Saturday, August 28, 2010

বাদামি প্রেতাত্মা রহস্য

0 comments
ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা স্যার রজার টাউনসেন্ট প্রায় ৩০০ বছর আগে জেলা শহর নরফকে থাকতেন। তিনি যখন টাউন সেন্ট প্রাসাদ তৈরি করেন তখন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে দামিদামি পাথর সংগ্রহ করে এনেছিলেন। পুরো ভবনটিই তৈরি করা হয়েছিল চমৎকার মার্বেল পাথরে। ১৭১৩ সালের ঘটনা। লর্ড টাউনসেন্ট বিয়ে করেন ডরেথি নামের এক অপরূপা সুন্দরীকে। ডরেথি অবশ্য তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন না। তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল ডলি। তিনি খুব সুন্দরী ছিলেন কিন্তু টাউনসেন্ট তার প্রথম স্ত্রীকে ভালোবাসতেন না। টাউনসেন্ট তাকে গৃহবন্দী করে রাখেন। ডলি রাজাকে প্রচুর ভালোবাসতেন, স্বামীর জন্য তিনি সব কিছু করতে প্রস্তুত থাকতেন। আর তাই তিনি কখনো স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে আপত্তি করেননি। এদিকে ডরেথি অপরূপা সুন্দরী হওয়ায় তাকে নিয়েও সে সময় প্রচলিত ছিল নানা ধরনের কথা। কথিত আছে লর্ড ওয়ার্টসনও নাকি তার স্বামী ছিলেন। আসলে ডরেথি ছিলেন দুশ্চরিত্রা? আর তাই রাজা তাকেও দেখা শোনার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করেন। এভাবেই চলছিল রাজা টাউনসেন্টের সংসার। কিন্তু বড় ঝড় নামে ১৭২৬ সালে, যখন তার প্রথম স্ত্রী মারা যান। বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা ছিল ডলির, তিনি মৃত্যুকে খুব ভয় পেতেন। তবুও তাকে অকালে মরতে হলো। এ মৃত্যু রাজাও মেনে নিতে পারেননি। তিনি মাঝে মাঝেই আনমনা হয়ে বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে থাকতেন। একদিন রাজা তেমনি করে বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসেছিলেন। হঠাৎ পাশের ঘরে, যেখানে ডলি থাকতেন সেখানে বিকট শব্দ হলে রাজা চমকে গেলেন। তিনি দৌড়ে গিয়ে পাশের ঘরে উঁকি দিলেন। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলেন না। সব কক্ষ তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলেন তিনি। হঠাৎ দেখলেন কে যেন সিঁড়ি ভেঙে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। হালকা আলো অন্ধকারে মনে হলো তিনি আর কউ নন, নিশ্চয়ই তার প্রথমা স্ত্রীর প্রেতাত্মা। কিন্তু তাকে বাদামি লাগছে কেন? সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতেই রাজা আর কিছু দেখতে পেলেন না। এরপর দীর্ঘদিন ওই কক্ষের দিকে পা বাড়াননি তিনি। ক্রমেই এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে কৌতূহলী মানুষ বাসাটি দেখতে আসতে শুরু করে। আর এভাবেই প্রাসাদসহ পুরো এলাকাটি 'রায়হাম হল' নামে পরিচিতি পায়। প্রেতাত্মার এ সত্যকাহিনী বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ক্যাপ্টেন ফ্লেদিক ম্যারিয়টের মনে ব্যাপক দাগ কাটে। কৌতূহল বশত তিনি এক রাত সে প্রাসাদে গিয়ে কাটান। সে রাতে হঠাৎ কার যেন কান্না শুনতে পান তিনি। সব কক্ষ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কারো দেখা না পেয়ে তিনি সেদিন বাসায় চলে যান।

পরে আরেকদিন তিনি তার দু বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। গভীর রাতে তারাও কান্নার শব্দ শুনতে পেলে তারা পুরো প্রাসাদ খুঁজতে থাকেন। হঠাৎ দেখেন বাদামি রংয়ের এক নারী একটি কক্ষে বসে কাঁদছেন। আক্রমণের ভয়ে তারা সঙ্গে নিয়েছিলেন গুলিভর্তি পিস্তল। তারা নারীটির কাছে যেতেই তিনি যে কোথায় হারিয়ে গেলেন তা তারা বুঝতেও পারলেন না। এরপর প্রায় শতাব্দীকাল ধরে এ রহস্যটি লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তারপর ১৯৩৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এটি নিয়ে আবার বিশ্বব্যাপী হইচই পড়ে যায়। ওই নারীকে নাকি আবারো দেখা গেছে। এমনকি তার ছবিও নাকি তোলা সম্ভব হয়েছে। এমনই দাবি করলেন ক্যাপ্টেন প্রোভান্ড ও ইন্দোসিরা নামের দুই ফটো সাংবাদিক। তারা রায়হাম হলে রাতে ছিলেন এই আশায়_ যদি বাদামি রংয়ের ওই নারীর কোনো ছবি তোলা যায়। আর তারা নাকি তা তুলেছিলেনও। সে ছবি নাকি তাদের কাগজে ছাপাও হয়েছিল।
এরপর থেকেই ইংল্যান্ডের রায়হাম হল মানেই বাদামি প্রেতাত্মার পিশাচ বলে মনে করেন অনেকেই।

প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment