Wednesday, December 1, 2010

উইকিলিকস ২৮ নভেম্বর ২০১০

0 comments
দৈনিক সংবাদঃ গত ২৮ নভেম্বর থেকে উইকিলিকস মার্কিন দূতাবাসগুলোর ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৭টি গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়া শুরু করে। ফলে বিব্রত এখন মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ এবং মার্কিন বৈদেশিক নীতি নির্ধারকরা। একের পর এক তথ্য ফাঁস করায় বিশ্ববাসী এখন জেনে যাচ্ছেন মার্কিন শাসকদের বৈদেশিক নীতি এবং কর্মকান্ডের ভেতরের খুঁটিনাটি। পারমাণবিক প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান থেকে শুরু করে ইরান আক্রমণ করতে আরব নেতাদের অনুরোধ জানানো পর্যন্ত কোন তথ্যই আর গোপন নেই বিশ্ববাসীর কাছে। সবই উন্মুক্ত করে দিয়েছে উইকিলিকস।
এসব গোপন তথ্য ১৯৬৬ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নেয়া। যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আমেরিকার ২৭৪টি দূতাবাস এবং ওয়াশিংটন ডিসির পররাষ্ট্র বিভাগ থেকে সংগৃহীত। ফাঁস করে দেয়া তথ্যের মধ্যে ১৫ হাজার ৬৫২টি ছিল ক্লাসিফাইড গোপনীয়। অর্থাৎ যা কোন দিনই প্রকাশ যোগ্য নয়।
প্রকাশিত তথ্যের মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে যা বলেছেন আর অন্দরমহলে করেছেন তার উল্টোটি। এ জাতীয় বৈপরীত্যও প্রকাশ পেয়ে গেছে। ফলে মার্কিন গণতন্ত্রে নাগরিকদের মতামত সত্যিকার প্রতিফলিত হয় কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে এখন।
শুধু কি তাই? প্রথমেই বলেছি, উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য শুধু মার্কিন সমাজের অভ্যন্তরীণ গোপনীয়তাই প্রকাশ করেনি। বিশ্বব্যাপী মার্কিন ভূ-রাজনীতির কলাকৌশলও বিশ্ববাসী এখন অবগত। শুরুতে তার কিছু উদাহরণও দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও চীন সরকারের গুগুলস হ্যাক করার প্রচেষ্টা, উত্তর কোরিয়াকে বিনাস করে কোরীয় উপদ্বীপ একীভূত করার পরিকল্পনা, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্যোগ থেকে ইরানকে নিবৃত্ত করার জন্য সেখানে বোমা নিক্ষেপে সৌদি বাদশার অনুরোধ_ এসবই এখন প্রকাশিত।
ফাঁস করা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে বিদেশিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রাখতে মার্কিন কূটনীতিকদের কীভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তাদের ক্রেডিট কার্ড ও গাড়ির নম্বর সংগ্রহ করতে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট জনৈক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কূটনৈতিককে বলেছিলেন, 'আমরা বলব আল কায়দার ওপর আমেরিকার নিক্ষেপ করা বোমাগুলো সব আমাদের। আপনাদের নয়।'
কীভাবে লিবীয় নেতা মোয়ামের গাদ্দাফী উজ্জ্বল কেশধারী একজন ইউক্রেন নার্সের সঙ্গসুখ কামনা করেছিলেন তাও আর গোপনীয় নেই এখন।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০০৯-এ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিলটনের কাছে কূটনীতিকরা গোপনে জাতিসংঘের কর্মকর্তার যোগাযোগের যে কারিগরি কৌশল ব্যবহার করতেন তা জানিয়েছিলেন। তাও প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি বাদ যাননি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন পর্যন্ত। তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনার উপরেও মার্কিন গোয়েন্দাগিরির তথ্য ফাঁস করা হয়েছে।
