Wednesday, August 18, 2010

মহাপ্রাচীর কাহিনী

0 comments
চীনদেশে সম্রাট সি হোয়াংটির নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। দেশবাসীর অন্তরে তিনি ভক্তির আসনে প্রতিষ্ঠিত। সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্রাটের খুব সুখ্যাতি ছিল। শত্রু দমনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। প্রজাদের তিনি খুব ভালোবাসতেন। অত্যাচারীর প্রতি তিনি কখনো অনুমাত্র দয়া পোষণ করতেন না। অন্যায় করার জন্য বহু প্রজা এবং রাজকর্মচারীকে তিনি শাস্তি দিয়েছেন। এ সবের জন্য সম্রাটের সুখ্যাতি যেমন ছিল রাজ্যের মধ্যে, তার নামে প্রজাপুঞ্জের মনে ভয়েরও অন্ত ছিল না।

খ্যাতির গর্বে সম্রাট নিজেও কম গৌরববোধ করতেন না। কিন্তু তবুও তার মনে একটা ভাবনা ছিল। সম্রাটের মৃত্যুর পর তার এই রাজ্যজোড়া খ্যাতির কথা আর কেউ হয়তো স্মরণ নাও করতে পারে। আগামী দিনে যিনি চীন সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হবেন তার চারিত্রিক গুণ যদি সি হোয়াংটির কর্মক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায় তবে দেশবাসীর পক্ষে এই স্মৃতি ভুলতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না।

হোয়াংটির তার জীবদ্দশায় এমন কীর্তি স্থাপন করে যেতে চান, যা চীন দেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ কথা ভেবে একদিন তিনি রাজ্যের সব বিচক্ষণ ব্যক্তিকে রাজ দরবারে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এলেন।

অমাত্য-পরিজনে পরিষদ সরগম হয়ে উঠেছে এমন সময় সম্রাট স্বয়ং এসে হাজির হলেন। সবার সামনে সম্রাট তার মনোবাসনা ব্যক্ত করে বললেন, আপনারা এমন একটি প্রস্তাব করুন যার দ্বারা মৃত্যুর পরও দেশবাসীর কাছে আমার নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে ঘরে ঘরে আমার নাম উচ্চারিত হবে।

সম্রাটের এই অদ্ভুত সংকল্পের কথা শুনে সবার মধ্যে গুঞ্জন উঠল। একে অন্যে মুখের দিকে চেয়ে থাকলেন। কিন্তু একটা কিছু না বলে চুপ করেও থাকা যায় না। সম্রাট হয়তো দোষ গ্রহণ করবেন এতে। তাই পণ্ডিতদের মধ্যে একজন বললেন, এমন একটি বৃহৎ জলাশয় রাজ্যের মধ্যে স্থাপন করলে মানুষের উপকার হবে। আর এই জলাশয় এমন হবে, যাতে কোনোদিন জল শুকিয়ে না যায়। যতদিন এই জলাশয় শুষ্ক না হবে ততদিন লোকে সম্রাটের নাম স্মরণ করবে।

কেউ বললেন, এমন একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছাত্র যেখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।

আবার কেউ বললেন, এমন একটি রাজপথ তৈরি করা হোক যাতে মানুষ স্বচ্ছন্দে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া-আসা করতে পারে।

সম্রাট সবার কথা শুনলেন কিন্তু কারোর কথা তার মনে ধরল না। তিনি সবাইকে বিধায় দিয়ে অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন।

এমনি করে দিন গড়িয়ে যায়। সম্রাট কিছুতেই মন স্থির করতে পারেন না। কিছু একটা কীর্তি-চিহ্ন রেখে যেতে না পারলে মরেও তিনি শান্তি পাবেন না। ক্রমে এই ভাবনা তার কাছে ভয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়াল। এভাবে আরও কিছুকাল অতিবাহিত হলো। সাম্রাজ্যকে শত্রুশূন্য করে কি উপায়ে নিষ্কণ্টক করা যায় এ নিয়ে একদিন তিনি চিন্তা করছেন, এমন সময় বহিঃশত্রুর আক্রমণের কথাটাই তার সবার আগে স্মরণ হলো এবং এতেই তিনি অক্ষয় কীর্তি স্থাপনের একটা ব্যবস্থাও স্থির করে নিলেন।

সম্রাট স্থির করলেন, সমগ্র চীন দেশকে ঘিরে এমন এক প্রাচীর খাড়া করতে হবে, যাতে বহির্দেশ থেকে শত্রু সৈন্য এখানে প্রবেশ করতে না পারে। এরপর কিছুদিন বাদেই তিনি প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

এই প্রাচীর নির্মাণের জন্য সম্রাটের বহু অর্থ ব্যয় হয়। কাজ সম্পন্ন হলে দেখা গেল প্রাচীরটি দেড় হাজার মাইল দীর্ঘ হয়েছে, আর প্রাচীরের ওপর দিয়ে সাতজন অশ্বারোহী নির্বিঘ্নে পাশাপাশি চলে যেতে পারে। পরবর্তীকালে সম্রাট সি হোয়াংটির এই কীর্তিই পৃথিবীর ইতিহাসে চীনের প্রাচীর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

0 comments:

Post a Comment