Sunday, September 5, 2010

পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য

0 comments
১৫শ শতাব্দীর প্রথমভাগে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য বাছাইয়ের কাজটি শুরু হয়। সে সময় পর্যন্ত মানুষের তৈরি বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনার মধ্য থেকে এই বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়। যা সময় মধ্যযুগীয় সপ্তাশ্চর্য নামে পরিচিত। কালের স্রোতে বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এলেও আজো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে সেই পুরনো সপ্তাশ্চর্য ।
গিজার পিরামিড (মিসর):
বর্তমান যুগের মিসরের রাজধানী কায়রো নগরীর সীমানার নিকটবর্তী অঞ্চলে তিনিট পিরামিড, অর্থাৎ গিজা নেক্রোপোলিসের (প্রকৃতপক্ষে সমাধিক্ষেত্র) মধ্যে গিজার পিরামিডটি বৃহত্তম। যেটি তৎকালীন মিসরের ফারাও খুফুর সমাধি হিসাবে নির্মিত হয়। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে ২০ বছরের সময় লাগে এবং সমাপ্ত হয় খ্রিঃ পৃঃ ২৫০০ সালে। প্রাচীনযুগের মনুষ্যনির্মিত পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে বর্তমান সময়ে টিকে আছে একমাত্র 'গিজার পিরামিডটি।
দি গ্রেট ওয়াল অব চায়না (চীন)
চীনের উত্তর সীমান্তে অবস্থতি বিখ্যাত চীনের প্রাচীরটি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ১৬শ খ্রিস্টাব্দ অবধি দীর্ঘকাল ধরে পাথর খণ্ড এবং মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা দুর্গপ্রাকার। চীনের উত্তর অংশের পূর্বপ্রান্ত শানহাই জুয়ান নামক স্থান থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৬৪০০ কি.মি দীর্ঘ প্রাচীরটি পশ্চিম প্রান্তের লুপনুর নামক স্থান পর্যন্ত প্রসারিত। তৎকালীন চীনের কয়েকজন সম্রাট ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীরটি নির্মাণ করান মূলত বহিরাগত শক্তিগুলোর আক্রমণ থেকে উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য।
স্টোন হেনজ (ইংল্যান্ড):
ইংল্যান্ডের ওয়েলথশায়ার নামক স্থানে অবস্থিত প্রাগৈতিহাসিক যুগের মনুষ্যনির্মিত কীর্তিস্তম্ভ বৃত্তাকারে স্থাপিত (বা প্রোথিত) বিরাট আকারের প্রস্তর স্তম্ভগুলো ঘিরে মৃত্তিকাস্তূপ দিয়ে নির্মিত। প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস যে, খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ অব্দে প্রস্তরখণ্ডগুলো স্থাপন করা হয় এবং আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে চারপাশের মৃত্তিকাস্তূপগুলো নির্মিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো পৃথিবীর অন্যতম 'হেরিটেজ' নিদর্শন বলে ঘোষণা করে।
তাজমহল (ভারত):
১৭শ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শাহজাহান আগ্রা নদীতে তার প্রয়াত পত্নী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এই জমকালো সমাধি সৌধটি নির্মাণ করান। এই স্মৃতিসৌধটির নকশা করেছিলেন স্থপতি ওস্তাদ ঈশা এবং তারই তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হতে ২২-২৩ বছর সময় লাগে। এটি নির্মিত হয় ধবধবে সাদা রংয়ের মারবেল পাথরের খণ্ডগুলো দিয়ে কিন্তু বর্তমানে আগ্রা শহরের বায়ুদূষণের ফলে সাদা মারবেল খণ্ডগুলো ক্রমশ হলদে রং ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ দেরিতে হলেও এখন সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য করা যায় তাজমহল ১৭শ খ্রিস্টাব্দে একজন স্বামী তার প্রয়াত পত্নীর (মমতাজমহল) স্মৃতিতে নির্মাণ করান। অপরদিকে তুরস্কের এক রানি খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৩-৩৫০ অব্দে তার প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিলেন।
রোমের কলসিয়াম (ইতালি):