এভাবে ফাঁস করে দেয়া আরেকটি ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস তার ফ্রান্সের প্রতিপক্ষকে বলেছিলেন, আমেরিকার সামরিক সমর্থন ছাড়াই ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করতে পারে। অবশ্য এতে ইসরায়েলের তেমন কোন লাভ হবে না।
নিউইয়র্ক টাইমস, ব্রিটেনের দি গার্ডিয়ান, জার্মানির দারস্পাইজেন, ফ্রান্সের লি মন্ডে এবং স্পেনের এল পেইস উইকিলিকসের ফাঁস করে দেয়া মার্কিন কূটনীতির গোপন দলিলের প্রথম অংশ প্রকাশ করেছে। পত্রিকাগুলো জানিয়েছে, এভাবে তারা একের পর এক ডকুমেন্ট প্রকাশ করতে থাকবে।
এদিকে উইকিলিকসের প্রধান জুনিয়ান আছানঞ্জে একে আখ্যায়িত করেছেন 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ইতিহাস' হিসেবে। বলেছেন, এতে বিশ্বের প্রধান প্রধান ইস্যুগুলো থাকছে।
প্রকাশিত ডকুমেন্টের ভূমিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি 'হিপোক্রেটিক সুপার পাওয়ার' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সরকারি ঊর্ধ্বমহল প্রকাশ্যে যা বলছেন এবং অন্দরমহলে তার উল্টোটি যে করছেন এই বৈপরীত্যের ওপর তীব্র আক্রমণ করা হয়। অন্যদিকে এই তথ্য ফাঁসের ঘটনাকে হোয়াইট হাউজ দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জনজীবনকে বিপদাপন্ন করবে বলে আখ্যায়িত করেছে।
আরেক ধাপ এগিয়ে এসে হোয়াইট হাউজের তথ্য মন্ত্রী রবাট গিবস বলেছেন, এ ধরনের গোপন ডকুমেন্ট প্রকাশ মার্কিন কূটনীতিক, গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং বিশেষ করে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যারা মার্কিন সাহায্যের প্রত্যাশী তাদেরকে বিপদে ফেলবে।
এ ধরনের তথ্য আর যাতে বেরিয়ে আসতে না পারে পেন্টাগন থেকে ইতোমধ্যেই তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বছরের গোড়ার দিকে ওয়েবসাইটে আফগানিস্তান ও ইরাক সম্পর্কিত তথ্যাবলি প্রকাশিত হওয়ায় পেন্টাগন এমনিতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্য এতে আরও ঘৃতাহুতি দিল।
কূটনৈতিক গোপন তথ্য ফাঁস বন্ধ করার জন্যে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বের প্রায় এক ডজন সরকারকে সাবধান করে দিয়েছে। তবে তারা উইকিলিকসের সঙ্গে কোন আপসরফায় আসতে নারাজ। তাদের মতে, উইকিলিকসের কাজটি অবৈধ।
তবে তথ্য প্রকাশে ব্যক্তিগতভাবে কেউ ঝুঁকির মুখে পড়বে এ কথা মানতে নারাজ আছানঞ্জে। এ সম্পর্কে সানডে পত্রিকায় তিনি তার মন্তব্য দিয়েছেন। অন্যদিকে দি নিউইয়ক টাইমস এ সম্পর্কে তার প্রকাশনার পক্ষে এভাবে সাফাই গেয়েছে যে, 'জনস্বার্থেই তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।' জাতীয় নিরাপত্তা ও সংবাদদাতার ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রশ্নে তারা কোন আপস করেনি। স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে পত্রিকার কর্তৃপক্ষ হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে। তবে প্রকাশ করার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিয়েছে।
দি গার্ডিয়ান জানিয়েছে, 'কোন মতেই তারা জনস্বার্থ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে অথবা নির্দোষ ব্যক্তিদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এমন জাতীয় কোন তথ্য অথবা কারও নাম প্রকাশ করবে না।
তবে গত রোববার পর্যন্ত কোন দেশই প্রকাশ্যে এই তথ্য ফাঁস সম্পর্কে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। একমাত্র সৌদি সরকারের একজন উপদেষ্টা এএফপিকে বলেছেন, 'গোটা বিষয়টিই নেতিবাচক পারস্পরিক আস্থা অর্জনে এটা শুভ নয়।' সৌদি এই মন্তব্যকারী তার নাম প্রকাশ করতে চাননি। এএফপি।

