Friday, January 28, 2011

কালো জাদু

0 comments
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ভূত হলো এমন এক জিনিস, যা মৃত ব্যক্তির আত্মা। আর তা জীবিত ব্যক্তির সামনে দৃশ্য আকার ধারণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্প কম-বেশি সবারই জানা। এসব গল্পে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কখনো অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় আবার কখনোবা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। আর এসব ভূত বা প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী বা কোনো কাজ করার বিদ্যাকে নেক্রোম্যান্সি বা কালো জাদু বলে। ভূডূ হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। ভূডূবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। অন্যদিকে শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভূডূর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য_ এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়।
বিদেশি সিনেমায় এমনকি ভারতীয় সিরিয়ালে প্রায়ই দেখা যায়, একজন দুষ্ট ব্যক্তি একটি পুতুলের গায়ে সুঁচ ফুটিয়ে আরেক জায়গায় এক ব্যক্তিকে হত্যা করছে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। বাংলায় একে ফুঁক দেওয়া, কবজ করা অথবা বাণ মারা বলে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ওঝা বলে। আর এ প্রক্রিয়াটিই বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত।

খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তনেরও আগের কথা। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রচলন ছিল না। তবে তাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। যা অঋজওঈঅঘ ইখঅঈক গঅওেঈ বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এ বিদ্যা দিয়ে মানুষের ক্ষতি করে আসছে। এ বিদ্যায় পারদর্শীদের ডাকি বা ওঝা বলে আর আফ্রিকান ভাষায় এদের বলে কিনডকি ।

মূলত প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতির সর্বপ্রাণবাদ ও পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ভূত বা আত্মাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সে যুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, ভূত তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। আর এসব আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মৃত আত্মার সন্তুষ্টি আনয়ন। মূলত আত্মাসংক্রান্ত সেই ধ্যান-ধারণা থেকেই ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর বিবর্তন।

আদিম সমাজে উইচ-ডক্টর বা রোজারা এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা ব্ল্যাক ম্যাজিক জানতেন। অতিন্দ্রীয় শক্তির বলে প্রেতাত্মাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। আর প্রেতাত্মাদের দিয়ে সম্ভব-অসম্ভব যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারতেন খুব সহজেই। সে কারণে ওই সময় রোজারা একাধারে চিকিৎসক, জাদুকর এবং পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন।

বর্তমানকালেও আদিম-সামাজিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের মধ্যে উইচ-ডক্টর বা রোজাদের প্রভাব দেখা যায়। আদিম জাতিদের মধ্যে রোজাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।

রোজারা তাদের ডাকিনী বিদ্যা খাটিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারত। চোর বা হত্যাকারী ধরা ও শাস্তি প্রদানে রোজাদের অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। এছাড়াও তারা জাদুবিদ্যার সাহায্যে রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিকার করতেন। তারা তাদের শিশুদের রোগাক্রান্ত্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিন বিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতাপাতা ব্যবহার এবং রোগের সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করত। কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিতেন। তারা জাদুকরী গান, প্রার্থনা এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করত। এর উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনকে প্রভাবিত করা। রোজারা সব সময় রঙিন পোশাক পরত, মুখোশ ধারণ এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করত। কেউ কেউ পশুর চামড়াও পরিধান করত। বস্তুত মানুষকে সম্মোহিত করত। আর লোকজন বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী।

ভূডূ (Voodoo) হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। শোনা যায়, ভূডূবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভূডূর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য হলো_ এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। ভূডূ এক ধরনের অপবিদ্যা। যারা ভূডূবিদ্যা জানে, তারা নাকি ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি তার ক্ষতি করতে পারে। তাই এ বিদ্যায় পারদর্শীদের অনেকেই এড়িয়ে চলেন।

তবে শামান সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে। শামানকে কেউ বলে জাদুকর, কেউ কবিরাজ। শামান কথাটি এসেছে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস ভাষী মেষ পালকদের কাছ থেকে। অস্টাদশ শতাব্দীর ভ্রমণকারীরা প্রথম শামানদের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে অবহিত করেন। জানা যায়, শামানরা এমন ধরনের মানুষ যাদের রয়েছে অবিশ্বাস্য শক্তি। মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে তারা। ইচ্ছা করলেই নাকি নশ্বর দেহ ত্যাগ করে স্বর্গ বা নরকে স্বচ্ছন্দে প্রবেশ করতে পারে।

