Monday, August 16, 2010

বিশ্বের দুর্ভাগা ৪১ রাষ্ট্রনায়ক

0 comments
গত দেড় শতাব্দীতে নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন বিশ্বের ৪১ রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন জাতির অর্ধশতাধিক নেতা। যাদের মধ্যে বেশ কটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রয়েছেন এ তালিকায়।

আমেরিকার অবিসংবাদিত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন থেকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৪০ জন সরকারপ্রধান অথবা রাষ্ট্রনায়ক স্বদেশের মাটিতে আততায়ীর হাতে নিহত হন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো বর্তমান বিশ্বের সর্বশেষ বড় বাজনৈতিক হত্যা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। প্রায় প্রতিটি হত্যার বিচার হলেও এ নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে। প্রকৃত হত্যাকারীরা রেহাই পেয়েছেন এমন অভিযোগ আছে। বিচারের স্বচ্ছতার মান নিয়ে থেকে গেছে প্রশ্ন_ অন্তত কয়েকটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনকে ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল হত্যার মধ্য দিয়ে এ রাজনৈতিক হত্যার শুরু। ১৬ বছরের ব্যবধানে ১৮৮১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আমেরিকার আরেক প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ডকেও জীবন দিতে হয় গুপ্তঘাতকের হাতে। দীর্ঘ ৮২ বছর পর ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর হত্যার শিকার হন আমেরিকার আরেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। আমেরিকার ইতিহাসে আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যার ঘটনা না ঘটলেও ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিখ্যাত নিগ্রো নেতা মেলকম, ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল ড. মার্টিন লুথার কিং, ১৯৬৮ সালের ৫ মে সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডি নির্মম হত্যার শিকার হন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক, জাতির পিতা মহাত্দা গান্ধীকে (মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী) হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বাধীন ভারতে হত্যার রাজনীতি। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বন্ধের বিরুদ্ধে অনশনরত মহাত্দা গান্ধীকে উগ্র মৌলবাদী শিবসেনা সংঘের সদস্য নথুরাম গডসে হত্যা করে। ১৯৮৪ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীকে। পরে তার পুত্র রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে তাকেও ১৯৯১ সালের ২১ মে নির্বাচনী জনসভায় আত্দঘাতী বোমা হামলায় হত্যা করা হয়। পাকিস্তানে প্রথম হত্যার শিকার হন ১৯৫১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান। সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণকারী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোও নিহত হন নির্বাচনী জনসভায় ভাষণদানরত অবস্থায়। সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল নিহত হন ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ। মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত হত্যার শিকার হন ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন নিহত হন ১৯৯৫ সালের ৫ নভেম্বর। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সলোমন বন্দরনায়েক নিহত হন ১৯৫৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসমি জাইম নিহত হন ১৯৫৯ সালের ১৭ আগস্ট।

১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাই ইরাকের রাজা ফয়সল, প্রধানমন্ত্রী নূরী আস-সাঈদ ও যুবরাজ প্রিন্স আবদুল ইল্লাহকে একই সঙ্গে হত্যা করা হয়। ইরানও মুক্ত নয় এ রাজনৈতিক হত্যা থেকে। ১৯৬৫ সালের ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হাসান আলি মনসুর এবং ১৯৮১ সালের ৭ আগস্ট প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলি রেজাই ও প্রধানমন্ত্রী জাভেদ বাহনারকে একইদিন হত্যা করা হয়। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট হাবিয়া রিমানা ১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল ও প্রধানমন্ত্রী আগাথি উইলিঙ্গিমানা ৭ এপ্রিল নিহত হন। বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট এনতারিয়া মিরা নিহত হন ১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমদাসা নিহত হন ১৯৯৩ সালের ১ মে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট বশির জামায়েল নিহত হন ১৯৮২ সালের ১৪ অক্টোবর। লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টলবার্ট নিহত হন ১৯৮০ সালের ১২ এপ্রিল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং হি হত্যা সংঘটিত হয় ১৯৭৯ সালের ২৭ অক্টোবর। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম আল হামিদ ১৯৭৭ সালের ১২ অক্টোবর ও ১৯৭৮ সালের ১৪ জুন প্রেসিডেন্ট আল-গামমি নিহত হন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দাউদ নিহত হন ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল। জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ওয়াশকি তাল নিহত হন ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর। সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট শোরমার্ক নিহত হন ১৯৬৯ সালের ৯ অক্টোবর। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রী এইচএফ হাওয়ার্ড ১৯৬৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিহত হন। নাইজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবুবকর তাফাওয়া নিহত হন ১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯৭৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নিহত হন নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জেনারেল মুর্তজা মুহাম্মদ। জর্ডানের সুলতান আবদুল্লাহ নিহত হন ১৯৫১ সালের ২০ জুলাই। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগো দিন দায়েম নিহত হন ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর। টোগোর প্রেসিডেন্ট এস অলিম্পিও নিহত হন একই বছরের ১৩ জানুয়ারি। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাস নিহত হন ১৯১৮ সালের ১৬ জুলাই। রাশিয়ার প্রভাবশালী লিওন ট্রটস্কি নিহত হন ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপদগামী সেনাসদস্য নৃশংসভাবে হত্যা করে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার ৮১ দিনের মাথায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও বঙ্গবন্ধু সরকারের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বাধীন বাংলা সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

0 comments:

Post a Comment