ করবেন অসামান্য, নবদম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার জন্য স্থানটি আদর্শ, আবার সেখানেই হতে পারে আপনার শুভ বিবাহের সাড়ম্বর আয়োজন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকর্তাদের নিবিঢ় সান্নিধ্য ও শান্তিময় একাগ্রচিত্তে গভীর মনোযোগে ব্যবসায়িক শলাপরামর্শ বা সম্মেলন করার জন্যও সেখানে রয়েছে সকল সুব্যবস্থা।

ফয়’স লেক রিজর্টে থাকা-খাওয়ার মান খুব ভালো। বিনোদনের জন্য রয়েছে বিস্তৃত ব্যবস্থা-ড্রাইপার্ক, ওয়াটারপার্ক, (পাশেই) চিড়িয়াখানা, বারবিকিউ নাইটস্, বোট রাইডস্ এবং মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এমনকি সেরা শিল্পীদের কনসার্টও।

এত কাছে থেকেও যেন অনেক দূরে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ, শিহরণ আপনি আর কোথায় পাবেন! খরচও সাধ্যের মধ্যেই। খোঁজ নিয়ে দেখুন, ঘুরে আসুন শিগগিরই। বর্ষা, শীত কিংবা গ্রীষ্মে, ষড়ঋতুর যেকোনো দিনই আপনি উপভোগ করবেন নিশ্চিত।

কনকর্ড গ্র“পকে অনেক অনেক অভিনন্দন স্মরণীয় ছুটি কাটানোর ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য। আমার ছোট ছোট তিন মেয়ে লাবিবা, যূলিকা, আডিভা অপরিসীম ও নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছে যেমন সত্য, আমার স্ত্রী মন্টি ও আমিও কম আনন্দ পাইনি সেটাও সমান সত্য। মন্টি আর আমি এক বছরের আডিভাকে নিয়ে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড-এর পুলে গোসলও করেছি। সেখানে স্পষ্ট বুঝলাম এতটুকুন আডিভাও বেজায় খুশি।

আর একটি কথা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে যে রিজর্টের কর্মীরা খুবই অতিথিপরায়ণ ও বিশেষ করে শিশুবান্ধব। আমার মেয়েদের থাকাটা আনন্দময় করার জন্য ওয়াটার পার্কটুকুই যথেষ্ট হলেও (ওয়াটার পার্কে মজার কত কিছু আছে লিখলে, দৈনিক আমাদের সময়ের সীমিত পরিসরে স্থান সংকুলান হবে না) রিজর্ট কর্মীরা ওদের দেখভাল করেছে, আদর করে এগিয়ে দিয়েছে বাইসাইকেল। লাবিবা, যূলিকা সেই সাইকেলও চালিয়েছে মহা-আনন্দে।

আমরা জানি কনকর্ড গ্র“প বাংলাদেশের বিনোদনে বেশ কিছু বিশ্বমানের সুবিধা তৈরি করেছে, যেমন ঢাকার ফ্যান্টাসি কিংডম, ওয়াটার কিংডম, হেরিটেজ পার্ক। আমরা নিশ্চয়ই আশা করতে পারি, বাংলাদেশে তারা আরো অনেক নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বেশি বেশি উপভোগ্য করে তোলার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।
Image Courecy: Glenn Dodge

0 comments:

Post a Comment