Monday, October 18, 2010

নিউজিল্যান্ড

0 comments
প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার অস্ট্রেলেশিয়া বা ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ নিউজিল্যান্ড। দ্বীপটি দক্ষিণ মেরুর এন্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের কাছাকাছি অবস্থিত। এর কাছাকাছি আরো কয়েকটি ছোট ছোট আইল্যান্ড রয়েছে। তার মধ্যে সামোয়া, টোঙ্গা, ফিজি ও কুক আইল্যান্ড অন্যতম। দেশটির আয়তন বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ। লোকসংখ্যা মাত্র ৪৫ লাখ। যা আমাদের ঢাকা শহরের ৩ ভাগের ১ ভাগ। মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই নিউজিল্যান্ডার, যাদের স্থানীয়রা 'পাকিহা' বলে ডাকে। কারণ এদের প্রায় সবাই ইউরোপ থেকে আগত। নিউজিল্যান্ডাররা আবার 'কিউই' নামেও পরিচিত। এদের আদিবাসীকে মারিউরি ও মাউরি বলে। এরা দেখতে স্থূলদেহী ও শক্তিশালী। এ দেশটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হলো নর্থ আইল্যান্ড, অপরটি সাউথ আইল্যান্ড। নর্থ আইল্যান্ডের একেবারে দক্ষিণে দেশটির রাজধানী ওয়েলিংটন, যা নর্থ ও সাউথ আইল্যান্ডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। দেশটির শহরগুলোর মধ্যে অকল্যান্ড সবচেয়ে বড় শহর। তারপর রয়েছে ওয়েলিংটন, হেমিলটন, খ্রিইস্ট চার্চ, গিজবর্ণ, তওরাঙ্গা, নেপিয়ার, ডুনেডিন ও কুইন্সটাউন। দেশটির লোকসংখ্যার মধ্যে ১৯৯৬ সালের শুমারি অনুযায়ী ইন্ডিয়ান গুজরাটি প্রায় ৪৪ হাজার, যা এখন গুজরাটি ও পাঞ্জাবি মিলে ৭০ হাজারের কাছাকাছি হবে। ১৯৭১ সালের শুমারি অনুযায়ী দেখা যায়, কুক অ্যাইল্যান্ডের 'মাওরি' গোষ্ঠী ছিল প্রায় ১৪ হাজার। সামোয়ান ছিল ২৪ হাজার। আর টোঙ্গান ছিল ২ হাজারের মতো। নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট মিলে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশী রয়েছে।

৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পলিনেশিয়ান নেভিগেটর মি. কুপি প্রথম এ দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। ৯৫০ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কুক আইল্যান্ড থেকে 'মারিওরি' আদিবাসী গোষ্ঠী নিউজিল্যান্ডে এসে বসবাস করে। মূলত ১৮৪০ সাল থেকে ইউরোপিয়ানরা নিউজিল্যান্ডে পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে। এদের মধ্যে নেভিগেটর ক্যাপ্টেন ক্যামবেল, উইলিয়াম ব্রাউন হবসন ও ক্যাপ্টেন কুক অন্যতম। ডাচ নাবিক ক্যাপ্টেন তাসমান ১৬৪৬ সালে এ দ্বীপটিতে আসেন। হল্যান্ডের একটি প্রদেশ জিল্যান্ডের নামানুসারে নিউজিল্যান্ডের নামকরণ করেন তিনি। তাসমানের নামে নিউজিল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাসমাম সাগর রয়েছে। দেশটি পাহাড় আর বড় বড় লেক দিয়ে সাজানো। পাহাড়গুলোতে আমাদের মতো ঘন বনজঙ্গল নেই। বন কেটে ছোট ছোট ঘাসের ভূমি তৈরি করে রাখা হয়েছে। ঘাষের ওপর দিয়ে হাঁটলে মনে হয় কার্পেটের ওপর দিয়ে হাঁটছি। দেশটির বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে পাইন গাছের বন। সেখানে সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় সাগর সৈকত আছে। এ সৈকতের পাশে বিরাট বিরাট পাহাড়, যা দেখলে প্রকৃতিকে কেবলই নৈস্বর্গিক মনে হয়। পুরো দেশই বৈচিত্র্যময় গাছপালা আর ফুলে ফুলে সাজানো। সব কিছুই যেন গোছানো। দেশটিতে বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ হয়। তার মধ্যে চেরি, স্ট্রবেরি, আপেল, কমলা, এভোকেডো ও কিউই ফল অন্যতম। নিউজিল্যান্ডের পশুর মধ্যে গরু, ভেড়া আর হরিণ উল্লেখযোগ্য। নিউজিল্যান্ডে কোনো বন্যপ্রাণী নেই এবং বিষাক্ত কোনো সরীসৃপ বা কীটপতঙ্গ নেই। সেখানের মাটিতে অতিরিক্ত সালফার থাকার কারণে কোনো সাপও নেই। নর্থ আইল্যান্ডেরর তাপু নামক স্থানে একটি সুন্দর ওয়াটার ফলস (জলপ্রপাত) আছে। যা থেকে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার লিটার পানি প্রতি সেকেন্ডে ৬০ ফুট উঁচু থেকে একটি লেকে পতিত হয়।

নিউজিল্যান্ডের একমাত্র বড় নদী 'ওয়েকাটো' রিভার থেকে নির্গত পানির পরিমাণ এত বিশাল যে, যখন ৩০০ ফুট চওড়া নদীর পানি মাত্র ৫০ ফুট চওড়া প্রবাহ দিয়ে তাপু লেকে গিয়ে পড়ে তখন পানিকে ঘন নীল বর্ণের মনে হয় এবং পতিত স্থানে শুধুই সাবানের ফেনা দেখা যায়। এজন্য এ ওয়াটার ফলসকে স্থানীয়রা হুকা ফলস অর্থাৎ সাবানের ফেনা (ফোম) বলে। নিউজিল্যান্ডের জাতীয় পাখি হচ্ছে 'কিউই' পাখি। যা খুব একটা চোখে পড়ে না। 'কিউই' পাখি উড়তে পারে না। সাধারণত বনে লুকিয়ে থাকে। দিনে চোখে দেখে না বিধায় রাতে রাস্তায় বা খোলা জায়গায় এরা বের হয়। আমরা একটা 'কিউই' পাখির চিড়িয়াখানায় ৩-৪টি পাখি জীবন্ত দেখেছি। মাটির নিচে নিউজিল্যান্ডের একটি বড় এক্যুরিয়ামে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ও একটি জায়গায় খুব কাছ থেকে অনেক পেঙ্গুইন পাখির দল দেখেছি। একবার দুটি পাহাড়ের ভিতর বিশাল বিশাল গুহা দেখে মনে হয়েছে, প্রকৃতিতে কি আশ্চর্য সৃষ্টিই না রয়েছে। জায়গাটি ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।



-সোহরাব উদ্দিন খান

0 comments:

Post a Comment