Wednesday, October 6, 2010

দুর্গনগরী, পঞ্চগড়

0 comments
মাটির নিচে প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। যা ছিল এতদিন কালের ধুলায় ঢাকা। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় এলাকায় এটির সন্ধান মিলে। ওই এলাকার ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়েই রয়েছে এই দুর্গনগরীর অবস্থান।

ওই এলাকার মাটি খুঁড়েই বের করা হয়েছে বহু মূল্যবান প্রত্ন নিদর্শন। প্রত্নতাত্তি্বক খননে আবিষ্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ (স্তূপ) ও একটি মন্দির। ভিতরগড়ের রাজবাড়ির পাশে কাছারি বলে পরিচিত উঁচু ঢিবি খননকালে এ মন্দিরটি আবিষ্কৃত হয়। তবে স্মৃতিসৌধ (স্তূপ) ও মন্দিরের অংশবিশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে খনন শুরু করে উঁচু ঢিবিতে অবস্থিত স্থানীয় গোরস্থানের নিচের দিকে খননকাজ চালিয়ে একটি মন্দিরের ধ্বংসপ্রায় অবকাঠামো এবং মনুমেন্টের পশ্চিমে ইটের গাঁথুনির ১৬টি স্তম্ভ পাওয়া যায়। এই দুর্গনগরীর আবিষ্কারক 'ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস' বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ হোসেন জাহান আশা করছেন খুব শীঘ্রই স্মৃতিসৌধ ও মন্দিরের পুরো অবয়ব বের করা যাবে। তিনি বলেন, নির্মাণ পদ্ধতি দেখে এগুলোকে গুপ্তযুগের পরে সপ্তম শতক বা ১৪০০ বছর আগের তৈরি বলে অনুমান করা যায়। এছাড়া এসব স্থাপনা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বলেও আমাদের ধারণা।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে স্থাপিত ভিতরগড় দুর্গনগরী ছিল সার্বভৌম প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন বাণিজ্যপথের ওপর তৈরি এই দুর্গের নগরীর সঙ্গে তিব্বত, ভুটান, চীন, নেপাল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিমের বিহার ও পুণ্ড্রবর্ধনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল । সড়ক ও নদীপথে ছিল এই যোগাযোগ। বিশেষত বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের অনুসারী লোকজন ছিল এ নগরীর বাসিন্দা। একই সঙ্গে এটি কেবল বহু অঞ্চলের বস্তুগত আদান-প্রদানই নয়, বরং বহুমুখী সংস্কৃতিরও মিলনকেন্দ্র ছিল আসাম, কুচবিহার, ময়নামতি, পাহাড়পুর ও মহাস্থানগড়ে আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ত্বের বিভিন্ন নমুনার সঙ্গে এখানে আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ত্বের কোনো মিল নেই। চারটি দেয়াল দিয়ে এই নগরীকে সুরক্ষিত করা হয়। এর মধ্যে বাইরের দুইটি গড় বা দেয়াল মাটি দিয়ে তৈরি। সামনে পরিখা আছে। দেশে যেসব দুর্গনগরী চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ভিতরগড় দুর্গনগরীর বিস্তৃতি অনেক বেশি। এ কারণে একে দেশের সর্ববৃহৎ দুর্গনগরী বলা যেতে পারে। নগরীর পশ্চিমে কৃষিকাজ, দক্ষিণে কামার-কুমার, ওয়ার্কশপ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম হতো। এ অঞ্চল প্রত্নতাত্তি্বক দিক দিয়ে ভিতরগড়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ভিতরগড়কে হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

-নূরুল হুদা বাবু, পঞ্চগড়

0 comments:

Post a Comment