Wednesday, August 25, 2010

সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ

0 comments
ঐতিহ্যগত দিক থেকে বিএম কলেজের পরই যে কলেজটির অবস্থান সেই কলেজটির নাম সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ। অর্ধ শতাব্দিতে ছুঁই ছুঁই করছে এই কলেজের বয়স। প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না হলেও ইতিমধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে এই কলেজটি। এক সময়ে বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনার জন্য এ কলেজের কোন বিকল্প ছিল না দক্ষিণাঞ্চলে। এ কলেজের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে যশোর বোর্ডের মেধা তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে নিত। দক্ষিণাঞ্চল থেকে যারা চাটার্ড একাউন্টিং কিংবা হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার কথা চিন্তা করতেন তাদের শুরুটা হতো হাতেম আলী কলেজের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির মাধ্যমে। হিসাব বিজ্ঞানের সূচনা কলেজ হিসেবে এ কলেজের পাঠদান ও পরীক্ষার ফলাফল অন্য যে কোন কলেজকে হার মানিয়ে দিত। কালের বিবর্তনে বাণিজ্য বিভাগের সেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা ঐতিহ্য কোনটাই এখন টিকে নেই। ভাগ হয়ে গেছে বহু ভাগে। তবুও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যের এ কলেজটি।

১৯৬৬ সালে দানবীর সৈয়দ হাতেম আলী সাহেবের আর্থিক সহযোগিতায় ১৭ একর জমির উপর এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নগরীর চৌমাথা এলাকায় মনোরম পরিবেশে কলেজটি গড়ে তোলা হলেও কালক্রমে এখন ঐ কলেজটি হয়ে গেছে জনবহুল শহরের মধ্যবর্তী একটি কলেজ। তবুও এই কলেজে এখন পর্যন্ত রয়েছে সু-প্রশস্ত খেলার মাঠ, ফুলের বাগান ও মনোরম পরিবেশের বিশাল ক্যাম্পাস। ১৯৮৬ সালে কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হয়। তার পরই পেয়েছিল পুরো যৌবন। ২০০০ সাল পর্যন্ত শিক্ষাদানে অপ্রতিদ্বন্দ্বি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর গৌরব ছিল পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। এরপর শুরু হয় নানাবিধ সংকট। বেসরকারীভাবে গড়ে উঠা অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক বদলী ও অধ্যক্ষ না থাকা সংকটের মুখে ঠেলে দেয় কলেজটিকে। এখনো শিক্ষক সংকটের কারণে জোড়াতালি দিয়ে কোনরকম চলছে অনার্স ও ডিগ্রীর কার্যক্রম। অনার্সে ৮টি বিভাগের ৫৬ জন শিক্ষকের বিপরীতে আছেন মাত্র ২০ জন। শিক্ষক সংকটে অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস হচ্ছে না। ডিগ্রী ৪০ জন শিক্ষকের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৫ জন। ভূগোল, কৃষি শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা বিভাগ শূন্য পড়ে আছে অনেক দিন।

১৯৭৪ সালে প্রথম এই কলেজে অর্থনীতিতে অনার্সসহ মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। তখন বরিশালের অনেক কলেজেই অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স ছিল না। বাণিজ্য বিভাগ থেকে একাদ্বশ শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থী থেকে যেত এই কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করার জন্য। কিন্তু শিক্ষক সংকট কেটে উঠতে না পারায় এখন আর অনার্স পড়ার জন্য ঐ কলেজে ছাত্র-ছাত্রীরা যেতে চাচ্ছে না। বর্তমানে এ কলেজের মোট শিক্ষার্থী সাড়ে তিন হাজার। এরমধ্যে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত ১১শ, অনার্সের ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষ ও মাস্টার্স-ডিগ্রী মিলিয়ে আরো ২৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে এসব শিক্ষার্থীর জন্য নেই তেমন কোন আবাসিক হোস্টেল। শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাস এ কলেজের ঐতিহ্যবাহী ও একমাত্র হোস্টেল। কিন্তু এখানে আবাসনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ২শ’ ছাত্র’র। আর ছাত্রীদের জন্য কোন আবাসনের ব্যবস্থা নেই। ফলে এ কলেজে পড়াশোনার জন্য যারা ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, বাউফল, কালাইয়া, দশমিনা, চরফ্যাশন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সাতক্ষীরাসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসে তাদের থাকতে হয় বিভিন্ন মেসবাড়িতে। ক্যাম্পাসের আশপাশে তেমন মেস কিংবা ভাড়া বাড়ি পাওয়া যায় না। শিক্ষকরাও ভোগেন আবাসিক সংকটে।

