Saturday, March 26, 2011

মৃত্যু কী

58 comments
মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। জীবনের সঙ্গে মৃত্যু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে মৃত্যু যেন শুধু বড়দের জন্য। ছোটদের এ বিষয়ে তেমন কিছু জানানো হয় না বা বলা হয় না। অবশ্য হালে এ ব্যাপারটা কিন্তু একদম বদলে গেছে।
ছোট ছোট বাচ্চারা যখন প্রশ্ন করে বাবা-মায়েদের, 'দাদু বা নানু কীভাবে মারা গেছে?' তখন বাবা-মায়েদের বিপদে পড়তে হয়। কারণ মৃত্যু কী, কেনই বা মৃত্যু আসে, বা মৃত্যু কেন স্বাভাবিক তা বোঝাতে হিমশিম খান তারা। সম্প্রতি এক জার্মান মনোবিজ্ঞানী বাচ্চাদের জন্য বিশেষ একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এ প্রোগ্রামে বাচ্চাদের মৃত্যু সম্পর্কে নানা বিষয় জানানো হয়, দেওয়া হয় নানা তথ্য। কোলোন শহরের অদূরেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ এ কোর্সের। এ কোর্সের মেয়াদ পাঁচদিন। কোর্সের নাম 'হসপিস মাখ্ট শুলে' অর্থাৎ যে মানুষটি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি তার সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাটানো। সেই কোর্সে প্রতিদিনই বাচ্চাদের একবার করে জানানো হয় মৃত্যু হচ্ছে খুবই স্বাভাবিক এক প্রক্রিয়া। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীকে এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কেউ মারা যেতে পারে রোগে ভুগে, কেউ দুর্ঘটনায়, কেউ আবার নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে আনতে পারে। যেভাবেই হোক না কেন মৃত্যু অবধারিত। বিভিন্ন ধরনের মেঘের রঙের মধ্য দিয়ে বাচ্চাদের বোঝানো হয়েছে।
বেঁচে থাকার অর্থ হলো সাদা মেঘ। অসুস্থ মানে অন্ধকার এবং মৃত্যু মানে কালো মেঘ। এই হচ্ছে প্রধান তিনটি রঙ। এসব বাচ্চাকে বলা হয়েছিল পাঁচদিনে তারা কী দেখেছে, জেনেছে তা নিয়ে একটি লেখা জমা দিতে। কী লিখেছে তারা? একটি ছেলে জানাল, 'আমার দাদা এখন বসবাস করছে কালো মেঘের মধ্যে। কারণ তিনি মারা গেছেন। আমি সাদা মেঘের মধ্যে কারণ এখানে আমার সব বন্ধু-বান্ধব আর খেলার সাথী রয়েছে।'
একটি মেয়ে জানাল, 'সাদা মেঘে আমি লিখেছি আমাদের স্কুলে একটি নতুন টয়লেট বসানো হয়েছে। স্কুলের বাগানে ফুল ফুটছে। আর অন্ধকার মেঘে আম্মুর কথা লিখেছি। কারণ আম্মু অসুস্থ।' মনোবিজ্ঞানী বেটিনা হাগেডর্ন ডুরেন শহরে ১৩ বছর ধরে এ বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। হসপিস মাখ্ট শুলের কোর্সটি তিনিই চালু করেছেন ২০০৫ সালে। তিনি বলেন, এর মূল কারণ হলো হঠাৎ পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যুর খবর অথবা তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই ও এ ধরনের খবর মানুষ মেনে নিতে পারে না। অনেকে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেটিনার কথায়, 'মৃত্যু প্রসঙ্গে বাচ্চারা প্রশ্ন করলে বেশিরভাগ বাবা-মা-ই জানেন না, কী উত্তর দিতে হবে। তারা মনে করেন, এ বিষয়ে বাচ্চাদের কিছু বলা ঠিক নয়। আমরা কিন্তু বাচ্চাদের সঙ্গে ভয়ভীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলি। এমনকি জন্ম-মৃত্যুর নানা দিক নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করি, অনেক কিছু বুঝিয়ে দিই। মৃত্যু অবধারিত। প্রতিটি মানুষের জীবনে মৃত্যু একবার আসবেই। তাই খুবই স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুকে গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে ছায়ানটের স্কুল কার্যক্রম নালন্দার নবম শ্রেণীর ৪ শিক্ষার্থীকে (অরভি, সৌরভ, অনিন্দ্য নাহার, দীপ্ত) এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানিয়েছে, এটা আমরা এক ধরনের ভীতিকর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জানি। যা সমাজ বা ব্যক্তির জন্য স্বস্তিকর নয়। তাই এটা পদ্ধতিগত শিক্ষার মধ্যে থাকলে ভালো হয়। জন্মটা যেমন একটা জৈব প্রক্রিয়া মৃত্যুটা তার স্বাভাবিক পরিসমাপ্তি। মানবজাতি তার জিন ট্রান্সফারের মাধ্যমে সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে আছে। জ্ঞানবিজ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়ার জন্য আমরা এগিয়ে চলেছি।
এটা অনুধাবন করলে সমাজের মঙ্গলকামনা আমাদের মধ্যে দৃঢ় হবে। জীবনকে পরিমিতিবোধ ও লোভ থেকে দূরে রাখতে সমর্থ হব।

-এনামুল হক মনি

58 comments:

Post a Comment