শামানদের প্রধান বাসস্থান এক সময় সাইবেরিয়া হলেও সোভিয়েতদের অত্যাচারে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। তারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা জায়গায়। শামান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের শহরাঞ্চলেও। শামানরা তাদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য ভ্রমণ করছে চিলির সান্তিয়াগো থেকে শুরু করে কোরিয়ার সিউল পর্যন্ত। যদিও অনেক দেশের সরকার শামানিক চর্চাকে অবৈধ এবং বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু রোমান্টিক মানুষের কাছে শামান হলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের গাইড। আর জাতীয়তাবাদীরা শামানকে মনে করে প্রাচীন সাংস্কৃতিক জ্ঞানের বাহক।

শামানদের মতে, আমাদের চারপাশে যত উপাদান রয়েছে সব কিছুর মাঝে আছে আত্মার অস্তিত্ব। 'ভূডূ' কথার অর্থও 'আত্মা'। এই শব্দটির উৎপত্তি ফন জাতির কাছ থেকে। এরা ইউয়ি সম্প্রদায়ের আত্মীয়। ভূডূ চর্চার উৎপত্তি হাইতিতে। তবে আফ্রিকায় এর চর্চা ব্যাপক। ব্রাজিল, জ্যামাইকাতেও কিন্তু কম ভূডূ চর্চা হয় না। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম। যেমন, হাইতিতে বলা হয় ভূডূ, ব্রাজিলে ক্যানডোমবল, জ্যামাইকাতে ওবিয়াহ ইত্যাদি। পশ্চিম অফ্রিকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভূডূতে সেখানকার কমপক্ষে পঁচিশ লাখ মানুষ এ বিদ্যার অনুরাগী। এ চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় আফ্রিকার ঘানায়। ঘানার ককুজানের অধিবাসীরা এ বিদ্যাটির সাংঘাতিক অনুরাগী। এরা অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে যাওয়ার চেয়ে ভূডূ চিকিৎসকদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে।

শামানরাও তাই। আত্মার ওপর এদের বিশ্বাস গভীর। এদের ধারণা, আত্মা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বংশপরম্পরায় এ বিশ্বাস চলে আসছে তাদের মাঝে।
ভূডূ আর শামান দুই পদ্ধতিই ব্ল্যাক ম্যাজিকের অন্তর্ভুক্ত। তবে শামান সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে বলে অনেকেই একে ব্ল্যাক ম্যাজিকে অন্তর্ভুক্তের ব্যাপারে জোর আপত্তি জানান। ভূডূ এক ধরনের অপবিদ্যা। অন্যদিকে শামানকে কেউ বলে জাদুকর, কেউ বলে কবিরাজি। শামান কথাটি এসেছে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস ভাষী মেষ পালকদের কাছ থেকে। সর্বপ্রথম 'শামান' প্রসঙ্গ তুলে ধরেন অষ্টাদশ শতাব্দীর ভ্রমণকারীরা। জানা যায়, শামানরা এমন ধরনের মানুষ যাদের রয়েছে অবিশ্বাস্য শক্তি। মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছ থেকে এরা জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারে। আর শামানরা ইচ্ছা করলেই নাকি পৃথিবীর দেহ ত্যাগ করে স্বাচ্ছন্দ্যে স্বর্গ বা নরকে প্রবেশ করতে পারে। এক সময় শামানদের প্রধান বাসস্থান ছিল সাইবেরিয়া। এরপর সোভিয়েতদের অত্যাচারে তারা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আস্তে আস্তে শামানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এরা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের শহরাঞ্চলে। শামানরা তাদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য ভ্রমণ করছে চিলির সান্তিয়াগো থেকে শুরু করে কোরিয়ার সিউল পর্যন্ত। যদিও অনেক দেশের সরকার শামানিক চর্চাকে অবৈধ এবং বিপজ্জনক বলে মনে করে। কিন্তু রোমান্টিক মানুষের কাছে শামান হলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের বিশাল এক অবলম্বন।

