Thursday, August 26, 2010

বাংলাদেশের নৌকা

20 comments
নদীমাতৃক এ বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট-বড় অসংখ্য নদী। বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে নদীকেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আধুনিক যানবাহনের বহুল প্রচলনের আগে আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল। নৌকা, যা আজকের দিনে আমরা হারাতে বসেছি। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের সহজ মাধ্যম ছিল বিভিন্ন রকমের নৌকা। উত্তাল নদীবক্ষে গান গেয়ে পালতোলা নৌকা বেয়ে যেত মাঝিরা। আজও এই বাংলার এমনও অনেক এলাকা আছে যেখানে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। যুগ যুগ ধরে বাংলার মানুষ ও অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বিভিন্ন রকমের নানা নামের নৌকা। এসব নৌকার অধিকাংশই এখন আর টিকে নেই। এসব নৌকা এখন প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে প্রায় ৮০ রকম নৌকার মডেল স্থান পেয়েছে। নতুনের আগমনে পুরনোকে হারাতে হয় এরই ধারাবাহিকতায় আমরা হারিয়ে ফেলেছি নৌকা শিল্প। জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে যাত্রীবাহী কেরাই নৌকা, সাপুড়িয়া, মালবাহী কবিতী ও উবরী নৌকার মডেল। এছাড়া বৌচোরা, গয়না, বাছারি, কোষা, গন্ডি, লক্ষ্মী বিলাস, টালাই, বজরা, সিলেটি নৌকা, পানসী, ঘাসী, বালামী, জৈয়ন্তাপুরী, ইটা নৌকার মডেল। এগুলো এক সময় ছিল আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলো ছিল পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে এসবের জায়গা দখল করে নিচ্ছে যান্ত্রিক নৌকা (ট্রলার) ও ওয়াটার বাস। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অতীত ঐতিহ্য। ভরা নদীতে পালতোলা নৌকা ভেসে চলার মতো মনোরম দৃশ্য আজকাল দেখা যায় না। এখন নদীর বুক চিরে নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন ব্রিজ। বাংলার প্রধান প্রধান নদীগুলোতে যান্ত্রিক নৌকার দাপটে বিলীনপ্রায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী জলযান। নৌকা শিল্পের সঙ্গে যেসব কর্মী-শিল্পীরা জড়িত ছিলেন তারাও আজ হুমকির মুখে। এছাড়া নদীমাতৃক এ বাংলাদেশের নদীগুলো এখন আর আগের মতো উচ্ছল নেই। নদীর নাব্যতা কমছে, দখল হচ্ছে নদীর পাড়। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। এসব বিভিন্ন কারণে নদীমাতৃক এ বাংলাদেশের বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নৌকা সংস্কৃতি। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের ভরা নদী বা বিলে চলত নৌকাবাইচ। আজকাল এটিও দেখা যায় না। বাংলাদেশের কাঠের তৈরি এসব নৌকা ছিল ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম শিল্প, যা আমাদের সবার সুদৃষ্টির ফলে আবারো ফিরে আসতে পারে। হয়তো আমরা আবারো দেখতে পাব ভরা নদীতে পালতোলা নৌকা ভেসে বেড়াচ্ছে। এর জন্য প্রথমেই নদীগুলোর জীবন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে আর যান্ত্রিক নৌকার পাশাপাশি স্থান দিতে হবে ঐতিহ্যবাহী কাঠের নৌকাকে। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এসেও আমরা দেখতে চাই আমাদের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধরলার বুক চিরে ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলছে হারিয়ে যাওয়া লৌকিক জলযান।
উত্সঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

20 comments:

Post a Comment