Sunday, February 13, 2011

বাল্ট্রা দ্বীপ

26 comments
পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় স্থান রয়েছে যেগুলো কোনো মতেই সাধারণ স্থানের মতো নয়। এসব জায়গায় নিউটনের মহাকর্ষণ সূত্র তেমন কাজ করে না। ফলে এসব এলাকায় অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এখানে কম্পাস কাজ করে না। জিনিসপত্রের ওজোনেও হেরফের হয়। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ ইভান স্যান্ডারসন এ রহস্যময় অদ্ভুত জায়গাগুলোর নাম দিয়েছেন 'ভোরটেক্স'। ভোরটেক্স অর্থ ঘূর্ণিপাক। সাধারণত ঘূর্ণিপাক পানিরই হয়। তবে স্যান্ডারসনের এই ঘূর্ণিপাক পানির নয়, চেতনার-বোধের। সন্দেহ নেই, জায়গাগুলোর মতো এর নামটাও অদ্ভুত। অবশ্য বিজ্ঞানী ব্রাড স্টেইজার এ রহস্যময় জায়গাগুলোকে অভিহিত করেছেন 'উইন্ডো এরিয়া' বলে। এরকমই কিছু জায়গা হচ্ছে_ কুখ্যাত বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, রহস্যময় সাইলেন্স জোন, রহস্যদ্বীপ বাল্ট্রা, ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ শাস্তার অরিজনের একটি বিস্তীর্ণ এলাকা প্রভৃতি।

তবে উইন্ডো এরিয়াই হোক আর ভোরটেক্সই হোক, বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন এ জায়গাগুলোর অস্বাভাবিকত্ব আর অসামঞ্জস্যতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ গবেষকদের মধ্যে সাইকোলজিস্ট ড. স্টেনলি কিপার একজন। তার মতে, 'এই এলাকায় ঢুকলে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে ব্যাপক আচরণগত পার্থক্য দেখা দেয়। অনেক সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষকে এখানে এসে উদ্ভট ও অস্বাভাবিক সব আচরণ করতে দেখেছি আমি। এখানে পা রাখামাত্র যে কোনো মানুষেরই মনে হবে, সে ভিন্ন এক চেতনার জগতে গিয়ে হাজির হয়েছে। সন্দেহ নেই এসব কারণেই বিজ্ঞানীরা তাকে 'চেতনার ঘূর্ণিপাক' বা ভোরটেক্স বলেন এবং একই কারণে আবার কেউ এসব এলাকায় মাইন্ড ব্যালিং জোন বলেও অভিহিত করেন। পৃথিবীতে এ ধরনের বেশকিছু রহস্যময় অঞ্চলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে মহাকর্ষণ সূত্র প্রায় অকার্যকর। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় তারা এখানে আরও কিছু অদ্ভুত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করেন। যেমন_ সমান উচ্চতাসম্পন্ন দুজন লোক এখানে পাশাপাশি দাঁড়ালে সামান্য দূর থেকে উত্তর দিকে ঘেঁষে দাঁড়ানো লোকটিকে খানিকটা খাটো বলে মনে হয়। ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য সন্দেহ নেই, তবে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখা হিসেবে বলেন, একটি শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ঘূর্ণিপাক কাজ করছে জায়গার ভেতর, যার প্রভাবে ঘটছে এসব। এখানে পানি ঢাললে উপরের দিকে গড়াতে থাকে অথচ পানির ধর্মই হচ্ছে নিচের দিকে গড়িয়ে নামা। এখানে আগুন জ্বালালে কোনো কারণ ছাড়াই ধোঁয়া শক্সখাকারে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আকাশের দিকে উঠতে থাকে এবং এ ধরনের ঘটনা ভোরটেক্সগুলো ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ঘটতে দেখা যায় না। এখানে কোনো কম্পাস কাজ করে না। এর দিকে নির্দেশক করে কোনো একটি জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে_ পুরো এলাকায় কোনো জীবজন্তু বা কীটপতঙ্গ নেই। একেবারেই বিরান, এমনকি আকাশেও কোনো পাখি উড়ে না কিংবা বলা যায় উড়তে পারে না। সন্দেহ নেই, এক ধরনের ফোর্স ফিল্ড কাজ করছে এখানে, যে কারণে ঘটছে এতসব ঘটনা। শুধু গোল্ডহীনই নয়, এ ধরনের রহস্যময় জায়গা আরও আছে পৃথিবীতে। যেমন-প্রশান্ত মহাসাগরের 'বাল্ট্রা' দ্বীপ। এটি ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি বিশেষ দ্বীপ। বাল্ট্রা বাদে এখানকার প্রতিটি দ্বীপেই আছে সিল মাছ, ইগুয়ানা দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতির কিছু পাখি। কিন্তু বাল্ট্রার ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন। অদ্ভুত এ দ্বীপে কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী বা কীটপতঙ্গ নেই। পুরোপুরি বিরান। অজ্ঞাত কোনো কারণে কখনো বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়নি এখানে। অথচ প্রায়ই আশপাশের দ্বীপগুলোতে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তা ক্রজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি পরে দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে ইউএস সরকার। ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার। এ দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন অদ্ভুত সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। যেগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, "জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে। একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যাপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি অবাক দৃষ্টি মেলে শুধু দেখেই গেছি এসব, কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। যেমন বৃষ্টিপাতের কথাই ধরুন। একদিন আকাশ কালো করে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামল। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের সবগুলো দ্বীপেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়_ বৃষ্টির একটি ফোঁটাও পড়ল না বাল্ট্রা দ্বীপে। এ বিচিত্র অনুভূতিটা মনের ভেতর এমনভাবে জেঁকে বসে যে, ফিরে আসার পরও এর রেশ কাটে না সহজে। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবী আজ অনেক এগিয়েছে, তারপরও এসব রহস্যের সমাধান হচ্ছে না কেন, সেটিই বিস্ময়কর। তবে আমি আশাবাদী, একদিন না একদিন এসব রহস্যের সহজ সমাধান দেবে মানুষ।"

সত্যিকার অর্থেই মানুষ কোনোদিন এ রহস্যের সমাধান করতে পারবে কি-না সেটা সময়ই বলে দেবে।
-আমিন রহমান নবাব

26 comments:

Post a Comment