Saturday, August 21, 2010

নতুন টাইটানিক

35 comments
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল জাহাজ হিসেবে জগদ্বিখ্যাত টাইটানিকের ট্রাজিডির কথা সবারই জানা। কিন্তু অনেকেই জানি না
বর্তমান বিশ্বের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং বিলাসবহুল জাহাজের নাম 'ওয়েসিস অফ দ্য সিস' বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায়
'সাগরের মরূদ্যান'। এর আগে টাইটানিকই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ।

বর্তমানে ওয়েসিস অফ দ্য সিস-ই 'পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ'-এর তকমা অধিকার করে নিয়েছে। সমুদ্রগর্ভে টাইটানিকের হারিয়ে যাওয়ার প্রায় এক শতাব্দী পর নির্মিত হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের বৃহত্তম ও বিলাসবহুল ক্রুজ শিপ 'ওয়েসিস অফ দ্য সিস'। নির্মাতা রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে আড়াই বছর সময় নিয়ে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। বিলাসবহুল এই জাহাজ আকারে টাইটানিকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি বড়। এতোদিন পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ জাহাজ হিসেবে খ্যাত ছিলো ইনডিপেন্ডেন্স/ফ্রিডম অফ দ্য সিস যার তুলনায় ওয়েসিস অফ দ্য সিস পাক্কা ৭৫ ফুট বেশি লম্বা। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দৈত্যাকার এই জাহাজটি তৈরি করার জন্য রয়াল ক্যারাবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি এসটিএক্স ইউরোপ নামের এক জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। তাদের লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ তৈরি করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালের ১২ নভেম্বর। ওইদিন জাহাজের তলদেশের কাঠামো ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। তারপর সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর জাহাজটি তৈরি শেষ হয়। এরপর জাহাজটিকে স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান রয়াল ক্যারাবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১ নভেম্বর ২০০৯ সালে জাহাজটিকে ফিনল্যান্ড থেকে আমেরিকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। গন্তব্য ছিল ফ্লোরিডা। সেখানে পৌঁছানোর আগে জাহাজটি একটানা প্রায় তিন সপ্তাহ সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। যাত্রাপথে হাজার হাজার কৌতূহলী মানুষ জাহাজটিকে একনজর দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিল।

ওয়েসিস অফ দ্য সিসএর বৈশিষ্ট্যগুলো শুনলে চোখ ছানাবড়া হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ইতিহাসের বৃহত্তম এই জাহাজে রয়েছে সর্বমোট ১৬টি ডেক, ২,৭০০টি সুসজ্জিত কক্ষ (স্টেয়ার রুম বা কেবিন) এবং ৬,৩০০ যাত্রী এবং ২,১০০ ক্রু ধারণ ক্ষমতা। জাহাজের বৈশিষ্টগুলোকে সর্বমোট ৭টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল পার্ক, পুল, ফিটনেস সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি।

ওয়েসিস অফ দ্য সিস সর্বমোট ২০ তলাবিশিষ্ট জাহাজ, যা নিচু কোনো ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রয়োজনে গতিবেগ বাড়িয়ে পানিতে পুরো জাহাজের অবস্থান আরো নিচু করে ফেলতে পারে। ডেনমার্কের দি গ্রেট বেল্ট ব্রিজের উচ্চতা ওয়েসিস অফ দ্য সিজের চেয়ে মাত্র ১ ফুট বেশি। অথচ খুব সহজেই গতি বাড়িয়ে ওয়েসিস অফ দ্য সিস অতিক্রম করেছে এই সেতু।

ওয়েসিস অফ দ্য সিসে রয়েছে একটি পার্ক বা উদ্যান, যেখানে ১২ হাজার গাছের চারা এবং ৫৬টি গাছ রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই প্রথম ভাসমান উদ্যান।

জাহাজের পেছনের অংশে রয়েছে ৭৫০টি আসনসম বিশিষ্ট থিয়েটার, যার মধ্যে রয়েছে সুইমিং পুল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাহাজের এই জায়গাটি দিনে ব্যবহৃত হয় সুইমিং পুল হিসেবেই অথচ রাতে ব্যবহৃত হয় সাগরের একটি থিয়েটার হিসেবে।

কেবিন বা থিয়েটার ছাড়াও জাহাজের প্রায় প্রতিটি অংশেই রয়েছে অসংখ্য বার, পোশাক ও বিভিন্ন দ্রব্যাদির দোকান আর রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও রয়েছে ভলিবল কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট, চারটি বিশালাকৃতির সুইমিং পুল, জাহাজে আরো রয়েছে ইয়ুথ জোন, যেখানে আছে কম্পিউটার গেমিং ও সাইন্স ল্যাবরেটরিসহ নানা আকর্ষণীয় বিষয়, থিম পার্ক এবং বাচ্চাদের জন্য বিশেষ নার্সারি ও খেলাধূলার স্থান। আর পায়ে হেঁটে বেড়ানোর জন্য সুদৃশ্য জায়গা তো আছেই।

টাইটানিকের ওজন ছিল ৮৬ হাজার ৩২৮ টন। কিন্তু এই ওয়েসিস অফ দ্য সিস জাহাজটির ওজন টাইটানিকের চেয়ে অনেক বেশি। ওজন ২ লাখ ২৫ হাজার ২৮২ টন। বাইশতলাবিশিষ্ট এই জাহাজে অত্যাধুনিক হোটেলের সব রকম সুযোগ-সুবিধারই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৯ রাত, ৯ দিন উত্তর ক্যারাবিয়ান সমুদ্রে আনন্দ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে কম ভাড়া ধরেছেণ জাহাজ কর্তপক্ষ, যা মাথাপিছু ১ হাজার ৭৮৬ পাউন্ড। এ ব্যাপারে আরো একটি খবর হলো রয়াল ক্যারাবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি এ বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে এ ধরনের আরো একটি বিলাসবহুল জাহাজ তৈরি করবে বলে জানিয়েছে।

প্রায় এক শতাব্দী পর টাইটানিকের মতোই বেশ ধুমধামের সঙ্গেই যাত্রা শুরু করলো ওয়েসিস অফ দ্যা সিস।
**রনক ইকরাম**

35 comments:

Post a Comment