ইতালিতে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি পরিচিত ছিল ফ্ল্যাবিয়ান নামে। এস্ফিথিয়েটার অর্থ রঙ্গস্থল। সাধারণত এই ধরনের রঙ্গস্থল হতো ডিম্বাকৃতি বা বৃত্তাকার অট্টালিকা যার মধ্যে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে বসার স্থান থাকত। রোমের কলসিয়ামটি উপবৃত্ত বা ডিম্বাকৃতি রঙ্গস্থল যেটি নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। তৎকালীন রোমান সম্রাট ভেসপাসিয়ান ৭০-৭২ খ্রিস্টাব্দে এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ৮০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট টাইটাসের আমলে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই রঙ্গভূমির মোট আসন ছিল ৫০ হাজার এবং এখানে প্রধানত গ্ল্যাডিয়েটররা (প্রাচীন রোমের ক্রীতদাস মল্লযোদ্ধা) লড়াই করত মানুষ বা হিংস্র পশুর সঙ্গে এবং একপক্ষের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলত।
এছাড়া কৃত্রিম নৌ-যুদ্ধ, পশু শিকার, অভিযুক্ত আসামিদের ফাঁসি দেওয়া প্রভৃতি অনুষ্ঠান হতো। পৌরাণিক যুদ্ধ সম্পর্কিত নাটকও অভিনীত হতো। দীর্ঘ পাঁচ শতাব্দী ধরে এটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও মধ্যযুগ থেকে অন্যান্য উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হতো।
পিসার হেলানো বুরুজ (ইতালি)
পিসার বুরুজ (টাওয়ার) প্রকৃতপক্ষে পিসা-গির্জা থেকে পৃথকভাবে নির্মিত গির্জারই ঘণ্টা বুরুজ। এটি লম্বভাবে স্থাপনের পরিকল্পনা করলেও ১১৭৩ ক্রিস্টাব্দে নির্মাণ কাজ শুরুর অল্পদিনের মধ্যেই বুরুজটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হেলতে আরম্ভ করে। দুর্বল ভিত গড়া ও আলগা প্রকৃতির ভূমিটির জন্য এটি ঘটে। তিন দফায় প্রায় ১৭৭ বছর ধরে বুরুজটি নির্মাণ করা হয়। ১১৭৮ সালে তৃতীয় তলটির নির্মাণ হতে বুরুজটি মাটিতে বসে যেতে আরম্ভ করে। কারণ, ভিত গড়া হয়েছিল মাত্র তিন মিটার গভীর করে আলগা ও কমজোর প্রকৃতির মাটির ওপর। পরে প্রায় শতাব্দীকালব্যাপী নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে। এই কর্মবিরতি বুরুজটির নিচের মাটি দৃঢ় হয়ে যেতে সাহায্য করে, তাই এটি উলটে পড়ে যায়নি। ১২৭২ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ইঞ্জিনিয়াররা উপরদিকের তলগুলোর হেলে পড়া রুখতে একদিকের দেওয়ালটি অপরদিকের দেওয়ালের মধ্যে উঁচু করে নির্মাণ করে। কিন্তু এর ফলে বুরুজটি অন্যদিকে হেলতে শুরু করে। আবার যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে নির্মাণ কাজ স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে (পিসার হেলান বুরুজ) ৭ম তলাটির নির্মাণ শেষ হয় ১৩১৯ খ্রিস্টাব্দে। লক্ষ্য করা যায় যে, ১৩৭২ খ্রিস্টাব্দে ঘণ্টা ঘরটি নির্মিত হয় গোথিক-নকশাতে কিন্তু অপর তলগুলো নির্মিত হয়েছিল রোমানদের শিল্প নকশা মতো।
নানজিং-এর চীনামাটির বুরুজ (চীন)
                                                           ৫০০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দ 
১৫শ শতাব্দীর প্রথমভাগে তৎকালীন চীন-সম্রাট ইয়ং লি এটি নির্মাণ করান। সাদা রংয়ের চীনামাটির ইট দিয়ে নির্মিত। বলা হয় যে দিনের বেলা এটিতে সূর্যকিরণ প্রতিফলিত হতো এবং রাতেরবেলা বুরুজের শীর্ষদেশ থেকে ১৪০টি প্রদীপ ঝুলিয়ে দেওয়া হতো এটিকে আলোকিত করার জন্য। চারপাশের দেওয়ালগুলোতে চীনামাটির সঙ্গে কাচের টুকরো ও নানা রংয়ের পাথরখণ্ড বসানোর ফলে সবুজ, হলদে ও সাদা রংয়ের নকশা, পশু, ফুল, ল্যান্ডস্কেপ প্রভৃতি অঙ্কিত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হতো। এটি প্রায় ২৬০ ফুট উঁচু। ৯ তলাবিশিষ্ট প্যাগোডা আকৃতির বুরুজ। মধ্যস্থলের সিঁড়িটির ১৩০ ধাপ ঘুরে শীর্ষে উঠে গেছে।

0 comments:

Post a Comment