Monday, February 21, 2011

স্কুলছাত্রী হত্যার পর খালে নিক্ষেপ

0 comments
সেগুনবাগিচার স্কুল ছাত্রী আয়েশা চৌধুরী টুম্পাকে (১৬) তার বড় ভাই প্রকৌশলী আল কাওসার মাসুদ বাবলার মত একই কায়দায় জীবন দিতে হলো। দুই ভাই-বোনকে একই কায়দায় ঘাতকরা হত্যা করেছে। গত সোমবার রাতে টুম্পা নিখোঁজ হয়। বুধবার সকালে শাহবাগ থানার পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল রসুলবাগ ডিএনডি বাঁধের ব্রিজের নিচে খাল থেকে ভাসমান অবস্থায় টুম্পার লাশ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঐ দিন ঢাকা মেডি-ক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। গত বছর ৩১ মে টুম্পার বড় ভাই বাবলার লাশ নরসিংদী রায়পুরা উপ-জেলার মেঘনার তীর থেকে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। ২৬ মে বাবলা নিখোঁজ হয়। বাবলাকেও নির্মমভাবে হত্যা করে তার লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। টুম্পাকে পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে খালে ফেলে দেয়া হয়। অভিভাবকগণ জানান, বাবলার খুনি আর টুম্পার খুনি এবং হত্যাকাণ্ডের মোটিভ একই। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জুবায়েদুর রহমান টুম্পার লাশের ময়না তদন্ত করেন। এ সময় চিকিৎসক তার মাথায় আঘাতের আলামত পেয়েছেন। তাকে পাশবিক নির্যাতনের পর ঘাতকরা মাথায় আঘাত করে। এতে টুম্পা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে খুনিরা তাকে পানিতে ফেলে দেয়। পানিতে ডুবেই সে মারা যায়। ময়না তদন্তকালে চিকিৎসক এই ধরনের আলামতই পেয়েছেন। ময়না তদন্ত শেষে টুম্পার লাশ আজিমপুর কবরস্থানে বড় ভাই বাবলার কবরের পাশে দাফন করা হয়। এদিকে টুম্পা হত্যাকাণ্ডে দুই তরুণকে শাহবাগ থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে বাবলা হত্যাকাণ্ডে গতকাল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার কিংবা পুলিশ রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। টুম্পা হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে তার সাবেক প্রেমিক নূরুল হক ওরফে নূরু এবং বর্তমান প্রেমিক সাইদুর রহমান আকাশ।
যেভাবে টুম্পা নিখোঁজ হয়:

গত সোমবার অর্থাৎ বিশ্ব ভালবাসা দিবসে টুম্পার মা তাকে লেখাপড়া নিয়ে বকাবকি করেন। এই নিয়ে অভিমান করে টুম্পা ঐ দিন সন্ধ্যায় সেগুন বাগিচার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মায়ের মোবাইল ফোনটি সঙ্গে নিয়ে যায়। তার প্রেমিক আকাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকে। আকাশের পিতা শফিকুর রহমান উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। আকাশ কলেজ ছাত্র। প্রেমিককে ফোন করে উভয়ে টিএসসিতে গিয়ে মিলিত হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত এই এলাকায় টুম্পা ও আকাশ গল্পের পাশাপাশি চটপটি খেয়ে সময় কাটায়। গ্রেফতারকৃত আকাশ পুলিশকে জানায়, রাত ৯টার পর টুম্পাকে একশত টাকা দিয়ে ৪০ টাকায় একটি রিকশা ভাড়া করে সেগুনবাগিচার বাসার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এছাড়া আকাশ কিছুই বলতে পারে না। টুম্পার পিতা ব্যবসায়ী আমানত উলস্নাহ ঐদিন রাত ১টা পর্যন্ত কন্যা বাসায় ফিরে না আসায় শাহবাগ থানার পুলিশকে বিষয়টি জানান। ঐ রাতে কন্যার সন্ধানে আমানতউলস্নাহ ছুটে যান টুম্পার প্রাক্তন প্রেমিক সেগুনবাগিচা ২৬/এ তোপখানা রোডের নূরুল হক নূরুর বাসায়। ঐ সময় নূরু টুম্পার পিতাকে জানায় যে, তার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিববাড়িতে বসবাসকারী আকাশকে এখন ভালবাসে। টুম্পা আকাশের কাছে গিয়েছে বলে নূরু জানায়। সে সূত্র অনুযায়ী ঐ রাতে পুলিশের সহায়তায় শিববাড়ি স্টাফ কোয়ার্টার থেকে আকাশকে আটক করা হয়। পুলিশ টুম্পার ব্যবহূত মোবাইলের কললিস্ট যাচাই করে দেখে যে, রাত ১টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন সেটটি সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল এলাকার টাওয়ার ব্যবহার করেছে। টুম্পা শিমরাইল এলাকায় অবস্থান করছে বলে পুলিশ টুম্পার পিতাকে জানায়। তিনি রাতে টুম্পার ছবিসহ ঐ এলাকায় আত্মীয়-স্বজন পাঠিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

অবশেষে বুধবার সকালে ব্রিজের নিচে খালে এক কিশোরীর লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী টুম্পার পিতাকে জানান। তার পিতা শাহবাগ পুলিশ নিয়ে সেখানে যান এবং কন্যার লাশ সনাক্ত করেন। ধারণা করা হচ্ছে সোমবার রাতে সেগুন বাগিচার বাসায় ফেরার পথে টুম্পা অপহূত হয়। তাকে পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সেগুন বাগিচার বখাটে তরুণ গ্রেফতারকৃত নূরু এবং পলাতক হূদয় ও গ্রেফতারকৃত ৭ থেকে ৮ জন জড়িত বলে তার পিতার সন্দেহ। তাদের নাম ঠিকানাও তিনি পেয়েছেন বলে জানান। নিখোঁজ হওয়ার পরদিন শাহবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর টুম্পার ঘটনায় মামলাটির ধারা পরিবর্তন হবে বলে শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম জানান।

যে কারণে টুম্পাকে হত্যা করা হয়:

গতকাল বৃহস্পতিবার টুম্পাদের সেগুনবাগিচার বাসায় গিয়ে তার পিতা-মাতা ও অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করা হয়। তারা জানান, টুম্পা সেগুনবাগিচা বেগম রহিমা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর কমার্স বিভাগের ছাত্রী ছিল। স্কুলে যাতায়াতের সময় বখাটে তরুণ নূরুর সঙ্গে পরিচয়। এরপর উভয়ের মধ্যে প্রেম। বিষয়টি জেনে টুম্পার বড় ভাই ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার বাবলা নূরুকে দুই দফা মারধর করে। পরে উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এই ঘটনার পর গত ২৬ মে বাবলা নিখোঁজ হয় এবং ৩১ মে তার লাশ মেঘনা নদী থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। বাবলা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটিত কিংবা জড়িতরা গ্রেফতার হয়নি। নূরুকে মারধর করার ঘটনায় বাবলাকে জীবন দিতে হয়েছে। একই কারণে খুনিরা টুম্পাকেও হত্যা করে নির্মমভাবে। বাবলার খুনি ও টুম্পার খুনি একই বলে তাদের অভিভাবকরা দাবি করেন। গ্রেফতারকৃত আকাশকে গতকাল শাহবাগ থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

সূত্রঃ ইত্তেফাক

0 comments:

Post a Comment