Monday, December 27, 2010

সীতাকোট, দিনাজপুর

0 comments
সীতাকোট। বাংলাদেশের প্রাচীনতম বৌদ্ধবিহার। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ উপজেলায় এ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটির অবস্থান। কলিঙ্গের যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক-বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ এবং প্রসারে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। ওই সময় থেকে শুরু করে ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে বহু বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। যার একটি আলোচিত 'সীতাকোট বৌদ্ধবিহার' বলে মনে করা হয়।

স্থানীয় লোকজন এটিকে 'সীতার কুঠরি' বলে মনে করেন। তাদের বিশ্বাস, হিন্দুদের দেবতা রাম ও সীতাকে পার্শ্ববর্তী শালবনে বনবাসে দেওয়া হয়েছিল এবং রাম ও সীতা এ কুঠরিতেই বাস করত। কিন্তু ১৯৬৮ এবং ১৯৭২ সালে ২ দফা খননের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় এটি একটি বৌদ্ধবিহার।

এক একর ভূমির ওপর বিহারটি অবস্থিত। এটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ২১৪ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রস্থ ২১২ ফুট। শৌচাগার ব্যতীত ছোট-বড় ৪১টি কক্ষ রয়েছে। বেষ্টনী প্রাচীর সাড়ে ৮ ফুট, সামনের প্রাচীর ৫ ফুট, বারান্দা ৮ ফুট প্রশস্ত। ভেতরে আঙ্গিনা ১৩৯ূ১৩৫.৫ ফুট আয়তনের। মূল প্রবেশপথ উত্তর দিকে। প্রবেশ পথের ২ পাশে ২টি করে মোট ৪টি কক্ষ রয়েছে। বিহারের দক্ষিণ-পূর্বে ১টি কূপ ছিল, যা বর্তমানে ভরাট হয়ে গেছে। বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাশাপাশি ৫টি কুঠরি দেখা যায়। সম্ভবত এগুলো শৌচাগার হিসাবে ব্যবহার হতো। মূল মন্দির ছিল দক্ষিণ দিকের মাঝের স্থানে। প্রত্যেক কক্ষের সামনের দেয়াল ব্যতীত বাকি তিন দিকের দেয়ালে তাক ও কুলঙ্গি লক্ষ্য করা যায়।

কক্ষে প্রবেশের পথ ১টি। বিহারের ৪ কোণার ৪টি কক্ষ বেশ লম্বা। পশ্চিম দিকের মাঝের অংশে একটি বড় কক্ষ লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণের কক্ষটির কোনো প্রবেশ পথ নেই। সম্ভবত এটি ছিল গুপ্ত কক্ষ। মাঝের আঙ্গিনায় কোনো কেন্দ্রীয় মন্দির লক্ষ্য করা যায় না। সমগ্র ইমারতের গাঁথুনি চুন, সুরকি দ্বারা তৈরি। তিন ধরনের ইটের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়_ লম্বা, মধ্যম ও ছোট। নির্মাণশৈলী দেখে গবেষকরা অনুমান করেন এ বিহার ষষ্ঠ শতাব্দী কিংবা তার কিছু আগে নির্মিত হয়েছিল। বিহারের পূর্ব দিকে একটি বিশাল দীঘি রয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে 'শালদীঘি' বলে পরিচিত। বর্তমানে সেখানে সরকারি দুস্থ আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাচীন পালি, বোদড়া ও জম্মু নদীর পূর্ব দিকের বিস্তৃত অঞ্চলের বৌদ্ধ কীর্তিসমূহ, রাজনৈতিক আগ্রাসন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে বিরানভূমিতে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাজা শশাংকের বৌদ্ধ বিদ্বেষী আচরণের প্রেক্ষিতে এ অঞ্চলের অনেক বৌদ্ধ কীর্তি ধ্বংস হয়ে যায়। সীতাকোট বিহারের ভাগ্যেও এমন বৈরী আচরণের প্রভাব পড়েছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।

-রাশেদুর রহমান

0 comments:

Post a Comment