Monday, March 14, 2011

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং সমুদ্রের জল

0 comments
যেদিন থেকে মানুষ সভ্য হয়েছে সেদিন থেকেই তার সবসময়ের সঙ্গী দূষণ। প্রথমে আগুন আবিষ্কার থেকে যা শুরু হয়েছিল সভ্যতার অগ্রগতি তা প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ছে। পৃথিবী রোজই অল্প অল্প করে গরম হয়ে ওঠা বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য কার্বনডাই-অক্সাইডকেই সবাই দায়ী করেন। এমনকি বিজ্ঞানীরাও 'ফসিল ফুয়েল' অর্থাৎ কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদির ব্যাপক হারে ব্যবহার আর তা থেকে উৎপন্ন কার্বনডাই-অক্সাইডে বিপর্যয়ের কারণ বলে মনে করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, পৃথিবীর জল-হাওয়া ক্রমশ গরম হওয়ার পেছনে শুধু কার্বন-ডাই-অক্সাইডই নয় আরও অনেক কারণ আছে।


আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 'নাসা'র বিজ্ঞানী জেমস হানসেন ও তার সহযোগীরা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে গবেষণা করেছে। নিউইয়র্কের রিসার্চ পেপার 'গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ'-এ প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, বিজ্ঞানীদের এ দলটি ট্রপোস্ফিয়ারিক ওজোন, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ও ব্ল্যাক কার্বন পার্টি কুল-এর মতো বিষাক্ত সব গ্যাসকেই আবহাওয়ার প্রধান 'গ্রিনহাউস' গ্যাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব গ্যাসের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড একেবারেই নেই। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বেশ কয়েক দশক ধরে এ গ্যাসগুলোই পৃথিবীতে গ্রিনহাউস সৃষ্টি করে গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ভীষণ বাড়িয়ে তুলেছে। এর সঙ্গে আর একটি নতুন তথ্যও বিজ্ঞানীরা পেশ করেছেন। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। মিথেন এবং ট্রপোস্ফিয়ারিক ওজোনের উৎসগুলোকে আগামী দিনে আমরা যদি কমিয়ে ফেলতে পারি তবে ৫০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমে একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। ১৯৭৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা গত শতকের একটি নজির সৃষ্টিকারী ঘটনা। বিজ্ঞানী হানসেন বলছেন, গবেষণা থেকে আমরা জানতে পেরেছি, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়া অন্য যেসব গ্যাস পৃথিবীতে রয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য সেগুলোই বেশি দায়ী। গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, ১৯৫০ থেকে ১৯৭০, এই ২০ বছরের মধ্যেই নানা গ্রিনহাউস গ্যাসের ভেতর শুধু কার্বন-ডাই-অক্সাইডেরই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়েছে। আবার নয়-এর দশকের শেষে তা অনেকটা কমে আগের অবস্থায় এসে একটি সাম্যের সৃষ্টি করে। সুতরাং বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কুপ্রভাব নিয়ে এখন আর দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এ বিজ্ঞানীরাই চমকে ওঠার মতো আরও একটি তথ্য দিয়েছেন। পৃথিবীর যে বিপুল জলরাশির সম্ভার অর্থাৎ সমুদ্র, তা গত ১০০ বছর ধরে উত্তপ্ত হয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ানোয় বেশ বড় ভূমিকা নিয়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সমুদ্রের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গত শতকের পাঁচ দশকের মাঝামাঝি থেকে নয়'র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাগরের জল সবচেয়ে বেশি তাপ ধরে রেখে পৃথিবীকে গরম করে তুলেছে।

-তৈমুর রেজা তুহিন

0 comments:

Post a Comment