Tuesday, February 22, 2011

ধূমকেতু

0 comments
প্রথমদিকে দার্শনিক আর বিজ্ঞানীরা ধূমকেতুকে নিছক গ্রহ কিংবা গ্রহ-সম্পর্কিত কোনো বিশেষ ঘটনা বলেই মানতেন।
কিন্তু বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল প্রথমবারের মতো বলেন, ধূমকেতু মোটেও কোনো গ্রহ নয়। তাহলে কী? শুরু হয় এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা। আর বিভিন্ন গবেষণায় পুরোপুরি না হলেও ধূমকেতু সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাওয়া গেছে।
ধূমকেতু আসলে কী

ধূমকেতু (Comet) হলো ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। এরা নিজেদের কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। সূর্যের কাছাকাছি আসতে শুরু করলেই ধূমকেতুর বরফ, জমাটবাঁধা বিভিন্ন গ্যাস সূর্যের তাপ ও আলোর প্রভাবে বাষ্পীভূত হতে শুরু করে। ফলে এগুলো ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস থেকে দূরে সরে যায়। ধূলিকণা, গ্যাস প্রভৃতির এ স্রোতকে বলা হয় 'কোমা'। আর এ কোমার ওপর সূর্যের বিকিরণ চাপ এবং সোলার উইন্ড বা সৌরবায়ুর চাপে লম্বা একটি লেজের মতো অংশ তৈরি হয়। এ অংশটিকে ধূমকেতুর লেজ বা 'টেল' বলা হয়। কিছু ধূমকেতু নির্দিষ্ট সময় পরপর একই স্থানে ফিরে আসে। যেমন হ্যালীর ধূমকেতু।

বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন ধূমকেতুরা স্থির নয়, বরং গতিশীল। গবেষণা অনুসারে ধূমকেতু বিভিন্নরকম পাথর, ধুলোবালি, পানি ও কার্বন-ড্রাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন আর এমোনিয়ার মতো নানারকম গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত। তাই ধূমকেতুকে 'ডার্টি স্নো বল' নামেও ডাকা হয়। এসবের বাইরেও ধূমকেতুতে নানারকম জৈব উপাদান থাকে। এর মধ্যে মিথানল, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, ফর্মালডিহাইড, ইথেন এবং ইথানল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জটিল অ্যামাইনো এসিড থাকার সম্ভাবনার কথাও বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে বহু দূরে থাকার জন্যই ধূমকেতুদের খালি চোখে দেখা যায় না।

পৃথিবীতে প্রাণ এনেছে ধূমকেতু!

পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে, সে ব্যাপারে নানা মতবাদ রয়েছে। মোটামুটি মনে করা হয়, প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে পানি থেকে। তবে সম্প্রতি লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ইন ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারও আগে ধূমকেতু থেকেই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ঘটে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সৃষ্টির আদি অবস্থায় অসংখ্য ধূমকেতু মহাশূন্য থেকে নিরন্তর আছড়ে পড়ত পৃথিবী পৃষ্ঠে। ফলে প্রচণ্ড সংঘর্ষের কারণে কার্বন-নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ বিশাল চেইন সৃষ্টি হতো। তারপর ক্রমাগত প্রসারিত হতে হতে বিশাল চেইনটি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ত। এসব ভাঙা অংশ আবার সৃষ্টি করত প্রোটিন তৈরিকারক অ্যামিনো অ্যাসিড গি্লসাইন। পৃথিবীর আদি আবহাওয়া ছিল মূলত কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ও পানিতে পরিপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রাণ সৃষ্টিকারক প্রোটিন তৈরিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখা এসব পদার্থের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে আছড়েপড়া ধূমকেতুতে প্রাণকণা সৃষ্টিকারক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকতে পারে বলে তারা অনুমান করছেন। লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ইন ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী গোল্ডম্যান বলেন, 'মহাকাশীয় কোনো বস্তু থেকে আদি প্রাণকণা সৃষ্টিকারক উপকরণ আসতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। এর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম অবস্থায়, ভূপৃষ্ঠে অনবরত উল্কাপাত হতো। ধূমকেতু আছড়ে পড়ত। মহাকাশীয় আরও অসংখ্য বস্তু আঘাত হানত পৃথিবীতে। পৃথিবীতে যেরকম আবহাওয়া বিরাজমান ছিল বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি, তাতে প্রাণসৃষ্টিকারী উপকরণ খুব একটা ছিল না। আর মহাকাশীয় বস্তু যে প্রাণসৃষ্টির পূর্বশর্ত হতে পারে, এমন অনেক পদার্থের কথাও আমরা জানি। সুতরাং ধূমকেতু থেকে আদিপ্রাণের সঞ্চার হতে পারে_ এ কথা ঠিক উড়িয়ে দেওয়া যাবে বলে মনে হয় না।' বিজ্ঞানীদের এ ধারণা সত্যি হলে অবশ্য পৃথিবী ছাড়াও যে গ্রহান্তরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে, এমন ধারণা অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ খুব কমই থাকবে। কারণ পৃথিবীর মতো অন্য যে কোনো গ্রহেও মহাকাশীয় বস্তু পতনের ফলে একই ব্যাপার ঘটতে পারে।

-রণক ইকরাম

0 comments:

Post a Comment