Saturday, February 19, 2011

মৎস্যকন্যা কাহিনী

0 comments
সাইরেন বা মহাসমুদ্রের মৎস্যকন্যার কথা আমরা জানি। যে তার মধুর কণ্ঠে নাবিকদের গান শুনিয়ে বিমোহিত করে জলের অতল তলে ডেকে নিয়ে যায়। যে নাবিক গান শুনে বিমোহিত হয়ে তার আকর্ষণে ছুটে যায়, সে আর কখনো ফিরে আসে না। পৃথিবীর অন্য দেশের মতো আমাদের দেশের রূপকথায়ও মৎস্যকন্যার গল্প বেশ প্রচলিত। তবে অর্ধেক মাছ আর অর্ধেক মানবী আকৃতির মৎস্যকুমারীর নাম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।
স্কটিশ, আইসল্যান্ডিক এবং আইরিশ লোককাহিনীর মৎস্যকন্যার নাম সেলকাই। সেলকাইয়ের গল্পটিও কিছুটা ব্যতিক্রমী। কিন্তু গল্পের কাহিনীবিন্যাস প্রায় মৎস্যকন্যার মতোই। প্রচলিত এ লোককথা নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। 'দ্য সিক্রেট অব রোয়ান ইনিশ'[ (ঞযব ঝবপৎবঃ ড়ভ জড়ধহ ওহরংয) তেমনই একটি চলচ্চিত্র, যার গল্প এ রকম_ সেলকাই নামে এক মেয়ে একদিন তার চামড়া খুলে রেখে সূর্যস্নান করছিল। এক জেলে সেটি চুরি করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং লুকিয়ে রাখে। ফলে মেয়ে সেলকাই ওই জেলের বাড়িতে চলে আসে এবং জেলের বউ হয়ে যায়। প্রায় এক বছর পর তার ছেলেমেয়েরা লুকিয়ে রাখা চামড়াটি খুঁজে পায় এবং মাকে জিজ্ঞাসা করে, এটি কী? জেলের বউ হয়ে থাকা সেলকাই তার চামড়া ফিরে পেয়ে খুশি হয় এবং আগের রূপে সে সমুদ্রে ফিরে যায়। কিন্তু সেলকাইয়ের লোককাহিনী একটু অন্যরকম। লোককাহিনীর বর্ণনা অনুযায়ী সেলকাইরা আসলে বিভিন্ন ধরনের মারম্যান অথবা সামুদ্রিক আত্মা, যারা জন্মের পর সমুদ্রে চলে যায়। এরা নিজের চামড়া বদল করে মানুষের রূপ ধারণ করতে পারে। সাধারণভাবে সেলকাইয়ের গল্প রোমান্টিক ট্র্যাজেডিধর্মী। লোকবিশ্বাস আছে যে, সেলকাইরা মানুষের বেশে মানুষের সঙ্গে প্রেম করে আবার বিয়েও করে। পুরুষ সেলকাই মানুষের আকৃতিতে খুব সুদর্শন হয়। তারা মেয়েদের আকর্ষণ করার প্রচণ্ড শক্তি অর্জন করে। তবে তারা সেসব মানুষকে খোঁজে, যারা সংসারজীবনে অসুখী। অসুখী নারীরা সবসময় সেলকাই স্বামীর অপেক্ষা করে। যদি কোনো নারী পুরুষ সেলকাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাহলে তাকে সমুদ্রের তীরে গিয়ে সাত ফোঁটা চোখের জল সমুদ্রে ফেলতে হয়। মেয়ে সেলকাই খুব সুন্দরী আর ভালো স্ত্রী হয়। ওদের সত্যিকার বাড়ি সমুদ্রে। যেসব সেলকাই ডাঙায় এসে মানুষের সঙ্গে সংসার করে, তারা মাঝেমধ্যে এক দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো স্ত্রী সেলকাই যদি কখনো মানুষের সংসার ছেড়ে সমুদ্রে চলে যায়, তবে সে আর কখনো তার স্বামীকে দেখতে আসে না। আর দেখা হলেও এড়িয়ে চলে। কিন্তু সে তার সন্তানদের প্রায়ই দেখতে আসে এবং হাত নেড়ে নেড়ে তাদের সঙ্গে খেলা করে। এমন অনেক গল্প প্রচলিত আছে আইরিশ, আইসল্যান্ডিক এবং স্কটিশ পুরাণে।

-আমিন রহমান নবাব

0 comments:

Post a Comment