Thursday, February 17, 2011

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাস

37 comments
ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল ইংল্যান্ডের টিউডর রাজতন্ত্রের যুগে সেই পনের শতকেই। যদিও তখনো এই খেলাটির নাম ক্রিকেট ছিল না। ক্রিয়েগ বলে ডাকা হতো ক্রিকেটকে। ১৮৪৪ সালে সর্ব প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে কানাডা বিজয়ী হয়েছিল ২২ রানে। প্রায় বিশ হাজার ক্রীড়ানুরাগী ম্যাচটি দেখতে নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জ ক্রিকেট ক্লাবে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর প্রথম আনুষ্ঠানিক টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৭ সালে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে। ক্রিকেটের এই লম্বা ইতিহাস প্রদীপের আলোতে আসতে একটু দীর্ঘ সময়ই নিয়েছে। এর কারণ হতে পারে একটি ম্যাচের ফলাফলের জন্য সময়ের দীর্ঘতা। তবে বিশ শতকের ৭০'র দশকে একদিনের ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্য মাত্রা পায় ক্রিকেট। মাত্র পঞ্চম বছরেই একটি বিশ্বকাপের আয়োজনে বসে যায় ক্রিকেট। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট নিয়ে বেশ খানিকটা জনপ্রিয়তাও অর্জন করে ক্রিকেট। আমেরিকার ক্যারিবীয় দীপদেশ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পূর্ব আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যায় ক্রিকেটের বিশ্বযজ্ঞ। কিন্তু তখনো ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এতটা তুঙ্গে ছিল না। যতটা ছিল ফুটবল কিংবা বাস্কেটবলের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বারমুডাতে বাস করা একজন বৃদ্ধ জেলের কাছে বাস্কেটবলের খবর ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার কাছে সময় কাটানোর জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারত না। কিন্তু ফুটবলের জনপ্রিয়তাকে ছুঁতে না পারলেও ক্রিকেট এখন বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। একদিনের ক্রিকেট থেকে টি-২০। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ক্রিকেটের এই বিবর্তনই জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ক্রিকেটের বিবর্তন শুরু হয়েছিল সেই ৭০'র দশকেই। যখন টেস্ট ক্রিকেট থেকে একদিনের ক্রিকেটীয় সংস্করণ বেরিয়ে গেল। এরপর ১৯৭৫ সালে শুরু হলো ক্রিকেটীয় বিশ্বকাপ। ধবধবে সাদা পোশাক এবং লাল বল দিয়ে শুরু হলো বিশ্বকাপের প্রথম আসর। ৬০ ওভারের সেই বিশ্বকাপটির বিজেতা ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্লাইভ লয়েড। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপেও ছিল একই রকমফের। ১৯৮৩ সালের আরও একটি সাদা পোশাক এবং লাল বলের বিশ্বকাপ জয় করে নেয় প্রথমবারের মতো ভারতীয়রা। কপিল দেব ছিলেন তাদের পথ প্রদর্শক। এরপরই ক্রিকেট বিশ্বকাপে পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজতে থাকেন এর প্রবর্তকরা।

বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আরও একটি পালক যোগ হয় ক্রিকেটে। ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ আসরে ৬০ ওভারের পরিবর্তে বানিয়ে দেওয়া হয় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের শুরু হয় নতুন যাত্রা। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ারও শুরু হয় নতুন পথযাত্রা। আধুনিক ক্রিকেটীয় অস্ট্রেলিয়ার উত্থান সেই বিশ্বকাপ থেকেই। ক্রিকেটের এই বিবর্তন সত্যিকার অর্থেই ছিল এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু তখনো পর্যন্ত এমন মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি ক্রিকেটে। যার আলোকে উদ্ভাসিত হতে পারত ক্রিকেট ভক্তরা।

১৯৯২ সাল। ওশেনিয়া মহাদেশে প্রথম বিশ্বকাপ আসর বসল। সেই সঙ্গে সৃষ্টি করল এক নবযুগেরও। ক্লাইভ লয়েড থেকে এলান বোর্ডার পর্যন্ত যে যুগের সীমানা ছিল ধবধবে সাদার মধ্যে। তা এখন রঙিন হয়ে গেল। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে রঙিন পোশাকে প্রথম বল ছুঁড়তে এলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রেইগ ম্যাকডারমট। প্রথম উইকেটটিও নিয়েছিলেন তিনিই। আর ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছিলেন কিউই জন রাইট এবং রড লাথাম। রঙিন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মার্টিন ক্রোর শত রানের বিনিময়ে বিজয়ী হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তবে সেই বিশ্বকাপ অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে অর্জন করে নিয়েছিলেন ইমরান খান। সর্বকালের সেরা এই অলরাউন্ডার তার ভাগ্যের সহায়তার পাশাপাশি ওয়াসমি আকরাম, ইনজামামদের মত ক্রিকেটারকেও পেয়েছিলেন বিশ্বকাপ জয় করার জন্য। রঙিন পোশাকের সেই বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হয় সাদা বল। দিবা/রাত্রির ম্যাচও শুরু হয় তখন থেকেই।

37 comments:

Post a Comment