Tuesday, October 19, 2010

সিরাজগঞ্জ

43 comments
যমুনার তীরে অবস্থিত রাজশাহী বিভাগের জেলা সিরাজগঞ্জ। উত্তরে বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলা, পূর্বে টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলা এবং পশ্চিমে পাবনা, নাটোর ও বগুড়া জেলা। যমুনা, ইছামতি, বড়াল, করতোয়া ও ফুলজোড়া এ জেলার প্রধান নদী।

বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু। দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকারী এ সেতুটি ১৯৯৮ সালে চালু হয়। এর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ সড়কে সেতুর দূরত্ব ১১৯ কিলোমিটার। সেতুর দু'পাড়ে দুটি রেল স্টেশন আছে বলে, কোনো লোকাল ট্রেনে চড়ে যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করা সহজ। সেতুর সিরাজগঞ্জ প্রান্তে অর্থাৎ পশ্চিম প্রান্তের স্টেশনের নাম সায়েদাবাদ। আর পূর্ব প্রান্তের স্টেশন হলো ইব্রাহীমাবাদ। গাড়িতে চড়েও এ সেতু ও যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। বঙ্গবন্ধু সেতুতে হাঁটার অনুমতি নেই। গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে টোল পরিশোধ করতে হয়।

হার্ডপয়েন্ট

যমুনার ভাঙ্গন থেকে শহর সিরাজগঞ্জকে রক্ষা করতে ১৯৯৬ সালে এখানে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ জায়গাটি এখন শহরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। বর্ষায় এ জায়গাটির সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়। এখানে বসেই যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

ইলিয়ট ব্রিজ

জেলা শহরের কাটা খালের ওপরে নির্মিত প্রাচীন লোহার তৈরি সেতু। সিরাজগঞ্জ শহরকে দেখার জন্য, প্রায় ত্রিশ ফুট উঁচুতে এ সেতুটি ১৮৯৫ সালে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে নির্মাণ করেন ইংরেজ এসডিও বিটসন বেল। বাংলার তৎকালীন ছোট লাট স্যার আলফ্রেড ইলিয়টের নামে এর নামকরণ করা হয়। সে সময়ে এই সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে পুরো সিরাজগঞ্জ শহরকে দেখা যেত।

হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির

জেলার উলস্নাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল এলাকায় নবরত্নপাড়া গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির। সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কের পাশে এ এলাকায় আরো কয়েকটি ছোট ছোট প্রাচীন মন্দির আছে। মন্দিরগুলি আনুমানিক ১৭০৪-১৭২০ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে তার নায়েব দেওয়ান রামনাথ ভাদুরী নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। মূল নবরত্ন মন্দিরটি তিল তলা বিশিষ্ট। ইট সুরকিতে তৈরি এ মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ দেয়ালে পোড়ামাটির কারুকাজ।

রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি

জেলার শাহজাদপুরে আছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাচারিবাড়ি। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠি নিলামে কিনে নেন। ঊনত্রিশ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান করতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপরে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজে এখানে যাওয়া-আসা ও অবস্থান করেন কবি। এখানে অবস্থানকালে তিনি তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ভাগাভাগির ফলে শাহজাদপুরের জমিদারি চলে যায় রবীন্দ্রনাথের অন্য শরিকদের কাছে। তাই ১৮৯৬ সালে তিনি শাহজাদপুর ছেড়ে চলে যান। জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরোনো দ্বিতল ভবন এখনো আছে, বর্তমানে যা ব্যবহূত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ কবির জন্ম দিবসে এখানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিন দিনের নানান অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। জেলা শহর থেকে রবীন্দ্র কাচারিবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। বাসে শাহজাদপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাচারিবাড়ি।

শাহজাদপুর মসজিদ

জেলার শাহজাদপুর উপজেলা সদরের শেষপ্রান্তে দরগা পাড়ায় হুরাসাগর নদীর তীরে অবস্থিত এ মসজিদটি। জানা যায়, এ অঞ্চলের সুফী সাধক মখদুম শাহ পনের শতকে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বর্গাকার এ মসজিদটি পনের গম্বুজ বিশিষ্ট। এতে তিনটি সারিতে পাঁচটি করে গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বৈশিষ্ট হলো সাত ধাপ বিশিষ্ট গম্বুজ বিশিষ্ট দ্বিতল মিম্বর।

মখদুম শাহের মাজার

মসজিদের কাছেই রয়েছে মখদুম শাহ দৌলাহ্র সমাধি। জনশ্রুতি আছে ইয়েমেনের রাজা মুয়াজ বিন জবলের ছেলে ছিলেন তিনি। পিতার অনুমতি নিয়ে আরো বারোজন আউলিয়া নিয়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি এ অঞ্চলে আসেন। দীর্ঘকাল এ অঞ্চলে অবস্থান করার পরে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। এখানে আছে তার সমাধিক্ষেত্র। প্রতিবছর চৈত্র মাসে মাসব্যাপী মেলা বসে এখানে।

চলনবিল

জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলের অংশ বিশেষ। বর্ষায় বেড়াতে এলে চলন বিলের এসব জায়গায় বেড়ানো যেতে পারে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ আসা যায় সড়ক ও রেল পথে। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন (০১১৯৯১২২৩৪৫), এস আই এন্টারপ্রাইজ (০১৭১২৬৭৮৬৪৯), গাবতলী থেকে ইউনিক সার্ভিস (০১১৯০৮০৬৪৭৭) বাস যায় সিরাজগঞ্জ। ভাড়া ১৭০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে সিমান্ত সুপার সার্ভিস (০১৮১৯৫৪২৫২৯), দামপাড়া, স্টেশন রোড থেকে ইউনিক সার্ভিস (০১৭২৪৪৫২০০৭) যায় সিরাজগঞ্জ। ভাড়া ৩৫০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে সদানন্দপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ শহর। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সদানন্দপুর স্টেশনে থামে। ভাড়া ১১০-১২৫ টাকা।

কোথায় থাকবেন

সিরাজগঞ্জ শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হলো শহরের স্বাধীনতা স্কোয়ারে হোটেল আল হামরা, (০৭৫১-৬৪৪১১, ০১৭৪৫৬২৯২৬৪, এসি এক শয্যা কক্ষ ৫০০ টাকা, এসি দ্বিশয্যা ৭০০ টাকা, নন এসি এক শয্যা কক্ষ ৪৫০, নন এসি দ্বিশয্যা কক্ষ ২৫০ টাকা)। শেখ মুজিব রোড হোটেল অনিক (০৭৫১-৬২৪৪২, ০১৭২১৭১৯২৩৫, এসি এক শয্যা কক্ষ ৪৫০ টাকা, এসি দ্বিশয্যা ৭০০ টাকা, নন এসি এক শয্যা কক্ষ ১৫০, নন এসি দ্বিশয্যা কক্ষ ২৫০ টাকা)।

জরুরি প্রয়োজনে

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (০৭৫১-৬২৯৩০), ফায়ার সার্ভিস (০৭৫১-৬৩৩৩৩), সিরাজগঞ্জ সদর থানা (০৭৫১-৬২২২২), সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে থানা (০১৭২০১৫৩৬৯৮)

43 comments:

Post a Comment