শামানদের মতে, আমাদের চারপাশে যত উপাদান রয়েছে সব কিছুর মধ্যে আছে আত্মার অস্তিত্ব। অন্যদিকে 'ভূডূ' কথার অর্থও 'আত্মা'। এ শব্দটির উৎপত্তি ফন জাতির কাছ থেকে। এরা ইউয়ি সম্প্রদায়ভুক্ত। ভূডূ চর্চার উৎপত্তি মূলত হাইতিতে। তবে আফ্রিকায় এর চর্চা আরও বেশি। ব্রাজিল, জ্যামাইকায়ও ভূডূর প্রচলন রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো_ বিভিন্ন দেশে এর চর্চা হয় ভিন্ন ভিন্ন নামে। যেমন : হাইতিতে একে বলা হয় ভূডূ, ব্রাজিলে ক্যানডোমবল, জ্যামাইকায় ওবিয়াহ ইত্যাদি। পশ্চিম অফ্রিকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভূডূতে সেখানকার কমপক্ষে পঁচিশ লাখ মানুষ এ বিদ্যার অনুরাগী। এ চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় আফ্রিকার ঘানায়। ঘানার ককুজানের অধিবাসীরা এ বিদ্যাটির সাংঘাতিক অনুরাগী। এরা অসুখ-বিসুখে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার চেয়ে ভূডূ চিকিৎসকদের ওপর ভরসা করে বেশি।

শামানরাও তাই। আত্মার ওপর এদের অগাধ বিশ্বাস। এদের ধারণা, আত্মা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বংশ পরম্পরায় এ বিশ্বাসটি অটুট রয়েছে তাদের মধ্যে। আফ্রিকায় যারা ভূডূ চর্চা করে তারাও কিন্তু বংশানুক্রমে এ কাজ করে আসছে। আফ্রিকান বাবা-মা তাদের সন্তানকে এ বিদ্যা চর্চায় উৎসাহ জোগায়। প্রতিদিনই সকালে পূজারিরা স্থানীয় দেবতাদের উদ্দেশে নৈবেদ্য অর্পণ করে তারপর নিজের কাজে বের হয়।

শামানরা শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভূডূ অনুসারীদের বিভিন্ন দেবতা আছে। যেমন ফ্লিমানি কোকু হলো রোগ মুক্তির দেবতা, হেভিও সো হলো বিদ্যুৎ এবং বজে র দেবতা, মেমী ওয়াটা ধনসম্পদের দেবী ইত্যাদি। দেবতার ওপর তাদের এত বিশ্বাস যে, তারা মনে করে, আগুন তাদের ক্ষতি করতে পারে না। ছুরি দিয়ে পেট কাটলেও তারা ব্যথা পায় না। তারা বলে, দেবতারা সহায় থাকলে সব বিপদ থেকেই রক্ষা পাওয়া যাবে।

শামানরাও বলে আত্মা তাদের সব রোগ মুক্তির পথ বাতলে দেয়। যারা এ সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, তারা বলে শামানদের রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। এরা আত্মার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্বাস্থ্য, খাদ্য, উর্বরতাবিষয়ক সব সমস্যারও সমাধান করে দিতে পারে।

