Wednesday, June 8, 2011

ব্ল্যাক ফরেস্ট

0 comments
বন তো সবুজই হওয়ার কথা। তাই বলে 'কালো বন'! এটা আবার কী? বন আবার কালো হয় কী করে? আসলে বন কখনো কালো হয় না। তবে, দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির এক পর্বতময় বনভূমির নাম 'ব্ল্যাক ফরেস্ট' বা 'কালো বন'। এটি রাইন ভ্যালির দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমান্ত রচনা করেছে। পাহাড় আর বন যেন এখানে একে অপরের পরিপূরক। এখানে আছে যেমন দীর্ঘ উচ্চতার গাছ, তেমনি আছে উঁচু পর্বতচূড়া। এখানকার সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া ফেল্ডবাগরাউর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪৯৩ মিটার। পাহাড়গুলোর মূল উপাদান বেলে পাথর। ব্ল্যাক ফরেস্টের আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। শেষ বরফ যুগের সময় ব্ল্যাক ফরেস্ট তুষারাচ্ছাদিত ছিল আর পরে তা হিমবাহ আকারে নেমে এসে সৃষ্টি করেছে ফেল্ডবার্গ, হারজোজেন হর্ন, বেলচিন, সাঙ্গাইস হর্ন, স্কাউইন্সল্যান্ড, ক্যান্ডেল প্রভৃতি নদী।
এই বনের মূল বৃক্ষ হচ্ছে পাইন এবং দেবদারু জাতীয় গাছ। যেগুলোর ডালপালা কম এবং পাতা সুচালো। আফ্রিকার জঙ্গলের মতো ঘন আর নিবিড় নয় এই বন। অন্যান্য বন্য এলাকার মতো এ বনও একসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষের হাতে। তাছাড়া এসিড বৃষ্টির ফলেও ক্ষতি হয়েছে অনেক। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে। এ ঝড়ে প্রায় ১০০ একর বনভূমি একেবারে চুরমার হয়ে যায়। এখানকার প্রধান শিল্প পর্যটন। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এক অমোঘ আকর্ষণে ছুটে আসেন ব্ল্যাক ফরেস্টের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে। পর্যটকদের কথা চিন্তা করেই এ বনকে সাজানো হয়েছে শৈল্পিগুকভাবে। বনের মধ্য দিয়ে চলে গেছে ইউরোপিয়ান হাইওয়ে। তৈরি করা হয়েছে অনেক দীর্ঘ ফুটপাত। ফলে পর্যটকরা অনায়াসেই বনের মধ্যে ঘুরতে পারেন। আছে পাহাড়ে সাইক্লিংয়ের সুযোগ। ইচ্ছা করলেই করা যায় পাহাড় অভিযান, মানে পাহাড়ের খাড়া দেয়াল বেয়ে ওঠা। এছাড়া দিনের বেলায় হাঁটার জন্য বনের মধ্যে আছে ছোট ছোট রাস্তা। এ বনে প্রায় ২৩ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আছে পর্যটন নেটওয়ার্ক, যা পরিচালনার জন্য আছে প্রচুর লোকবল আর আছে ব্ল্যাক ফরেস্ট সোসাইটি_ যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। এখানে আছে অনেক লেক। আছে মন মাতানো জলপ্রপাত। ট্রিবার্গ জলপ্রপাত খুব একটা বেশি উঁচু না হলেও এটি জার্মানিতে খুব বিখ্যাত। আর আকর্ষণীয় পর্যটকদের কাছেও।

ব্ল্যাক ফরেস্টের মাঝেই আছে জাদুঘর, যেখানে দেখানো হয়েছে ১৬ এবং ১৭ শতকের জার্মান কৃষকদের জীবন। সঙ্গে আছে ঘড়ির ইতিহাস নিয়ে মজার ঘড়ি জাদুঘর। ব্ল্যাক ফরেস্ট বিশাল এক বন হাওয়া সত্ত্বেও এখানে কোনো হিংস প্রাণী নেই কিংবা বন্য বৈচিত্র্য নেই। এখানে দেখতে পাওয়া যায় গরু, উট, ঈগল, পেঁচা আর দুই মিটার লম্বা গলাওয়ালা নীল অস্ট্রিচ পাখি। আর আছে বৃহদাকার কেঁচো। আরেকটি প্রাণী এখানে দেখা যায়, যার নাম শিয়াল। নাম শিয়াল হলেও এটি অনেক বড় আকৃতির এবং ঘোড়ার মতো। অতীতে এর দ্বারা লোকজন বোঝা বহনের কাজকর্ম করাত। ব্ল্যাক ফরেস্ট এলাকায় পালন করা হয় এক বিশেষ ছুটির দিন। সেদিন লোকজন দলবেঁধে রাস্তায় নেমে আসে আদিবাসীদের মতো মুখোশ পরে আর আনন্দ হৈচৈ করে।

নবাব আমিন

0 comments:

Post a Comment