ভাষান্তর : হারাধন গাঙ্গুলী,
**************************************
দৈনিক যুগান্তরঃ
বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা আড়াই লাখেরও বেশি গোপন বার্তা প্রকাশ করেছে উইকিলিকস। এতে কূটনৈতিক বিপাকের মুখে পড়েছে আমেরিকা।
রোববার বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে বার্তাগুলোর ভিত্তিতে খবর প্রকাশ হয়েছে বিশ্বের পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায়। পত্রিকাগুলো হলÑ আমেরিকার দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ইংল্যান্ডের দ্য গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের লে মন্ডে, জার্মানির ডের স্পিগেল এবং স্পেনের এল পাইস। উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে কোন নথি প্রকাশ হয়নি। এক টুইটার বার্তায় উইকিলিকস জানিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইট সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ইরানের ওপর হামলা চালাতে আমেরিকাকে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহসহ কিছু আরব নেতা তাগাদা দিচ্ছেন বলে প্রকাশিত বার্তায় দেখা গেছে। এদিকে পাকিস্তানের পরামাণবিক বোমা তৈরির উপাদান নিয়েও চিন্তিত আমেরিকা। চীন সরকার যে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারে গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য হ্যাকিং চালায় সে বিষয়টি নিয়েও চীন থেকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বার্তা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রদূত। বার্তাগুলো প্রকাশ হওয়ায় কূটনীতিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে দাবি করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে আমেরিকা।
তবে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ বলেছেন, আমেরিকা যা করছে তার দায় নিতে ভয় পায়। ইউকিলিকস যে বার্তাগুলো প্রকাশ করেছে তার মধ্যে ১৯৮৯ সালের বার্তা যেমন আছে তেমনি আছে ফেব্র“য়ারিতে বিনিময় হওয়া বার্তাও।
ওয়াশিংটনে পাঠানো বার্তায় বলা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নেয়ার চেষ্টা করছে ইরান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কোন আলোচনায় বসতে চাইলে শর্ত হিসেবে স্লোভেনিয়াকে বলা হচ্ছে, গুয়ানতানামো কারাগার থেকে বন্দি নিতে হবে সেদেশে। জার্মানিকে সতর্ক করা হয় দেশটি যেন সিআইএ’র সদস্যদের গ্রেফতার না করে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে শুধু নামের মিলের কারণে এক জার্মান নাগরিককে অপহরণ করে আফগানিস্তানে বন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে আমেরিকান কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। বার্তায় দেখা গেছে, আফগান সরকার যে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে সে বিষয় সম্পর্কেও জানে আমেরিকা। রাশিয়া ও ইতালির দুই প্রধানমন্ত্রী ভ­াদিমির পুতিন ও সিলভিও বার্লুসকোনির মধ্যেকার যোগাযোগ যে বেশ গাঢ় সে বিষয়টিও ওয়াশিংটনকে জানায় সংশ্লিষ্ট দেশ দুটিতে থাকা আমেরিকান কূটনীতিকরা।
সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রিটেন আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও দেশটির রাজনীতিকদেরও সমালোচনায় পিছিয়ে থাকেননি আমেরিকান কূটনীতিকরা। এমনকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনেরও সমালোচনা করেন তারা।
এসব বার্তা প্রকাশের পর হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের নথি প্রকাশ আমাদের কূটনীতিক, গোয়েন্দা পেশাজীবী এবং গণতন্ত্র ও খোলামেলা সরকার বিষয়ে প্রচার চালাতে আমেরিকায় আসে এমন ব্যক্তিদের ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। প্রেসিডেন্ট ওবামা সারাবিশ্বে দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক এবং খোলামেলা চরিত্রের সরকার সমর্থন করেন। কিন্তু এ ধরনের কাজ তার ওই লক্ষ্যের বিপরীত।
উইকিলিকসকে এসব বার্তা সরবরাহের দায়ে কাউকে এখনও অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে ব্র্যাডলি ম্যানিং নামে আমেরিকার এক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে এক্ষেত্রে সন্দেহ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা বিশ্লেষক ব্র্যাডলিকে গত জুন মাসে ইরাকে গ্রেফতার করা হয়। ইউকিলিকস আগে যে গোপন নথি প্রকাশ করেছে তার জন্য দায়ী করা হয় ব্র্যাডলিকে।
ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ নিয়ে প্রায় ৪ লাখ গোপন আমেরিকান নথি অক্টোবর মাসে প্রকাশ করে উইকিলিকস। এর আগে গোপন কূটনৈতিক দলিল প্রকাশ না করতে উইকিলিকসকে অনুরোধ জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্ক টাইমস গার্ডিয়ান ও ল্য মদেঁ পত্রিকা উইকিলিকসের কাছ থেকে পাওয়া গোপন দলিল প্রকাশের নিজস্ব সিদ্ধান্তকে নিজেরাই সমর্থন করেছে। যদিও তারা প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য বাদ দেয়ার পক্ষেও কথা বলেছে। এএফপি/ রয়টার্স।
****************************************
দৈনিক নয়া দিগন্তঃ

0 comments:

Post a Comment