Tuesday, November 30, 2010

ফকিরচাঁদ গোঁসাই আশ্রম, লালপুর

0 comments
সরকারি নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে দুই শতাব্দীরও বেশি স্মৃতিবাহী লালপুরের শ্রী ফকিরচাঁদ গোঁসাই আশ্রম ধ্বংস হতে চলেছে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিতটি আশ্রমটি আজ অনেকটাই জনমানবহীন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হতে চলেছে এ ঐতিহাসিক নিদর্শনটি। নাটোরের লালপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে দুড়দুড়ীয়ার নওপাড়া (রামকৃষ্ণপুর) গ্রাম। এ গ্রামের গহিন অরণ্যে একটি বটগাছ। বাংলা ১২১৭ সালে বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকিরচাঁদ বৈষ্ণব। এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা, গঙ্গাস্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অনুষ্ঠানে সমবেত হন। সাধু ফকিরচাঁদ বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়া জমিদার তারেকশ্বর তার স্মরণে সমাধিটি পাকা করে দেন এবং ভক্তদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও শান বাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর দান করেন। আশ্রমের প্রবেশ পথে রয়েছে ময়ূর, বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি এবং লতাপাতাসহ কারুকার্যখচিত সুবিশাল ফটক। প্রধান দ্বার পার হয়েই ডান পাশে রয়েছে ভক্ত সাধু ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ছয়জন সাধুর সমাধি মন্দির। একটু সামনেই রয়েছে শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের চারকোণা প্রধান সমাধিস্তম্ভ। বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধিসৌধের পাশে রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোনো জানালা নেই। মূল মন্দিরে শুধু প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কথিত আছে মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গলাভ করেন। তার শবদেহ দেখা যায়নি। তার পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন প্রাণী, গাছ, লতাপাতাখচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। ভেতরে রয়েছে ঝাড়বাতি ও দেব-দেবীর মূর্তি। সোনা, রুপা ও কষ্টিপাথরের তৈরি মূল্যবান কারুকার্যগুলো চুরি হয়ে গেছে।

-আবদুল বারী, লালপুর (নাটোর)

0 comments:

Post a Comment