Friday, March 18, 2011

দেশে দেশে বৈচিত্র্যময় শেষকৃত্য

0 comments
আমাদের এই পৃথিবী বড়ই বৈচিত্র্যময়। এখানে বাস করে কয়েকশ কোটি মানুষ এবং তাদের একত্রিত করে রেখেছে কিছু দেশ বা জাতি-গোষ্ঠী। এই পৃথিবীতে আমরা এসেছি কয়েক বছরের জন্য, তারপর আবার আমাদের এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। চলে যাওয়ার রীতি কেমন হবে? এই পৃথিবীতে দেশ, জাতি ও সমাজভেদে মানুষের শেষকৃত্যের রয়েছে নানা নিয়ম। কারও নিয়ম স্বাভাবিক আবার কারও নিয়ম বৈচিত্র্যময়। আসুন আমরা বেশকিছু দেশ বা জাতির বৈচিত্র্যময় শেষকৃত্য সম্পর্কে জানি। লিখেছেন নূর মোহাম্মদ সরকার
The Esoteric Curiosa

জাপানিদের বিচিত্র শেষকৃত্য
জাপানে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি। এখানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ অত্যন্ত বেশি। সম্মানজনকভাবে একটি শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলে কম করে হলেও হাজার চল্লিশেক ডলার ব্যয় করতে হয়। একজন জাপানিকে মৃত্যুর পর বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যলোক থেকে বিদায় নিতে হয়। প্রথমে লাশকে বাড়িতে এনে রাখা হয়। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে নানা মন্ত্র পাঠ করে মৃতদেহকে সম্মান জানায় শোক পালনকারীরা। একটি বেদি কিনে তাতে মৃত ব্যক্তির ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়। যতদিন শোক পালন করা হবে, ততদিন এই ছবি ঝুলবে। বাড়ির আঙিনা সাজানোর জন্য কিনে আনতে হয় সাদা-কালো ব্যানার, লণ্ঠন ও ফুল। শুধু পরোহিত জোগাড় করলেই চলবে না, কান্নাকাটি করার জন্য লোকও ভাড়া করে আনতে হবে। সেইসঙ্গে মৃতদেহ পোড়ানোর জন্য জায়গা রিজার্ভ করে রাখতে হবে। জমির স্বল্পতার জন্য জাপানে লাশ দাহ করা বাধ্যতামূলক। মেহমানদের কিন্তু খালি বিদায় করা যাবে না, উপহার হিসেবে দিতে হবে তোয়ালে সেট বা প্রি-পেইড ফোনকার্ড। যাতে মুদ্রিত থাকবে কষ্ট স্বীকার করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন বাণী। এর পরও হাঁফ ছেড়ে বাঁচার উপায় নেই। অনুষ্ঠানের শেষে মৃতের পরিবারের হাতে এসে পৌঁছে মোটাসোটা অংকের বিল। এই টাকা যায় মন্দির কর্তৃপক্ষ বা শেষকৃত্যানুষ্ঠান আয়োজনকারীর পকেটে। এভাবে মৃত আÍীয়কে নিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা করতে গিয়ে অনেক জাপানি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর টাকা খুইয়েছেন। মূলত বর্তমানে জাপানে শেষকৃত্যানুষ্ঠান একটি প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোরপা আদিবাসী
নেপাল ও ভুটানসংলগ্ন তিব্বত সীমান্ত এলাকায় বাস করে এক অদ্ভুত আদিবাসী, যার নাম সোরপা। তাদের সমাজে কারও মৃত্যু ঘটলে এরা এক ধরনের মন্ত্র পাঠ করে। এতে মৃতদেহের ভেতর থেকে আÍা মাথা দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে তাদের বিশ্বাস। এরপর লাশটিকে বসানোর মতো করে বেঁধে রেখে তার সামনে বাতি জ্বালানো হয়। সেই বাতির আলোয় লাশের চারদিকে বসে সবাই খাওয়া-দাওয়া করে। পরে লাশটিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

ফেন্টাস গোত্র
আফ্রিকার ফেন্টাস গোত্রের কারও মৃত্যু হলে নাচ-গান এবং পানোৎসব শুরু হয়। গোত্রের লোকজন মৃত ব্যক্তির ঘরের চারদিকে বিচিত্র ভঙ্গিতে নাচ-গান জুড়ে দেয়। সেইসঙ্গে মদ্যপান ও হুকো টানার ধুম পড়ে যায়। নাচগানকারীরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাদের পেটপুরে কুকুরের মাংস খাওয়ানো হয়।

আদ্দেগালু উপজাতি
ল্যাটিন আমেরিকার প্যারাগুয়েতে ‘আদ্দেগালু’ উপজাতির বাস। তাদের কেউ মারা গেলে তার আÍীয়স্বজনরা লাশটি কেটে রান্না করে খায়। হাড়গুলো জমা করে কিছুদিন ফেলে রাখে, তারপর একদিন সেগুলো পুড়িয়ে তার ছাইগুলো সযতেœ রেখে দেয়। এ রকম করলে প্রেতাÍা কোন ক্ষতি করতে পারে না বলে তাদের বিশ্বাস।

ভিটাইয়া ও বেলালু উপজাতি
পাপুয়া নিউগিনির দুটি গোত্র ‘ভিটাইয়া’ ও ‘বেলালু’ এর লোকজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। এক গোত্রে অন্য গোত্রের কাউকে খুন করতে পারলে হত্যাকারী গোত্রের লোকজন আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। পুরুষরা পাখির পালক মাথায় দিয়ে এবং মেয়েরা মাথায় বনফুল গুঁজে নাচ-গান শুরু করে। অন্যদিকে মৃতের গোত্রের লোকজন নানা ধরনের উপহারসামগ্রী লাশের মাথার চারপাশে জমিয়ে রাখে। এক ব্যক্তি একটি তীরের মাথায় একগোছা ঘাস বেঁধে সেটা শূন্যে নিক্ষেপ করে। পরে লাশটিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

পিলে বেলু
নিউ মেক্সিকোর ‘পিলে বেলু’ গোত্রের কারও মৃত্যু হলে প্রথমে মদপানের ব্যবস্থা করা হয়। তারপর একজন জ্যোতিষী মৃতের মাথা থেকে একগোছা চুল কেটে নিয়ে কবর খুঁড়তে যায়। মৃত ব্যক্তির ঘর থেকে কবর পর্যন্ত খাবারভর্তি থালা পেতে দেয়া হয়। সবাই একসঙ্গে খাওয়া শেষে জ্যোতিষী মৃত ব্যক্তির ব্যবহƒত জিনিসপত্র গ্রামের বাইরে নিয়ে ফেলে আসে। তারপর মৃতের ঘরে জ্যোতিষী ‘ক্রস’ চিহ্ন এঁকে দেয়। এতে মৃতের আÍা ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারে না বলে তাদের বিশ্বাস।

লুথ গোত্র
দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘লুথ’ নামে একটি গোত্র আছে। এ গোত্রের কেউ মারা গেলে প্রথমে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে সবাই স্যুপ রান্না করে খায়। এরপর মৃতদেহটি পাহাড়ের ওপর কিংবা সুবিধাজনক জায়গায় রেখে তা না শুকানো পর্যন্ত পালা করে পাহারা দেয়া হয়। শুকিয়ে অনেকটা শুঁটকির মতো হয়ে গেলে কেটে কেটে রান্না করে তা খাওয়া হয়।

0 comments:

Post a Comment