Tuesday, July 13, 2010

যেভাবে ইসরাইল এর জন্ম

44 comments
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হিজাজের নেতা শরীফ হুসাইন বৃটেন এবং ফরাসীদের অনুরোধে তুর্কীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পরিচালনা করে।
সে যুদ্ধে মুসলমান শাসকদের অদূরদর্শীতা এবং বৃটিশদের ষড়যন্ত্রের কারণে তুরষ্ক খিলাফত ভেঙ্গে যায়। বৃটিশ বাহিনী ১৯১৭ সালে ইরাক, সিনাই উপত্যকা, ফিলিস্তিন, পবিত্র জেরুজালেম দখল করে নেয়। সেদিন ফিলিস্তিনীরা ব্রিটিশ জেনারেল এলেনবিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় জেরুজালেমে। আর জেরুজালেম বিজেতা হযরত সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাযার শরীফ-এ বেয়াদবগুলো পদাঘাত করে বলে উনার নাম মোবাকার উচ্চারণ করে বল আমরা এসে পরেছি, আমরা সিরিয়া জয় করেছি, উঠে দেখ। প্রায় সোয়া দুইশ বছর আগে জেরুজালেম হারানোর যে জ্বালা তার প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করে মহান গাজীর মাযার শরীফ-এ পদাঘাত করে। হায় মুসলিম জাতি। শুধু খেয়ালী শাসকদের ভুলের কারণে , ক্ষমতা লোভের কারণে ঘটে এই পরিণতি। (এটি প্রথম ভুল শাসকদের সিদ্ধান্তের) তুরুষ্ক খেলাফত ভেঙ্গেফেলার জন্য বৃটিশ দের সহযোগিতা করা ছিল আরব নেতাদের একটি বড় ভূল।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা টি ই লরেন্স হিজাজের নেতা শরীফ হুসেইনকে উস্কে দেয় তুরস্কের বিরুদ্ধে।
 তুরস্ক সাম্রাজ্য ভেঙে যাবার থেকে ব্রিটিশ ম্যানডেট অনুযায়ী শাসিত হতে থাকে ফিলিস্তিন। এবং সে সময় ১৯১৭ সালে তদানীন্তন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচীব বেলফোর প্রথম ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়।
ইউরোপ ইহুদীদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করতো এই সেদিন পর্যন্ত।
কিন্তু ব্রিটিশরা চায়নি ইহুদীদের ইউরোপে জায়গা দিয়ে জঞ্জাল সৃষ্টি করতে। পৃথিবীর কোন দেশ তাদের ভূখন্ড দিতে রাজী হয়নি। পরবর্তীতে মুসলমানদের ঠেকাতে তারা ইহুদীদের ব্যবহারের নীতি অবলম্বন করে।
মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আবাস ভুমি দেবার পেছনে বৃটিশ এবং আমেরিকাদের যে সকল যুক্তি ছিল।
১। সর্বদাই ইহুদীরা মিথ্যুক, নিষ্ঠুর, ফিৎনাবাজ এবং ষড়যন্ত্রকারী।
২। মুসলমানদের উত্থান ঠেকানোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
৩। ইসরাইলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য প্রাচ্যের তেল সম্পদ কব্জা করা/নিয়ন্ত্রণে রাখা।

তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উইলসন চেয়েছিলো জনমতের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর রাষ্ট্রগঠণ করতে। কিন্তু ব্রিটিশরা তার বিরোধীতা করে।
পরবর্তীতে উইলসন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের দ্বারাই একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সেই এলাকায় পাঠায়। যাকে কিংক্রেন কমিশন বলে। তারা অনেকগুলো পরামর্শের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয় যে প্যালেষ্টাইনসহ সিরিয়া থাকবে এবং তাদের আলাদা করা যাবে না। (সেহেতু সিরিয়া এবং ফিলিস্তিন একত্রিত ছিল)
সেই তদন্ত কমিশনের আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- ইহুদীদের প্রতি সহানুভুতি নিয়ে কাজ করলেও, প্যালেস্টাইনের অবস্থা দেখে তদন্তকারি দল বুঝতে পেরেছিলো বিভিন্ন উপায়ে জমি কেনার মাধ্যমে তারা আরবদের সম্পূর্ণরুপে ভুমিহীন করতে চায়। তারা জোর দিয়ে বলে যে, ইহুদীদের পরিকল্পনাকে সংকুচিত করতে হবে। প্যালেস্টাইনে বহিরাগত ইহুদীদের বসতি সীমিত রাখতে হবে এবং প্যালেস্টাইনে ইহুদী রাষ্ট্র গঠন করার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে।
কিন্তু ইহুদীদের ষড়যন্ত্রে ফ্রান্স এবং ব্রিটেন কিংক্রেন কমিশনের রিপোর্টকে অগ্রাহ্য করে নিজেদের পছন্দমত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় ফলে তখন থেকে মধ্যপ্রাচ্য অসন্তোষের বারুদাগারে পরিণত হয়। যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইহুদী রাষ্টগঠনের বিপক্ষে ছিল পরবর্তীতে ইহুদীদের অর্থ, আর ষড়যন্ত্রের কারণে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীতাতেই ইসরাইলের জন্ম হয়।
১৯৪৬ সালে ব্রিটেনকে চাপ দেয়া হয় এক লাখ ইহুদীকে প্যালেস্টাইনে প্রেরণ করতে। ১৯৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছোট রাষ্ট্রগুলোকে চাপ সৃষ্টি করে জাতিসংঘে ইহুদী রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দিতে।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশের শরণার্থীদের জন্য বিল পাশ করছিলোনা অথচ প্যালেস্টাইনে ১২ লাখ আরবের মধ্যে আড়াই লাখ ইহুদীদের স্থান দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ৪৭৬৭ জন ইহুদীকে গ্রহণ করে।

44 comments:

Post a Comment