Friday, August 20, 2010

বিশ্বপ্রকৃতির জীবন্ত জাদুঘর গ্যালাপাগোস

0 comments
দ্বীপের নাম কচ্ছপের দ্বীপ - গ্যালাপাগোস। যেমন আমাদের কক্সবাজারে আছে শাহপরীর দ্বীপ। তবে জানা যায়নি আমাদের শাহপরী বা শাহপীরের দ্বীপে কোনো পীর বা পরী ছিল কি না। তবে গ্যালাপাগোস দ্বীপের প্রধান প্রাণীই হলো অতিকায় কচ্ছপ যারা লাখো বছর ধরে ওখানেই আছে। ওদের কোনো পরিবর্তন এ যাবত ঘটতে দেখা যায়নি। গ্যালাপাগোস ইকুয়েডর থেকে প্রায় ছয়শো মাইল দূরে এক প্রশান্ত মহাসাগরের আগ্নেয় দ্বীপমালা। আগ্নেয়গিরি থেকে এদের সৃষ্টি। এখানে কোনো কোনো দ্বীপ এখনও গড়ছে। দ্বীপের বেশিরভাগের নাম আমেরিকার স্বীকৃত আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নানা স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। দ্বীপের কয়েকটির নাম পিন্টা আর স্যান্টা ম্যারিয়া - ক্যারাভেল জাহাজের একটির নামে। কলম্বাসের স্বদেশ ইতালির জেনোয়ার নামেও দ্বীপ আছে। আছে প্পেনের রাজা ফার্ডিনাণ্ডের নামেও। আছে ব্যালট্রা ও স্যান ক্রিস্টোব্যাল। তবে এটা আসলে ছিল স্প্যানিশ জলদস্যুদের আস্তানা। লোকজন তেমন ছিল না। এখনও এসব দ্বীপে মাত্র তিরিশ হাজার লোকের বসবাস। ওদের বেশিরভাগের কাজ সাগরে মাছ ও হাঙ্গর ধরা। পর্যটক আসে ২,০০,০০০-এর মতো ফি বছর। সেটা গ্যালাপাগোসের আকর্ষণ ও আয়ের উৎস আর সমস্যার কারণও বটে।

তবে গ্যালাপাগোসের নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে বিশ্বের অন্যতম প্রকৃতিবিজ্ঞানী ব্রিটিশ নাগরিক চার্লস ডারউইনের জন্য। যার অবিস্মরণীয় কীর্তির ভিত্তিভূমি হলো আজব জীবজন্তুর বসবাস এই গ্যালাপাগোস। আর তাঁর সেই কীর্তির নামে এক গবেষণা গ্রন্থ যার নাম অরিজিন অব স্পেসিজ। চার্লস ডারউইন এখানে আসেন ১৮৮৫ সালে। এইচএমএস বিগল নামে ব্রিটিশ নৌবাহনীর জাহাজে। তার গবেষণা স্টেশনটি এখনও এখানে সংরক্ষিত আছে। স্পেনীস ভাষায় গ্যালাপাগোস শব্দের অর্থও কচ্ছপ। আর তাঁর এই বিশ্ববিশ্রুত গবেষণার কারণেই আজকে এ দ্বীপমালায় এতো পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে আজব প্রাণীকূল দেখতে। তবে এটায় বিপদও ঘটেছে। এখানে পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। নানাধরনের পোকামাকড়, মশা ও গবাদির এমনকি বিমানবাহিত হয়ে আগমন ঘটেছে, যা এদেশের মূল প্রাণীকূলের জন্য বৈরি। জাহাজের তেল ফেলা হয় এখানে। নানা বর্জ্য পর্যটক ও অধিবাসীরা তৈরি করে। উপকূলের হাঙরের ঝাঁক শিকার করে নিয়ে যায় মৎস্যদস্যুরা চীনের বাজারে দামী খাবার শার্কফিন বিক্রির জন্য। এই হাঙরেরা সাধারণত হিংস্র নয়। সেজন্য গ্যালাপাগোস স্কুবা ডাইভিং-এর জন্যও খ্যাত। এ ছাড়া আরও একটি লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো এই দ্বীপমালায় কোনো হিংস্র মাংশাসী প্রাণী নেই।

আসলে এই দ্বীপমালা প্রকৃতির এক অসাধারণ শান্ত গবেষণাগার। এ কারণেই ইউনেস্কো এ বিপন্ন দ্বীপমালা ও তার প্রাণীকূলকে রক্ষা করার জন্য একে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে এবং দ্বীপ ও তার প্রাণীগুলিকে বিপন্ন তালিকাভুক্ত করে। তবে মাসখানেক আগে ইকুয়েডর সরকারের সংরক্ষণকাজে তুষ্ট কয়ে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি বিপন্ন তালিকা থেকে গ্যালাপ্যাগোসকে বাদ দিয়েছে যদিও অনেক পরিবেশবাদী সংগঠন এর প্রতিবাদ করে চলেছেন। এই দ্বীপে বসবাস করে বিশালকায় কচ্ছপ, সমজাতীয় আরও নানা প্রাণী, রিরাটকায় গিরিগিটি জাতীয় সরিসৃপ ইগুয়ানা, পাখি হাঁসের মতো জোড়া পায়ের অ্যালব্যাট্রস, পেঙ্গুইন ও সিল মাছ। এই অ্যালব্যাট্রসের প্রণয়নিবেদনের দৃশ্যও পর্যটকদের জন্য সবিশেষ চিত্তহারী। সিল মাছগুলো মানুষের কাছে ঘেঁষতে মোটেও ভয় পায় না। ডারউইন এখানে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলেন যে এখানে যে ৩০টির মতো যে তুলনামূলক বড়ো দ্বীপ রয়েছে তার প্রতিটি প্রাণী, সরিসৃপ ও পাখির এক অন্যের সাথে মোটেও মিল নেই। অথচ তিনি বলেছেন যে কালে কালে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে নিজেকেও বদলে মাছ বা কুমির আজ টিকটিকি হয়ে মাটিতে উঠে এসেছে। জলচর মাছ থেকেই তাঁর কথায় একদিন স্থলচর মেরুদণ্ডী প্রাণীর সৃষ্টি। আর তাদের মাঝ থেকেই এসেছে মানুষ। তাঁর সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট তত্ত্ব জš§ নিয়েছে। তবে কি মহাকাল এখানে স্তব্ধ হয়ে আছে কালজয়ী এক সমীক্ষাগার হয়ে? পরিব্যক্তি তথা প্রাণীর মিউটেশন কি এখানে কাজ করবে না? সেভাবেই রক্ষা করার চেষ্টা করছেন এটাকে ইকুয়েডর সরকার।

কিন্তু এ দ্বীপমালার আবহাওয়া ও পরিবেশই কেবল এখানকার আজব প্রাণীগুলোকে অপরিবর্তিত রাখলেও এখন সেটা বজায় রাখতে হলে গ্যালাপাগোসের পরিবেশ অবশ্যই অক্ষুণœ রাখতে হবে নইলে পৃথিবীর এই প্রাকৃতিক জীবন্ত জাদুঘরটি একদিন হয়তো বা আমাদেরই কারণে হারিয়ে যাবে। গোটা দ্বীপমালার ৯৭ শতাংশকেই জাতীয় পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

[লেখক: মলয়অনিল
সাংবাদিক]

0 comments:

Post a Comment