Monday, September 26, 2011

তেল

0 comments
খাদ্যের বড় শক্তি হলো তেল। তেল ছাড়া বাঙালিদের রান্নাই হয় না। খাদ্য সামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে ভোজ্যতেল। রান্না সুস্বাদু করা ছাড়াও ভোজ্যতেল শরীর সুস্থ ও সবল রাখে। তাই খাদ্য তালিকায় ভোজ্যতেল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চলতি বাজারে নানা রকমেরই তেল পাওয়া যায়। বিশেষ করে নানা রকমের ফুডস্টোরের বদৌলতে সাধারণ মানুষ নানা ধরনের তেলের নামের সাথে পরিচিত। কিন্তু ঠিক কোন তেল স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই নিরাপদ তা জেনে রাখা একান্তই জরুরি। তাই নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন। লিখেছেন নওশীন শর্মিলী

সয়াবিন

সয়াবিন হলো এক প্রকারের শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদ। এটির আদি নিবাস পূর্ব এশিয়াতে। এটি একটি বাত্সরিক উদ্ভিদ। রান্নায় অতিরিক্ত চর্বিবিহীন সয়াবিন তেল দিয়ে তৈরি খাবার দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রাথমিক উত্স। সয়াবিন তেলের রান্না বেশি খেলে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমতে পারে। জাপানি একদল গবেষকের নতুন গবেষণায় একথা বলা হয়েছে। সয়াবিনের আইসোফ্লেবনস খাদ্যগুণ হরমোনে অ্যাস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। সে সঙ্গে বুক ও প্রোস্টেটের হরমোন-সংশ্লিষ্ট ক্যান্সারবিরোধী উপাদানও সয়াবিনে থাকতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

সর্ষের তেল

সরিষার বীজ নিষ্পেষণ দ্বারা প্রস্তুত এই তেল। এই তেল রান্নার জন্যে এবং গায়ে মাখা বা মালিশ করার কাজে ব্যবহার হয়। সর্ষের তেলের ঝাঁঝের জন্যে সর্ষের তেলের রান্নার আলাদা বিশেষত্ব আছে। সর্ষের তেলের ঝাঁঝের কারণ অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক একটি উদ্বায়ী সালফারযুক্ত যৌগ। সর্ষের তেল যদি জলের সংস্পর্শে না আসে তাহলে কিন্তু তাতে ঝাঁঝ হয় না। তাজা সর্ষের তেলে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট থাকে না, থাকে সিংগ্রিন নামে তার গ্লুকোসিনোলেট যৌগ। জল বা অ্যাসিডের সাথে মিশ্রণ বা আলোড়নের ফলে মাইরোসিনেজ নামে একটি উেসচক সক্রিয় হয়ে সিংগ্রিন থেকে গ্লুকোজ আলাদা করে দিয়ে ঝাঁঝালো অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট তৈরি করে। সর্ষের তেলকে পাতন করলেও উচ্চতাপে মাইরোসিনেজ সক্রিয় হয়ে যায় ও অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট উবে যায়, পরে তাকে ঘনীভূত করে এই গন্ধ তেল (অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট) পাওয়া যায়। অ্যালাইল আইওডাইড ও পটাসিয়াম থায়সায়ানেটের রাসায়ানিক বিক্রিয়া দ্বারাও কৃত্রিমভাবে এটি প্রস্তুত করা যায়। এটিকে কৃত্রিম সর্ষের তেল বলে। এটি খাবারে সর্ষের তেলের গন্ধ দেবার জন্যে ব্যবহার হয়।

মাছের তেল

সামুদ্রিক মাছের তেলে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, তা ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের হাত থেকে রক্ষা করে। সমপ্রতি বিজ্ঞানীরা এর আরও বেশ কয়েকটি উপকারিতা খুঁজে পেয়েছেন। সামুদ্রিক মাছ, যেমন—টুনা ও এর সমগোত্রীয় মাছগুলো যারা সপ্তাহে অন্তত তিন দিন খাবেন, তারা ডিমেনিশিয়া ও স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ মস্তিষ্কের ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবেন অনেকাংশে।

উপকারিতা

++ এটি রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইড কমায় এবং ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়।

++ এটি ধমনিগাত্রে প্লাক জমতে দেয় না এবং রক্ত জমাটবদ্ধ হতে দেয় না। ফলে রক্তচাপ বাড়ে না, যা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচায়।

++ এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

++ এটি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে পারে।

++ এটি বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকে বাঁচায়।

++ কিছু ক্যান্সারের হাত থেকেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সুরক্ষা দেয়।