ঐতিহ্যের মেধাতালিকাঃ এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ঐ কলেজটি ১৯৮৫ সালে যশোর শিক্ষাবোর্ডে বাণিজ্যে দ্বিতীয় স্থান, ১৯৯০ সালে কলা বিভাগে ১৯তম, ১৯৮৬ সালে বিএসএসএ প্রথম, ১১ ও ১৩তম, ১৯৮৪ সালে ১৩তম স্থান লাভ করে। ১৯৭৯ সালে সম্মিলিত মেধা তালিকায় বাণিজ্যে ৭ম, ১৯৮০ সালে বাণিজ্যে ৩য় ও ৬ষ্ঠ, কৃষি বিজ্ঞানে ১ম, ৩য়, ৪র্থ, ৭ম, ৮ম, ১০ম, ১৯৮১ সনে ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম, ১৯৮২ সালে প্রথম, ৩য়, ৫ম, ১৯৮৪ সালে প্রথম ও ৪র্থ, ১৯৮৫ সনে ২য়, ১৯৮৬ সালে বাণিজ্যে ৩য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ, ৯ম, ১৯৯২ সালে মানবিকে ১২তম, ১৯৯৩ সনে বাণিজ্যে প্রথম ও ১১তম, মানবিকে ১২তম, ১৯৯৫ সালে মানবিকে ৮ম ও ১০ম, ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যে ১৬তম, ১৯৯৯ সালে বাণিজ্যে ৪র্থ, ১০ম ও ১৬তম, ২০০১ সালে বিজ্ঞানে ২য়, মানবিকে ৫ম, ৬ষ্ঠ, ১৩তম, ব্যবসায় শিক্ষায় ৩য়, ৬ষ্ঠ, ১৯ ও ২০তম স্থান অধিকার করে। ২০০২ সালে বিজ্ঞানে ৩য়, ৫ম, ৮ম, ৯ম, ১১তম, ১২তম, ১৩তম স্থান অধিকার করে। ২০০৪ সালে এ কলেজ থেকে এ প্লাস পায় ৬ জন। ২০০৫ সালে এ প্লাস পায় ১৬ জন, ২০০৬ সালে এ প্লাস পায় ১৩ জন, ২০০৭ সালে এ প্লাস পায় ১৫ জন, ২০০৮ সালে এ প্লাস পায় ৪০ জন, ২০০৯ সালে এ প্লাস পায় ৪৭ জন ও ২০১০ সালে এ প্লাস পেয়েছে ১১৭জন।

এত ভাল রেজাল্টের পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে দিনে দিনে কলেজটি ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। তারা জানান, শিক্ষকের পাশাপাশি অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদও শূন্য আছে এই কলেজে। ৭ বছর যাবৎ কলেজে কোন লাইব্রেরীয়ান নেই। একজন অফিস সহকারী দ্বারা চলছে লাইব্রেরীয়ানের কাজ। ৬টি একামেডিক ভবন, ১টি মসজিদ, ১টি শহীদ মিনার ও ১টি পোস্ট অফিস রয়েছে কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাসে। অথচ শুধুমাত্র শিক্ষক সংকটের কারণে সেখান থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।

0 comments:

Post a Comment