Monday, November 22, 2010

গ্রেট স্ফিংস, মিসর

0 comments
গ্রেট স্ফিংস পৃথিবীর বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম ভাস্কর্যগুলোর অন্যতম। শত শত বছর ধরে কবি, সাহিত্যিক, গবেষক এবং এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষের কল্পনাকে উস্কে দিয়েছে এই স্ফিংস। বিভিন্ন সময়ে গ্রেট স্ফিংসকে নিয়ে কত গল্পগাথা তৈরি হয়েছে, খোঁজা হয়েছে কত রহস্যের গন্ধ। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রাচীনকালের জনগণ একে পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতম হিসেবে গণ্য করতেন।

গ্রেট স্ফিংস সিংহের শরীরে মানুষের মাথা সংবলিত বিশাল এক ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যে আস্ত একটা বড় পাথরকে সিংহের শরীরের অবয়ব দেয়া হয়েছে, আর তার ওপর খোদাই করা হয়েছে মানুষের মাথা। এখনকার কায়রোর সনি্নকটে নীল নদের পশ্চিম তীরে খাফ্রার পিরামিডের কাছে পূর্ব দিকে মুখ করে গ্রেট স্ফিংসের অবস্থান।

এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মনোলিথিক ভাস্কর্য এবং মনুমেন্টাল ভাস্কর্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। গ্রেট স্ফিংস দৈর্ঘ্যে ৭৩.৫ মিটার (২৪১ ফুট), প্রস্থে ৬ মিটার (২০ ফুট) এবং উচ্চতায় ২০.২২ মিটার (৬৬.৩৪ ফুট)। এর পায়ের থাবাগুলো ১৫ মিটার (৫০ ফুট) দীর্ঘ; মাথার দৈর্ঘ্য ১০ মিটার (৩০ ফুট) আর ৪ মিটার প্রশস্ত। স্ফিংসের ১ মিটার লম্বা নাকটি আজ আর নেই; কথিত আছে নেপোলিয়নের সৈন্যরা গ্রেট স্ফিংসকে নিশানা বানিয়ে কামানের গোলা ছুঁড়েছিল। ফারাও এর প্রতিমূর্তিস্বরূপ গ্রেট স্ফিংসের দাড়ি ছিল; কিন্তু বহুদিন আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সেসব। একটি লেজও আছে এই স্ফিংসের, গুটানো অবস্থায়। তবে এটি নির্মাণের কারণ, এর চেহারা কার প্রতিমূর্তি, কখন এবং কারা এটি নির্মাণ করেন এসব নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।

গ্রেট স্ফিংসের নির্মাণকাল যদিও প্রশ্নসাপেক্ষ, প্রচলিত মতে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে গিজের দ্বিতীয় পিরামিডের নির্মাতা ফারাও খাফ্রা গ্রেট স্ফিংস নির্মাণ করান এবং এই স্ফিংসের অবয়ব আসলে ফারাও খাফ্রার। যদিও অতি সাম্প্রতিককালে বলা হচ্ছে যে, পিতা খুফুর শৌর্য্য-বীর্যের প্রতীক হিসেবে এবং সম্মান প্রদর্শনের জন্য সম্রাট খাফ্রার ভাই এই স্ফিংস নির্মাণ করান। সে যা-ই হোক আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগের এই নির্মাণ যারা সম্পন্ন করেছিল তাদের কথা ভাবলেই আশ্চর্য লাগে! কিভাবে তারা সম্পন্ন করল এতবড় ভাস্কর্যের কাজ। আজকের দিনেও কি এরকম বিশাল কাজের আয়োজন দেখার সৌভাগ্য হয় আমাদের? নিঃসন্দেহে প্রাচীন মিশরের সেসব কীর্তিমান শিল্পী-শ্রমিকদের অসাধারণ প্রযুক্তিজ্ঞান ছিল।

প্রাচীন মিশরীয়রা সূর্যকে দেবতা জ্ঞান করত। পূর্বমুখী গ্রেট স্ফিংস প্রাচীন মিসরীয় সাম্রাজ্যের সূর্য উপাসনার প্রতীক। এটির নির্মাতারা একে স্ফিংস নামে ডাকত কিনা তা জানা যায় না। কারণ এটির নির্মাণ, নির্মাণের উদ্দেশ্য ইত্যাদি নিয়ে সে যুগের কোনো লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায়নি। বহু প্রচলিত এই নামটির ব্যবহার দেখা যায় গ্রেট স্ফিংস নির্মাণের ২০০০ বছর পর গ্রিক পুরাণে। সিংহের শরীরে রমণীর মাথা সংবলিত পাখাওয়ালা অদ্ভুত এক প্রাণীকে স্ফিংস নামে বর্ণনা করা হয়েছে গ্রিকে। গ্রেট স্ফিংসের সঙ্গে ওই স্ফিংসের পার্থক্য হলো_মিসরীয় স্ফিংসের পাখা নেই এবং মাথা পুরুষ মানুষের। মিসরে আরও অনেক স্ফিংস আছে এবং এর প্রায় সবই গ্রেট স্ফিংসের মতো সিংহের শরীরে পুরুষ মানুষের মাথাবিশিষ্ট।

বিশ্বাস করা হতো যে, স্ফিংস হচ্ছে গিজের রক্ষাকর্তা, এটি পাহারা দেবে পিরামিড, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা। গ্রেট স্ফিংস আজো দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার সমৃদ্ধ প্রতীক আর মানুষের অতি মানবিক কীর্তির নিদর্শন হয়ে।



-বিপ্লব ভট্টাচার্য্য

0 comments:

Post a Comment