অলিভ অয়েল

যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হলো জলপাইয়ের পাতা এবং মানুষের শরীরের শান্তির দুত হলো জলপাইয়ের তেল, যা অলিভ ওয়েল, আরবিতে জয়তুন, যেটাকে লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও ডাকা হয়। সেই গ্রিক সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল থেকে এই তেল ব্যবহার হয়ে আসছে রন্ধন কর্মে ও চিকিত্সা শাস্ত্রে। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় সব গুণাবলি এই জলপাইয়ের তেলের মধ্য রয়েছে। জলপাই তেল বা অলিভ ওয়েলে দারুণ দারুণ সব উপাদান থাকে যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দুর রাখে। গবেষকরা দেখিয়েছেন খাবারে অলিভ ওয়েল ব্যবহারের ফলে শরীরের ব্যাড কোলেস্টেরল এবং গুড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হয়। ওলিভ ওয়েলের আরেকটা গুণাবলী হলো এটা স্টমাকের জন্য খুব ভালো। শরীরে অ্যাসিড কমায়, লিভার পরিষ্কার করে যেটা প্রতিটি মানুষের ২/৩ দিনে একবার করে দরকার হয়। কোষ্ঠ-কাঠিন্য রোগীদের জন্য দিনে ১ স্পুন অলিভ ওয়েল অনেক অনেক উপকারী।

তিল ও তিসিজাতীয় তেল

আজকাল আমাদের দেশে তিল ও তিসিজাতীয় তেল শস্যবীজের উত্পাদন ও ব্যবহার ক্রমাগত কমতে থাকলেও উন্নত বিশ্বে ঘটছে উলটা ঘটনা। তিল ও তিসির অসংখ্য উপকারী গুণাবলি থাকার ফলে উন্নত বিশ্বে এদের উত্পাদন ও ব্যবহার বাড়ছে ব্যাপক হারে। মূলত তিল ও তিসি থেকে পাওয়া তেলের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, এতে রয়েছে কিছু উন্নতমানের ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। তিল ও তিসির মোট ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রায় ৯০ ভাগই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড এবং যার মধ্যে আলফা লিনোলেইক অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অহিকোসাপেন্টানয়িক অ্যাসিড এবং ডকোসাহেক্রানয়িক অ্যাসিড অন্যতম। এসব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিডের রয়েছে বহুবিধ উপকারী ভূমিকা। এরা একদিকে যেমন আমাদের রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমায় একই সঙ্গে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বাড়ায় এবং এ প্রক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট লোকের রক্তচাপ কমিয়ে আনে।

চর্বি এবং কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ

খাবার পরিহার করুন

হূিপণ্ডের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি, ট্রান্সফ্যাট (খাদ্য প্রস্তুত করতে যে চর্বি তৈরি হয়) এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি সেগুলো অবশ্যই খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এ জাতীয় কোলেস্টেরল তেল-চর্বিযুক্ত খাদ্য বেশি গ্রহণ করলে চর্বির পুরো আস্তর জমে রক্তনালির ফুটো কমে যায় বা বন্ধ হয় যায়। ফলে হূিপণ্ডে রক্ত চলাচল কমে যায় কিংবা অংশবিশেষে একেবারে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হূদরোগ এবং মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত বা স্ট্রোক হয়।

প্রতিদিন হূদ-বান্ধব খাবারের তালিকায় সর্বোচ্চ কতটুকু চর্বি থাকতে পারে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো—

সম্পৃক্ত চর্বি :দৈনিক গৃহীত সর্বমোট ক্যালরির ৭ শতাংশের কম হবে।

ট্রান্সফ্যাট :দৈনিক গৃহীত সর্বমোট ক্যালরির ১ শতাংশের কম হবে।

কোলেস্টেরল :সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৩০০ মি. গ্রামের কম।

যারা কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করেন কিংবা যাদের রক্তে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল বেশি তাদের ২০০ মি. গ্রামের বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।

খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি এবং ট্রান্সফ্যাট কমাতে হলে মাখন, ঘি, মার্জারিন ইত্যাদির ব্যবহার কমাতে হবে। এ ছাড়া গরু কিংবা খাসির চর্বিযুক্ত মাংস গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ট্রান্সফ্যাট বলতে আংশিক বিজারিত চর্বিকে বোঝানো হয়। রান্নায় একই তেল পুনরায় ব্যবহার করলে বা ব্যবহূত তেল রেখে দিলে ওটাতে প্রচুর ট্রান্সফ্যাট তৈরি হওয়ার অবকাশ থাকে। অতএব প্রতিবার রান্নার সময় নতুন তেল ব্যবহার করা উত্তম; আগের দিনের ভাজাভুজির পর কড়াইয়ে রয়ে যাওয়া তেল ব্যবহার করা ক্ষতিকর। আর অবশ্যই রান্নার জন্য অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত তেল যেমন—সয়াবিন, জলপাই তেল কিংবা ক্যানোলা তেল ব্যবহার করা উচিত। বাদাম এবং সয়াবীজের তেল অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি পরিমাণে থাকে। সম্পৃক্ত চর্বির পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত তেল ব্যবহার করলে রক্তে কোলেস্টেরল কম থাকে।

উপকারী তেল
++ জলপাইয়ের তেল

++ ক্যানোলা তেল

++ ট্রান্সফ্যাটবিহীন মার্জারিন

ক্ষতিকর তেল

++ মাখন

++ খাসি-গরুর চর্বি

++ ক্রিম সস্

++ নন-ডেয়ারি ক্রিম

++ হাইড্রোজেনেটেড মার্জারিন

++ মাখন

++ নারিকেল তেল, পাম অয়েল, তুলাবীজের তেল

0 comments:

Post a Comment