Thursday, January 27, 2011

মণিপুরী জাদুঘর

0 comments
২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস। ঢাকায় বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সেমিনার কক্ষে লোকবাংলা গবেষক দল 'বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি এবং শনাক্তকরণ, মূল্যমান নির্ধারণ ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ' শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মণিপুরীদের লোকসংস্কৃতি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য মণিপুরী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হামোম তনু বাবুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি প্রবন্ধ তৈরির জন্য নানা তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেন নিজ এলাকায়। তিনি দেখলেন মণিপুরীদের লোকসংস্কৃতির অনেক ঐতিহ্য ও নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই এর অনেক ঐতিহ্য ও নিদর্শন বিলীন হয়ে যাবে। তাই তিনি এসব ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেন এবং নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুললেন একটি সংগ্রহশালা। নাম দিলেন 'চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরী ইন্টিলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি মিউজিয়াম' বা মণিপুরী জাদুঘর। হামোম তনু বাবু বলেন, প্রয়াত বাবার নামে দেওয়া এ জাদুঘর বাংলাদেশে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম একক জাদুঘর বা সংগ্রহশালা।

২০০৬ সালের ১ অক্টোবর এ জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কবি দিলওয়ার। তখন থেকেই তনু বাবু জাদুঘরের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মণিপুরীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করতে থাকেন তাদের ব্যবহৃত কৃষি, তাঁত, বিনোদন, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি মাধ্যমের বিভিন্ন নিদর্শন।

২০০৭ সালের এপ্রিলে ঢাকায় লোকসংস্কৃতি বিষয়ে আরও একটি সেমিনারের আয়োজন করে যৌথভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ডবি্লউআইপিও। এখানেও হামোম তনু বাবু মণিপুরীদের লোকসংস্কৃতি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ প্রবন্ধ উপস্থাপন করার জন্য আরও বেশি করে সংগ্রহের কাজ করতে লাগলেন। ২০০৭ সালের ১২ মে তার সংগ্রহ করা মণিপুরীদের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও নিদর্শন দিয়ে সাজানো জাদুঘরের উদ্বোধন করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। এ জাদুঘরে সংগ্রহ রাখা ঐতিহ্য ও নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে_ মণিপুরীদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য কাঁসা-পিতলের কলস, জগ, গ্লাস, মগ, প্লেটসহ বিভিন্ন খাবার-দাবারের পাত্র, সোনা, রুপা ও বিভিন্ন ধাতবের তৈরি মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের গহনা ও সাজসজ্জার উপকরণ, বাঁশ ও বেতের তৈরি ঝুড়ি, চালুন, ঠুঙ্গি, মাছ ধরার দুওড়, পোলো, ডালা, খালই, হাতপাখা, শুকনো খাবার রাখার পাত্র, কাঠের তৈরি চিরুনি, তাঁতের কাপড় বুননের সরঞ্জাম, বসার পাত্র, কৃষিকাজে ব্যবহৃত উপকরণ, ঢোল-তবলাসহ গান গাওয়ার বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, মণিপুরীদের তাঁতের বোনা বিভিন্ন রং ও নকশার শাড়ি, গামছা, শালসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়, মণিপুরী ভাষার বর্ণমালা, ক্যালেন্ডার, বিভিন্ন প্রকাশনা, রাখাল-রাস নৃত্য, মণিপুরীদের বিভিন্ন উৎসবের পোশাকসহ এ সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন নমুনা। এসব নমুনার অনেক কিছুই এখন প্রায় বিলুপ্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত এ জাদুঘর। এখানে যেসব নমুনা আছে তা আরও ভালোভাবে সাজানোর জন্য প্রয়োজন উন্নত অবকাঠামো, যা তনুবাবুর পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে এ জাদুঘরটির আধুনিকায়নের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

ঠিকানা : তনু বাবু সড়ক, ছনগাঁও, আদমপুর বাজার, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার।

গাজী মুনছুর আজিজ

0 comments:

Post a Comment