Monday, March 21, 2011

দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের প্রতিকার

0 comments
শ্বাসকষ্টজনিত রোগের মধ্যে COPD অন্যতম। দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা (Chronic morbidity) সৃষ্টিকারী এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হিসেবে এই রোগটি বিশ্বব্যাপী পরিগণিত হয়ে আসছে। বহুলোক এই রোগে ভোগে এবং কম বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এটি হলো ফুসফুসের এমন একটি রোগ যেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগী শ্বাসকষ্টে ভোগে। এই শ্বাসকষ্ট দিন দিন বৃদ্ধি পায় যা আর কখনো সম্পূর্ণভাবে আগের অবস্থায় ফিরে আসে না।

যাদের COPD বেশি হয় : এ রোগের জানা কারণগুলোর মধ্যে ধূমপান অন্যতম। সাধারণত যে যত দীর্ঘ সময় ধূমপান করবে তার ঈঙচউ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। কর্মক্ষেত্রে জৈব-অজৈব ধূলিকণা বেশি হলে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে যারা কাঠ, শুকনো খড় ইত্যাদি ব্যবহার করেন বায়ুদূষণ বেশি হলে ফুসফুসের সংক্রমণ হলে, যেমন ঘন ঘন ভাইরাস সংক্রমণ যারা অপুষ্টিতে ভুগছে। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষরাই বেশি COPD আক্রান্ত হয়। তা ছাড়া জম্মগতভাবে ফুসফুস ঠিকমতো গড়ে না উঠলে এবং আলফা ওয়ান এনটি ট্রিপসিন (Alpha-one antitrypsin) নামক এনজাইম-এর ঘাটতি হলেও এ রোগ হতে পারে।

রোগের লক্ষণ : শ্বাসকষ্ট ও কাশি COPD রোগের প্রধান লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট সাধারণত কমবেশি সবসময় থাকে এবং চলাফেরায় বৃদ্ধি পায়। সঠিক চিকিৎসা না নিলে শ্বাসকষ্ট দিন দিন বাড়তে থাকে। কাশির সঙ্গে কফ থাকতে পারে এবং কোনো কোনো সময় শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং কফের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয় : Spirometry পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ছাড়াও রোগের তীব্রতা পরিমাপ করা যায়, যা সঠিক চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসা : সাধারণত বেশিরভাগ COPD রোগী প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে আসেন না। তাই কার্যকর চিকিৎসার জন্য দরকার_

* রোগের তীব্রতা নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণ * রোগের কারণসমূহ নির্ণয় এবং সম্ভব হলে কারণসমূহ দূর করাCOPD রোগের সঠিক ওষুধ প্রয়োগ এবং রোগীদের সঠিক পুনর্বাসন (Rehabilitation)

COPD রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় রোগের লক্ষণ যেমন : শ্বাসকষ্ট, কাশি ইত্যাদি অনেক কমে যায়, রোগীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রোগ বৃদ্ধি এবং জটিলতা হ্রাস পায়।

COPD রোগীর চিকিৎসা সাধারণত ওষুধ দ্বারা এবং বিভিন্ন রকম পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয়। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য বিভিন্ন রকম ইনহেলার ব্যবহার করা হয়, যেমন- সালবিউটামল, ইপ্রাট্টপিয়াম, করটিকোস্টবেয়ড ইত্যাদি। জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে রোগীকে অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি ঙ২ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া রোগীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ঘন ঘন রোগ বৃদ্ধি এবং জটিলতা অনেকাংশে কমে যায় COPD যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি (পযৎড়হরপ) রোগ এবং সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তাই COPD রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায় হলো রোগীকে তার রোগ, রোগের কারণ এবং তার পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া। রোগ বৃদ্ধির লক্ষণগুলো অবহিত করা এবং কখন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া। ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ধূমপান বর্জনে সাহায্য করা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। আমাদের দেশে অনেক চিকিৎসক COPD রোগীকে অ্যাজমা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন এবং সঠিক চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হন। এ ক্ষেত্রে একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞই পারেন একজন COPD রোগীকে অনেকটা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে।

ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন
পরিচালক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
ফোন : ০১৭১১-১৭১৬৩৪; ৮৩৩৩৮১১

0 comments:

Post a Comment