শামানদের ব্যাপ্তি সাইবেরিয়া থেকে ল্যাপল্যান্ড, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা (বিশেষ করে আমাজন এলাকায়) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ভারতেও বিস্তৃত। পূর্ব ভারতে সোরা নামে এক উপজাতি আছে, জঙ্গলে বাস করে। এরাও শামান সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সোরা উপজাতির লোকেরা মৃতের সঙ্গে কথা বলে। এখানে শামানের ভূমিকা সাধারণত পালন করে মহিলারা। তারা দুই ভুবন অর্থাৎ পৃথিবী ও স্বর্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বলে শামান অনুসারীদের বিশ্বাস। মহিলা শামানকে কবর দেওয়া হয়। এরপর তার আত্মা চলে যায় অন্য ভুবনে। সেখানে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সে। লোকেরা মহিলাকে কথা বলতে দেখে। শামান অনুসারীদের মতে আসলে মহিলা কথা বলছে না, বলছে মৃত ব্যক্তির আত্মা। মহিলা শুধুই মধ্যস্থতাকারী। সোরা উপজাতিদের মধ্যে শামান তৈরির জন্য ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা হয়। শামান মেয়ে বড় হয়ে শামান অনুসারী কাউকে বিয়ে করে। বলা হয় তার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান আসলে আত্মার সন্তান। সোরাদের মতে, মৃত্যু মানে মোটেই কারও অস্তিত্ব ধ্বংস নয়। মৃত্যু তাদের কাছে নতুন আরেকটি জীবন। তবে শামান হওয়া সহজ কাজ নয়। এ জন্য প্রচুর কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমাজনের ইয়ানোমামি উপজাতিদের শামান তৈরির পদ্ধতি বিচিত্র এবং কষ্টকর। যে মানুষটি শামান হতে চায়, তাকে অন্তত সাতদিন ভীষণ নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এর একটি হলো দুই নাকের ছিদ্রে তিন ফুট লম্বা বাঁশের নল ঢোকানো। সাত দিন শেষ হলে ভবিষ্যতের শামানকে রেখে আসা হয় জঙ্গলে। সেখানে গাছ কেটে সাত ফুট লম্বা যজ্ঞের পোল তৈরি করে ইয়ানোমামিরা। পোলটি ঢেকে দেওয়া হয় পাখির পালক দিয়ে। এটার নাম রক। রকটিকে ধরা হয় আত্মাদের বাসস্থান হিসেবে। আত্মারা নতুন শামানকে পাহারা দেয়। নতুন শামানকে গ্রামে নিয়ে যায় পুরনো দুই শামান কাঠের পোলসহ। এসময় গ্রামবাসী তাদের স্বাগত জানায়। কাঠের পোল নতুন শামানের দুই পায়ের মাঝে গেঁথে দেওয়ার পর প্রধান শামান নতুন শামানের মাথা টেনে ধরে ছুঁইয়ে দেয় পোলে। ব্যস, শামান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায় নতুন শামান।
শামানদের ব্যাপ্তি সাইবেরিয়া থেকে ল্যাপল্যান্ড, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা (বিশেষ করে আমাজান এলাকায়) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ভারতেও বিস্তৃত। পূর্ব ভারতে সোরা নামে এক উপজাতি আছে, জঙ্গলে বাস করে। এরাও শামান সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সোরা উপজাতির লোকেরা মৃতের সঙ্গে কথা বলে। এখানে শামানের ভূমিকা সাধারণত পালন করে মহিলারা। তারা দুই ভুবন অর্থাৎ পৃথিবী ও স্বর্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বলে শামান অনুসারীদের বিশ্বাস। মহিলা শামানকে কবর দেওয়া হয়। এরপর তার আত্মা চলে যায় অন্য ভুবনে। সেখানে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সে। লোকেরা মহিলাকে কথা বলতে দেখে। শামান অনুসারীদের মতে আসলে মহিলা কথা বলছে না, বলছে মৃত ব্যক্তির আত্মা। মহিলা শুধুই মধ্যস্থতাকারী। সোরা উপজাতিদের মধ্যে শামান তৈরির জন্য ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা হয়। শামান মেয়ে বড় হয়ে শামান অনুসারী কাউকে বিয়ে করে। বলা হয় তার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান আসলে আত্মার সন্তান। সোরাদের মতে, মৃত্যু মানে মোটেই কারও অস্তিত্ব ধ্বংস নয়। মৃত্যু তাদের কাছে নতুন আরেকটি জীবন।

তবে শামান হওয়া সহজ কাজ নয়। এ জন্য প্রচুর কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমাজানের ইয়ানোমামি উপজাতিদের শামান তৈরির পদ্ধতি বিচিত্র এবং কষ্টকর। যে মানুষটি শামান হতে চায়, তাকে অন্তত সাতদিন ভীষণ নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এর একটি হলো দুই নাকের ছিদ্রে তিন ফুট লম্বা বাঁশের নল ঢোকানো। সাত দিন শেষ হলে ভবিষ্যতের শামানকে রেখে আসা হয় জঙ্গলে। সেখানে গাছ কেটে সাত ফুট লম্বা যজ্ঞের পোল তৈরি করে ইয়ানোমামিরা। পোলটি ঢেকে দেওয়া হয় পাখির পালক দিয়ে। এটার নাম রক। রকটিকে ধরা হয় আত্মাদের বাসস্থান হিসেবে। আত্মারা নতুন শামানকে পাহারা দেয়। নতুন শামানকে গ্রামে নিয়ে যায় পুরনো দুই শামান কাঠের পোলসহ। এ সময় গ্রামবাসী তাদের স্বাগত জানায়। কাঠের পোল নতুন শামানের দুই পায়ের মাঝে গেঁথে দেওয়ার পর প্রধান শামান নতুন শামানের মাথা টেনে ধরে ছুঁইয়ে দেয় পোলে। ব্যস, শামান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায় নতুন শামান।

-রণক ইকরাম

0 comments:

Post a Comment