Saturday, August 28, 2010

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম

21 comments
উপমহাদেশের প্রাচীনতম জাদুঘর হিসেবে ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ইতিহসে অমর হয়ে আছে। ১৮১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটি অঙ্গনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম জাদুঘরটি কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। যার নাম ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। প্রথমদিকে এশিয়াটিক মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত এ জাদুঘরটি পরবর্তীকালে ইমপেরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিতি লাভ করে এবং উপমহাদেশের মধ্যে এ শ্রেণীর সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আর যাত্রা শুরুর সময় থেকেই সংগ্রহ, বিন্যাস, প্রসার-বহুমাত্রিক পর্যায়সমূহ ফলপ্রসূভাবে অতিক্রম করেছে। প্রায় আট হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ জাদুঘরটিতে শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্য_ এ ছয়টি ভাগে মোট ষাটটি গ্যালারিতে সুসজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে। বহুমুখী এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নানাবিধ সুশৃক্সখল কার্যক্রম। এর ফলে ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে একে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৮৬৬ সালে ভারতীয় জাদুঘর অধ্যাদেশ-১৭, ১৮৬৬-এর অধীনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম নামে একটি কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। যা পরবর্তীকালে ইন্ডিয়ান ভারতীয় জাদুঘর অধ্যাদেশ-১০, ১৯২০ দ্বারা সংশোধন করা হয়। বর্তমানের ভিক্টোরিয়ান সৌধটির ভিত্তি স্থাপন করা হয় ১৮৫৭ সালে এবং ১৮৭৫ সালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থপতি ছিলেন ডবি্লউ এল গ্র্যানভিল। জাদুঘরটি ১৮৭৮ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে প্রাক ও আদি ঐতিহাসিক, মৌর্য, সাতকাহন, গান্ধার, কুষান, গুপ্ত, পাল, সেন, চন্ডেল, হোয়সলা ও ঢোল যুগীয় শিল্পের গ্যালারিগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য বহুযুগের প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহও রয়েছে। একটি বিশেষ গ্যালারিতে রয়েছে মিসরীয় প্রাচীন নিদর্শনের একটি সংগ্রহ, যার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে একটি মমি। এছাড়াও রয়েছে সংস্কৃত, প্রাকৃত, আরবি, ফারসি, উর্দু ও বাংলা ভাষার শিলালিপি, পাণ্ডুলিপি ও সিলমোহর। ভারতীয় প্রাচীন, মধ্যযুগীয় ও আধুনিককালের মুদ্রাসমূহ কয়েকটি গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পকলা শাখায় ভারতীয় চিত্রকলা, বস্ত্রশিল্প ও অলঙ্কার সামগ্রীর পাশাপাশি নেপাল, তিব্বত, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং ইরানের শিল্পসামগ্রীও প্রদর্শিত হয়। নৃতত্ত্ব শাখায় প্রত্ন-নৃতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের বিভাগ এবং সঙ্গেই রয়েছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সজ্জিত গ্যালারি। জুওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, জিওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া ও বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া কর্তৃক পরিচালিত বিজ্ঞান শাখার অনেক গ্যালারি রয়েছে। প্রাণিবিদ্যার গ্যালারিগুলোতে কীটপতঙ্গ, মাছ, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রদর্শিত হয়। অর্থকরী উদ্ভিদ শাখায় ভেষজ গাছ-গাছড়া, উদ্ভিজ্জ তন্তু, রঞ্জক উদ্ভিদ, আঠা ও রেসিন, দারু, তেল ও তৈল বীজের সংগ্রহ রয়েছে। ভূতত্ত্ব বিভাগের সংগ্রহ পাঁচ ভাগে বিভক্ত_ সিওয়ালিক জীবাশ্ম, ভূপৃষ্ঠ ও উল্কাপিণ্ড, প্রস্তর ও খনিজ, অমেরুদণ্ডী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্ম। জাদুঘরের পরিচালনায় আটটি সমন্বয়কারী কার্যকরী কমিটি রয়েছে। যথা শিক্ষা, উপস্থাপন, প্রকাশনা, সংরক্ষণ, ফটোগ্রাফি, মেডিকেল, মডেলিং ও গ্রন্থাগার। এসব কমিটি জাদুঘর ও পরিদর্শকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ভিত্তিতে ভিডিও ও মুদ্রিত তথ্য প্রকাশ, প্রতিমূর্তি তৈরি, জাদুঘরের জিনিসপত্রের পরিচর্যা, গণসংযোগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা কার্যক্রমের দিকে সামগ্রিকভাবে লক্ষ্য রাখে। এছাড়াও জাদুঘরের অভ্যন্তরীণ বক্তৃতা, সেমিনার, প্রদর্শনী এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক আন্তঃদেশীয় ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর মতো বহির্মুখী কার্যক্রম বৃদ্ধি করছে।।
শামীম রহমান রিজভী 

21 comments:

Post a Comment