Tuesday, November 16, 2010

বিস্ময় পাথর

0 comments
মোয়েরাকি
মোয়েরাকি কোনো জায়গার নাম নয়, কতগুলো পাথরের নাম। ওগুলোতে যদি কোনো ফাটল থাকে, তাহলে লুকোচুরি খেলার সময় শিশুরা সহজেই তার ভেতর লুকিয়ে থাকতে পারবে, কেউ খুঁজে পাবে না। এজন্য অবশ্য যেতে হবে নিউজিল্যান্ডে। পাথরগুলো দক্ষিণ নিউজিল্যান্ডের কোয়েকোহ সৈকতে আছে কি-না! এই মোয়েরাকি পাথরগুলোকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীদের মধ্যে পৌরাণিক গল্পও আছে। ওই আদিবাসীদের নাম মাউরি। ওরা মনে করে, ওদের পূর্বপুরুষ একেকজন ছিল দৈত্যের মতো বিশাল। আর তাদের পূর্বপুরুষরা একবার আরাইতেউরু নামের এক বিশাল নৌকায় চেপে নৌভ্রমণ করছিল। যেই না নৌকা মাতাকায়ার কাছে এলো, অমনি প্রকাণ্ড তিনটা ঢেউ এসে সেই নৌকা ডুবিয়ে দিল। যে কয়জন বেঁচে গিয়েছিল তারা পরে পাথর হয়ে যায়। সেই পাথরগুলোই পরে বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়। আর নৌকায় যে জিনিসপত্র ছিল, সেগুলোই হয়ে যায় মোয়েরাকি পাথর।

এমনিতেইতো সাগর পাড়ের সবকিছুই সুন্দর। তার ওপর এই মোয়েরাকি পাথরগুলোও কিন্তু কম সুন্দর নয়। আর এগুলোর কয়েকটা এতই ভারী, ওজন হবে কয়েক টন! ১ টন মানে কিন্তু এক হাজার কেজি। সেগুলো প্রস্থে হয় ৩ মিটারের মতো। এখন প্রশ্ন হলো, পাথরগুলো কিভাবে তৈরি হলো। সাগরের তীরে কোনো একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে বালি ও বালি জাতীয় বিভিন্ন পদার্থ জমে জমে তৈরি হয়েছে এই পাথরগুলো। সাগরের স্রোত আর বাতাস মিলে বালিকে ঠেলে জড়ো করার কাজটি করেছে। ঠিক যেভাবে ঝিনুকের পেটে বালি জমে মুক্তা তৈরি হয়, ঠিক সেভাবেই, তাই না! আবার সাগর তীরে পাথরের চাঙড় ভেঙে, ভাঙা অংশগুলো একসঙ্গে জড়ো হয়েও পাথরগুলো তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও অবশ্য জড়ো করার দায়িত্ব পড়ে সাগরের স্রোত আর বাতাসের কাঁধেই।

রেসট্র্যাক প্লায়া
রেসট্র্যাক প্লায়াতে এক ধরনের আজব পাথর দেখা যায়, যেগুলো দিব্যি মানুষের মতো ঘুরে বেড়ায়! আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে এই রেসট্র্যাক প্লায়া অবস্থিত। এই ডেথ ভ্যালি হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম একটি সমতল ভূমি। আর এখানকার রেসট্র্যাক প্লায়াতেই দেখা মেলে পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত পাথরের। এই পাথরগুলোকে বলে সেইলিং স্টোন বা ভাসমান পাথর। কারণ এগুলো প্রতি বছর নির্দিষ্ট স্থান বদলায় বা ঘুরে বেড়ায়। অবশ্য কেউ কখনো ওদের ঘুরে বেড়াতে দেখেনি। কিন্তু ঘোরাঘুরির মৌসুমে ওদের একেকদিন একেক জায়গায় দেখা যায়, আর পেছনে পড়ে থাকে ওদের গড়িয়ে আসার স্পষ্ট ছাপ!

এই প্লায়াতে প্রতি বসন্তে হালকা বৃষ্টি হয়। ফলে মাটি কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। রুক্ষ মাটি ভেজা ভেজা হয়ে উঠলেই পাথরগুলো তাদের ভ্রমণ শুরু করে। হয়তো পাথরের ঘুরে বেড়ানোকে গালগল্প বলে উড়িয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু তাদের ঘুরে বেড়ানোর স্পষ্ট ছাপ বিজ্ঞানীদের কপালেও চিন্তার ছাপ ফেলে দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর কোনো স্থির ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা অনেক ভেবেচিন্তে বলেছিলেন, এর জন্য আসলে প্রচণ্ড বেগের বাতাসই দায়ী। কিন্তু সে কথা শুনে বোধ হয় পাথরগুলো মুচকি মুচকি হেসেছিল। কারণ, প্রায়ই দেখা যায়, পাথরগুলো একেবারে পারক্টে অ্যাঙ্গেলে ঘুরে তাদের আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। সব দেখে শুনে মনে হয়, পাথরগুলো আসলেই বোধহয় ঘুরে বেড়ায়! তবে সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয় হলো, এতদিন হয়ে গেল, এখনো কেউ পাথরগুলোর নড়াচড়ার কোনো ভিডিও বা ছবি তুলতে পারল না।

খুরশীদা রহমান চৈতী

0 comments:

Post a Comment