Sunday, February 13, 2011

সালামনগর, ফেনী

42 comments
ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের জন্ম। তার বাবার নাম ফাজিল মিয়া এবং মায়ের নাম দৌলতেরনেছা। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আবদুস সালাম ছিলেন সবার বড়। সালাম বাহান্নের ভাষা আন্দোলনে শহীদ হওয়ার আগেই ২০ বছর বয়সে তার ছোট বোন তরিকুরনেছা মারা যান। বাহান্নের ভাষা আন্দোলনে টগবগে তরুণ সালামের হৃদয়েও আন্দোলনের ডাক ছুঁয়ে যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে সালামও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে পড়লে পুলিশ নির্বাচারে গুলি চালায়। এ সময় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর রহমানসহ গুলিবিদ্ধ হন অনেকে। ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিগ্রামে সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুনেন তার বাবা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সালামের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাশে থাকা সালামের ভাতিজা মকবুল আহম্মদ ধনা মিয়া জানান, '৫২ সালে ঢাকাস্থ নাবিস্কো বিস্কুট কোম্পানির মেশিনম্যান হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। তার কর্মস্থলের পাশেই সিএন্ডবির (বর্তমান সড়ক ও জনপথ বিভাগ) ওয়ার্কসপের ট্রাক চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন সালামের জেঠাতো ভাই হাবিব উল্যাহ। সালাম নীলক্ষেত কর্মচারীদের সরকারি ব্যারাকে থাকতেন। প্রায় সেখানে তাদের যাতায়াত ছিল। সালামের ম্যাচের কাজের বুয়া তাদের চিনত। ঘটনার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সেই কাজের বুয়ার ছেলে মকবুলের কর্মস্থলে গিয়ে জানায় তার চাচা সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। মকবুল ছুটে যান হাবিব উল্যাহর কাছে। তারা দু'জনে মিলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখেন, পেটে গুলিবিদ্ধ সালাম সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বারান্দায় পড়ে আছেন। পর দিন সকাল ৯টার দিকে বেশ কিছু ছাত্র সালামের চিকিৎসা না করার অভিযোগে বেশ হট্টগোল করে। মকবুল ও হাবিব উল্যাহ হাসপাতালে যাতায়াতে থাকলেও ফাজিল মিয়া সংজ্ঞাহীন সালামের বিছানার পাশ থেকে নড়েননি। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর গোরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, জেঠাতো ভাই হাবিব উল্লাহসহ শত শত ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার ভাষা শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানকালে গেজেটে তার মৃত্যুর তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারির স্থলে ৭ এপ্রিল উল্লেখ করা হয়। সেই থেকে সালামের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। শহীদ সালামের জীবিত একমাত্র ছোটভাই আবদুল করিমও ২৫ ফেব্রুয়ারি সালামের মৃত্যুর তারিখ স্বীকার করলেও সরকারি গেজেটের বিভ্রান্তিকর তারিখ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। ফেনীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, শহীদ সালামের নামে তার এলাকার নামকরণ করার। ১৯৯৮ সালে এলাকার লোকজন ফেনীর সাংবাদিক বখতেয়ার মুন্নার সহযোগিতায় সালামের গ্রামের নাম লক্ষণপুরের পরিবর্তে 'সালামনগর' লিখে একটি সাইন বোর্ড ফেনী-মাইজদী সড়কের মাতুভূঞা ব্রিজের কাছে লাগিয়ে দেয়। জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভাষা শহীদের গ্রামগুলোকে তাদের নামে নামকরণের গেজেট প্রকাশ করায় লক্ষণপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন 'শহীদ সালামনগর'।

মো. জমির বেগ

42 comments:

Post a Comment